মানুষ অইত্যান্ত জটিল

সরলতা (অক্টোবর ২০১২)

খালিদ ফারহান
  • ১৪
  • ১৪

ইমন সকাল সকালই ঘর থেকে বের হয়ে যাবে আজকে । আজকে একটা জরুরি কাজ আছে ওর। জরুরি মানে সেরকম জরুরি । আজকে ওর আদিবা কে ভালবাসার কথা বলার প্ল্যান। আদিবা ওর সাথেই পড়ে। ক্লাস টেন, উদয়ন স্কুলে। অনেকদিন ধরেই ওর পছন্দ আদিবা কে। কিন্তু বলার সাহস হয় না। আজকে ও বলবেই। স্কুলের সার্ট পরে চুল টা ঠিক করতে করতে ভাবে ইমন- ঠিকঠাক মত করতে হবে সব, নাহলে মানসম্মান তো যাবেই, আদিবা কেও পাওয়া হবে না। প্ল্যান টা খুব একটা জটিল না। ব্যাগে একটা গোলাপ থাকবে, আদিবা কে টিফিনের সময় গোলাপ টা দিয়ে বলতে হবে আই লাভ ইয়ু। থাক, বাংলায় বলাই ভাল। বলতে হবে আমি তোমাকে ভালবাসি। খুব জটিল কিছু তো না, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কয়েকবার বলে নেয় ইমন। হুম, ঠিক ই আছে।


আদিবা গুনগুন করতে করতে রেডি হচ্ছিলো স্কুলের জন্য ।
ওর মা তাড়া দিয়ে বললো, “দুপুর হয়ে যাচ্ছে তো আদিবা, তাড়াতাড়ি।”
মায়ের কথা শুনে তাড়াহুড়ো করে গাড়িতে গিয়ে বসলো আদিবা। গাড়ি চলা শুরু হতেই টের পেলো পানির বোতল টা আনা হয় নি। আদিবার আবার ঘনঘন আনি খাওয়ার অভ্যাস।
আদিবা গাড়িতে করে স্কুলে যাওয়ার সময় প্রতিদিনই অনেক কিছু ভাবতে থাকে। আজকেও ভাবছিলো। আজকে ভাবছিলো ইমনের কথা। ইমন ওর পাশের বেঞ্ছে বসে স্কুলে। ফাজিল টাইপ ছেলে। সারাক্ষণ টিচারদের সাথে ঝামেলা পাকিয়ে ঝাড়ি খায়। মজাই লাগে আদিবার। আসলে ইমন পাশে থাকায় আদিবার স্কুলে সময়টা অনেক তাড়াতাড়ি কাটে। ইমন জানে না, আসলে আদিবা ওকে পছন্দই করে। ভাবতে ভাবতে হেসে ফেলে আদিবা। চলে এসেছে স্কুলে ও।

“আদিবা, আজকে তোকে একটা কথা বলবো , খুব জরুরি।” -স্যার পেছন ঘুরতেই আদিবা কে খোঁচা দিয়ে বলে ওঠে ইমন।
“হ্যা, তো বল” – আদিবার উওর।
“এখন না, টিফিন টাইমে” – চোখ মটকে বলে ইমন।
আদিবা ভাবতে শুরু করে, এভাবে বললো কেন ও? এখন বললেই তো পারতো , এমন কি জরুরি কথা যা এখন বলা যাবে না? আচ্ছা, ও আমাকে প্রোপোজ ট্রোপোজ করবে না তো? ইশ, যদি করতো, হিহি। ভেবেই পরক্ষণেই আবার ভাবে আদিবা, গাধার মত চিন্তা করে ফেলছে ও। ইমন অমন ছেলে না, নিশ্চই কোন ফাজলামি আলাপ হবে। থাক, কিছু হবে না আদিবা। নাই পেলি তুই তোর ভালবাসা ।


আচ্ছা, আদিবাকে যখন বললাম টিফিন টাইমে বলবো, ও এরকম চুপ হয়ে গেল কেন? এখনো কিরকম চুপচাপ হয়ে আছে। আচ্ছা, বলাটা কি আসলে উচিত হবে? আদিবা এর সাথে সুন্দর বন্ধুত্বটাও নষ্ট হয়ে যাবে না তো ? থাক, টিফিন টাইমের এখনো দুই ক্লাস বাকি, একটু ভাবি।

ইমন কে আমি অনেক পছন্দ করি ঠিক আছে, কিন্তু আমি জানি ও আমাকে করে না। ও আমাকে অনেক ভাল একটা বন্ধু ভাবে। আর কিছু না। ওর সাথে থাকলেই এটা বোঝা যায়। হ্যা, আমি দুই রাত পরপর ইমন কে স্বপ্নে দেখি, তার মানে তো এই না ইমনেরও আমাকে স্বপ্নে দেখতে হবে, ধ্যাত কিন্তু যদি ও সত্যিই প্রোপোজ করতো আমাকে টিফিন টাইমে, কত ভালই না হত। একদম সিনেমার মত।

আদিবা কে কালকে রাতেও স্বপ্নে দেখেছি আমি। কি যে স্বপ্ন। আমি আর ও হাত ধরে হাঁটছি, একদম পাশাপাশি- একটু পর বসে পড়লাম আমরা ঘাসে, ও মাথা রাখলো আমার কাঁধে। আচ্ছা , প্রেমিকদের প্রেমিকাদের ব্যাপারে সবচেয়ে পছন্দের কাজ কি? আমার তো মনে হয়, আদিবা যদি আমার কাঁধে মাথা রাখে , সেটাই আমার সবচেয়ে পছন্দের হবে। সব প্রেমিকদেরই কি এটা?

ইশ , টিফিন পিরিওড আসে না কেন? আর ভালো লাগছে না, জানি ইমন প্রোপোজ করবে না, কিন্তু তাও- কি ভালই না লাগছে এটা ভেবে অপেক্ষা করতে যে হয়তো ও টিফিন টাইমে আমাকে প্রোপোজ করবে। ইশ, যদি প্রপোজ করতো তাহলে আমি কিভাবে চাইতাম ওটা? উম , স্কুলে তো তেমন কিছু করতে পারতো না, কিন্তু যদি একটা ফুল ও দিয়ে বলতো আমি তোমাকে ভালবাসি আদিবা, আর কিছুই চাইতাম না আমি। আমার জীবনের সবচেয়ে গোপন ইচ্ছা হল আমি ইমনের কাঁধে মাথা রেখে বসে থাকবো। ইমন কি কিছুই বোঝে না?

টিফিনের ঘন্টা পড়লো।

আদিবা দেখছে ইমন এগিয়ে আসছে ওর দিকে। ইমনের কাঁধে ব্যাগ কেন টিফিন টাইমে? আসলেই ফুল নেই তো আবার ব্যাগে? ও কি সত্যিই আমাকে প্রোপোজ করতে আসছে?
না, প্রপোজ করা উচিত হবে না, ব্যাগ কাঁধে দেখেই আদিবা যে রাগী রাগী ভাব নিয়ে তাকাচ্ছে, ফুল বের করলে সব শেষই হয়ে যাবে। আমি আমাদের বন্ধুত্ব নিয়ে রিস্ক নিতে পারবো না। করবো না আমি আদিবা কে প্রোপোজ।
আদিবার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ইমন। দুইজনই দুইজনেই দিকে তাকিয়ে আছে চুপ করে।
আদিবা প্রথম কথা বললো, “কি গাধা? দাঁড়িয়ে আছিস কেন ব্যাগ কাঁধে নিয়ে? আমাকে প্রোপোজ করতে না? হিহি”
“হ্যা, জানিস না? আমার তো আর কোন কাজ নাই, তোর জন্য ব্যাগে ফুল নিয়ে ঘুরি গাধি”
“ইমন, পানি আছে? আমি পানি আনতে ভুলে গিয়েছি।”
হ্যা, নে। পানির বোতল এগিয়ে দেয় ইমন।

প্রোপোজ টা আর কোনদিন করা হয় নি । কিছুদিন পর দুইজনেরই দুটা নতুন সম্পর্ক হয়- তারপর নতুন কাহিনী।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মামুন ম. আজিজ সরলতার সরল গল্পই বটে
ভাই এবার কান জানি গল্প তা ফেমাস হয় নাই :(
খালিদ ফারহান এই গল্পই মনে হয় আমার সবচেয়ে ফ্লপ গল্প , কেউ ই পড়লো না। বাট এই গল্প টা আমার পছন্দ ছিল। :(
জালাল উদ্দিন মুহম্মদ গাধা আর গাধির গল্প অইত্যান্ত ভাল লাগলো । অভিনন্দন ।
ভাল বলেছেন । :p গাধা আর গাধির গল্প । হে হে।
জিনিয়া নিজের স্কুল জীবনের কথা মনে পরে গেল!!!! আদিবা কিংবা ইমন এর মত অবস্থায় স্কুল জীবনে পরে নি এমন মানুষ খুব কম ই আছে..ধন্যবাদ.
স্কুলের জীবন মনে পড়েছে জেনে খুশি হলুম ।
রোদের ছায়া ভালো লাগলো আদিবা ইমনের গল্প .........ফিনিসিং টাও ভালো হয়েছে , গতানুগতিক প্রেম কাহিনী না হয়ে ......শুভকামনা থাকলো ...।।
ধন্যবাদ :) হুম ফিনিশিং টা পছন্দ হয়েছেদেখে খুশি হলাম :)
আহমেদ সাবের মানুষ ব্যাপারটাই "অইত্যান্ত জটিল"। তার এক কাঠি উপরে টিন-এজ মনস্তত্ত্ব। তারই চমৎকার বিশ্লেষণ পাওয়া গেল ঝরঝরে ছিমছাম গল্পটায়। ভাল লাগল।
:) থ্যাঙ্কু থ্যাঙ্কু :)
বিষণ্ন সুমন তুমি যে অনেক ভালো লিখ সেটা অনেক আগেই জেনেছি । তোমার এ গল্পটা পড়েও বেশ মজা পেলাম । দুটি কিশোর মনের সরল ভাবনার গল্প তোমার দক্ষ হাতে উঠে এসেছে বেশ সুন্দর ভাবে । এরকম সবসময় লিখে যাও - শুভকামনা রইলো ।
সুমন ভাইয়া, আপনি সব সময়ই কমেন্ট করেন । :) অনেক ধন্যবাদ। আপনার কাছ থেকে প্রশংসা পেলে ভাল লাগে :D
Lutful Bari Panna সত্যি কথারে ভাই, মানুষ অইত্যান্ত জটিল... অইত্যান্ত। গল্প পড়ে খুবই মজা পেলাম। ভালও লাগল
হেহে। আসলেই অইত্যান্ত জটিল। নাম টা সুন্দর হয়েছে না ভাই?
আসফিক Tiash উত্তম অতি উত্তম
:) খুশি হয়ে গেলাম
নৈশতরী গল্পটা সত্যি ভালো লিখেছেন আপনি, একথায় অসাধারণ !
ভাই ধন্যবাদ :) অনেক অনেক ।

১৯ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৯ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪