কাঁচটা ঝাপসা, অযত্নে পড়ে আছে বহুদিন হয়তো। এই জানালা দিয়ে কেউ হয়তো দেখে না। আমি তবুও দেখার চেষ্টা করছিলাম। ভাবছিলাম বাইরের দিকে যেয়ে যদি পরিস্কার করে দিয়ে আসতে পারতাম, নাহ্, তা তো সম্ভব না। তৃতীয় তলার একটা জানালা বাইরে থেকে পরিস্কার করা কোন জাতের কাজ নয়, আবার তাও যদি হয় এমন একটা রাস্তা দেখার জন্য যাতে দেখার মতো তেমন কিছুই যাওয়া-আসা করে না । আমি ঘুষি দিয়ে জানালার একটা খোপ ভেঙ্গে ফেললাম, তারপর সেদিক দিয়ে হাত ঢুকিয়ে কাঁচটা পরিস্কার করলাম আমার খয়েরী রুমাল দিয়ে। এবার আমি আবার দেখতে লাগলাম, কিন্তু না এবারও ঝাপসা, চশমাটা পরিস্কার করলাম কিন্তু না কিছুই বদলালো না। চশমাটা খুলে চোখটা ঘষতে গেলাম দেখি গালে রক্ত লেগে গেল। এতক্ষনে বুঝলাম যে সমস্যাটা চোখ কিন্তু চোখটা কি করে পালটাবো?
একদিন কেউ আমার দিকে তিনটা প্রশ্নের তির্যক বান ছুড়ে দিয়েছিল, ১. কতটা উত্তপ্ত হলে আগুন হওয়া যায়? ২. কতটা হালকা হলে বাতাস হওয়া যায়? ৩. কতটা নিচু হলে পথ হওয়া যায়?
আমি যদি ঠিক সমান কঠিন একটা প্রশ্ন করি, কতটা শক্ত হলে বহুদিনের পুরনো চোখ পাল্টানো যায় ? পরিবর্তনে আমিও বিশ্বাসী তবে এই ঝাপসা চোখটাকে তো বদলাতে পারলাম না।
ও! পা টা ভিজে যাচ্ছে, আমার আঙ্গুল বেয়ে রক্ত ফোঁটা ফোঁটা করে পড়ছে। আমি হসপিটালের বারান্দায় বসে একবার আমার হাতের দিকে দেখছি, একবার বিছানায় শুয়ে থাকা রোগীর ব্লাড ব্যাগের দিকে দেখছি। রক্ত ফোঁটায় ফোঁটায় তার ধমনীতে মিশছে। কেউ কি জানে সে মৃত্যুর দিকে এগোচ্ছে না জীবনের দিকে?
আমি একটা বোকামি করে ফেলেছি, যেই খোপটা আমি ভেঙ্গেছিলাম সেটা দিয়েই তো দেখতে পারতাম পাশের টা আবার মুছতে গেলাম কেন? দুরছাই আমিও একটা পাগল। হ্যাঁ আমি সত্যিই পাগল হয়ে গেছি হুইল চেয়ারে বসে আছি। আমাকে না! কেউ দেখতে আসে না, আমিতো কারো জন্য কিছু করি নি। আমার না, খুব জেদ হয়, প্রতি মুহূর্তে কান্নার গন্ধ মাখানো নিঃশ্বাস আমি ছাড়ি। কেউ না, একবার জানতেও চায় না আমার কি হয়েছে? এই যে দু পায়ের উপর ভর করে দ্রুত গতিতে হেঁটে চলা মানুষদের ক’জন জানে যে পৃথিবীর এতগুলো ধর্মের মাঝেও ভালোবাসা নামক একটা ধর্ম আছে, জানে? জানে না। প্রমান দিবো, এই যে নার্সটা যে আমার ড্রেসিং করতে আসছে তাকে দিয়ে দেখাচ্ছি। -আচ্ছা ভালোবাসা ধর্মের নাম শুনেছেন কখনো? নার্সঃ যতসব আজেবাজে, ওসব কখনো শুনিনি।
এই দেখলেন। আমিও জানতাম না, যতদিন দৌড়াচ্ছিলাম। কিন্তু আজ যখন ওটার আমার খুব দরকার পড়েছে তখন বুচ্ছি, এই ধর্মের চর্চা হওয়া দরকার।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ফাহমিদা বারী
এই জাতীয় গল্পগুলোকেই আমি বলি মাইন। লুকোনো থাকে। হুট করে কারো অসাবধান ঠোকাতে প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরিত হয়। ছোট কথায় সার্থক ছোটগল্প। বড় পরিসরেও লিখুন। আপনার হাতের কাজ বেশ ভাল। বোঝাই যাচ্ছে। শুভকামনা রইলো।
প্রজ্ঞা মৌসুমী
গান মনে পড়ে গেলো Love is my religion... অনুভূতিকে ধর্ম করে দিলে বিপত্তিও আছে। কেননা একটা জায়গায় এসে ধর্ম অন্ধ হয়ে যায়। গল্পে অস্পষ্টতা রেখেছেন- কৌশলটা ইন্টারেস্টিং, সব মিলিয়ে গল্পে ভালো লাগা।
গানটা আমার খুব ভালো লাগার। ভালোবাসাটা কিন্তু ক্রিয়া পদ আর অনুভুতি নাম পদ আমাদের বানানো। ভালবাসতে হয় এরমানে কিছু নির্দিষ্ট কাজ করে যেতে হয়। আমি এভাবেই দেখি, দয়া করে কিছু মনে করবেন না। গল্পের ধরন আপনার ভালো লেগেছে, জেনে আমার আমি পুলকিত।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
গল্পটা মুলত একজন আপাত-দৃষ্টিতে পাগল ব্যক্তির জবানিতে বলা হয়েছে। জীবনভর সে দৌড়িয়ে বেড়িয়েছে জীবনের তাগিদায়। নিজের অজান্তেই একটা জীবনকে কঠিন বানিয়ে ফেলেছিল, অতীতে যা সফলতা ভাবতো বর্তমানে তা একেবারেই মূল্যহীন ঠেকছে তাঁর কাছে। এই যে তাঁর কাঠখোট্টা, মায়া মমতাহীন, ভালোবাসা বিবর্জিত স্বভাব আজ তাকে একলা বানিয়ে দিয়েছে। সেও ভালোবাসা আশা করছে কিন্তু তাঁর পাশে কেউ নেই কারন সেও কারো পাশে কখনো ছিল না। সে তাঁর নিজের অবস্থান থেকে আমাদের সমাজের অন্য মানুষদের দেখছে এবং সে পর্যবেক্ষণ করছে যে সবাই জীবনটাকে কঠিন করে তুলছে, বুঁদ হয়ে ছুটে চলছে।
৩১ ডিসেম্বর - ২০১৩
গল্প/কবিতা:
৪ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।