কবিতা ম্যাডাম আছেন? নিজের নাম শুনে মুখ তুলে চাইতেই দেখি ডাক পিয়ন একটি হলুদ খাাম এগিয়ে দিলো। স্পষ্ট অক্ষরে আমার নাম।কোথা থেকে আগমন সেটা দেখার চেয়ে চিঠিটা পড়ার আগ্রহটাই বেশি ছিলো। খুলেই দেখি হলুদ কাগজে সবুজ কালি দিয়ে সুন্দর করে লেখা, " আপনি ভালো আছেন? নীল শাড়ীতে খুব সুন্দর লাগছে।"
আমি অবাক হয়ে নিজের দিকে চাইলাম।আরে তাইতো, আমি তো আজ নীল শাড়ীই পরেছি। এদিকওদিক চাইলাম। কেউ কি আমাকে দেখছে? স্কুলের কাজে মন বসাতে পারছিলাম না। কাউকে বলতেও পারছি না।কে কি ভাববে আর কি মন্তব্য করবে। স্কুল ছুটি। বাসা চলে এসেছি।কিন্তু চিঠির রহস্য ভেদ হলো না। পরদিন যথা সময়ে স্কুল আসতে পারিনি। তাই সিএনজি করেই চলে আসছিলাম।আমার স্কুলের পাশেই হাই স্কুলের বিল্ডিং এর পুনঃ নির্মাণের কাজ চলছে।তাই স্কুল অবধি পৌঁছাতে পারিনি।মাঝপথেই নেমে যেতে হলো।স্কুল পৌঁছার দশ মিনিট পরেই কালকের সেই পিয়ন,সেই হলুদ খাম। এগিয়ে দিল।আমার হৃৎিপন্ডে হাতুড়ির বাড়ি পড়তে শুরু করলো যেন।খুব দ্রুত হাতে চিঠি খুলে পড়লাম। তাতে লেখা," এত তাড়াহুড়ো করতে আছে? দেখলেন,একটু হলেই সিএনজি থেকে পরে যাচ্ছিলেন। " আমি আজও এদিকওদিক চাইলাম। নাহ, তেমন কাউকে তো দেখিনা।তাহলে কে দিবে এরকম চিঠি? পোস্ট অফিসের সিল দেয়া। কিন্তু ঠিকানা অস্পষ্ট। আমাদের প্রত্যেক মাসেই অনুপস্থিত শিশু বা অমনোযোগী শিশুদের হোম ভিজিট করতে হয়। আমি সেই কাজের জন্য স্কুলের পাশেই এক দোকানে যাচ্ছিলাম সেই অনুপস্থিত শিশুর অভিভাবকের কাছে।তার পাশেই স্কুল নির্মাণের কাজ করছেন এক ইঞ্জিনিয়ার ভদ্রলোক। তাঁর সাথে কথা হলো। পরিচয় হলো। তিনি পংগু লোক। এক্সিডেন্টে পায়ের ভীষণ আঘাত পেয়েছে। এখনো তাকে হুইল চেয়ারে চলাফেরা করতে হয়। তিনি হুইল চেয়ারে বসেই ঘুরে ঘুরে কাজ দেখেন। যাওয়ার পথে তাঁর সাথে কথা হলো। একদিন চায়ের দাওয়াত দিয়ে এলাম।যাহোক হোম ভিজিটের কাজ শেষ করে আমি পোস্ট অফিসে যাবো চিঠির রহস্য জানার জন্য। কিন্তু পিয়ন বলল,আমি তো এখান থেকেই চিঠি নিয়ে যাচ্ছি। আমি বেশি কিছু না বলে চলে এলাম। তারপরদিন আবারও সেই চিঠি। লেখা,"রাস্তায় চলার সময় ফোনে কথা না বলাই ভালো। আর......" আবারও সেই রহস্য? কে? কেন আড়ালে এমন করছে? এমনি করে মাস খানেক এরকম চিঠি। যেদিনই পোস্ট অফিস খোলা থাকে আর স্কুল এসেছি, সেদিনই চিঠি পেয়েছি। আমি বিষয়টা কাউকে বলিনি। নিজেই ভেদ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এরপর শুধু চিঠি নয়,তার সাথে ফোন। চিঠি পাওয়ার পরপরই ফোন আসে। খুব সুন্দর করে দু'একটি কথা। যেন কতো চেনা আমি। কথায় কতো আবেগ,কতো মায়া যেন। এমনি করে চিঠি আর ফোনে আমাকে অস্থির করে তুলছে যেন। একজন মানুষ এত অমায়িক হয় কি করে? তার লেখায় আর কথায় এত সৌন্দর্য? কি চান তিনি? আর কেই বা তিনি? সামনে পেলে তাঁকে স্যালুট দিতাম। কিন্তু কেনই বা আড়ালে থেকে এভাবে জড়িয়ে নিতে চায়? স্কুল বন্ধ কয়েকদিন। তার চিঠি নেই,নেই ফোন। চিঠি আর ফোন না পাওয়ায় আমিও যেন কেমন একটা চাপা কষ্ট অনুভব করছিলাম। স্কুল খুললো। খুব তাড়াতাড়ি স্কুলে যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম সেদিন। কিন্তু মেহমান থাকায় সেটা আর সম্ভব হলো না। একটু দেরিই হয়ে গেলো। সিএনজি থেকে দেখি স্কুলের সামনে রোডে খুব ভীড়। সিএনজি এগোতে পারলো না। আমি দূরেই নেমে পড়লাম। এগিয়ে দেখি এক্সিডেন্ট। ঘটনা দেখার জন্য সেখানেই পৌঁছলাম। সেই পিয়ন দাঁড়িয়ে সেখানে। আমাকে ইশারা করে ডাকলেন। আমি কাছে যেতেই সেই হলুদ খাম। পিয়ন চিঠিটা দিয়ে বললেন, ম্যাডাম,এই ভদ্রলোক এর হাতে এটা পেলাম। চটজলদি তাকিয়ে দেখি,আরে এতো সেই পংগু ভদ্রলোক। ভীড় ঠেলে কাছে গেলাম। কিন্তু নাহ,ততক্ষণে সব শেষ। ট্রাক চাপা দিয়েছেন তার হুইল চেয়ারটাতেই। এই চিঠিটাই পোস্ট অফিসে দিতে গিয়েছিলেন। চিঠিটা খোলার জন্য মন উতলা হচ্ছে কিন্তু সাহস পাচ্ছিলাম না। তবুও খুলে ফেলি। তাতে লেখা-- " আমাকে চিনতে পারনিতো? আমি ইমন। তোমাকে স্কুলে যে প্রথম ভালোবাসার কথা লিখে হেড স্যারের হাতে মার খেয়েছি। আর তোমার পায়ে জোঁক ধরায় তোমার চিৎকারে আমি নায়কের মতো এসে জোঁকটাকে হাত দিয়ে ফেলে দিই। আমি সেই হতভাগা,আজও তোমার আশায় চলে এসেছি কাজ নিয়ে। আমি সেই অধম, যে পংগুত্ব নিয়ে আজও চাকুরী করছি। তাই চলে এসেছি তোমার এলাকায়। জানি তোমাকে পাওয়ার আর কোন সম্ভাবনা নেই। তবুও একটু কথা,একটু দেখা এটাই তো অনেক। আজো আমি তোমায় ভালোবাসি কবিতা। না কবিতা, তোমাকে বাসতে বলছি না। তুমি সুখে আছো, সুখেই থাকো। আজ এত দেরি করলে কেন কবিতা? আমি অপেক্ষা করতে পারছিলাম না। আজ কেমন সাজে সেজেছো না দেখেই চিঠি লিখতে হলো। কেন এত দেরি করলে বলতো? ভালো থেকো, আজ দেখা করো। পুরনো আমাকে নতুন করে দেখতে এসো কবিতা। ইমন।"
নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো। একি হলো? কেন আমি আজ দেরি করেছি? কেন?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ওয়াহিদ মামুন লাভলু
খুব বেদনাদায়ক পরিনতি। যে চলে যায় সে তো চলেই যায়, আর যে বেঁচে থাকে তাকে শুধু কাঁদতেই হয়। গল্পের শেষে কবিতার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়েছে। এই জল তার চোখ দিয়ে হয়ত আজীবন পড়বে। সাধারণত গল্পের যেখানে শেষ প্রকৃতপক্ষে গল্পের সেখানেই শুরু। পাঠক সেটা জানতে পারে না, কিন্তু অনেক কিছুই জল্পনা কল্পনা করতে পারে। বেশ ভাল গল্প। চালিয়ে যান। শুভেচ্ছা রইলো। ভাল থাকবেন।
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী
গল্পের উপলব্ধিটা এক টানে শেষ করতে পেরেছি, খুব চমৎকার হয়েছে, কিন্তু মাঝে মাঝে বানান আর যতিচিহ্ন গুলো এলোমেলো বোধ হচ্ছে.... যা হোক, অনেক শুভকামনা ও ভোট রইল।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।