নৈঃশব্দ্যের শব্দ যাত্রা

২১শে ফেব্রুয়ারী (ফেব্রুয়ারী ২০১২)

আহমাদ মুকুল
  • ৪৬
আলো আলো আলো….মাগো! কতদিন পরে মুক্ত বাতাস! নিতে দাও প্রাণভরে শ্বাস- উজ্জ্বল মুখে অক্ষরদের ছুটাছুটি। উৎসবের ফাঁকে কলমের নিবের দিকে আকূল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বর্ণেরা। গতি নিয়ন্ত্রণের কারিগর যতি চিহ্নরাও প্রস্তুত। সবাই উন্মুখ কখন কার ডাক পড়ে।

-এই তোরা থাম। শব্দের জট বাঁধাস নে। বর্ণমালা মায়ের মৃদু শাসন।

- মাগো! মুক্তির স্বাদ নিতে দাও। ক…ত দিন পর তিনি কলম হাতে নিয়েছেন। আমরা আজ আনন্দ করবো। ভাষার তুবড়ি ফোটাবো……। বর্ণশিশুদের উল্লাস, মুখে শেকল ভাঙার সূর।

-লেখকের মন বিক্ষিপ্ত। তোরা বাগে থাক, নইলে আজ রক্ত ঝরবে কলমে….অক্ষর মায়ের আকূতি।

লেখক সত্যিই অসহায়। একুশ আসন্ন। আজ যদি না লেখে লিখবে কবে! ভাষার ঋণ কাঁধে বোঝা হয়ে থাকবে না? তাই কলম চলে কাগজে। বেলাইনে চলা রেলগাড়ি, লাগামহীন ঘোড়ার শকট। আঁকিবুকিই হয় শুধু। শব্দ বাক্য বর্ণনা হয়ে ওঠে না। অক্ষররা গাঁটছড়া বাঁধছে না। শব্দরা একজোট নয়। ‘দাঁড়ি-কমা’রা নিজেরাই থমকে আছে বিস্ময়ে। কিসের উপর গড়ে উঠবে রচনা!

–বাছারা লাইন ধরে চল। ব্যাকরণ বিভ্রাট ঘটাস নে। শব্দদের আবার চোখ রাঙানি দেন বর্ণ’মা।

লেখক অসহায় নির্লিপ্ত। চোখ দুটোই শুধু চেয়ে আছে, অন্তর এখনো ঘুমন্ত। বর্ণ’মা বাচ্চাদের ডেকে গল্প শোনাতে বসেন। ইতিহাস…..

-বিশাল এই বাংলা মায়ের মুখের বুলি আমরা। আজ তোরা এই ক্ষণমুক্তির সুখে হাসছিস কাঁদছিস….মনে পড়ে গেল আমাদের বন্দিত্বের কাহিনী! সেই নাগপাশের দিনে রক্ষক অসূররা বাংলা মায়ের মুখের ভাষা কেড়ে নেয়ার হুকুম জারী করেছিল। যেই ‘একুশ’ নিয়ে লেখকের অন্তরে তাড়না, বাহান্নের সেই দিনে তাঁর পূর্বসূরীরা বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে কলমের কালি জিতে নিয়েছিল। ‘আমাদের’ জন্য আত্মাহুতির একমাত্র নজির এই দেশ এই মাটি। ভাষার জন্য নির্মিত প্রথম মিনার এই ভূখণ্ডে। তোদের ‘অ’ ‘আ’ ভাইয়েরা গর্বিত ভঙ্গিতে মিনারের গায়ে চকচক করে……।

-লাল রক্তের বিনিময়ে কলমের কুচকুচে কালি! সমস্বরে শিশুদের বিস্ময় প্রকাশ। সাথে সাথে গর্বে বুক ফুলে ওঠে।

-মা তোমার বয়স কত? কৌতুহলী হয় এক সন্তান।

-আমার জন্ম কবে জানি না। সৃষ্টির অনাদী কাল থেকে আমার একটু একটু করে বেড়ে ওঠা। তবে পূনর্জন্মের হিসেবে ষাট বছর। মায়ের জবাব।
-এত বছর পর আজও তোমাকে প্রায়ই হীনবল দুর্বল মনে হয় কেন গো মা? এক নিরীহ সন্তানের চিজ্ঞাসা।
- মুক্ত আকাশ সংস্কৃতি দেখিস নি? ওরা দেখেও দেখে না ওদের সন্তানেরা আজ কোন বুলি আওড়াচ্ছে! মজা পেয়ে হাসে বাবা-মা, শিশুর আধো ভিনজাতি ভাষার উচ্চারনে। টেরও পাচ্ছে না, ‘বোকারাম‘দের আত্মাচুরি হয়ে যাচ্ছে।...(বাস্পরুদ্ধ হয় মার কণ্ঠ)...মুক্ত ইথারে এফএম-এর কলার উঁচানো ভাষার স্মার্টনেসে মোহিত হয় নব্য যুব-যুবারা। কদর্য আর ভেজাল মেশানো উচ্চারনের নাম আধুনিকতা!....ভাবিসনে তোরা। আবার ওরা লড়বে। আবার কেউ না কেউ ঘুরে দাঁড়াবে!

এক ফোঁটা জলস্পর্শে বর্ণ মায়ের নজর ফেরে। লেখকের চোখের জল। এতক্ষণ তাদের কথা শুনছিলেন তিনি। নোনা জলে কাগজটা মাখামাখি। খাতা গুটিয়ে উঠে পড়েন। মুখ শুকিয়ে যায় অক্ষর শিশুদের। বিহবল বর্ণ মাতা।

নাহ, ভযের কোন ব্যাপার নয়। আধুনিক কী-বোর্ড খুলে বসলেন মানুষটা। আঙ্গুলে ঝড় ওঠে। অক্ষরেরা ঝাপিয়ে পড়ে মনিটরে। ওরাও একজোট হয়। সাদা মনিটরে পিলপিল করে চলা শুরু করে কাল কাল অক্ষর সৈনিকেরা। আজ নতুন লড়াই শুরু হলো। লাল রক্তের দামে কেনা কাল অক্ষরের জয়যাত্রা প্রতিষ্ঠার আগামী সূচনা করবে তারা।

লেখকের রক্ত ঝরেনি, তবু তার কণ্ঠে রক্ত ঝরার গান…..আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভুলিতে পারি……!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সূর্য গল্প পছন্দের তালিকায় আছে গতকাল দেখলাম ভোটও দেয়া হয়েছে, মন্তব্য নেই হা হা হা হা .................☼
ভালো লাগেনি ২৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
এমন নীরব ভক্ত কয় জনের জোটে? হা হা হা.............
ভালো লাগেনি ২৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার -৮ এ মাসের শুরুতেই অনেক ঝামেলা করছে। অপঠিত লেখাগুলো কোন ভাবেই দেখা যাচ্ছে না। যতগুলো লেখা পড়েছি তার অনেক গুলোই ৮-১০বার ওপেন করতে হয়েছে পঠিত চিহ্নিত না হওয়ায়। আর ভক্ত তো অবশ্যই..........
ভালো লাগেনি ২৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
জুয়েল দেব সমালোচনা করতে এসেছিলাম। কিন্তু সমালোচনা করার মত কিছু পেলাম না। লেখকের কলমে হোক প্রজন্মের যুদ্ধ। ছড়িয়ে যাক প্রজন্মান্তরে।
জালাল উদ্দিন মুহম্মদ মুক্ত আকাশ সংস্কৃতি দেখিস নি? ওরা দেখেও দেখে না ওদের সন্তানেরা আজ কোন বুলি আওড়াচ্ছে! মজা পেয়ে হাসে বাবা-মা, শিশুর আধো ভিনজাতি ভাষার উচ্চারনে। টেরও পাচ্ছে না, ‘বোকারাম‘দের আত্মাচুরি হয়ে যাচ্ছে।// ভাবনাটা খুব সুন্দর। উপস্থাপনও ভালো হয়েছে। অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা ।
মোঃ শামছুল আরেফিন এত সূক্ষ্মভাবে কল্পনা না করতে না জানলে আসলেই লেখক হওয়া যায়না। খুব সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম অনুভুতি নিয়ে কাজ করেছেন গল্পে। যেখানে স্থান হয়েছে বর্ণমালার কথা, তাদের শোক আর সুখের কথা। এত গভীর উপলব্ধি আসলে ভাইয়া আপনাকেই মানায়। কেবল মুগ্ধ হলাম প্রতি লাইনে লাইনে। একুশের গল্প, অথচ গৎবাঁধা না হয়ে নিখুঁত সৃজনশীলতা প্রকাশ পেয়েছে গল্পে। আমার কাছে মনে হচ্ছে অসাধারণ শব্দটিও এই গল্পের জন্য যথার্থ নয়। আরো উচুমানের বিশেষণ চাই।
মিজানুর রহমান রানা লেখক সত্যিই অসহায়। একুশ আসন্ন। আজ যদি না লেখে লিখবে কবে! ভাষার ঋণ কাঁধে বোঝা হয়ে থাকবে না? তাই কলম চলে কাগজে। বেলাইনে চলা রেলগাড়ি, লাগামহীন ঘোড়ার শকট। আঁকিবুকিই হয় শুধু। শব্দ বাক্য বর্ণনা হয়ে ওঠে না। অক্ষররা গাঁটছড়া বাঁধছে না। শব্দরা একজোট নয়। ‘দাঁড়ি-কমা’রা নিজেরাই থমকে আছে বিস্ময়ে। কিসের উপর গড়ে উঠবে রচনা!-----------------------স্বল্প কথায় অসাধারণ তথ্য দিয়েছেন। যা আমাদের সাহিত্যচর্চায় বেশ কাজে লাগবে। আপনার প্রতি আমার অশেষ শুভ কামনা।
ভালো লাগেনি ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
sakil ভাবনার পর চিন্তার গতিধারা এমন আবেশ কায়ে গেল কিছুই কি বলতে পারি এরপর ভাইয়া . শুধু অসাধারণ বলে গেলাম . সেই সাথে শুভকামনা
ভালো লাগেনি ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
ওবাইদুল হক আধুনিক কী-বোর্ড খুলে বসলেন মানুষটা। আঙ্গুলে ঝড় ওঠে। অক্ষরেরা ঝাপিয়ে পড়ে মনিটরে। ওরাও একজোট হয়। আসলে বাস্তবতার কাহিনী কাউকে হাল ধরতে হবেই এটাই সত্য ।
ভালো লাগেনি ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
মোঃ আক্তারুজ্জামান জন সচেতনতামূলক বিষয়, রচনা শৈলী সব কিছু মিলিয়ে অসাধারণই লাগলো|
ভালো লাগেনি ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
নীলকণ্ঠ অরণি নামটা যতটা না সুন্দর এই অদ্ভুত গল্পটা এর চেয়েও অনেক সুন্দর। কিন্তু একটা বিষয়ে আমি এখনও confused আপানকে কি ডাকে সম্বোধন করবো। বাবার কলিগ এই পরিচয়টা পেয়ে আমার এই দুর্দশা!
ভালো লাগেনি ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
বাবার কলিগ বলে সহলেখক পরিচয়টা ভুললে চলবে কেন? সহলেখক/বন্ধু হিসেবে যে নামেই ডাক, মানানসই হবে। বয়সের কিংবা সম্পর্কের টানাপোড়েন ভুলে যাও।
ভালো লাগেনি ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
আমার মত গুরু ডাকতে পার
ভালো লাগেনি ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১২
মনির মুকুল জন সচেতনতামূলক দৃষ্টিভঙ্গী মেলে ধরা অথবা সমাজের নানা ক্ষেত্রে অবজ্ঞা, অবহেলা বা বঞ্চনার বিষয়গুলো সুন্দরভাবে তুলে আনায় অত্যন্ত পারদর্শী আপনি। আর এরকম কিছু পাব সেই বিশ্বাসটা পড়া শুরু করার আগেই ভেবে নিই। পেলাম এবারও “...মুক্ত ইথারে এফএম-এর কলার উঁচানো ভাষার স্মার্টনেসে মোহিত হয় নব্য যুব-যুবারা”।যারা বোঝার তার ইঙ্গিতেই বুঝে নেয়।
ভালো লাগেনি ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

১৯ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৪৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“ডিসেম্বর ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ ডিসেম্বর, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী