৩১ জুলাই,২০১৩

আধ ঘণ্টা আগে পণ্ডিত বলেছিল যে সে নিচে। আমি মনে মনে হিসেব কষার চেষ্টা করি।

শাহ আলম সাহেব অতিথিদের জন্য যত্ন আত্তির চূড়ান্ত করে ছেড়েছেন। এখানে সেখানে লিফট- এলেভেটরের ছড়াছড়ি। চাইলেও পায়ে হেঁটে উপরে ওঠার কোন উপায় নেই। তারপরও কেউ যদি সিঁড়ি ভেঙে আট তলায় উঠতে চান- তবে সর্বাধিক কত সময় লাগা উচিৎ!

সাইদ সুমন ভাইকেও কিছুটা চিন্তিত মনে হচ্ছিল। উনি ও কি আমার মত পণ্ডিতের সিঁড়ি ভাঙ্গা সংক্রান্ত গাণিতিক সমস্যা নিয়ে ভাবছেন কিনা- কে জানে!

একটু পর মুকুল ভাই এলেন। ভাবীকে অনেকদিন পর দেখলাম।

মুকুল ভাই অনেক শুকিয়ে গেছেন, ভাবি আগের মতই সুন্দরী। শুধু বাচ্চা দুটো পাল্টে গেছে। পণ্ডিতের সিঁড়ি সমস্যার সমাধান হলনা, তারউপর আবার নতুন অঙ্ক!

আমি পিচ্চি দুটোকে ভালো করে খেয়াল করি। নাহ কোন ভুল নেই। একদম নতুন সেট। আগে কখনো দেখিনি।

একটু পর অবশ্য পিচ্চি রহস্যের জট ছুটে গেল। অনেকগুলো শপিং ব্যাগ হাতে নিয়ে দৃশ্যপটে হাজির হলেন মুকুল ভাইয়ের বন্ধু। ছ ফুটের ও বেশি লম্বা। স্বাস্থ্য ও সেরকম।

পুলিশের মত করে লোকটা চারপাশ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলেন। আমি নিচু স্বরে মুকুল ভাইকে জিজ্ঞেস করি-

-      ইয়ে মুকুল ভাই, ব্যাপারটা আসলে ঠিক ধরতে পারছিনা। আপনি কি বেশি শুকায় গেছেন নাকি আপনার বন্ধুর পাশে খাড়ানোর কারনে ...

মুকুল ভাই ফিকফিক করে হাসেন, তবে আমার সংলাপের শেষাংশ মনে হয় বিশালদেহি বন্ধুবরটি শুনে ফেলেছেন। চোখ বড় বড় করে তিনি আমার দিকে তাকান। আমি সাইদ সুমন ভাইয়ের ঘাড়ে মাথা রেখে গভীর ঘুমের ভান করি।

স্পষ্টবাদী (ঠোঁটকাটা!) হিসেবে রওশন জাহানের সুনাম (দুর্নাম!) আছে। ফোন করে তিনি আমাকে জানিয়ে দিলেন যে তার আসতে দেরি হবে। আমরা যেন তার আর মুস্তাফিজ ভাইয়ের ইফতার আলাদা করে রাখি।

-      হ্যালো ওস্তাদ (পণ্ডিত মাহি)! কই আপ্নে!

-      এইতো ওস্তাদ, আমি দোতলায় ... আসতাছি...

আড় চোখে তাকিয়ে দেখি সাইদ সুমন ভাই মোবাইল ফোনে ক্যালকুলেটর খুলে বসেছেন। আমি ও তাতে সায় দিই। সিঁড়ি রহস্যের সমাধান হওয়া জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে...

 

বশীর ভাই লোকটি বেশ আমুদে ধরনের। ছোটখাট বিষয়ের মাঝে আনন্দ খুঁজে নেবার দুর্লভ গুণ লোকটির মাঝে আছে।

এবারই তিনি বন্ধু মেলায় প্রথম এসেছেন। একেকজন সদস্যদের সাথে তিনি পরিচিত হন আর ভীষণ আমোদে মেতে ওঠেন।

মাঝে মাঝে নতুন কেউ আসলে তিনি হাত নেড়ে সবাইকে থামিয়ে দেন, তারপর রহস্যের ভঙ্গিতে বলেন-

-      আপনি বিষণ্ণ সুমন ভাই, ঠিক বলছিনা!

এমনি করে তিনি একে একে জুইফুল, মামুন ভাই রোশনি, আরেফিনকে চিনে ফেললেন।

সমস্যাটা বাঁধল শেষের দিকে এসে। মুকুল ভাইয়ের সেই হারকিউলিস বন্ধুটির দিকে আঙ্গুল উচিয়ে ম্যাজিশিয়ানের ভঙ্গিতে বললেন-

-      যদি আমার ভুল না হয়ে থাকে, তবে আপনিই বিন আরফান... ঠিক না! আপনি তো আর্মিতে আছেন, তাইনা ভাই?

মুকুল ভাইয়ের বন্ধুটি হতভম্ব হয়ে ডানে বায়ে তাকান,

-      বিন আরফান! আমি!!!

পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে এগিয়ে আসলেন লাভগুরু আখতার ভাই। চিপায় পড়ে থাকা বিন আরফানকে টেনে বের করে তিনি বশীর ভাইয়ের সামনে মেলে ধরেন।

-      এই নেন ভাই, এই হল আপনার বিন আরফান।

প্রকৃত বিন আরফানকে দেখে বশীর ভাইয়ের চোখ কপালে উঠে গেল।

-      আপনিই বিন আরফান! আপনি আর্মিতে চাকরি করেন!

কাছে বসে থাকা বিষণ্ণ সুমন ভাবলেন- এটি ওয়ান্স ইন এ লাইফটাইম ধরনের পরিস্থিতি। ঘাড়ের উপরের লম্বা চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে তিনি অবহেলার ভঙ্গিতে বলেন-

-      তাইলেই বুঝেন অবস্থা! দুনিয়ার যত আন্ধা কানায় বাংলাদেশ আর্মি ভইরা গেছে। এদের রিক্রুটমেন্টের দুই একটা স্যাম্পল দেখলেই বুঝা যায় হেগো চোখে কত্তবড় সমস্যা!  

বিষণ্ণ সুমনের কণ্ঠ শুনেই বিন আরফান যেন তার হারানো শৌর্য ফিরে পেলেন-

-      আপনি! আপনি ও আসছেন তাহলে! তা কোন যোগ্যতায় সাহিত্যের বারান্দায় পদচারনা করেন!

টেবিলের পাশ দিয়ে একজন ওয়েটার যাচ্ছিলেন। মুকুল ভাই তাকে কাছে ডেকে বললেন-

-      মিউজিক ভলিউমটা একটু কমায় দেন, অনেক দিন রিয়েল গান বাজনা শোনা হয়না ...    

আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
জাকিয়া জেসমিন যূথী চেনা ঘটনাকে এত সুন্দর করে বর্ণনা দিতে সবাই পারেন না। অনেক ভালো লাগলো।
Lutful Bari Panna পন্ডিতের হিসেবের সাথে কিছু এক্স ফ্যাক্টর যুক্ত হবে। কারণ সে একা ছিল না। যদি তলা প্রতি গড়পড়তা ৫ মিনিট করে বরাদ্দ হয়, তাহলেও অন্তত আরো ১০ মিনিট অপেক্ষা করে থাকা উচিত ছিল.. :)। বিন আরফান এবং বিষণ্ণ সুমন প্রসঙ্গে আমার একটা কৃতজ্ঞতাবোধ কাজ করছে। তাদের এই সাহিত্যের বারান্দা আর সাহিত্যের পেছনের দরজার ফাপরে পড়ে গকর ওপর থেকে উঠে যাওয়া আগ্রহটা আবরো ফিরে এসেছিল। আর ফিরে এসেই একটা বড়সড় পুরস্কার বগলদাবা করে ফেলেছি। একটা ঘটনার স্পেশাল ইফেক্ট এর চেয়ে ভাল আর কী হতে পারে?
রনীল N/A UNION ALL SELECT NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL# আপনার বিশ্লেষণে হতভম্ব হয়ে গেলাম। গল্পের না বলা অংশগুলো যেভাবে সেই পটুয়াখালী তে বসেই দেখে ফেলেছেন- সেটি অভূতপূর্ব। পুরনো লাভগুরু বেশ কিছুদিন ধরে পেতের ব্যামোতে ভুগছেন... ভাবছি, নতুন একজন লাভগুরুর এপইন্টমেন্ট দিয়ে দিবো নাকি! :P
বিষণ্ন সুমন ছুরি দিয়ে যেমন খুন করা যায়, তেমনি আবার সুন্দর শিল্পকর্ম'ও করা যায় .................
তানি হক প্রিয় প্রিয় মানুষ গুলো সব এক হয়েছিলেন জেনে খুব আনন্দিত হলাম সবার জন্য দোয়া ও শুভেচ্ছা .. ধন্যবাদ রনিল ভাই ..আপনাকে স্পেসাল ধন্যবাদ :)
এফ, আই , জুয়েল # অনেক সুন্দর --- কম্বিনেশনটাও বেশ ভাল । == একে , ওকে, যাকে , তাকে ------, যেসব জবরদস্ত কথা যেভাবে বলা হয়েছে---তাতে ভলিউমটা আপনা হতেই কমে যাওয়ার কথা । কিন্তু আসল সর্বনাশটা মুকুল ভাই-ই কইরা দিল । " রিয়েল গান "----দিনেদিনে তার রিয়েলিটি হারিয়ে ফেলছে----- হারাচ্ছে তার জৌলুস ।।

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী নয়।।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

মার্চ ২০২৪ সংখ্যার বিজয়ী কবি ও লেখকদের অভিনন্দন!i