-পুরানা রাগ রাইখেন না ভাইসাব, খড়খড়ে কন্ঠকে যতটুকু সম্ভব তরল করল শিয়াল। নতুন সময় আইছে, সামনে তাকাই চলেন। চোখ বুজে ধ্যানমগ্ন কুমির। জবাবতো দূরের কথা, একচুল নট নড়ন চড়ন। নিরাপদ দূরত্বে থেকে কুমিরের খসখসে শরীরে তেল মাখতেই থাকে ধূর্ত শিয়াল। – নদী নালা হুগাইয়া গেছে গা, আপনের খানা-খাদ্যের বড়ই অভাব। কত কষ্ট কইরা খাওনের খোজে ডাঙ্গায় আইতে হয়। আর মাটিতে যহন আইবেনই…শিয়ালের সাথে দোস্তি না কইরা উপায়ই বা কী কন? হায়রে কলিকাল! আগে নদীতে নামতে গেলে কুমিরের লগে বিবাদের কথা ভুলতে হইত। নাকে খত দিয়া পানিতে নামত প্রাণিকূল! আর এখন….ভাবতে ভাবতে আড়মোড়া ভেঙে উঠলেন নক্ররাজ। – সাত বাচ্চার শোক এত সহজে ভুইলা যামু? - আপনের বয়স হইছে প্রায় তিনশ বছর, আণ্ডা-বাচ্চা কয় হাজার ফুটাইছেন আপনেই জানেন। আরো শ’দুয়েক বছর বাচবেন। কি লাভ এত ছোড মোড বিষয় মনে রাইখা? কুমির মনে মনে বলে। মনে রাখছে কে? এইডাতো দেখাইন্যা আবেগ। কথায় আছে না, কুম্ভিরাশ্রু? মুখে বলে। -তা নাইলে গেল। সেই যে নদীর পাড়ে মরার মত পইড়া আছিলাম। ফন্দি কইরা আমারে বোকা বানাইছিলা, আর গেরামের মানুষ ডাইকা মাইর খাওয়াইছিলা। হেইগুলানও ভুইলা যামু, শিয়াল মামু? - আমি ডাকি ভাই, আপনি ডাকেন মামু। কী আর কমু! এইডাও মাফ দেন। আহেন, দুশমনি খ্যামা দিয়া দোস্তি করি। শিয়াল চিকন সূরে বলে। - আমার বেনিফিট? - বুঝবেন সময় মত। আগে হাত মিলান। থুক্কু…দরকার নাই। (মনে মনে বলে, এত কাছে এসোনা, মরনে পাইছে আমারে!)। শিয়াল আর কুম্ভির নয়া ‘দোস্তি’র শর্ত নিয়ে বসল। আপাততঃ কুমিরের জন্য নদী থেকে শিয়ালের গ্রাম পর্যন্ত খাল কাটতে হবে। কাজের বিনিময়ে খাদ্য’র বেশ কিছু গম এখনও আছে শিয়ালের কাছে। অর্থ বছর শেষ হচ্ছে। খরচ দেখানোর জায়গা নাই। কেটে দিল গ্রাম পর্যন্ত সরু একটা খাল। সরকার’কা মাল চিকন খাল’মে ঢাল। দুর্মুখেরা বলে, শিয়াল খাল কাইটা কুমির আনছে। বুঝব ঠেলা! ………………………………. ইউপি নির্বাচন। সিটিং চেয়ারম্যান শিয়াল আবারও নির্বাচন করছে। শিয়ালের পক্ষে মিছিল মিটিং হচ্ছে। শ্লোগান, মাইকিং….জনদরদী শিয়াল ভাইকে ‘কুমির’ মার্কায় ভোট দিন….। পোস্টারে কুমিরের রঙিন ছবি। নির্বাচনী প্রচারে নতুন মাত্রা। বিশাল এক জ্যান্ত কুমির শিয়ালের মিছিলের সামনে। গলায় কোরবানির গরুর মালা। লেখাপড়া না জানা কুমির ভাবছে, সেই বুঝি হিরো। কত মর্যাদা তার। দিন ফিরল বুঝি! স্বপ্ন বোনে…সুসময় আইতাছে…খালটারে নদী বানামু…সন্তান-সন্ততি লইয়া এইখানেই থাইকা যামু। মিছিলের মাঝখান থেকে শিয়াল ভাবে। নির্বাচনে পাশ কইরা লই। খাল কাইটা সাধে কুমির আনছি? খালটা সংস্কারের লাইগা নতুন নতুন প্রজেক্ট লমু। আর কুমিরের ‘খাল’ ট্যানারীতে বেইচা মাংস কয়ডা আফ্রিকান মাগুররে খাওয়ামু।
(শিয়াল-কুমিরের জানা কিছু কাহিনী/প্রবচনের উপর ভিত্তি করে কল্পনার ডালপালা মেলা হয়েছে। অন্য কিছুর সাথে তাল-মিল খোঁজা পাঠকের ব্যক্তিগত আন্দাজ হিসেবে বিবেচিত হবে।)
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“ডিসেম্বর ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ ডিসেম্বর, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।