একটা কথা বলবো?
বল।
মনে কিছু করবি না বল।
এমন কি কথা?
আছে।
তবে বল।
তার আগে বল মনে কিছু নিবি না।
কথাটা কি খুব জরুরী?
জরুরী মানে জরুরী আবার....
আবার কি?
না মানে জরুরীই, জরুরীই।
আমার মুখের ভাব ভঙ্গি দেখে সখী তো হেসেই খুন। সে বলল, আমার মুখের দিকে তাকা।
তাকালাম, তোর চোখে কি পোকা পড়েছে?
না।
ময়লা ঢুকেছে?
নাহ্
তবে কেন তাকাবো?
একটা কি যেন পড়েছে, সেটা দেখার জন্য। কাছে আয়, কাছে এসে ভালো করে দেখ।
সখীর মুখে দুষ্টু হাসি। মনে কি খেলা করছে বোঝা মুশকিল। সখীর অতি নিকটে গেলাম, ভালো করে চোখের মাঝে, উপর-নিচে সব জায়গা দেখলাম। কিছুই দেখতে পেলাম না।
কৈ, কিচ্ছু নেই।
তুই আন্ধা।
কি বললি, আমি আন্ধা?
আন্ধারে আন্ধা বলবো না তো কি বলবো? আন্ধারাম।
দেখ ভালো হবে না বলছি।
মন্দ কিছুও হবে না। আমি বুঝতে পারছি আমার চোখে কিছু একটা পড়েছে, আর তুই সেটা দেখতে পেলি না। আন্ধা তুই একটা আস্ত আন্ধা।
ভালো হচ্ছে না কিন্তু।
জলজ্যান্ত একটা জিনিস তুই দেখতে পেলি না।
জলজ্যান্ত তো পড়ে থাক, ডাঙ্গামৃতু্য কোন জিনিস আমার চোখে পড়ল না।
তোর সে চোখ থাকলে তো তুই দেখবি? আরেকবার চেষ্টা করে দেখ কিছু দেখতে পাস কিনা।
শালার লেডিস আমার মাথার মগজ উল্টপাল্টা করে ছাড়লো। কি বলে না বলে আমার মাথায় কাজ করে না। কূল-কিনারা খুঁজে পাই না সখীর কথার। আবার শেষ চেষ্টা করার জন্য সখীর চোখে আমার চোখের সাড়াশি অভিযান চালানোর জন্য মুখোমুখি চোখাচোখি হলাম। চোখের পাতা উল্টে পাল্টে একমনে একপ্রাণে খুঁজতে থাকলাম অদৃশ্য বস্তুটি। হঠাৎ বুকের মাঝে ছ্যাৎ করে লাফিয়ে উঠলো, সখীর খাড়া বুকের নরম স্পর্শে। আমার ভেতরের সবকিছু ওলট-পালট হয়ে গেল মুহূর্তের মাঝে। কোনমতে নিজেকে সামলে হাল ছেড়ে দিলাম অনাকাঙ্খিত জিনিসটা দেখার।
সখী বলল, যা বাবা এইটুকুতেই চুপসে গেলি। নাহ্ তোর দ্বারা সম্ভব নয়। তোকে দিয়ে কোনকিচ্ছু হবে না। আমি গেলাম।
আমি বোবার মত চুপ করে রইলাম। সে চলে গেল আমার সামনে দিয়ে আমাকেই কটাক্ষ করে। তার মতিগতি বোঝা অসাধ্য।
আমি যারে মনেপ্রাণে ভালবাসি সে কি আমায় ভালবাসে? জানতে পারিনি সেকথা কখনো, কোনদিন তার মুখ থেকে। আর জানবোই বা কি করে? আমি আজও আমার ভালবাসার কথাই তো তাকে বলতে পারিনি। ভাবছি একদিন সাহস করে ঠিকই বলবো।
একা একা বসে বসে তাকে ঘিরে কত কল্পনা করি। ভবি, একথা বলবো, সেকথা বলবো। কিন্তু ভাবনার সার্থকতা খূঁজে পায় না। সে সামনে এলেই আমার সব ভাবনা ওলট-পালট হয়ে যায়। কি বলতে কি বলবো গুলিয়ে ফেলি। আসল কথাটাই আর বলা হয়ে ওঠে না। উহ্য থেকে যায়। অপ্রয়োজনীয় কথা বলে সময় চলে যায়। তেমনই ভাবনার রাজ্যে হারিয়ে গেলাম।
সে এলে বলব, সখী তোর কাছে একটা কথা জানতে চাই।
সে বলবে, কি জানতে চাস?
তুই কি কাউকে ভালবাসিস?
সে ভেবে চিন্তে বলবে, তুই তো আমায় বড় ভাবনায় ফেলে দিলি।
তোকে আর ভাবতে হবে না। শোন আমি তোকে...
বল থামলি কেন?
আমি তোকে......
বল না কি?
না থাক।
কেন থাকবে?
যদি তুই..
যদি কি?
যদি তুই মাইন্ড করিস।
মাইন্ড করব না, বল।
পারবো না।
কেন?
যদি তুই....
আবার যদি কি?
যদি তুই আমায় ভুল বুঝিস।
কেন ভুল বুঝবো?
কথাটা শুনে।
আরে না তুই বল। তোর কোন কথায় আমি তোকে ভুল বুঝবো না।
তারপরেও
তারপরেও কি?
সে ধীরে ধীরে উতলা হয়ে উঠছে। অতি আগ্রহ সহকারে জানতে চাইছে কথাটা।
যদি আমার সাথে আর কথা না বলিস।
দূর পাগল, কেন কথা বলবো না?
কথাটা শুনে যদি মন খারাপ করিস।
আবার যদি। বাদ দে তাহলে তোকে বলতে হবে না।
না বলে যে আমি শান্তি পাচ্ছি না।
তবে বল।
বলবো?
আরে বল না।
তুই সাহস দিচ্ছিস তো।
হঁ্যা সাহস দিচ্ছি বল।
বলবো।
বল না বাবা।
তাহলে আমার চোখের দিকে তাকা।
তাকালাম, এবার বল।
আমি তোকে....
বল না, বাধছে কেন?
আমি তোকে ভালবাসি।
কি বললি?
আবার বলতে হবে?
হঁ্যা বল, আবার বল।
আমি তোকে ভালবাসি।
এ পর্যন্ত ভেবে ভেবে আমি মনে শান্তি অনুভব করি। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি বড়ই করুন। সখী সামনে এলে আমার মুখে এরকম কোন কথাই আসে না। কেমন যেন ভাললাগায় সবকিছু ভুলে যাই। আমার এ অপারগতা আমাকে দিন দিন আরো দুর্বল করে তুলছে। দিন দিন আমি কেমন যেন নেতিয়ে পড়ছি। খোলস ছেড়ে বের হতে পারছি না। অতি মাত্রায় সাহসী হতে পারছি না, মান-সম্মানের ভয়ে। যদি কেঁচো খুড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে পড়ে।
অত চিন্তা-ভাবনা করে প্রেম-ভালবাসা হয় না জানি। তবু মন থেকে চিন্তা-ভাবনা ঝেড়ে ফেলে বলতে পারি না। সামনে পেছনে নানা রকম ভাবনা দোলা খায়। ভালবাসার কথা বলে যদি অপমানিত হই, তাহলে আর বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করবে না। লজ্জায় মাথা কাটা যাবে। লজ্জায় মাথা কাটা যাবার ভয়ে মুখফুটে বলতে পারি না, প্রিয় মানুষটিকে ভালবাসার কথা। ভেতরে ভেতরে জ্বলে পুড়ে নিজেকে শেষ করছি অথচ প্রকাশ করতে পারি না সেকথা।
সখী যদি অন্য ছেলের সাথে কথা বলে তবে আমার খুব হিংসে হয়। মন বলে সে আমাকে ভালবাসে না। যেভাবে সে হেসে হেসে অন্যদের সাথে কথা বলে তাতে মনে হয় সে আমাকে আসলেই ভালবাসে না। অন্য কাউকে হয়তো সে ভালবাসে। মন বলে, আমাকেই যদি ভালবাসবে তাহলে তো সে শুধু আমার সাথেই কথা বলবে, অন্য কারো সাথে বলবে না। অন্য কারো সাথে তাকে হেসে হেসে কথা বলতে দেখলে আমি মনে মনে খুব কষ্ট পাই।
মাঝে মাঝে মনে হয় আমি যে তাকে ভালবাসার কথা বলবো, সে যদি আমায় ভাল না বাসে। যদি সে অন্য কাউকে মন দিয়ে বসে থাকে। তাই ভয় হয়। বলতে চেয়েও চেপে যায়।
মাঝে মধ্যেই দেখি সখী একটা ছেলের সাথে খুব হেসে হেসে কথা বলে। তারা কোথায় কোথায় যেন কথা বলতে বলতে যায়। ছেলেটির নাম সঠিক মনে পড়ছে না। কি যেন, কি যেন? ও মনে পড়েছে। ছেলেটির নাম রয়েল। তার সাথে যখন সখী কথা বলে, আমার মাথায় তখন খুন চড়ে যায়। নিজেকে সামলাতে আমার খুব কষ্ট হয়। রয়েলের সাথে সে গায়ে হাত দিয়েও ফাজলামো করে। এটা আমার একদম পছন্দ হয় না। তাই একদিন মনের মাঝে জিদ চেপে বসলো তারা কি কি কথা বলে আমি আড়ি পেতে সব শুনবো।
এভাবে সুখে-দুঃখে দিন কাটে। দিনের পর দিন যেতে থাকে আমার মধ্যে সাহস জেগে ওঠে না। ভাবি এক, করি আর এক।
একদিন একটা ঘটনায় আমার ভেতরটা আরো চুপসে গেল। শামুকের মতো নিজের ভেতর সবকিছু গুটিয়ে নিলাম। কিন্তু শান্তি পেলাম না। অশান্তি মনটাকে বিষিয়ে তুলতে লাগল।
সেই ছেলেটির পাশে বসে কি যেন আলাপ করছিল সখী। আর হেসে হেসে খুন হচ্ছিল ক্ষণে ক্ষণে। আমার মাথায় রক্ত উঠে মাথা গরম হয়ে যাচ্ছিল। তাদের কথা অবশ্য আমার কান অবধি পৌছায়নি। তারা এতটাই ফিসফিসিয়ে বলছিল যে আমি কিছুই শুনতে পাচ্ছিলাম না। আমার ভেতরটা তখন কেঁদে কেঁদে ফিট হয়ে যাবার অবস্থায়। বেশি সময় সে দৃশ্য অবলোকন করতে পারিনি। বাধ্য হয়ে, বুকে কষ্ট নিয়ে সেখান থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি। নির্জনে একা একা ঘরে বিছানায় শুয়ে বালিশে মাথা গুজে চোখের নোনা জল বিসর্জন দিয়েছি।
মনে মনে আল্লাহকে বলেছি, আমাকে কেন আর দশজনের মত করে সৃষ্টি করোনি। কেন আমি মনের কথা মুখে প্রকাশ করতে পারি না। কেন আমি স্বাভাবিকভাবে সবকিছু করতে পরি না। কেন আমাকে সবকাজে পেছন থেকে আটকে দাও। কেন? কেন? কেন?
আর নয়। আর মুখ বুজে াকা সমীচীন নয়। এখনই যে কোন একটা দফা-রফা করতে হবে। ভোদাই সেজে বসে থাকলে আর চলবে না। ভেতরের কথাটা বাইরে প্রকাশ করতেই হবে। জানতে হবে, জানাতে হবে।
মনকে অনেকটা ঘষে-মেজে তার সামনে উপস্থিত হলাম। আমার বিধ্বস্ত চেহারা দেখে সে অবাক বিস্ময়ে কিছু সময় আমাকে মায়াবী চোখে পর্যবেক্ষণ করলো।
বিস্ময়ে বলল, এ কি হয়েছে তোর!
আমার কিছুই হয়নি, আমি ঠিক আছি।
কই ঠিক আছিস, কেমন আউলা-ঝাউলা হয়ে গেছিস।
বাদ দে ওসব কথা।
ব্যাপার কি?
একটা সিরিয়াস কথা বলতে এসেছি।
চোরা হাসি মুখে নিয়ে সখী বলল, বল তোর সিরিয়াস কথাটা।
আমি সিরিয়াস হতে চাইলেও পরি না, বিশেষ করে সখীর সামনে দাঁড়ালে। কেমন যেন সব তালগোল পাকিয়ে ফেলি। ওর মিষ্টি চেহারা দেখে সব কথা ভুলে যাই। সব ধরনের রাগ-ক্ষোভ পানি হয়ে যায়। বিরাট এক পরিবর্তন আমার মাঝে ঘটে। কিন্তু আজ আমি সিরিয়াস। আমার ভাব ভঙ্গিতে সিরিয়াসত্ব বজায় রাখতে চাই এবং রাখার চেষ্টা করছি।
চুপ আছি দেখে সে বলল, চুপ করে আছিস কেন? বল তোর সিরিয়াস কথা।
নরম সুরে বললাম, কেমন আছিস?
ভালো আছি। এটা তোর সিরিয়াস কথা?
ভালো তো থাকবিই। তোরই তো ভালো থাকার কথা। তুই ভালো থাকবি না তো কে ভালো থাকবে।
একথা বলছিস কেন?
আমাকে তুই বুঝলি না।
তোকে না বোঝার কি আছে? বুঝিয়ে বল বুঝবো।
আর বুঝতে হবে না।
আচ্ছা কি হয়েছে রে তোর আজ?
মনে মনে বললাম, আমার সব শেষ হয়ে গেছে। মুখে কিছুই বলতে পারলাম না। সখী আমার খুব কাছে এসে মাথার এলোমেলো চুলগুলোতে হাত বুলাতে বুলাতে বলল, জামিল, কি হয়েছে তোর?
জানি না।
কি বলতে চাস বল।
তুই কাকে ভালবাসিস?
কথাটা শোনার পর সখী কেমন যেন চমকে উঠল।
বললাম, আমাকে না অন্য কাউকে?
এবার সখীর মুখে দুষ্টু হাসি খেলে গেল। চুলে আলতো করে টান মেরে বলল, বাসি।
কাকে?
আছে একজন।
তবে আমি নই বুঝি সে জন?
সখী কি যেন ভেবে দুষ্টু হাসি মুখে রেখেই বলল, তুই এখনো অবুঝ রয়ে গেলি।
১৯ ফেব্রুয়ারী - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৪১ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪