BLACK-EYED SUSAN
BY
ETHEL CALVERT PHILLIPS
(HOUGHTON MIFFLIN CO BOSTON & NEW YORK)
...........................................................................
এক// (ফেদারবেড গলিতে কাজল-নয়না সুসান)
কালো একজোড়া চোখ, বাদামী চুলে সারা মাথা ঢাকা, লালচে গাল আর একটা টানাটানা নাক- এই হল সুসান। আন্তরিক, সাহায্যের জন্য সদা চঞ্চল দুই হাত, ছোট দুই পা যা ছুটে বেড়ায় সদা-এটাও কিন্তু সুসান।
‘পুটনাম রাজ্যের সেরা মেয়ে’, দাদা বলতেন আর সুসানকে মুখের কাছে এমনভাবে আদর করতেন যে উনার সাদা দাঁড়িতে সুসানের মুখে সুড়সুড়ি লাগতো আর ও খিলখিল করে হেসে উঠতো। ‘আমার চোখের মণি’, দাদী বলতেন সুসানের এলোমেলো কোঁকড়ানো চুলে হাত বুলিয়ে। যতই তেল দিয়ে চিরুনি করা হোক না কেন, সুসানের কোঁকড়া চুল কিছুতেই সোজা হবার নয়। সুসান নিজের থেকে তেমন কিছু বলতো না। কিন্তু দাদাকে কতই না ভালবাসতো! একেবারে মাথা থেকে পা পর্যন্ত যেন ওর ভালবাসা ছিল দাদার জন্য।
আর দাদী? উনাকে ভাল না বেসে উপায় কি? গালভরা হাসি, লালচে গোলাপী গালে বয়সের ছাপ, দারচিনির সুবাসে ভরা বিস্কুট আর মিটসেফে ভরা সুস্বাদু সব রকমারী খাবার! সুসানের মনে হয় তার দাদী যেন ঐ দারচিনির বিস্কুটের সুবাসের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে। ঐ গন্ধ নাকে গেলেই সুসানের মনে হয় দাদী যেন তার সব ভালবাসা নিয়ে ওর সাথেই আছে আর ও যেন ওর নিজের ঘরেই আছে।
ফেদারবেড লেনের একেবারে ভেতরে পেছনের দিকে ছোট্ট আর নীচু একটা সাদা বাড়িতে থাকতো সুসান, ওর দাদা দাদী আর ওদের পোষা কুকুর স্নাফ। ফেদারহেড নামটাকে সুসানের খুবই হাস্যকর লাগতো। পাথুরে রাস্তা দিয়ে দাদার হাত ধরে বাড়ী আসার সময় কতবার যে সুসান ওর দাদাকে প্রশ্ন করেছে, ‘দাদা! তুমি এই রাস্তাটাকে ফেদারবেড বল কেন? তোমার কাছে কি শব্দটা ‘ফেদার’ আর ‘বেড’ এর মত লাগে না? অথচ দেখ রাস্তায় কত পাথর, আর রাস্তাটা কি শক্ত!’ দাদাও কম যেতেন না। ভারিক্কি চালে উত্তর দিতেন, ‘বড় হলে গুনে দেখো দাদু ভাই! আসলে ‘ফেদার’ এর ‘বেড’ এ যতগুলো ‘ফেদার’ আছে, এই রাস্তায় ঠিক ততগুলো পাথর আছে’। ‘কিন্তু দাদা! ওই বেড এ কতগুলো ফেদার আছে?’ সুসান প্রশ্ন করতো। ‘ওটাও তোমাকেই গুনে দেখতে হবে দাদু ভাই!’, দাদা বলতেন।
গলির শেষ মাথায়, রাস্তার ধারে, আরেকটা ছোট বাড়ি ছিল। বাড়ীটার তিনটা জানালা, সামনে একটা দরজা আর ধোঁয়া ওঠার চিমনি ছিল, যা দিয়ে সহজে চেন যেত যে এটা দাদা’র ল’অফিস যেখানে দাদাকে প্রত্যেকদিন কাজ করতে হয়। ঘরে শুধু আসতেন খাবার খেতে। একটা বড় ঘর ছিল। তাক ভরা শুধু যে বই ছিল এখানেই শেষ না। বইগুলো তাক উপচায়ে চেয়ার, টেবিল, এমনকি মেঝেতেও ছড়ানো থাকতো। দাদার টেবিলটা জানালার কাছে সরানো ছিল। আসতে যেতে সুসানের কখনোই দাদাকে দেখে হাত নেড়ে হাসি দিয়ে যেতে ভুল হতো না। দাদা বেশী ব্যস্ত না থাকলে সুসানকে অফিসে আসতে বলতেন। সুসান তখন ঘরে এসে দাদার মোটা মোটা আইনের বই সাজিয়ে টেবিলের উপরে ঘর বানাতে লেগে যেত।
মে মাসের এক শীতের বিকেলে সুসান দাদার কোলে বসে আগুনের তাপ পোহাতো দাদার অফিসের এক কোনে। দাদার কোলে ওঠার জন্য এটা ছিল সুসানের ভাল এক অযুহাত। দাদী একবার গ্রামের বাড়িতে গেলেন। সুসান সারাক্ষণ দাদার কোলে লেপ্টে থাকতো দাদী ঘরে ফেরা না পর্যন্ত। দাদী ব্যস্ত হয়ে বলত, ‘উইলিয়াম টি ট্রিমিটি ছড়াটা একটু বলবে আমার সাথে?’ তখন দাদা দাদীর সাথে সুর মিলায়ে গাইতে থাকতেন,
William Ti Trimity, he’s a good fisherman;
Catches his hens and puts them in pens.
Some lays eggs and some lays none.
Wire, briar, limber lock,
Three geese in a flock.
One flew east, and one flew west,
And one flew over the cuckoo’s nest.
সুসান ওর দাদার গালে চুমু দিত ধন্যবাদ জানানোর জন্য। ‘এবার আমাকে গেয়ে শোনাও’, দাদীর পরবর্তী নির্দেশ। বাধ্যগত ছেলের মত দাদা উঠে দাঁড়াতো আর উনার মিষ্টি কন্ঠে গেয়ে শোনাতেন-
It rains and it hails and it’s cold stormy weather.
In comes the farmer drinking up the cider.
You be the reaper and I’ll be the binder,
I’ve lost my true love, and right here I find her.
অনেক পুরানো ধাঁচের গান হলেও সুসানের খুব প্রিয় ছিল এই গানটা। এই গানটা গেয়ে দাদা ওকে দুহাত বাড়িয়ে বলতেন, ‘এদিকে আয়’, আর বলেই সুসানকে জড়িয়ে ধরতেন। দাদার কাছ থেকে ছাড়া পাবার পর আদুরে গলায় সুসান বলতো, ‘দাদা এইবার ‘চিকামি’ গানটা গাও’। দাদাও অদ্ভুত এক সুরে গাইতে থাকতেন-
Chickamy, Chickamy, crany crow,
Went to the well to wash his toe.
When he came back the black-eyed chicken was gone—
‘আর পারো না দাদা?’ সুসান জিজ্ঞাসা করতো, ‘তুমি কি জানো না চিকামি কে ছিল? আর কেই বা তার কালো চোখের মুরগিটা চুরি করেছিল? ইশ! আমি যদি জানতাম!’ ‘না দাদু আমার মনে নেই। আমি এইটুকুই জানি সুসান, তুমি তো জানই। শুধু মনে হয়, চিকামি বোকার হদ্দ ছিল, ওর কেন তখনই পা ধুতে হবে? গেলই যখন তখন মুরগিটাকে সাথে করে নিয়ে গেলেই হত কিংবা ঘরে একটা লোক রেখে গেলেই তো হতো’।
‘হুম! সেটাই’, দুঃখ করে বললো ছোট্ট সুসান, ‘উনি কেন বাড়ির ভেতরে বালতি দিয়ে পা ধুতে গেল না? যাগগে! দাদা আমাকে বল আমি কিভাবে তোমাদের কাছে এলাম?’ বলতে বলতে সুসান দাদা’র কোলে নড়েচড়ে আয়েশ করে বসে আগুনের ওমের দিকে পা বাড়িয়ে।
‘এক শীতের রাত ছিল’, দাদা শুরু করে, যদিও এই গল্প তার ইতিপূর্বে বহুবার বলা হয়ে গেছে, ‘সারা জায়গা বরফে ছেয়ে ছিল। ছোট খরগোশগুলো সব যে যার গর্তে চলে গেল। পাখিরা জড়াজড়ি করে গাছে ওদের বাসায় বসে ছিল। সবগুলো ছেলে মেয়ে ওদের বিছানায় শুয়ে শুয়ে ঘুমাচ্ছিল’-
‘সবাই না, একজন বাদে’, বাধা দিয়ে সুসান বলে ওঠে।
‘হুম তাই তো! সবাই না। একটা মেয়ে বাদ ছিল’, দাদা ভুল শুধরে নিলেন। ‘মেয়েটা একটা ঘোড়া টানা গাড়িতে টুং টাং শব্দ তুলে যাচ্ছিলো বরফের উপরে দিয়ে’।
‘বল দাদা, আমার কি ঠান্ডা লাগছিলো?’ দাদা মাথার উপরে রেশমী রুমালটা বিছাতে গিয়ে গল্পে ছেদ পড়াতে সুসান বলে ওঠে।
‘না মেয়েটার তেমন ঠান্ডা লাগছিলো না’, দাদা দ্রুত গল্পের খেই ধরে, ‘মেয়েটার সারা গা ফারকোট দিয়ে ঢাকা ছিলো। আর মাথাটেও একটা বড়ো টুপি ছিল। আমি শুধু তার নাকের আগাটা দেখতে পাচ্ছিলাম’।
‘আর সেটা লাল ছিল’, সুসান জবাব দেয়, ‘আর তার দুই হাত পশমের মোজা দিয়ে মোড়া ছিল, আর পায়ে ছিল সাদা মোজা’।
‘এরপর ঘোড়াটা বরফের উপরে গিয়ে আটকে গেল। আর তুমিও বলতে পারছিলে না যে, ওটা কি ফেদারহেড গলি ছিল না অন্য কোন গলি। আবার টুং টাং টাকুর টুকুর শব্দ করে ঘোড়ার গাড়ি চলতে শুরু করলো গলির শেষ মাথার সাদা বাড়ীটা পর্যন্ত’।
‘আর ঐ সাদা বাড়ীতে একটা দাদী আর একটা দাদা আগুনের সামনে বসে ছিল’। সুসান উত্তর দেয়। সুসানের দাদী নীচে বসে কাপড় বুনছিলেন।
‘আমার মনে হয় আমি ঘোড়ার গাড়ির শব্দ শুনেছিলাম’, দাদী বললেন।
‘দাদা বই নামিয়ে রাখলেন’।
‘আমার মনে হল আমি ঘোড়ার পায়ের শব্দ পেলাম’। দাদা বললেন।
‘এরপর দাদী উঠে দাঁড়ায়ে জানালার বাইরে দেখলেন’।
‘আমি একটা বাতি দেখলাম, তুষারের ভিতরে দিয়ে নিভু নিভু হয়ে জ্বলছে’।
‘এরপর দাদা দরজা খুলে দিলো আর ভেতরে এলো...’
‘আমিই!’ খুশিতে চিৎকার দিয়ে ওঠে সুসান। ‘আমি মনে হয় তেমন কাঁদি নাই তাই না দাদা?’
‘না না! মোটেও না’, দাদা দ্রুত চোখ বড় বড় করে বলে ওঠেন, ‘তুমি চোখ পিটপিট করে তাকাচ্ছিলে আর আমি যখন হাত বাড়িয়ে দিলাম তুমি সোজা আমার কোলে চলে এলে’।
‘তখন তুমি কি বললে দাদা’?
আমি বললাম, ‘ওরে আমার কাজল চোখী সুসান!’
‘আর এরপর থেকে ওটাই আমার নাম’, পরিতৃপ্তির সাথে বললো সুসান। ‘এবার বল তখন দাদী কি করলো?’
‘তোমার দাদী তোমার বাবাকে জড়িয়ে ধরেছিলো। তোমার বাবা তোমাকে এখানে নিয়ে এলো যে! এলসময় তোমার বাবাও তোমার দাদীর কোলে তোমার মত ছোট্টোটি ছিল’। দাদা শেষ করলেন।
‘আর তোমরা আমাকে দেখে খুশি হলে তাই না? আর ঐরাতেই তো আমার মা আমাদের ছেড়ে আকাশে চলে গেল। তাই না দাদা? এরপর বাবা একটা ব্রিজ বানাতে গেলেন, তারপর যুদ্ধে গিয়ে আর ফিরে এলেন না’। একমনে কথাগুলো বলে গেল সুসান। মুহুর্তের মধ্যে সুসান আর তার দাদা হুইটিং এর মধ্যে নীরবতা নেলে এলো। ওরা আগুনের দিকে তাকিয়ে ছিলো। সুসান নীরবতা ভেঙ্গে বললো, ‘আমি যাই দাদা। ফ্লিপের সাথে এখন খেলবো’।
সুসান দাদার কোল থেকে পিছলে নেমে গেল দাদাকে বিষণ্ন করে দিয়ে। এরপর তুলার পুতুল ফ্লিপের সাথে ঘরকন্যা খেলায় ব্যস্ত হয়ে গেল। পুতুলটা বইগুলোর পেছনে পড়ে ছিল। ফ্লিপ আর স্নাফ ছিল সুসানের খেলার সাথী। কারন পুরো তল্লাটে আর কোন ছোট বাচ্চাই ছিল না কাছাকাছি। গলির শেষ মাথায় মিস লিজা’র বাড়ি ছিল কিন্তু সেও গত গ্রীষ্মে তার ভাগ্নির কাছে গ্রামে চলে গেল।
পুরা রাস্তায় শুধুমাত্র ছোট স্কুলটা ছিল। অনেগ আগের কথা। ঐ আমলে গ্রামে ইটের তৈরি যে একটা স্কুল ছিল এই ঢের বেশী। সুসানের কোন খেলার সাথী ছিল না তাই কুকুর স্নিফটাকেই ওর খেলার সাথী বানিয়ে নিয়েছিল। লুকোচুরি খেলায় স্নিফ অনেক বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সুসান কে খুঁজে নিতো। লেজ নেড়ে নেড়ে আর লাল জিহ্বা দিয়ে চেটে আনন্দ প্রকাশ করতো স্নিফ। আর ফ্লিপের কথা? ওটা ছাড়া সুসাঙ্কে ভাবাই যায় না। ওটা আসলে চেপ্টা মাথার লম্বাটে ধরণের একটা তুলোর পুতুল। মাথায় যার একটা চুলও ছিল না। সুসানের কাছে ফ্লিপের চোখ আর ঠোঁটদুটো ভীষণ ভাল লাগতো। আর এই ফ্লিপের কানা কানেই সুসান তার যত কথা সব বলে যেত তা সে যেমনই হোক না কেন। বিছানায় ফ্লিপ সর্বদা সুসানের কাছেই থাকতো যেন ও হাত বাড়ালেই ফ্লিপের নাগাল পায়।
সুসানের অবশ্য আরো কিছু ভাল সঙ্গীও ছিল। ওদের বাড়ির সামনের বিশাল একটা খাম্বা। সুসান আগে কখনো ওটা তেমন করে খেয়াল করে নি। একদিন “ভদ্র মহিলা এসেছেন” এই খেলার জন্য সাজতে গিয়ে সুসান একটা শালকে গায়ে জড়িয়ে লং স্কার্ট বানিয়ে পরে পোলের পাশ দিয়ে যাবার সময় মাথায় আঘাত পায়। ও তখন আরো ছোট ছিল আর এটা আর ছয় মাস আগের কথা। সুসান ব্যথা পেয়ে খাম্বাটাকে দোষারোপ করতে লাগলো। ও রাগে হাত দিয়ে খাম্বাটাকে ধাক্কা দিলো আর গোটাকয়েক লাত্থিও লাগালো কষে। সুসান ওটার অন্য দিকে একটা ক্ষয়ে যাওয়া গর্তের মত দেখতে পেল। যেটাতে ওর জামা বেঁধে গিয়ে পড়ে যায়। খাম্বাটাকে সুসানের অনেক নিষ্ঠুর মনে হয়। ও দ্রুত পায়ে বাড়িতে গিয়ে একটা ওর চুলের ফিতা নিয়ে আসে খাম্বাটার ক্ষয়ে যাওয়া যায়গায় বেঁধে দেয় যেন আর ব্যথা না দিতে পারে ওটা। দাদী বলেছিলেন যে, একবার এক ট্রাঙ্ক টেনে নিতে গিয়ে খাম্বাটার গায়ে অমন হয়ে যায়। সুসানের অবশ্য ধারণা ছিল কাজটা ওর করা। সুসান ওটার কাছে গেলেই একটা চাপড় দিতো আর গোড়ায় বসে বসে কত কথা বলে যেত! সুসান, ফ্লিপ আর ঐ খাম্বা এই তিনজন মিলে কত সুখ দুঃখের আলাপি না ওরা করতো!
আরো ছিলো একটা স্নো-বল, রাবারের বিড়াল যেগুলো ওর ছোটবেলার প্রিয় খেলনা। স্নো-বলটার একটা নাম থাকা দরকার ছিল কিন্তু ওটা আর আগের মত সুন্দর নেই। এখন ওটাকে আর সাবান ডলে গোসল দেয়া হয় না। সেই আগের শ্রী আর নেই। কিন্তু সুসান তার পুরানো খেলার বেপারে এখনও যথেষ্ট যত্নশীল।
আরেকটা শালের তৈরি খেলনা ছিল! দাদীর একটা শাল যেটা সুসান কখনো দাদীর গায়ে জড়িয়ে নিত আবার কখনো দাদীর আলমারিতে রাখা একটা বাক্সের গায়ে পেছিয়ে নিতো। আর দাদী কখনো সেটা তার আদরের পুতুলের গায়ে জড়িয়ে দিতেন, যেটা তার আদরের পুতুল সুসানকে শীতের সময় অনেক আরাম দিত।
সুসান স্কুল স্কুল খেলছিলো এক কোনায় বসে। ও নিজেই টিচার। ফ্লিপ আর ওর একটা বসার পিঁড়ি ছিল ওর ছাত্র। এই পিড়িটা হল বেনি, মোটা মত একটা ছেলে যার নামকরণ বিকালেই করা হল।
‘ফ্লিপ! তোমাকে কে বানিয়েছে?’, শিক্ষিকা জিজ্ঞাসা করলেন।
‘ইশ্বর’, মৃদুস্বরে যেন জবাব দিল ফ্লিপ। ফ্লিপের গলা দিয়ে যে শব্দ বের হয়, ওটাই সুসানের উত্তর।
‘বেনি, দুই আর দুই কত হল?’, পরের প্রশ্ন।
বেনি উত্তর দিত না। বেনি সম্ভবত উত্তর জানত না।
‘বেনি! দুই আর দুই কত হয়?’, এবার রাগত স্বরে টিচার আবার জানতে চাইলেন।
এবারো কোন উত্তর নেই। এবার কঠোরতা দরকার। সুসান আঙ্গুল উঁচিয়ে বেনিকে শাসিয়ে দেয়। সে দাদার টেবিল থেকে রুলারটা নিয়ে আসে। জানালা দিয়ে তাকিয়ে তখন দেখতে পায়, লাল রঙের একটা টানা ওয়াগন রাস্তা দিয়ে আসতে আসতে যেতে থাকে।
‘এটা সার্কাস’, সুসান চিৎকার দিয়ে বলে ওঠে, ‘দাদা ওঠো! সার্কাস আসছে’।
দাদা তড়িঘড়ি করে উঠে জানালা দিয়ে তাকায় সুসানের মাথার উপর দিয়ে। ‘না সার্কাস না। মালটানা গাড়ি। মানুষের বাসার ফার্নিচার নিয়ে যাচ্ছে। আরে! ওরা দেখি টলম্যানদের ওদিকে যাচ্ছে। মনে হয় লিজা ভাড়া দিয়ে ফেলেছে’।
সুসান আর দাদা গভীর আগ্রহে তাকিয়ে দেখতে থাকে। ‘ঐতো আরেকটা ভ্যান আসছে’, দূরে দেখতে পেয়ে সুসান চেচিয়ে ওঠে। ভ্যানগাড়িটা পুরোটা টইটুম্বুর করে মাল্পত্র দিয়ে ভরা ছিল। পেছন থেকে কিনারা বের হয়ে ছিল কিছু জিনিসের যা ঢেকে রাখা সম্ভব হয় নাই।
ঘোড়াগুলো সবকিছু নিয়ে ঠেলেঠুলে পাহাড় বেয়ে উঠে এলো একেবারে সুসানদের বাসার উলটো দিকে মুখ করে। হঠাৎ করে ধুপ করে শব্দ করে কি যেন একটা পড়ে গেল ওয়াগনের পিছনে। ‘দাদা দাদা! দেখ!’, চেচিয়ে বললো সুসান, ‘এটা একটা দোল খাওয়ার ঘোড়া!” গাড়ি থেকে পড়ে গিয়ে ওটা রাস্তার মাঝখানে দুলতে থাকলো। ‘এইবার নিশ্চই আমার সাথে খেলার মত কেউ থাকবে!’, খুশিতে ডগমগ হয়ে সুসান বললো দাদার টেবিলের উপরে উঠে। ‘হয়ত আমিও চড়বো ওই দোলনা ঘোড়ার পিঠে। কেউ তো থাকবে যে আমার সাথে খলতে পারে, তাই না দাদা?’ বলতে বলতে দুই হাত দিয়ে দাদা’র গলা জড়িয়ে ধরে সুসান।
‘তাই তো মনে হয় দাদু’, তাড়াতাড়ি বললেন দাদা যেন সুসানের বাহুমুক্ত হয়ে একটু দম নিয়ে নিতে পারেন। ঘোড়াটা দেখে তো তাই মনে হয়। তোমার মতই কেউ থাকবে হয়ত। দাঁড়াও তোমার দাদীকে জিজ্ঞাসা করে নেই। সে হয়ত এই ব্যাপারে আগে থেকেই কিছু জেনে থাকতে পারে। শোনামাত্রই তড়াক করে উঠে সুসান দৌড় দিয়ে রাস্তায় চলে এল। দাদা তখন মাতায় হ্যাট পরাতে ব্যস্ত। সুসানের তর সইছে না। দাদীকে কি কি জিজ্ঞাসা করবে দাদা তা তো সে আগেই জেনে নিয়েছে। ‘দাদী সব জানে এই ব্যাপারে!’ বলেই দৌড়ে রাস্তা দিয়ে আবা দাদার কাছে চলে আসে সুসান। ‘মিস লিজা টলম্যান এই বাড়ি ভাড়া দিয়েছে এক বছরের জন্য। দাদা, ঐ বাড়িতে একটা ছোট ছেলে আছে আমার মত, আর ওর নাম হল ফিলিপ ভেন’।
দুই// (বাগানের দেয়ালের ওপাশে)
ফিলিপ ভেন! পরদিন ঘুম থেকে উঠেই প্রথনে সুসানের এই নামটা মনে পড়লো। ফিলিপ ভেন, সেই ছেলেটা যে কিনা আমাদের পাশের বাড়িতেই থাকে। আমারই বয়সী! সুসান লাফ দিয়ে খাটের থেকে উঠে পড়ে আর জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখে টলম্যানদের বাড়িটার দিকে। কেউ নিশ্চই ঘুমত হেকে উঠে পড়েছে। কারন চিমনি দিয়ে ধোয়া দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সেই ছোট ছেলেটাকে ত দেখা যাচ্ছে না!
(চলবে)
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী নয়।।