বরণীয় মানুষদের উজ্জ্বল কাহিনী

মুক্তির গান (মার্চ ২০২৪)

বিশ্বরঞ্জন দত্তগুপ্ত
মোট ভোট ১৪ প্রাপ্ত পয়েন্ট ৫.৪৬
  • ১২
  • ২৯২
দেশের আকাশে , বাতাসে সর্বত্র উচ্চারিত হচ্ছে - " স্বাধীনতা চাই  , পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে চাই মুক্তি " ........
দেশের মানুষজন পুরোপুরি প্রস্তুত। কোন বাঁধাই আজ তাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না। প্রয়োজনে - কঠিন সংগ্রাম , আত্মত্যাগ , আত্মবলিদান আর এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়েও দেশমাতাকে উদ্ধার করতে সবাই আজ বদ্ধ পরিকর। একমাত্র অঙ্গীকার যে কোন মূল্যে বিপক্ষের সেনাদের হানাদার বাহিনীর থেকে দেশটাকে স্বাধীন করে আকাশ , বাতাস মুখরিত করে আনন্দে মুক্তির গান গেয়ে স্বাধীন ভাবে স্বাধীন দেশে থাকা । 

আজ সন্ধায় স্কুল বাড়ির সামনের সুবিশাল মাঠটায় এই নিয়ে এক জনসভার আয়োজন করা হয়েছে। সভা শুরুর অনেক আগেই মাঠটায় লোকে লোকারণ্য। তিল ধরবার জায়গা নেই। সবাই এসেছেন তাঁদের মহান নেতা যার নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জন করবার আন্দোলন চলছে তাঁর বক্তব্য শুনবার জন্য। যাঁর নেতৃত্বে আজ সারা দেশ উত্তাল সেই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ জননেতা যাঁকে এদেশের মানুষজন ভালবাসায় ,  শ্রদ্ধায় আর তাঁর মহান কর্মগুণে জাতির জনকের আসনে বসিয়েছেন , আজ তিনি জনসাধারনের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন। 

আমার প্রিয় দেশবাসি - এই দেশটা আমাদের কাছে মাতৃসম এক ভালবাসার দেশ। এর আকাশ , এর বাতাস , এদেশের মাটি , এদেশের সোনার ফসল সব কিছুই আমাদের প্রানের মতই প্রিয়। অথচ আমাদের এই ভালবাসার দেশটাকে বিদেশি হানাদার সেনারা দখল করে রেখেছে। আমাদের লড়াই শুরু হয়ে গিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে । আমাদের লড়াই মুক্তির লড়াই , আমাদের লড়াই স্বাধীনতার লড়াই। এই লড়াই অত্যন্ত কঠিন কারন সহজেই শত্রুপক্ষ আমাদের দাবির কাছে নতিস্বীকার করবে না। তবুও বলছি আমাদের দেশটাকে স্বাধীন করতে পরোক্ষ কিংবা প্রত্যক্ষ ভাবে আপনারা যে যুদ্ধে সামিল হয়েছেন সেটা কখনই বিফল হতে পারে না। আমাদের এই দেশটাকে ভালবেসে কিশোরী থেকে বৃদ্ধা , কিশোর থেকে বৃদ্ধ সবাই এই স্বাধীনতার যুদ্ধে কোনো না কোনো ভাবে  জড়িত রয়েছেন। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা মৃত্যুকে ভয় না করে যে ভাবে লড়াই করে চলেছেন , আমরা নিশ্চিত এই যুদ্ধে আমরা জয়ী হবই। হানাদার সেনাদের বর্বরাচিত আক্রমন , হাজারো হাজারো মানুষের আত্ম বলিদান , মা , বোনদের উপর অমানুষিক অত্যাচার সহ্য করে যে ভাবে আন্দোলন এগিয়ে চলেছে তাতে এই বিদেশী শক্তি কোনো ভাবেই আমাদের এই লড়াইকে দমিয়ে রাখতে পারবে না। জয় আমাদের হবেই , আমরা স্বাধীনতা লাভ করবই। আমি সবসময় অনুভব করি সেই দিনটির কথা যেদিন ইতিহাসের পাতায় সোনার অক্ষরে জ্বল জ্বল করে লেখা থাকবে আমাদের দীর্ঘ কঠিন লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা লাভ করবার গৌরবময় কাহিনীর কথা। পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম নেবে নতুন একটি দেশ। আবারও বলছি এই বিদেশী শক্তির কাছে ভয় না পেয়ে এই যুদ্ধে সামিল থাকুন। আপনাদের কাছে কথা দিলাম জয় আমাদের হবেই আর আমাদের দেশ মাতৃকাকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করে আমরা সবাই মিলে আনন্দে মুক্তির গান গাইবোই। 

এই যুদ্ধে সমস্ত স্বাধীনতাকামি মানুষজনের বীরত্বের কাহিনীর কথা বলে কখনই শেষ করা যাবে না। শত কঠিন অত্যাচারেও দেশটাকে ভালবেসে হানাদার বাহিনীর কাছে এদেশের মানুষ একটু সময়ের জন্যেও মাথা নত করেন নি। এক মুক্তি যোদ্ধাকে অনেকদিন চেষ্টার পর হানাদার বাহিনীর সেনারা তাদের জেরা করবার ক্যাম্পে ধরে নিয়ে এসেছে। সেনাদের কাছে খবর ছিল এই ছেলেটি বিপ্লবী দলের এক উচ্চ স্থানীয় তাত্বিক নেতা । নাম সাজিদ। একে জেরা করে মুক্তি বাহিনীর আন্দোলনের অনেক গোপন তথ্য এর থেকে জানা যাবে। 

গভীর রাত। সাজিদকে জেরা করবার ঘরে নিয়ে আসা হয়েছে। সবাই জানে মেজর আলম কাউকে জেরা করে ভিতরের গোপন খবর বেরকরবার ক্ষেত্রে একেবারে সিদ্ধহস্থ। লোকটিকে দেখতে যতটা কুৎসিত তেমনি তার জেরা করবার যন্ত্রনাদায়ক পদ্ধতি ততোধিক কুৎসিত। 
--- এই , তোর নাম কি ? 
--- আমার নাম সাজিদ।
--- দেখেতো মনে হচ্ছে তোর বয়সটা অল্প। এই গুন্ডা মুক্তি যোদ্ধাদের দলে কিসের জন্য নাম লিখিয়েছিস ? পড়াশুনা কতদুর অবধি করেছিস ?
--- আমি বর্তমানে কলেজে অধ্যাপনা করি। এখনো আমি পড়াশুনা করি নতুন কিছুকে জানবার জন্যে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র নেতাদের রাজনৈতিক চিন্তাধারা , তাঁদের গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন সম্পর্কে জানবার চেষ্টা করি। আর এখন আমাদের দেশটাকে স্বাধীন করবার জন্য তোমাদের মত গুন্ডা লোকদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে আমরা মুক্তি যোদ্ধারা লড়াই করে চলেছি। 
--- তুইতো অনেক কিছুই জানিস। তোর মুখে তো দেখছি খৈ ফুটছে। এবার বল তোদের আঞ্চলিক নেতা কুতুবউদ্দিন কোথায় লুকিয়ে রয়েছে ? 
--- আমি জানি কিন্তু বলবো না। 
--- তোরতো দেখছি খুব তেজ। কানের গোড়ায় দু , চার ঘা লাঠির বারি পরলে শুরশুর করে সব বলবি। তাই বলছি ভালোয় ভালোয় যেটা জিজ্ঞেস করছি সেটা বলে দে। 
--- বলবো না , বলবো না , বলবো না আর এটাই আমার শেষ উত্তর। 
শুরু হলো এলোপাথাড়ি লাঠির বারি। লাঠির বারি খেতে খেতে সাজিদ মেঝেতে লুটিয়ে পরে যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে বললো - তোমাদের মত পিশাচ লোকেদের কাছে আমি কখনই মাথা নিচু করবো না , এমনকি আমাকে মেরে ফেলেও নয়।
মেজর আলম রেগে গিয়ে বললো - শোন , আমি তোকে আধ ঘন্টা সময় দিলাম। তারপরেও যদি না বলিস তবে তোকে জীবিত অবস্থায় হাত , পা বেঁধে মাটি চাপা দিয়ে দেব।

প্রবল অত্যাচারে সাজিদের সারা শরীর থেকে রক্ত ঝরে পরছে। জ্ঞান থাকলেও কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। মেজর আলম বললো - কিরে শয়তান , কি ঠিক করলি ? আমাদের প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিবি নাকি আমাদের অন্য ব্যবস্থা করতে হবে ? তোরা যে কঠিন আন্দোলনে নেমেছিস দেশটাকে স্বাধীন করতে , সেটা কোনো দিনও হবে না। বরং আমাদের প্রশ্নের উত্তরগুলি দিয়ে দে আর আমরাও তোকে বীরের সম্মান দিয়ে ছেড়ে দেব। শুধু তাই নয় , তুই যদি চাস তবে কাল সকালের সমস্ত প্রচারিত পত্রিকাগুলিতে তোর ছবি সমেত আমরাই ফলাও করে ছাপিয়ে দিয়ে প্রকাশ করে দেব তোর বীরত্বের কথা। তুই তোর দলবল নিয়ে আমাদের সৈন্যদের সঙ্গে লড়াই করে জয়ী হয়ে তোদের স্বাধীনতার আন্দোলনকে অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছিস। চিন্তা করিস না , এই সাজানো ঘটনাটা কাকপক্ষী কেউ টের পাবে না। রাতারাতি তুই তোদের দলের কাছে আরো বড় নেতা হয়ে যাবি। শর্ত একটাই - তোদের দলের সব গোপন খবরগুলো আমাদেরকে জানিয়ে দে।

সাজিদ মেজরকে বললো - তোমার দেওয়া এই প্রস্তাবকে আমি ঘেন্না করি। এই যুদ্ধে আমরা জয়ী হবোই। শত শত মানুষের আত্মত্যাগ , আত্মবলিদান কখনোই বৃথা হতে পারে না। তোমাদের এই বর্বরোচিত আক্রমণের জবাব তোমরা পাবেই আর সে দিনটি আসতে আর বেশি দেরি নেই। আমাদের মহান নেতা তথা জাতির জনকের নেতৃত্বে আমরা আজ একত্রিত , গনজাগরিত আজ আমরা কোনো কিছুতেই আর ভয় পাই না। আমরা সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি সেই সোনালী দিনটির জন্য যেদিন আমরা মুক্ত হয়ে আমাদের স্বাধীন দেশে স্বাধীন ভাবে বাস করবো।  

মেজর হিংস্ৰ বাঘের মতো ক্ষিপ্ত হয়ে রাগে গড়গড় করতে করতে একজনকে ডেকে বললো - এই শয়তানটা কোনো কথাই শুনছে না। এবার ওকে উচিত শিক্ষা দিতে হবে। কিছু একটা ইঙ্গিত দিয়ে বললো - ওকে এখান থেকে নিয়ে গিয়ে ভালো করে খাইয়ে দাও। মিনিট দশেক পরে লোকটা এসে বললো - স্যার , ভাল মত খাইয়ে দিয়েছি। সাজিদ এবার নিজেই খাবার হয়ে গেছে। পাশের জঙ্গলে শিয়াল , কুকুরদের মধ্যে ফেলে দিয়ে আসবো ? দেহটার আর কোনো খোঁজই পাওয়া যাবে না। মেজর বললো - ওটা করিস না। সকালবেলায় ওর বাড়ি থেকে ওকে আমরা ধরে নিয়ে এসেছি সুতরাং বডিটা ওদের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে বলবি ওকে সামান্য জিজ্ঞাসাবাদ করে আমরা ছেড়ে দিয়েছিলাম হয়তো নিজেদের গোষ্ঠী দ্বন্ধের জন্য নিজের দলের লোকেদের দ্বারা ও নিহত হয়েছে।  

বাবা , মার একমাত্র সন্তান সাজিদের মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। সারা এলাকা গভীর শোকে একেবারে পাথর। সবার একটাই অঙ্গীকার এর যোগ্য জবাব দিয়ে নিজেদের মাতৃভূমিকে ওদের থেকে ছিনিয়ে নিতে হবে। সাজিদের বাবা অনেক কষ্টে চোখের জল চেপে বললেন - আমার ছেলে শহীদ হয়েছে। দেশের স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছে। আমি আজ গর্বিত। এই স্বাধীনতা পাবার যুদ্ধে শত শত মানুষের আত্মত্যাগ , বীরত্বগাঁথার কাহিনী কখনই বিফল হবে না। স্বাধীনতা আমরা জয় করবই। 
     
অবশেষে দীর্ঘ দিনের শত শত মানুষের আত্ম বলিদানের কঠিন লড়াইয়ের সমাপ্তি হলো। দেশটা আজ স্বাধীন। পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম নিলো স্বাধীন সার্বভৌম এক রাষ্টের। স্বাধীন দেশে স্বাধীন ভাবে থাকার এ যেন আনন্দের এক শান্তির অনুভূতি। আজ আমরা পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত। কিন্তু যাঁরা আমাদের এই দেশের জন্য কঠিন সংগ্রাম করেছেন , যাঁরা আমাদের এই ভালোবাসার দেশটিকে স্বাধীনতা এনে দিতে তাঁদের মূল্যবান প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন , কঠিন লড়াই করেছেন তাঁদেরকে আমরা যেন কখনো ভুলে না যাই। তাঁদেরকে প্রণাম জানিয়ে আমরা মুক্তির গান গাই , বিজয়ের গান গাই। তাঁদেরকে চোখে না দেখতে পেলেও তাঁদের উপস্থিতি সব সময় আমরা অনুভব করি। 

শ্রদ্ধেয়া সাবিনা ইয়াসমিনের গানের কথায় --

" ....আমি গাইবো গাইবো বিজয়েরই গান 
ওরা আসবে চুপি চুপি
যারা এই দেশটাকে
ভালোবেসে দিয়ে গেছে প্রাণ .... "   
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
জুলফিকার নোমান অভিনন্দন দাদা, সেই সাথে শুভ কামনা রইলো।
রবিউল ইসলাম সত্যিই স্বাধীন চিন্তাভাবনা দিয়ে স্বাধীনতা উল্লেখ করেছেন। চমৎকার।
Fahad Anwar অসাধারণ লাগলো
ফয়জুল মহী নান্দনিক উপস্থাপন করেছেন । মুগ্ধতায় ছুঁয়ে গেছে হৃদয়!
মোঃ মাইদুল সরকার ভাল লাগলো।
ভাল লেগেছে জেনে খুশি হলাম। অনেক ধন্যবাদ।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

দেশের স্বাধীনতা আনবার জন্য যাঁরা আন্দোলন করেছেন , প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন তাঁদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে এই কাহিনীটি লিখবার চেষ্টা করেছি।

১২ আগষ্ট - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ৪৫ টি

সমন্বিত স্কোর

৫.৪৬

বিচারক স্কোরঃ ২.৬৬ / ৭.০ পাঠক স্কোরঃ ২.৮ / ৩.০

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“মে ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ মে, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী