বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে মিজানুর রহমান রানার উপন্যাস ‘নীল জোছনা’। বইটি প্রকাশ করেছে ‘মুক্তদেশ প্রকাশন’। প্রকাশক জাবেদ ইমন। বইটি সম্পর্কে দু’জন সাহিত্যবোদ্ধার বিস্তারিত আলোচনা পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো :
-----------------------------------
নীল জোছনা ও কিছু কথা :
কাজী শাহাদাত
---------------------------------
খুব কাছ থেকে আমি যে সকল লেখককে প্রত্যক্ষ করেছি, তাদের মধ্যে মিজানুর রহমান রানা অন্যতম। খুব পরিশ্রমী ও নিষ্ঠাবান লেখক হচ্ছেন এই রানা। তাঁর ‘নীল জোছনা’ উপন্যাসটি পড়লে আমি কেনো, অন্য পাঠকরাও তাঁর সম্পর্কে এমন ধারণা অর্জন করতে সক্ষম হবেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গভীরভাবে বিশ্বাসী মিজানুর রহমান রানা ব্যক্তিগতভাবে তাঁর চাল-চলনে, আচার-আচরণে, কথাবার্তায় যে সকল কিছু অনুসরণ করেন ও প্রকাশ করেন, আমার কাছে মনে হয়েছে ‘নীল জোছনা’য় তার অনেকাংশই বাক্সময় হয়েছে। দেশের যাবতীয় অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে দেশপ্রেমের অনিবার্যতাকে তিনি তাঁর উপন্যাসে বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছেন। উপন্যাসে রোমান্টিকতাকে প্রধান উপজীব্য মনে হলেও কাহিনী নির্মাণে লেখক বৈচিত্র্য সৃষ্টির প্রয়াস চালিয়েছেন। তথ্য প্রযুক্তির বিভিন্ন দিক উল্লেখ করে সমকালের দাবিকে গুরুত্ব দিয়েছেন। উপন্যাসের প্রধান নায়ক তুষার ও প্রধান নায়িকা জেনিফার উভয়েই তাদের জীবনে মনের মানুষকে হারানোর জমানো কষ্ট লালন করে সিলেটের জাফলংয়ে ‘পিয়াইন নদী’তে তা’ বিসর্জন দিতে কাকতালীয়ভাবে পরিচয়সূত্রে আবদ্ধ হয়েছেন। তারপর মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত দেখতে গিয়ে একে অপরের সাথে মনের কষ্ট বিনিময় করে পারস্পরিক দুর্বলতার শিকার হন এবং এ দুর্বলতা থেকে সৃষ্ট প্রণয় তাদেরকে শেষ পর্যন্ত পরিণয়সূত্রে করে আবদ্ধ। আবার তারা গেলেন জাফলংয়ে সেই পিয়াইন নদীর তীরে, তবে এবার মনের কষ্ট বিসর্জনে নয়, মনের আনন্দের স্বচ্ছ প্রতিফলনেÑ মধুচন্দ্রিমায়। পিয়াইন নদীর নীলাভ স্বচ্ছ পানিতে স্নিগ্ধ জোছনা হয়ে যায় নীল ও লীন। সেজন্যেই বোধ করি উপন্যাসটির নাম হয়েছে ‘নীল জোছনা’। ‘নীল জোছনা’ টাকা দিয়ে কিনে কেউ পড়লে কারো লস্ হবে বলে মনে হয় না। তথ্য-তত্ত্ব এবং দেশপ্রেমের চেতনা আহরণে আগ্রহী পাঠকমাত্রই এ উপন্যাসটি পড়ে হতে পারেন ভীষণ লাভবান এবং উপকৃত। আমি এ উপন্যাসটির ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা প্রত্যাশা করি।
লেখক পরিচিতি ঃ কাজী শাহাদাত, সভাপতি, চাঁদপুর প্রেসক্লাব ও প্রধান সম্পাদক দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ। E-mail : kazishahadat65@yahoo.com
-----------------------------------------------
নীল জোছনায় আলোক সম্পাত
ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়–য়া
-------------------------------------------------
সময়! বাঙালি জীবনে মহানায়ক। কখনো সতেরশ’ সাতান্ন কিংবা আঠারোশ’ সাতান্ন হয়ে সে কাঁদিয়েছে বাঙালিকে। আবার কখনো ঊনিশশো সাতচল্লিশ কিংবা উনিশশো আটচল্লিশে সে হয়েছে বিদ্রোহী। তারও আগে ঊনিশশো তিরিশে সে রক্তে জ্বেলেছে আগুন। ঊনিশশো বায়ান্নে সময় এসেছে যুগপৎ বাঙালির শোক ও শক্তি হয়ে। ঊনসত্তরে আমরা সময়কে পাই অগ্নিতরুণরূপে। ঊনিশশো একাত্তরে সময় যেনো আমাদের স্বাধীনতা। ঊনিশশো পঁচাত্তরে সময় আমাদের কাছে খলনায়ক। তেমনি ঊনিশশো নব্বইয়ে সময় আমাদের কাছে হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালা। সময়ের বাঁশরীর রাগিনীতে ঊনিশশো নব্বই নেচেছে রুদ্ররূপে অনিদ্র হয়ে, উত্তুঙ্গ-উম্মাতাল স্বৈরাচার নাশিনী হয়ে। ঊনিশশো নব্বইয়ের এই আগুনঝরা সময়কে নিয়েই ‘নীল জোছনা’। ‘নীল জোছনা’ সদ্য প্রকাশিত একটি উপন্যাস। অমর একুশে বইমেলা উপলক্ষে তরুণ ঔপন্যাসিক মিজানুর রহমান রানা’র প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ। এই গ্রন্থের নায়ক বহুল আলোচিত ‘সময়’। এ’ সময়ের ব্যাপ্তি নব্বইয়ের স্বৈরাচার পতনের আগে-পরে। অর্থাৎ নব্বইয়ের দশকের ঘটনাবলীই এখানে মূল প্রতিপাদ্য। উপন্যাসটিতে প্রেমের অমৃত ধারা আছে বটে। তবুও উপন্যাসটি একটি রাজনৈতিক উপন্যাসের আদল। কৃষণ চন্দর যেমন ঊনিশশো সাতচল্লিশের দেশবিভাগকালীন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাকে ধরার জন্যে উপাস্যভিন্ন দুই নর-নারীর প্রেমকে টেনে এনেছিলেন তেমনি ‘নীল জোছনা’ উপন্যাসেও প্রেম এসেছে পাঠককে রাজনীতির নির্মমতার মধ্যে সহজে টেনে আনার জন্যে। কৃষণ চন্দর-এর ‘গাদ্দার’ উপন্যাসের মূল উপজীব্য সময়। নষ্ট সময়ের নষ্ট দাঙ্গা। তেমনি ‘নীল জোছনা’ উপন্যাসেও প্রেম এসেছে নব্বইয়ের আগুনঝরা দিনগুলো তুলে ধরার জন্যে। সুনীলের ‘প্রথম আলো’তে ভরত আর ভূমিসূতোর প্রণয়-কাহিনী তৈরি করে লেখক পাঠককে সভ্যতা ও সংস্কৃতির উদয়ালোকের সন্ধান দিয়েছেন। কেবল তথ্য কিংবা সময়ের সংঘটিত ঘটনার বর্ণনা ইতিহাস হিসেবে পরিগণিত। তাই সুনীল ভরত ও ভূমিসূতোর রসায়ন তৈরি করে ‘প্রথম আলো’ বিতরণ করেছেন পাঠকের মননপাত্রে। আলোচ্য ‘নীল জোছনা’ উপন্যাসটিও তেমন। এখানে তুষার আহমেদ আর সীমানার ভাঙ্গা প্রেম কিংবা তুষার আহমেদ আর জেনিফারের শীতজর্জর ভাঙ্গা মননের বাসন্তী মলয়ে গড়ে ওঠা প্রণয়-রসায়নের ছদ্মবেশে অস্থির রাজনীতি আর দেশপ্রেমহীন স্বৈরশাসনের ঘটনা পাঠকের চোখের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। ‘নীল জোছনা’ উপন্যাসে লেখক অনেকগুলো সৃজনকল্পনা এবং সময়-সম্ভাবনাকে তুলে ধরেছেন । তিনি উপন্যাসের শেষদিকে প্রযুক্তি ও কল্পবিজ্ঞানের আমেজ তৈরি করেছেন। অর্থাৎ লেখক প্রযুক্তিঋদ্ধ ভবিষ্যৎ নির্মাণের দিকে স্বপ্নবিলাসী হয়েছেন। তিনি স্বপ্ন দেখেন একদিন কোনো বাঙালি হয়তো বা এমন এক কম্পিউটার প্রোগ্রাম নির্মাণ করবেন, যার বদৌলতে তার সামনে কোনো ব্যক্তি বসলে তার সম্পর্কে সমস্ত তথ্য কম্পিউটার অনায়াসে বলে দেবে। এই ঘটনা প্রবাহের পরিসমাপ্তি আবার পাশ্চাত্য থ্রিলার-এরও বাতাস কিছুটা তৈরি করে। শুধু প্রেম বা রাজনীতি বা কল্পবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিই নয়, উপন্যাসে উঠে এসেছে সঙ্গীত ও কাব্যের প্রতি লেখকের অনুরাগ। উপন্যাসটি উত্তম পুরুষে বর্ণিত। নায়ক তুষার আহমেদ স্বয়ং গল্পটা বলেছেন। তুষার একজন মেধাবী ছাত্র, যে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন নিয়ে পড়েছে কিন্তু তার আগ্রহ সাহিত্যে। অর্থাৎ তুষার একজন লেখকও। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকানোর পর তুষার ব্যবসা দ্বারা কর্মজীবী হয়েছে। তুষার-এর একটি মাত্র উপন্যাস ‘স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়’ প্রকাশিত হয়েছে। ‘স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়’ একটি কালের দলিল হিসেবে উপন্যাসে চিহ্নিত হয়েছে, যার প্রকাশে নড়ে যায় স্বৈরশাহীর ভিত। উপন্যাসটি নিষিদ্ধ হয়। নিষিদ্ধ হলেই জনপ্রিয় হয়। তাই তুষার আহমেদের ‘স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়’-ও জনপ্রিয় হলো। তুষারের টিভি ও সংবাদপত্রে সাক্ষাৎকার প্রচার হলো। এক উপন্যাসের বদৌলতে তুষার রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গেলো। ভালো ছাত্র কিংবা সাহিত্যিক হলেও তুষার রাজনীতি বিরোধী। নষ্ট সময়ের নষ্ট রাজনীতি তুষারকে বিরক্ত ও অনীহ করে তোলে। তবুও তুষার একজন দেশপ্রেমিক। তাকে দেশপ্রেমের পবিত্র আলোড়ন রক্তে আন্দোলিত করে থাকে। তাই তুষারের উপন্যাসে ফুটে ওঠে দেশপ্রেম। অনির্বাণ ময়ূখ তুষারের বন্ধু। ছাত্ররাজনীতির ফসল। মাতৃ রাজনৈতিক দলের মরণখেলার বলি হলো অনির্বাণ। প্রাণে নয়, কর্মে। অনির্বাণ ময়ূখ একজন আদর্শ প্রগতিশীল রাজনীতিক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলো। কিন্তু জয়নাল হাকিমের মতো আঁধার রাজ্যের গডফাদারদের দৌরাত্মে মিথ্যে হত্যার হুলিয়া নিয়ে আত্মগোপন করে তাকে প্রাণ বাঁচাতে হয়। অনির্বাণ ময়ূখের মধ্যে পাঠক অভি-নীরুর ছবি খুঁজে পেতে পারেন। যারা স্বৈরাচারের হাতে পদদলিত মেধা ও তারুণ্যের বড় বিজ্ঞাপণ। উপন্যাসে তুষার আহমেদের বড় ভাই ইমতিয়াজকে আদর্শ বলে মনে হয়। ইমতিয়াজ বুয়েটের মেধাবী ছাত্র এবং ব্যান্ডের আধুনিক ধারার সঙ্গীত-স্রষ্টা। তার জীবনেও প্রেম আসে। শীলার ভালোবাসার শক্তির কাছে ইমতিয়াজের তারুণ্যকে পরাভূত করা প্রজ্ঞা পরাজিত হয়। দু’জনের পরিণয়ে তারুণ্য বিজয়ী হয়। তুষারের সাথে জড়িয়ে আছে তিনটি নারী চরিত্র। রুবা তুষারের মামাতো বোন। গ্রাম হতে শহরে আসা হৃদয় ও বুদ্ধির মিশেলে কৈশোর ছাড়ানো তরুণী হয়ে ওঠা চরিত্র। মনেপ্রাণে ভালোবাসে তুষারকে। প্রত্যাশা থাকলেও সে ভালোবাসায় পাগলামো নেই, নেই বেপরোয়া সাহস। তুষারকে সীমানাহীন কষ্ট দেয় সীমানা। সীমানা ক্ষমতাসীন রাজনীতিকের একমাত্র মেয়ে। তুষার ও সীমানার প্রেমের অংশে জীবনানন্দ বড়ো অংশ জুড়ে আছেন। জুড়ে আছেন নূরুল হুদাও। এদেরকে আশ্রয় করে তুষার ও সীমানা জমিয়েছে আলাপ, খুলেছে হৃদয়ের ঝাঁপি। কিন্তু শেষকালে সীমানা উড়ে যায় সীমানা ছাড়িয়ে, বড়লোক বাবার চাপে, বরের হাত ধরে। এ’ হাত তুষারের নয়। তুষার তাই কষ্টের জালে বন্দী হয়ে থাকে দীর্ঘ সময়। সীমানা এখানে আস্থাভঙ্গের কারণ নয়, সীমানা নিজেই এই অপরাজনীতির খেলায় পিতার প্রভাবের শিকার। দেশপ্রেমী তুষারের ‘স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়’ অদেশপ্রেমী স্বৈরাচারের পদমূলে আঘাত করে বলেই স্বৈরাচারের বাসুকী ফণা হানে তার প্রেমে। তার প্রেম বিষে নীল হয়। তুষার প্রেমহারা নীলকণ্ঠ- আর সীমানা মনের জানালা অন্ধকারে বন্ধ করে জীবনের সাদামাটা রেলপথে যাত্রা। তুষারের তৃতীয় নারী জেনিফার। উপন্যাসের সূচনায় পাঠকের সাথে দেখা জেনিফারের। কিন্তু তুষার জেনিফারকে দেখেছে তার আহত তারুণ্যে। জেনিফারও তুষারের মতো অতীত প্রেমের আহত কপোতী। জেনিফার তার বাবা-মায়ের প্রেমের ফসল বাংলাদেশ ও বৃটেনের। তুষার ও জেনিফারের প্রেমপাঠে হঠাৎ একটুখানি উঁকি মারে অমিত-লাবণ্য। শেষের কবিতা এসে হঠাৎ করে আলোর ঝলকানি আনে। তুষার সাহিত্যিক, জেনিফার কবি। কবি ও কথকের কনক-যুগল প্রেমের কল্লোলে তরী বেয়ে কূলে ভিড়ে সানাইয়ের সুরে। তৈরি হয় দু’জনের বাসরে স্বপ্নের নীল জোছনা। উপন্যাসে বাংলার সৌন্দর্য বর্ণিত হয়েছে অকাতরে। সিলেটের জাফলং, পিয়াইন নদীর স্বচ্ছতা, মাধবকুণ্ড প্রপাতের শব্দময়তা পাঠককে নিসর্গ-প্রণয়ী করে তোলে। উপন্যাসে লেখক তার ব্যক্তি জীবনের প্রিয় চরিত্রগুলোকে সেঁটে দিয়েছেন জায়গামতো। কাজী শাহাদাত, নূরুল হক প্রমুখ চরিত্র বাস্তবের অস্তিত্ব হয়েও উপন্যাসে বিচরণশীল। এই বিচরণশীলতা লেখকের জীবনে তাদের মঙ্গলপ্রভাবের আলো বিকিরণ করে। উপন্যাসটিতে কিছুটা হলেও মুক্তিযুদ্ধ স্থান নিয়েছে। তুষারের বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। তুষার ও ইমতিয়াজ সেই মুক্তিযোদ্ধার চেতনাকে প্রজ্জ্বলিত করে চলেছে যে যার মতো। একজন সঙ্গীতে, অন্যজন সাহিত্যে। মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির গর্বের ধন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ পাওয়া। মুক্তিযুদ্ধের পাশাপাশি শহীদ ডাঃ মিলন এবং নূর হোসেনের আত্মবলিদানও এখানে উঠে এসেছে যথাযথ দক্ষতায়। এ’ কথা প্রমাণ করে যে- লেখক ঘটনার ঐক্যে সৎ থাকার চেষ্টা করেছেন। উপন্যাসখানি নির্মেদ নয়। কিছুটা অনাকাক্সিক্ষত কলেবর উপন্যাসের গতিকে রেললাইন ছাপিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছে। তবুও শেষে সময় তথা উপন্যাসের মূল নায়ক সেই সমেদ বর্ণনাকে অগ্রাহ্য করেছে। বর্তমানের মুখে অতীত বর্ণনা উপন্যাসে একাধিকবার পরিলক্ষিত। আলাদা শিরোনামে একথা ব্যক্ত না করলেও পাঠকের এতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা হতো না। উপন্যাসের সূচনা কাব্যিক প্রচেষ্টার প্রয়োগ। বৃষ্টি এখানে উপমেয়। প্রেম এখানে উপমান। বৃষ্টির দুইরূপ। বৃষ্টি সজীব করে, বৃষ্টি ভাসিয়ে দেয়। প্রেমেরও দুইরূপ। প্রেম কেড়ে নয়, প্রেম ভরিয়ে দেয়। সীমানার প্রেম তুষারকে সবকিছু কেড়ে নিয়ে রিক্ত করে গেছে। জেনিফারের প্রেম সবকিছু ফিরিয়ে দিয়ে ভরিয়ে দিয়ে গেছে। তাই প্রেম ও বৃষ্টির জোয়ার কখনো কাক্সিক্ষত, কখনো অনাকাক্সিক্ষত। ‘নীল জোছনা’ স্বপ্নের বিষয়, বিরল ভাবনা। যে মাসে দু’টি পূর্ণিমা হয় সে মাসের দ্বিতীয় পূর্ণিমাকে বলে নীল চাঁদ। নীল পূর্ণিমা চাঁদের আলোই তো নীল জোছনা। এ’ বড়ো বিরল। অনেক প্রতীক্ষার পর নীল চাঁদ, নীল পূর্ণিমা আর নীল জোছনার দেখা মেলে। স্বৈরাচারাক্রান্ত দেশ গণতন্ত্রের পথে উত্তরণে নব্বইয়ের আন্দোলন বাঙালির জীবনে এক সুখময় সময়। এ’ সময়টা বড়ো বিরল। এ’ সময় বড়ো দামী। বাঙালির জীবনে নব্বইয়ের গণ আন্দোলনের বিজয় যেনো বিরল নীল জোছনার মোহনীয় আলোক সমুদ্র। যেমনটা মোহনীয় জেনিফারের কাক্সিক্ষত প্রণয়ে তুষারের দাম্পত্যে পরিণয়ের নীল জোছনা। ‘নীল জোছনা’ সেই বিরল জন্মক্ষণ যে ক্ষণে জন্ম হলো ভবিষ্যতের এক কথাশিল্পীর।
E-mail : drpijush2002@gmail.com
লেখক পরিচিতি ঃ কবি, প্রাবন্ধিক, গল্পকার ও গীতিকার; মেডিসিন ও হৃদরোগের চিকিৎসক।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী নয়।।