অতঃপর রাত্রিবেলা ধানক্ষেতটা ফাঁকা হতেই ইঁদুরের দল ছোটাছুটি শুরু করলো। মওকা বুঝে ঝিলের নিঃসঙ্গ মাছটাও বের হয়ে আসে গর্ত থেকে। মৃত বউটার হাহাকার বাতাসে মিশে গেছে বহুদিন হল, পাটখড়ির বেড়াটায় অবশ্য ইতস্তত লেগে আছে কিছু রক্ত। বুড়ি শাশুড়িটা বিনা কারণেই পাটের সুতোগুলো পাকাতে থাকে। চোখদুটো ঘুমো ঢুলুঢুলু, তবু হাতদুটোর বিশ্রাম নেই। এভাবে কি আসলেই হয় প্রায়শ্চিত্ত! বখাটের দল তাস পেটায় বুনো উল্লাসে, কিছু দুরেই। রাতের সাথে সাথে ভারী হবে তাদের দল। অথর্বপ্রায় নারকেল গাছটা সন্তর্পণে পানি জমিয়ে রাখে দুঃসময়ের জন্য। টের পেয়ে হিংসুটে জবার ঝাড়টা শেকড় নাড়াতেই তা ঠেকে গেল মৃত বউটার তর্জনীতে। খেলাচ্ছলেই অতঃপর তা পেঁচাতে থাকে রমণীর জীর্ণ তর্জনী। একদা ভীষণ রকমের পর্দানশীল রমণী অবশ্য তাতে বাধা দিলেননা। রাত আরেকটু গভীর হতেই এসে হাজির হায়েনার দল। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ওরা কিছুটা ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত তো বটেই। কবরখানার শেষপ্রান্তে এক ভাগ্যহীনা কন্যাশিশুকে গোপনে মাটিচাপা দিয়ে গেছে তার বাপ। ধূর্ত হায়েনার দল বাতাসে নাক ডুবাতেই গন্ধ পেয়ে গেল। বুনো শুয়োরের মত ঘোঁত শব্দে সবগুলো ছুটতে থাকে সেদিকে। কাছারিঘরে বেঘোরে ঘুমোচ্ছিল পাগলা মুন্সী । ধ্বস্তাধস্তির আওয়াজে লোকটা বিরক্তভাবে পাশ ফিরে শোয়। মাত্র আড়াই হাত মাটির নিচে শুয়ে থাকা কন্যাশিশুটা একটু যেন কেঁপে ওঠে! কবরের ওপর ধারালো নখের শব্দ পাওয়া মাত্রই তার চোখদুটো খুলে গেল ঝট করে...
২ সারাদিন কাটাই শুয়ে বসে। তবু রাত হলেই আর খোলা রাখতে পারিনা চোখ। ক্লান্তিতে টের পাইনা মশাদের। হিমালয় এখান থেকে অনেক দূরে, অনেকটা অসময়েই সেখান থেকে চলে এসেছে ঠান্ডা হাওয়ারা, ঘুমের চোটে টের পাইনা সেটাও! আজকাল এক জায়গায় বেশীদিন থাকিনা, প্ল্যান ছিল সকাল হলেই পালাবো। মাঝরাতে আকস্মিক ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ায় কিছুটা অবাক হই। চারপাশে সব সুনসান, তবু মনে হল ধারে কাছে কোথাও যেন ভীষণ হুটোপুটি হচ্ছিল, আমি জেগে ওঠাতেই থেমে গেছে। পূর্বের বাগানটা পেরোলেই গোরস্তান। খুট করে সেখানে কেউ লুকিয়ে পড়লো যেন। আমি ঝট করে উঠে দাড়াই। কাছারিঘরটা পার হবার সময় টের পেলাম পাগলা মুন্সী নাক ডাকছে বিজবিজিয়ে। ডান পাটা ফেলতে রীতিমত ফেলতে কষ্ট হচ্ছে, কখন যে কাঁটা ফুটেছে টের পাইনি।
মায়ের কবরের সামনে এসে মনে হল- গোরস্তানের শেষ মাথায় কারা যেন বসে আছে ঘাপটি মেরে। আমি সেদিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলাম সন্দিগ্ধ ভাবে, তারপর হাঁটু গেড়ে বসে পড়ি মায়ের কবরের কাছটায়। মার নাকি অনেক লম্বা চুল ছিল,আমি কি ভেবে কবরের ওপাশটায় হাত বুলিয়ে দিই আলতোভাবে। গভীর ঘুমে মগ্ন মা যেন একটা নিঃশ্বাস ফেললেন। দূর আকাশের নিঃসঙ্গ তারাটাও হয়তো ভেবেছিল- এতো রাতে আর কেউ জেগে নেই, কি ভেবে খ্যাপাটের মত হঠাৎ সে বেরিয়ে পড়লো নিরুদ্দেশ যাত্রায়। জবা ঝাড়ের আড়াল দিয়ে আমি সেদিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকি। মা জেগে (কিংবা বেঁচে) থাকলে হয়তো বকুনি দিতেন- এতো রাতে জেগে আছিস খোকা? তার বদলে আমিই বিড়বিড় করি বলি- ঘুমাও মা, ঘুমাও তুমি!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Lutful Bari Panna
লেখায় কী নিজের জীবন থেকে কোনো রসদ এলো রনি। লেখার ধাঁচ অনেক আকর্ষণীয় হলেও, কোথায় যেন পুরনো রনিকে মিস করছি। সেই অসম্ভব এট্রাক্টিভ টাচ। ইংগিতটা ধরতেও ব্যর্থ হলাম রনি। হয়তো আমারি সীমাবদ্ধতা। সবচেয়ে বড় কথা পুরনো রনিকে ফেরত চাই, যার গল্প পেলে এক নিঃশ্বাসে শেষ করতে হয়।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।