অবশেষে তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিলো….কি অবলীলায় কথা কয়ডা কইয়া গল্প শেষ করতো পুরানকালের আমাগো দাদা পরদাদা গল্পকাররা। মারফত আলী শাড়ীর দোকানথন খালি পকেট আর হাত ভর্তি শাড়ীর থইলা লইয়া বাইর হইতে হইতে ভাবতে থাকে। বউয়ের মুখের হাসিখান বড় মিঠা, দেইখা অভাইগ্যা মন ভাবতে লইছিল….কেনাকাটার শেষ…অবশেষে শান্তির হাওয়া বুঝি বইতে লইলো। পরানভিটার বাসিন্দা ভিতরথন আওয়াজ দেয়- নারে পাগল…এই শান্তি হইলো গিয়া হাওয়াই মিঠাই….আহা হা…বিবাহিত লোক মাত্রেই জানে- এই আছে এই নাই!
সাতচল্লিশ….একাত্তর….একানব্বই সব বেজোইড়া সালের সাথে তাল মিলাইয়া এক-এগারো আর পাঁচের নামতার লগে সুখের হিসাব মিলাইতে গিয়া এই ‘অবশেষ’ আর দেখা হইলো না। সাত পাঁচ নয় তেরো ভাবতে ভাবতে কখন যেন বাসার পৌঁছাইয়া যায় মারফত দম্পতি। ঈদ তেহার সামনে, অনেক গোছগাছ্। ব্যস্ত হইয়া পড়ে দ্যাশের বাড়ি যাওয়ার এন্তেজামে। আফা’র কথা মনে পড়ে।
মাইনষেগো যে এতো চিক্কুর বাক্কুর….কী এমুন খারাপ কইছিলো আফায়। দূরের যাত্রায় যাওনের কালে মাল-সামান একটু সেইত্থা সুইত্থা যাইতে কওয়ায় দোষের কী কাম হইছে? এর আগে রাখভাল কাকু ধর্মভীরুতা দেখাইয়া সান্তনা দিতে গিয়া কথা হুনছেন। হ্যায় ঘটনা ঘইটা যাওয়ার পর ‘‘আল্লার মাল….নিয়া….’’ কইয়া ধরা খাইছিলো। আর আমাগো আফায় তো কিছু ঘটার আগেই সাবধান করছেন। এই দেশের মাইনষের তয়-তরিকা বুঝি না, দুইডা বাণীরে এক পাল্লায় মাপলে চলে?
আগে-পিছের কথা নাইলে বাদই দিলাম। প্লেনে উঠলে সিট-বেল্ট বানতে কইলে মহাভারত অশুদ্ধ হয় না, বাসের যাত্রীরে হুঁশ করতে ‘পকেট সাবধান’ বাণী লেখায় দোষ নাই, কত জায়গায় কতভাবে বিধিবদ্ধ অবিধিবদ্ধ(!) সতর্কবাণী থাকে….আফায় কইলেই খালি দোষ। ঐদিকে কচি পোলাপানগো নিয়া শুরু হইছে আরেক খেইল। ওগো লাইগা আগেভাগে একটা বাণী দিয়া দিলে হইতো না? চিকিৎসক হওয়ার দৌড়ে হিটেই ফিট কইরা ফালানোর ব্যবস্থা চুড়ান্ত। আউলা পাথারি দৌড় পাড়াইয়া দম ফেল করাইয়া ফেলাইলে আসল পড়ার শক্তি পাইবো কই? বুদ্ধিটা খারাপ না, ১০০ মিটার দৌড়ের আগে উসাইন মিয়ারে ম্যারাথন আর কোর্টকাচারিতে চক্কর খাওয়াইতে পারলে স্প্রিন্ট থুইয়া আইপিএল না, পাকাপাকিভাবে বিপিএলেই পাওয়া যাইতো।
বুকে ফুঁ ফা দিয়া বাড়ির পথে রওনা হয় মারফত মিযা। জলে স্থলে টিকেট নামক সোনার হরিণের দেখা না পাইয়া শেষ সম্বল খোয়াইয়া অন্তরীক্ষ পথে রওনা দেন বাড়ি। যাউগ্যা, বাড়ি যাওয়াও হইলো, বউরে বিমান চড়ানো হইলো- এক যাত্রায় দুই কাম হাসিল।
প্লেনে উইঠা একখান বিদেশী কৌতুক মনে পড়ে- এক প্যাসেঞ্জার বিমানে যাত্রীরা বইসা আছে। পাইলট আর কো-পাইলট আসলেন। দুইজনরেই অন্ধ মনে হইলো, চোখে কালো সানগ্লাস। পাইলট সাদা ছড়ি দিয়া ঠোকাইয়া ঠোকাইয়া ককপিটে গেল, কো-পাইলটের সামনে পথ দেখাইন্যা কুকুর। যাত্রীরা মুখ চাওয়া চাওয়ি করলেও বিজ্ঞ জনেরা ‘প্রাকটিকাল জোক’ বইলা উড়াইয়া দিলো। প্লেন চললো, রানওয়ে বরাবর ছুট লাগাইলো। যাত্রীগো মইধ্যে অস্বস্তি। রানওয়ে শেষ হইয়া যায় প্লেনের নাক আকাশে ওঠে না! যাত্রীগো গুঞ্জন…..রানওয়ের শেষ বিন্দু কাছাইয়া আসতে আসতে ফিঁসফাস নিমিশে কান্নার আওয়াজে বদলায়….আর মাত্র ২০ ফুট…..প্যাসেঞ্জারগো কান্নার সূর এক লগে ভয়াবহ আর্ত চিৎকারে রূপ নেয়। ….আহ শান্তি! প্লেনের নাক আকাশমুখী, প্লেন বাতাসে ভাসে। কো-পাইলট স্বস্তির শ্বাস ছাড়ে, পাইলটরে কয়- ‘‘কবে না জানি এমন হয়…..যাত্রীরা চিক্কুর না পাড়ে, আমরাও টেক-অফের সময় টাহর না পাই!!’’
কৌতুকের পাইলট দুইজন আন্ধা আছিলো….তয় যাত্রীগোর দেখনশক্তি ঠিকঠাক আছিলো, সজাগ থাইকা তারা পাইলটগো ঠিকঠাক মতন চালাইছে। আমাগো পইলট আন্ধা, আমরা যাত্রীরা মনে লয় আরো বেশী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। নাইলে ‘হেগোরে’, হেগোর মত অন্য ‘তাগোরে’ বারবার বিমান চালানোর কাম দেই কোন হিসাবে? আল্লাহ তায়ালার নামে বিমানখান চলতাছে। আবার মাঝে মইধ্যে মনে হয় পাইলটরা বোধহয় কানা না শুধু, বধিরও। আন্ধা যাত্রীগো কেউ কেউ মনের চক্ষুতে দেখা বিপদ নিয়া শত চিল্লাইলেও উনাগো কানে ওইগুলা ঢুকে না।
এহন বিমানখান ভাল চলতেছে না, কারণ পাইলটরা অদক্ষ, আন্ধা, বধির। আগে যারা চালাইতো তারা নাকি অনেক দক্ষ, চক্ষুষ্মান, দুধে ধোয়া আছিলো। যারা এইগুলা কয়, হেগোর কায়কারবার আর দায়িত্ববোধ নিয়া আরেক কৌতুক মনে পড়ে মারফত মিয়ার।…..প্লেন চলতাছে, আসমানের আগায়। বিশেষ ঘোষনার মাইক্রোফোন বাইজা উঠলো- ‘‘প্রিয় যাত্রীগণ, আমরা এখন ৩৫,০০০ ফুট উচ্চতায় আটলান্টিক মহাসাগর পার হচ্ছি। আপনাদের বামদিকের জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখুন- দুটো ইঞ্জিনই জ্বলছে। ডানদিকের জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখুন- ডান পাখাটি ভেঙে ঝুলছে। নীচের দিকে তাকিয়ে গভীরভাবে লক্ষ্য করুন- একটি লাল ভেলায় আমি পাইলট, কো-পাইলট এবং একজন স্টুয়ার্ডেস সাগরে ভাসছি। আপনারা এটি রেকর্ড করা ভাষ্য শুনছেন।….আপনাদের যাত্রা শুভ হোক।’’
বাস্তবের বিমানখানি ঠিকঠাক মতই মাটিতে নামে। মারফত মিয়া আধুনিক বাহন ছাইড়া আদিম পথে বাড়ির দিকে ছোটে। নদী পার হইয়া গ্রামের বাড়ি যাইতে হইবো। নদীর পাড়ে খেয়ার জন্য অপেক্ষা করতে করতে মারফত মিয়ার মন আবার বেলাইনে চলে।
প্রবাদে পড়ছিলো- ‘‘নদীর এ পাড় কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস, ও পাড়েতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস….।” এইখানে উল্টা কায়কারবার। নদী পার হইতে গিয়া বিপাকে পড়ে যাত্রীরা। এইপাড়ওলারা টাইন্যা ধরে। কয়- ‘‘সব সুখ আয়েশ এই পাড়ে, ওই পাড়ে ভুলেও পা রাইখো না।’’ আবার ঐ পাড়ওয়ালারা চিল্লানি দিয়া ডাকে, ওইপাড় নাকি শান্তি আর স্বস্তির আধার। ……নিয়তির বেলা ঘনাইয়া আসছে, পাঁচের নামতার নিয়ম, এপাড়েইই ফিরো আর ওপাড়েই যাও- যাত্রীগো নদীতে নামতেই হইবো। নদীতে আরও বিপত্তি, পার হওয়ার পথটারে দুই পক্ষই পুঁতিগন্ধময় কইরা সারছে। পারি দেওয়ার নাওডারে এই পাড়ওয়ালারা নাকি অদৃশ্য সূতা দিয়া বাইন্ধা রাখছে। মাঝির চোখ নাকি টেঁরা, নিন্দুকেরা কয় হের চোখ বলে ওইপাড়ের বদলে বারবার এইপাড়েই চাইয়া থাকে। ওই দিকের পার্টির খিস্তি খেউড় অভিসম্পাত, এই দিকওলাগো পার হইতে না দেওয়ার টালবাহানা আর ফিরে আসার মধুর আহবানে বিদীশা হয় যাত্রীরা। পরিস্থিতি আরো ঘোলা হয়।
‘‘আমার ঘরে আয়….আমার ঘরে আয়’’….এক বাঁদুর পক্ষী ডাক দিয়া যায়। এই বাঁদুরের কাহিনী কে না জানে? কবে নাকি সে গাছ থেইকা এক চেতা বেজীর সামনে পড়ছিল। বেজী কইলো- ‘‘দুনিয়ার সকল পক্ষী আমার দুশমন, তর মরন ঘনাইছে।’’ বাঁদুর কাইন্দা মাইন্দা কয়, ‘‘আমি তো পক্ষী না, আমি ইঁদুর গোত্রীয়।’’ বাঁদুর বাঁইচা গেল। বছর পাঁচেক পর….বাঁদুর আবার পা পিছলাইয়া আরেক বেজীর সামনে পড়ছে। এই বেজী কয়-‘‘আমি মূষিক শ্রেণীর যম, মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হ।’’ বাঁদুরে এইবার কয়, ‘‘কেডা কইছে আমি ইন্দুর, আমি হইলাম গিয়া জাত পংখী।’’ এইবারও রেহাই পাইয়া গেল। তয় কিংকর্তব্যবিমূঢ় মাইনষে কেমনে বাঁচবো এই না-পাখি না-ইঁদুরের মওসূমী ডাক থেইকা?
বউয়ের খোঁচায় ধ্যান ভাঙে মারফত মিয়ার। যাত্রা পথে সজাগ হয় আবার। সবকিছু ঠিকঠাকই লাগে তার। বাড়ির চেনাপথ, চেনা নিশানা….সামনেই বুঝি পথের শেষ! তবু যেন মনে হয়…. সে, তারা, সাথের সকলে এক অগস্ত্য যাত্রার যাত্রী।
            
                        
            
            
            
                        
            
            
                        
            
         
        
               
   
    
                    
        
        
            
            
                 ১৯ জানুয়ারী  - ২০১১ 
                                        
                            গল্প/কবিতা:
                            ৪৩ টি
                        
                    
            
            
         
     
    
        
বিজ্ঞপ্তি
        এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
    
    
        প্রতি মাসেই পুরস্কার
        
            বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
        
        
            লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
            
                - 
                    
                    
                        প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
                        প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
                     
- 
                    
                    
                        দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
                        প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
                     
- 
                    
                    
                        তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
                     
 
     
    
        
        বিজ্ঞপ্তি
        “নভেম্বর ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ নভেম্বর, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।
        প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী