অসহায় অত্নসমর্পণ

অসহায়ত্ব (আগষ্ট ২০১৪)

আপেল মাহমুদ
  • ১১
  • ৩৯
২৫.১০.২০১৩ ইং। শুক্রবার।
সূর্যটা তখনো অস্ত যায়নি, তবুও দু’চোখে রাত সমান আঁধার নেমে এলো অপুর। আভামনির অবস্থা বেশী ভালো নয়। একমাত্র মেয়ে। ২২ দিন বয়স। গত রাত থেকে হঠাৎ-ই খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। মায়ের দুধ-ই খাচ্ছিল। কিভাবে যে কি হয়ে গেলো, কিছুতেই কিছু মুখে নিচ্ছে না আর। শুধু কান্না করছে। কবিরাজের ঝাঁর-ফুঁক কোন কাজ দিচ্ছে না। ডাক্তার দেখানো জরুরী।

শহরে যাওয়ার জন্য একটা গাড়ি পাওয়াও যেনো সৌভাগ্যের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে বিএনপি-জামায়াতের সহিংস আন্দোলন চলছে। চলছে অনির্দিষ্ট কালের জন্য হরতাল কর্মসূচি।
হরতালের নামে পিকেটিং, ককটেলবাজি, গাড়ি ভাংচুর আর ছিনতাই যেনো দূর্বত্ত্বদের অধিকারে পরিণত হয়েছে! ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থাও শোচনীয়। সব মিলিয়ে জনজীবনে দুর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। আর আমরা সাধারণ মানুষ নিভৃতেই অসহায়ত্বকে পুঁজি করে চলেছি।

অবশেষে একটি ব্যাটারি চালিত অটো পাওয়া গেলো। আভামনিকে নিয়ে শহরে রওয়ানা দিলো অপু। সাথে আভামনির মা আর নানা-নানিও চললো। পনেরো কিলোমিটার রাস্তা। ভাড়া দিতে হবে ৪৫০টাকা! অন্য সময় হলে অবশ্য ১০০টাকার বেশী হতো না।
চার-পাঁচ কি.মি. এর মত যাওয়ার পর হরতাল পালনকারীরা পথ আটকালো। অটোওয়ালা আর অপু বোঝানোর চেষ্টা করলো যে, গাড়িতে ইমারজেন্সি রুগী আছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। লাঠি হাতে এক পিকেটার আচমকা তেড়ে এসে অটোর গ্লাসে দিলো এক বাড়ি! মূহুর্তেই গ্লাস টুকরো হয়ে মাটিতে ঝরে পড়লো। অটো ওয়ালার অসহায় মুখ দেখে মনে হলো- গ্লাসের চেয়ে বুঝি তার বুকেই বেশী আঘাত লেগেছে।

খানিক পরে টহলরত পুলিশের গাড়ির শব্দে পিকেটাররা পালালো। অপু ভাবলো- অটোওয়ালা আর যেতে চাইবেন না। কিন্তু সেরকম কিছু ঘটলো না। পরে কথায় কথায় জানতে পারলো- পরের দিন আটোওয়ালার কিস্তি আছে।
আরও সাত-আট কি.মি. রাস্তা নির্বিঘেম যাওয়া গেলেও শহরের প্রবেশ মুখে ঢুকতেই বিপত্তি ঘটলো। হঠাৎ কোথা থেকে চার-পাঁচ জন পিকেটার এসে অটো থামাতে বাধ্য করলো। কিছু বুঝে উঠার আগেই অটোর টায়ার ফুটো করে দিয়ে চলে গেলো। অটোওয়ালা আর অপুর কপালে চিন্তার ভাঁজ আরও স্পষ্ট হয়ে উঠলো।
অগত্য অটো থেকে নেমে পকেট থেকে পাঁচ’শ টাকার একটি নোট বের করে দিলো অপু। অটোওয়ালা পঞ্চাশ টাকা ফেরত দিতে চাইলেও বিবেক মহোদয় বাধা দিলো বলে আর ফেরত নিলো না অপু।
বাকি পথ খানিকটা হেটে আর খানিকটা রিক্সা যোগে পাড়ি দিয়ে অবশেষে সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ ডাক্তার সাহেবের চেম্বারে পৌছিল ওরা।
ডাঃ মোঃ শফিকুল আলম। শিশু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। অনেক ভাল ডাক্তার। ভাল মানুষও বটে। অপুর পূর্ব পরিচিত। হরতালের কারনে ডাক্তার সাহেবের চেম্বারে রুগীর ভীর নেই বলে যাওয়া মাত্রই সিরিয়াল পাওয়া গেলো। ডাক্তার সাহেব মনোযোগ সহকারে বেশ সময় নিয়ে দেখে বললেন-‘গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিনাল ট্র্যক্ট-এ ইনফেকশন হয়েছে। ডাক্তার সাহেব কিছু ইনজেকটেবল ঔষধ লিখলেন আর দ্রুত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিলেন। আভামনির মা হাউ-মাউ করে কেঁদে উঠলো। তাকে সান্ত¡না দেবার ভাষা জানা নেই বলে নিরব থাকলো অপু।

ডাক্তার সাহেবের চেম্বার থেকে বের হয়ে আবারও বিপাকে পড়লো ওরা। রাস্তায় রাস্তায় রাজনৈতিক দলগুলোর হরতাল সমর্থনে কিংবা হরতাল বিরোধী মিছিল। বেশীর ভাগ দোকান বন্ধ। মাঝে মাঝে ককটেল বিস্ফোরনের শব্দ ভেসে আসছে। কোন যানবাহন পাওয়া যাচ্ছে না! শহর জুড়ে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। গুমোট বাধা শঙ্কা মাড়িয়ে খানিক রাস্তা হেটে অবশেষে একটা রিক্সা পাওয়া গেলো। তাতে আভামনিকে নিয়ে আভামনির মা-বাবা চেপে বসলো হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। আর আভামনির নানা-নানি হেটেই এগোলেন।

হাসপাতালের জরুরী বিভাগে পঁচিশ টাকায় ভর্তির টিকিট কাটা হলো। অপু যতই তাড়াহুড়ো করতে চাইলো, ভর্তি প্রক্রিয়া যেন ততই দীর্ঘ হলো। জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার কর্তব্য ভুলে খানিক সময়ের জন্য বাহিরে গিয়েছেন! তিনি রুগী দেখে ভর্তি লিখবেন, তবেই ভর্তি হবে।
পাক্কা পনের মিনিট পর ডাক্তার সাহেব আসলেন। অপু ভাবতেই পাচ্ছে না- এই লোকটি ডাক্তার! খানি আগে হাসপাতালের প্রবেশ মুখে এক পানের দোকানের সামনে এই লোকটিকেই সিগারেট ফুঁকতে দেখেছে সে।
কর্তব্যরত চিকিৎসক অবশেষে নিওনেটাল ওয়ার্ডে ভর্তি লিখলেন। হাসপাতালের ৪র্থ তলায় নিওনেটাল ওয়ার্ড। সেখানে গিয়ে অপুর মতো আরও অনেক অসহায় মুখ চোখে পড়লো। এক বেডে তিন-চারটি বাচ্চা রুগী। কতক বেডে পাঁচটিও রয়েছে!
আভামনির ভর্তি ফাইল রেডি করে সিস্টার এসে অপুর হাতে ঔষধের লিস্ট ধরিয়ে দিয়ে গেলো। অপু ঔষধ কিনতে গেলো।
৩য় তলার সিঁড়িতে নামতেই অপু খেয়াল করলো কালো বর্ণের খাটোমতো এক লোক ওর পিছু পিছু আসছে। অপু জিজ্ঞস করলো- কিছু বলবেন?”
লোকটি হেসে জবাব দিলেন- না-----। ওষধ কিনতে যাচ্ছেন নাকি?”
- জ্বি।”
- সতর্ক থাকবেন! মেডিকেলের সামনে ঔষধের দোকানগুলো কিন্তু অপরিচিত লোকদের কাছে কয়েকগুন দাম নেয়। আর দালালের খপ্পরে পড়লে তো কথাই নেই।”
- জ্বি, ধন্যবাদ। ----- আপনি কি হাসপাতালের স্টাফ, নাকি আপনার কেউ ভর্তি আছে?”
- না-না, আমি এখানকার পিওন। নাম আক্কাছ আলী। আপনার নাম?”
- অপু!”

কথা বলতে বলতে ফার্মেসীতে চলে এলো দু’জন। আক্কাছ আলী ফার্মেসীর লোককে আগ বাড়িয়ে বললো- লাবলু ভাই! এই যে ইনি (অপুকে দেখিয়ে) আমার বড় ভাই। ঔষধপত্রের দাম ঠিকমতো নিবেন।” ফার্মেসী ওয়ালা ‘আচ্ছা’ বলে লিস্ট অনুযায়ী ঔষধ বেড় করে দিলেন। অপু ৮৭২ টাকা মিটিয়ে ঔষধ নিয়ে হাসপাতালে এলো।

রাত দশটা বেজে পনেরো মিনিট। হাসপাতালের বেলকনিতে গ্রীল ধরে দাড়িয়ে আছে অপু। বেশ শীত পরেছে। হিমেল বাতাসও বইছে। শীতের কোন কাপর সাথে আনা হয়নি বলে খুব শীত করছে অপুর। কিন্তু তার চেয়ে বেশী কষ্ট পাচ্ছে যেন আভামনির জন্য! অতটুকু মেয়েকে স্যালাইন পুশ করেছে। না জানি কত কষ্ট পাচ্ছে! একবার দেখে আসবে সে উপায়ও নেই। নিওনেটাল ওয়ার্ডে রোগীর একজন এটেনডেন্ট ছাড়া অতিরিক্ত লোকের প্রবেশ নিষেধ। সিস্টারদের কাছে থেকে খবর নেওয়ারও জো নেই। তারা যেনো রাগ নিয়েই থাকেন। কথায় যেনো আগুনের ফুলকি ঝরে! সরকারী চাকুরী করেন বলে সাধারণ মানুষদের সেবা করবেন কেনো? তারা তো সরকারের বেসরকারী লোকদের পকেট ভরিয়ে তবেই চাকুরী পেয়েছেন!

আভা মনির নানা এসে ডাকলেন অপুকে। সিস্টার আরও কয়েকটা ঔষধ আনতে বলেছেন। সেগুলো আনতে হবে। লিস্ট হাতে নিয়ে ফার্মেসীর দিকে এগোলো অপু।
ফার্মেসীর সামনে যেতেই আল-আমিনের সাথে দেখা হলো। আল-আমিন অপুর বন্ধু। রাজশাহী হেলথ টেকনোলজীতে একসাথে পড়েছে দু’জন। এখন সে সরকারী চাকুরী করছে। অপুরও চাকুরী হতে পারতো। কিন্তু সে কিছুতেই সরকারী চাকুরীর লোভে বেসরকারী লোকের পকেট পুজো করতে রাজী হয়নি! বোকা (?) কোথাকার!

- দোস্ত কেমন আছ?” - হাসিমাখা মুখে প্রশ্ন করে আল-আমিন।
- আলহামদুলিল্লাহ ভাল। তুমি কেমন আছ দোস্ত?
- ভাল। অনেক দিন পর দেখা হলো। হঠাৎ হাসপাতালে কেনো?
- আমার মেয়ে অসুস্থ। নিওনেটাল ওয়ার্ডে ভর্তি আছে।”
- ওওও---। কোন দরকার হলে জানাইও। আমি হেমাটোলজি ডিপার্টমেন্ট-এ আছি।
- আচ্ছা জানাবো।”
- তুমি কি করছো এখন?”
- একটা ডায়াগনস্টিক সেন্টার করতে চাচ্ছি। কিন্তু লাইসেন্স পাচ্ছিনা।”
- টাকা ছাড়, ঠিক লাইসেন্স পেয়ে যাবে।”
- ও পথে হাটলে অনেক কিছুই পেতাম। আচ্ছা বাদ দাও ওসব। তোমার কি অবস্থা?
- এইতো চলে যাচ্ছে। ভাবছি এখানেই থেকে যাব।”
- ড়শ দোস্ত! আমাকে যেতে হবে। আবার দেখা হবে।”
- এখন কোথায় যাবে?”
- কিছু ঔষধ কিনতে হবে।”
- চলো।”

আল-আমিন অপুকে বেশ অল্প দামে কিনে দিলো। অপু অবাক হয়ে গেলো। এর আগে কি তবে ঔষধের দাম বেশী নিয়েছে? আগের মেমোটি বের করে আল-আমিনকে দেখালো অপু। আল-আমিন দেখে বললো -
- নিশ্চয় তুমি দালালের খপ্পরে পড়েছিলে। সে ঐ ফার্মেসী থেকে কমিশন পেয়েছে।”
- হতেই পারে না। সে এই হাসপাতালের পিওন।”
- চেনো তাকে?”
- না। তবে সে তার নাম বলেছে ‘আক্কাছ আলী’।”
- আক্কাছ আলী? হা-হা-হা! আক্কাছ আলী নামে এই হাসপাতালে কোন পিওন নেই। ও একটা দালাল। এ রকম অনেক দালাল হাসপাতালের চারদিকে ছড়িয়ে আছে। অসহায় মানুষদের রক্ত চুষে খাচ্ছে প্রতিনিয়ত!”

অপু বিষয়টি মানতে পারছে না কিছুতেই। সে একজন শিক্ষিত মানুষ হয়েও যদি এতোটা বোকা হতে পারে, তবে অশিক্ষত সরল মানুগুলি না জানি কতোটা বোকা হচ্ছে! হায়রে দেশ! সোনার বাংলাদেশ! সোনা বেচে পেতল কিনছি আর নিজেদের বেজায় চালাক ভাবছি! হা-হা-হা!

আর ভাবতে পারে না অপু। আল-আমিনের কাছে থেকে বিদায় নিয়ে সোজা হাসপাতালে চলে গেলো।

২৬.১০.২০১৩ ইং। শনিবার।
সকাল ১১.০০টা। ডাঃ শফিকুল আলম স্যার এসে আভা মনিকে দেখে গেছেন। আগের চেয়ে এখন অনেকটা ভালো। একটু-আধটু মায়ের দুধ খাচ্ছে। ডাক্তার তবুও পাঁচ দিন থাকতে বলেছেন। এন্টিবায়োটিক এর ডোজ কমপি­ট করে নিয়ে যেতে হবে।

গতকাল একদম ঘুমোতে পারেনি অপু। শরীরটা খুব খারাপ লাগছে। হাসপাতালের হাসপাতালীয় গন্ধে পেট ফুলে যাবার উপক্রম! তাই খানিকটা নির্মল বাতাসের লোভে ছাদে গেলো অপু। ছাদের পশ্চিম কোণে যেতেই দেখলো- এক মধ্য বয়সী মহিলা কাঁদছেন। কাছে এগিয়ে যেতেই মহিলাটি মুখ ফিরে তাকালেন। অপু বিব্রত বোধ করলো। খানিকটা সময় নিয়ে জিজ্ঞেস করলো - কি হয়েছে আপনার? কাঁদছেন কেনো?”
জনৈক মহিলা আরো জোরে কেঁদে উঠলেন। কি করবে বুঝে উঠতে পারলো না অপু। খানিক বাদে আবারো জিজ্ঞেস করলো - আপনার কেউ কি অসুস্থ?” ভদ্র মহিলা হ্যা সূচক মাথা নাড়লেন। অপু আবারও প্রশ্ন করলো- কে?”
- আমার ছেলে।”
- কি হয়েছে?”
- অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে বাবা! মোটর সাইকেল অ্যাকসিডেন্ট। বাম পায়ের হাটুতে মারাতমক আঘাত পেয়েছে”
- এখন কি অবস্থা?”
- ভালো নয় বাবা। দুই দিন আগে ভর্তি করেছি। আজ অপারেশন হয়েছে। ডাক্তার বলেছেন, এ অপারেশন সফল হয়নি। পায়ের রক্তনালী ছিড়ে গেছে; থেতলে অনেকটা নষ্ট হয়ে গেছে। এখানে রক্তনালীর অপারেশন সম্ভব নয়। ঢাকা হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে নিয়ে যেতে হবে। শুধুমাত্র ওখানেই এই অপারেশন সম্ভব। এখন আমি কি করবো? ছেলেটা ছাড়া আমার আর কেউ নেই বাবা!”
ভদ্র মহিলা আবারও হাউ-মাউ করে কেঁদে উঠলেন। অপু অযথা সান্ত¡না দেবার চেষ্টা করলো। খানিক পরে এক সপ্ত কি অষ্টদশী মেয়ে এসে ভদ্রমহিলাকে উদ্দেশ্য করে বললেন- মা! জিহাদ আপনাকে ডাকছে।”
ভদ্র মহিলা চোখ মুছতে মুছতে অপুকে উদ্দেশ্য করে বললেন- ুজিহাদ আমার ছেলে। আর ও (মেয়েটিকে দেখিয়ে) আমার ছেলের বউ।” অপু মেয়েটির দিকে একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো। পৃথিবীতে এতো অসহায় চোখ বুঝি আর কখনোই দেখেনি সে!

২৯.১০.২০১৩ ইং। মঙ্গলবার।
মঙ্গলবারে মঙ্গল হয় কি না জানিনা। তবে আজকের দিনটি অপুর কাছে অত্যান্ত মঙ্গলজনক মনে হচ্ছে। আল্লাহর সীমাহীন অনুগ্রহে আভামনি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ্য।
হাসপাতাল থেকে ছুটির কাগজ লিখে দিয়েছে। কিছু ঔষধ কিনতে হবে। চারতলায় লিফটে উঠলো অপু নিচ তলায় যাবার জন্য। দোতলায় এসে লিফট দাঁড়ালো। দরজা খুলতেই সেই অসহায় চোখ আবারো চোখে পড়লো অপুর। চোখে চোখ পড়তেই মেয়েটি বিব্রত বোধ করলো। চোখ নামিয়ে লিফটে উঠে জি বাটন চাপলো। অপু জিজ্ঞেস করলো- ুকেমন আছেন?” মেয়েটি জবাব দিলো না। অপু লজ্জ্বায় দ্বিতীয় বার জিজ্ঞেস করার সাহস পেলো না।
গ্রাউন্ড ফ্লোরে এসে লিফট দাঁড়ালো। অপু আগে বের হলো। মেয়েটি পেছন থেকে ডাকলো- “শুনুন।” অপু দাঁড়ালো। মেয়েটি বললো- ুআমাকে একটা চাকুরী দিতে পারেন?” এমন প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিলো না অপু। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। মেয়েটিকে যত ভীতু আর লাজুক ভেবেছিলো এখন সেরকম মনে হচ্ছে না। কিন্তু চোখ দুটো নিশ্চিত বলে দিচ্ছে সে সাহসীও নয়। উদাসী দৃষ্টিতে সে চোখে তাকিয়ে রইলো অপু ঘোর লাগা মানুষের মতো।
মেয়েটি আবারও বললো –
- একটা চাকুরী আমার খুব দরকার।”
অপু চকিত ফিরে পাল্টা প্রশ্ন করলো –
- আপনাদের ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিলো না?”
- গিয়েছিলাম। গতকাল ফিরে এসেছি।”
- জিহাদ ভাইয়ের অপারেশন হয়েছে?”
- না। ফিরিয়ে দিয়েছেন। ওখানকার ডাক্তারেরা বলেছেন- অপারেশন করে লাভ হবে না। পায়ের কোষগুলো মরে গেছে। অ্যাকসিডেন্টের দশ ঘন্টার মধ্যে যদি নিয়ে যেতে পারতাম, তবে পা-টি বাঁচানো যেতো।”
- তবে দেরী করেছিলেন কেনো?”
- আমরা কি আর জানতাম! যারা জানতেন সেই শুয়োরের বাচ্চা ডাক্তরেরা যদি একটু দায়িত্বশীল হতেন, তবে আমার স্বামীর পা বেঁচে যেতো। এরকম সিরিয়াস রুগী দু’দিন ফেলে রাখার কোন মানে ছিলো না। অবশ্য আমার স্বামীর পঙ্গুত্বের জন্য সবচেয়ে বেশী আমিই দায়ী। আমি বাইকে চড়তে খুব পছন্দ করতাম। আমার পছন্দের মূল্য দিতেই আজ তার এ অবস্থা।”
- তার মানে কি পা কেটে ফেলতে হবে?”
- হুঁ! আজ রাতেই অপারেশন। কিছু মনে না করলে আপনার ফোন নাম্বারটি দিন। আমি আপনার সাথে যোগাযোগ করবো। আমার নাম কুসুম। এস.এস.সি পাশ। একটা চাকুরীর ব্যবস্থা করে বড় ভাইয়ের দায়িত্ব পালন করবেন প্লীজ।”

অপুর পৃথিবীটা আবারো এলোমেলো হয়ে গেলো। মঙ্গল বারের সমস্ত মঙ্গল ¤­ান হয়ে গেলো। ব্যথায় বুকের ভেতরে মোচড় দিয়ে উঠলো। স্বেচ্ছাচারী সমাজের পায়ে কুসুমের অসহায় আতমসমর্পন বিবেক মহোদয়কে আরও বার পশুর কাতারে দাঁড় করালো।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
দীপঙ্কর বেরা Khub Sundar ekti golpo bhalo laglo
সাদিয়া সুলতানা মৌসুমীদি বিস্তারিত সুন্দর মন্তব্য করেছেন। তার সাথে সহমত। শুভকামনা।
আখতারুজ্জামান সোহাগ পুরো গল্পটা যেভাবে লিখেছেন মনে পড়তে গিয়ে মনে হচ্ছিল যেন নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন! বেশ কিছু মেডিকেল সায়েন্সের টার্ম ব্যবহার করেছেন, যার জন্য প্রশংসা করতেই হয়। শুভকামনা লেখকের জন্য।
প্রজ্ঞা মৌসুমী গতকাল হাসপাতালে তিক্ত অভিজ্ঞতা আমারও হলো। ইমার্জেন্সী কেয়ার, লোকজন ব্যথায় কাতরাচ্ছে অথচ কর্মচারীরা কী ঢিলে-তালে চলছে। দুই ঘন্টা পরে ডাকা হলো শুধুমাত্র রেজিস্টার করার জন্য। সে যাই হোক, কার্তিকের শুরুতে শীত অতটা বেশী পড়েনা বোধহয় নাকি পড়ে? যদিও রূঢ় বাস্তবতা তবে গল্প পড়ে ভালো লেগেছে। কাহিনী, লেখনী চমৎকার। গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিনাল ট্র্যক্ট, পায়ের রক্তনালী ছেড়া/ থেতলে নষ্ট হওয়া/ হাসপাতাল-এসব মেডিকেলের ব্যাপার স্যাপার কিছুইতো জানিনা। অথচ আপনি এসব নিয়েই গল্প লিখলেন, প্রশংসা করতেই হয়। এখান থেকে নাটকের স্ক্রিপ্টও হতে পারে।
biplobi biplob বেশ ভাল লাগল গল্পটি, হৃদয় নেড়ে গেল। ভাল থাকবেন মাহমুদ ভাই
সুগত সরকার ভালো লাগল। শুভেচ্ছা রইল। আমার কবিতায় আমন্ত্রণ রইল।
শামীম খান হৃদয় ছুঁয়ে গেল । গল্পের বিন্যস , শব্দচয়ন , সব ই খুব ভাল লেগেছে । শুভেচ্ছা রইল ।

২৯ ডিসেম্বর - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪