খাট থেকে অনতিদূরে কাঠের লম্বা টুল। তারই উপর টিমটিম করছে চার্জার লাইটটা। নিঃশব্দে। ঘরজুড়ে আলোর মৃদু আভা আর নিস্তব্ধতা ভেসে বেড়াচ্ছে জমাট মেঘের মত। নিচে অসার দেহ এলিয়ে আছে বিছানায়। জোছনা পারুলের। চেতনায় তার নানা ভাবনা চঞ্চলা শিশুর মত ছোটাছুটি করছে। দেখতে দেখতে পথ শেষ হয়ে এল জীবনের। প্রায় আশিটা গ্রীষ্ম-বসন্ত মিলে গেল হাওয়াই মিঠার মত। স্বাদ পেতে না পেতেই শূন্য হয়ে যাওয়া যেন !

আফসোস তুমি জানোই না সুর গিটারের তারে না সুর থাকে আঙুলে । ঠিক প্রথম দিন যেমন তারে টোকা দিলে শুধু শব্দ হয়, তারপর দিনে দিনে সুর হয় । জীবনটাও তাই কখনো শব্দ কখনো সুর ।

রাজু ফিজিস্ক নিয়ে পড়াশুনা করলেও ঠাকুরদেবতা মানে। রাজুর মা যখন রাজুর হাতে একটা মা কালীর কবজ পড়িয়ে দেয় বিপদআপদ থেকে রক্ষার জন্য, রাজু একবারও দ্বিমত করেনি। আমরা অবশ্য মাঝে মাঝে ওর পেছনে লাগার জন্য বলতাম, বিদ্যাসাগরের দেশের লোক, মাতৃভক্তি তো হবেই।

ভয়ানক দুর্যোগের রাত ছিল। দুদিন ধরে প্রবল ঝড় ও বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টি চলছিল। সেদিন বিকেল থেকে ঝড়টা থেমেছে। বৃষ্টির তীব্রতা কমলেও, আকাশে কালো মেঘ। মেঘের গর্জন, বিদ্যুতের ঝলকানি সাথে তীব্র আওয়াজের সাথে বজ্রপাত। জানালা দরজা কাঠ কাঠ করে বন্ধ। কাঁচের জানালা দিয়ে বিদ্যুতের ঝলকানিতে বাইরের অনেকটা ভেসে উঠছে।

মাঘ মাসের শীতের রাত । কয়েকদিন ধরে শৈত্য প্রবাহ চলছে । আজ আবার ঠান্ডাটা একেবারে জাঁকিয়ে পরেছে । স্টেশন চত্বরটা একেবারে সুনসান । শীতের পোশাকের সাথে মাথা থেকে পা অবধি কম্বল জড়িয়ে স্টেশন মাস্টার বংশীলালকে বললেন -- রাত ১১ টার ট্রেনটা পাস করিয়ে দেবার পর আবার সেই রাত ১ টায় ট্রেন ।

তখন দারগা মনে মনে বলে হুম "দুর আত্বার আবার ছলের অভাব হয় না" কখন যে, কি করে বসে কে যানে। আচ্ছা এবার বলো দেখি। এখন তোমার কি করা হয়?
- না স্যার! এখন আমার কিছু করতে হয় না। আগে যে "নাইট" ধান্দা করতাম কবেই ছেড়ে দিয়েছি। এখন আর ওসব ভালো লাগে না। বয়সতো কম হলো না।

আমি এবার আয়াতুল কুরশি পড়া শুরু করে দিলাম। মনের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা ভয়টি এখন আর নেই। আমি ওদের পূর্বেকার কোনো কথাই বললাম না। হঠাৎ আমার কাছে মনে হলো গোঙানির আওয়াজটি ৯ নম্বর রুম থেকে আসছে। এই রুমে জুয়েল থাকে।

মেয়ে মাকে জিজ্ঞেস করে, ‘বাবা এত দেরি করে কেন!’
মা কোনও জবাব খুঁজে পায় না। তাকিয়ে থাকল ফাঁকা উঠোনটার দিকে। বলল, ‘নুন দিয়ে ভাত খেয়ে নে, সকালে মাছ দিয়ে খাস।’
‘না! বাবা আসুক …’

রোজকার মত সাথীর ছড়ানো চুল থেকে থেকে উড়ছে, কখনও ডানে, কখনও বায়ে। দুয়েক গোছা আলগোছে ছুঁয়ে যাচ্ছে পেলব মুখমণ্ডল। সাথী চোখ বন্ধ করে অতলান্তিক সুরের সাগরে ডুবে আছে। ক্রমশ সে গভীর থেকে গভীরে তলিয়ে যাচ্ছে।

আমার খুব কষ্ট মা, খুব কষ্ট! তাইতো কাঁদি.. ’ বলতে বলতে তমাল পিছন হটতে হটতে আস্তে আস্তে পুকুরের পানিতে নেমে যেতে লাগল। হাটু পানি, কোমর পানি, গলা পানি, ধীরে ধরে অদৃশ্য হয়ে গেল পুকুরের পানিতে।