আজ ভ্যলেন্টাইন্স ডে

শামস্ বিশ্বাস
১৪ ফেব্রুয়ারী,২০১২

প্রাচীনকালে মানুষের বিশ্বাস ছিল, ১৪ ফেব্রুয়ারি হলো পাখিদের বিয়ের দিন। পাখিরা বছরের দ্বিতীয় মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ডিম পাড়তে বসে। আবার কেউ বলেন, মধ্যযুগের শেষদিকে মানুষ বিশ্বাস করত এদিন থেকে পাখিদের মিলন ঋতু শুরু হয়। পাখিরা সঙ্গী খুঁজে বেড়ায়। পাখিদের দেখাদেখি মানুষও তাই সঙ্গী নির্বাচন করে এ দিনে। প্রাচীন রোমে ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিল রোমান দেব-দেবীর রানী জুনোর সম্মানে ছুটির দিন। জুনোকে নারী ও প্রেমের দেবী বলে লোকে বিশ্বাস করত।


নব যৌবনের দূত বসন্তকাল, প্রাচিনকালে ভারতীয় উপমহাদেশে বছর শুরু হত বসন্ত ঋতু দিয়ে, ফাল্গুন পূর্ণিমা ছিল বছরের শেষ দিন। পূর্ণ চাঁদের পর বাংলা মাস শুরু হত। বসন্ত ঋতু ছিল বিয়ের ঋতু। এই বসন্তকালেই হত দোল বা হোলি উৎসব। এই উৎসবে যুবক-যুবতীরা একে অপরের কাছে আসত, পরস্পর পরস্পরকে আগামী দিনের জন্য বেছে নিত, চলতো মন দেয় নেয়, পরের হোলি আসার আগেই বিবাহ করত। সেদিনের এই উৎসবকেই মনে করা হত স্বয়ম্বর উৎসব। আজ আমরা ভ্যালেন্টাইন-ডে পালন করছি সেও বসন্তকালে। সেদিন আমাদের হোলি, দোল বা স্বয়ম্বর উৎসব আজকের ভ্যালেন্টাইন্স-ডের মতো ব্যবসায়িক মোড়কে মোড়া ছিল না, সে উৎসব ছিল হৃদয়ের টানে, পরস্পর পরস্পরকে পাওয়া উৎসব, ভালবাসার উৎসব। কতদিন আগের এ ইতিহাস, ভাবলে অবাক হতে হয়। 


আজ আমরা উদ্যম, উচ্ছ্বাসের সঙ্গে পালন করছি ভ্যালেন্টাইন্স-ডে। কিন্তু সেন্ট ভ্যালেন্টাইন্স কি সেদিন আজকের প্রেম-প্রেম খেলার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন? বোধায় না। সেদিন তিনি রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াসের অন্যায়-অমানবিক হুকুমনামার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন।


ইতিহাস থেকে জানা যায়, রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস তার দেশ রক্ষার স্বার্থে যথেষ্ট সংখ্যক লোক সেনাবাহিনীতে সংগ্রহ করতে পারছিলো না। সেদিন তার মনে এককটা ভ্রান্ত ধারণা বাসা বেঁধেছিল যে, যুবক সম্প্রদায় দেশের কথা না ভেবে প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সংসার জীবনে মগ্ন হচ্ছে, ফলে কেউ সেনাবাহিনীতে যোগ দিচ্ছে না। এটা দেশের পক্ষে ক্ষতিকারক। এবার তিনি একটা অমানবিক হুকুম জারি করলেন যে, এখন থেকে যুবকদের বিয়ে করা চলবে না। প্রতি যুবককে অবশ্যই সৈনদলে যোগ দিতে হবে। যদি কেউ সম্রাটের নির্দেশ অমান্য করে তার শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড। সেই সময়, ২৬৯ সালে রোমের এক ধর্মপ্রচার ও চিকিৎসক, নাম সেন্ট ভ্যালেন্টাইন্স সম্রাটের সেই নির্দেশ মন থেকে মেন নিতে পারেননি, তিনি সেই আদেশের বিরোধিতা করে গোপনে চার্চে যুবক-যুবতীদের বিয়ে দিতে লাগলেন। সম্রাটের কানে খবর গেলে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে হাতেনাতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন্সকে গ্রেফতার করা হল। কারাগারে বন্দি করা হয়। তখন কিন্তু রোমান সাম্রাজ্য খৃষ্টান ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিল। বন্দি অবস্থায় তিনি কারাপ্রধানের দৃষ্টিহীন মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন। যুব সম্প্রদায়ের কাছে সেন্ট ভ্যালেইটাইনের জনপ্রিয়তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজা তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। সেই দিন ১৪ই ফেব্রুয়ারি ছিল। তার আগে ভ্যালেন্টাইন কারাপ্রধানের অন্ধ মেয়েটিকে বিদায় জানিয়ে একটি চিরকুট লিখেছিলেন। তাতে লেখা ছিল, 'ইতি তোমার ভ্যালেন্টাইন।'


অতঃপর ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউও ১ম জুলিয়াস ভ্যালেইটাইন'স স্মরণে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন' দিবস ঘোষণা করেন। 


দিনটি হওয়া উচিৎ ছিল ভালোবাসার জন্য শহীদের দিবস, কিন্তু আজ তা ভালোবাসা দিবস। পাশ্চাত্যের পুঁজিবাদী ধ্যানধারণায়, সবক্ষেত্রেই ভোগের বিষয়টি মুখ্য। মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা নিজেদের স্বার্থে দিনটিকে ভালোবাসা দিবসে উন্নীত করল। ফলে ব্যবসা বাড়ল, কিন্তু মর্যাদা পেল না শহীদ ভ্যালেন্টাইন। তাই এই ভ্যালেন্টাইন-ডের চেতনা বিনষ্ট হওয়ায় ১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার কর্তৃক ভ্যালেইটাইন উৎসব নিষিদ্ধ হয়। ইংল্যান্ডে ক্ষমতাসীন উৎসব পিউরিটানরাও একসময় প্রশাসনিক ভাবে এ দিবস উৎযাপন করা নিষিদ্ধ দেয়। এছাড়া অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও জার্মানিতে বিভিন্ন সময়ে এ দিবস প্রত্যাখ্যাত হয়।


বর্তমানে, সারা বিশ্বে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মহাসমারোহে এ উৎসব উদযাপন করা হয়। শুধু যুক্তরাজ্যে মোট জনসংখ্যার অর্ধেক প্রায় ১০০ কোটি পাউন্ড ব্যায় করে এই ভালোবাসা দিবসের জন্য কার্ড, ফুল, চকোলেট, অন্যান্য উপহার সামগ্রী ও শুভেচ্ছা কার্ড ক্রয় করে, এবং আনুমানিক প্রায় ২.৫ কোটি শুভেচ্ছা কার্ড আদানপ্রদান করা হয় এই দিনে।

আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মামুন ম. আজিজ ইতিহাস অনেক , মিথ অনেক। সব নামকরনের পিছে অনেক ইতিহাস থাকে , মিথ থাকে। কিন্তু আর কাছে মোদ্দা কথা একটা দিনে ভালোবাসর জন্য আনন্দ করা -এটা মন্দ নয়।
শামস্ বিশ্বাস অবশ্যই, তবে সেই দিন নয় যে দিন কারো মৃত্যু দিবস, সেই দিন নয় যে দিন আমাদের জাতীয় ইতিহাসে সৌরাচার বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদের রক্তে রাজপথ ভিজে ছিলো। আমাদের ১লা ফাল্গুন তো আছেই :P
ভালো লাগেনি ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী নয়।।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

মার্চ ২০২৪ সংখ্যার বিজয়ী কবি ও লেখকদের অভিনন্দন!i