ঋণশোধ

ক্ষোভ (জানুয়ারী ২০১৪)

সোহাগ বিশ্বাস
  • ১০
কাজী মিজানুর রহমান কে পরোপকারী বললে কমই বলা হবে । জীবনে চলার পথে অন্যের বিপদকে তিনি কখনোই অন্যের বলে মনে করতেন না বরং অন্যের বিপদকে নিজের কাঁধে নেয়াতেই ছিল তার যত আনন্দ । ভুবনেশ্বরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তিনি ছিলেন বাংলার শিক্ষক । শিক্ষক সমাজের প্রধান কাজ হল, শিক্ষার্থীদের প্রকৃত ও সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা, তাদের মাঝে ন্যায়ের বীজ বোপন করা । এ কাজটিতে তার মত দক্ষতাসম্পন্ন ব্যাক্তি হিসাবে আজ পর্যন্তও কাউকে আমার চোখে পড়েনি । প্রথমেই যে বিষয়টি বললাম, তিনি ছিলেন অত্যন্ত পরোপকারী মানুষ । কোন শিক্ষার্থী হয়ত পরীক্ষার ফিস দিতে পারছে না, শিক্ষকরা পরীক্ষা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন । এ রকম পরিস্থিতিতে আপন অভিভাবকের মত তিনি ঐ শিক্ষার্থীর টাকা দিয়ে দেবেন । বিদ্যালয়ে এমন কোন ছাত্র-ছাত্রী খুঁজে পাওয়া যাবে না, যারা কোন না কোন সময়ে অকূল বিপদে পড়ে তার সহযোগীতা পান নি । একটা ঘটনা বলি, মিন্টু নামের নবম শ্রেণীর একজন ছাত্র এক নাগাঢ়ে চার-পাঁচদিন স্কুলে আসছে না । বিষয়টি অন্যদের কাছে খুব গুরুত্বপুর্ণ মনে না হলেও মিজান স্যারের কাছে এটি অতীব গুরুত্বপুর্ণ বিষয় । মিন্টু ছিল কিছুটা উগ্র স্বভাবের, কাউকেই সে পরোয়া করত না, তাই শিক্ষকরা তার প্রতি অতি উৎসাহী ছিলেন না । কিন্তু আগেই বলেছি, মিজান স্যার আলাদা । আকাশে বাতাসে তিনি বিপদের লক্ষণ টের পান । সুতরাং তিনি খোঁজ নিলেন এবং খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন, মিন্টুর প্রচন্ড জ্বর । অতি উৎসাহী পাঠকের বুঝতে বাকি থাকার কথা না এরপর তিনি কি করবেন । হ্যা, স্কুল ছুটির পর তিনি ছুটলের মিন্টুর বাড়ির দিকে । গিয়ে দেখলেন, মিন্টু জ্বরে অচেতন, তার বাবা সামান্য ভ্যানচালক । সামর্থ অনুযায়ী তিনি চেষ্টা করছেন কিন্তু শহরের নেওয়ার পয়সা তার নেই । মিজান স্যার দেরী করলেন না, যদিও রাত হয়ে গেছে তবুও আজি মিন্টুকে হাসপাতালে নিতে হবে । মিন্টুর বাবার ভ্যান ছিল, স্যারসহ মিন্টুর মা মিন্টুকে নিয়ে ভ্যানে বসলেন । সদর হাসপাতাল অনেক দূরে, গ্রাম্য মেঠো কাঁচা রাস্তা । আস্তে আস্তে ভ্যান চলছে, হটাৎ মিন্টুর বাবার তীব্র মাথায় যন্ত্রনা শুরু হল । ফাঁকা মাঠ, লোকজনহীন জনশুন্য প্রান্তর তার উপর শীতের রাত । যন্ত্রনা কমল না । মিজান স্যার মিন্টূর বাবাকে ভ্যানে শুইয়ে দিয়ে নিজে ভ্যানের সিটে বসলেন । নির্জন শীতের রাত এক মানবের ক্ষুদ্র কিন্তু মহান এই প্রয়াসের সাক্ষী হয়ে রইলেন । আনাড়ি হাত, অনভ্যস্ত পা, অপরিচিত পথ কিছুই তোয়াক্কা করলেন না মিজান স্যার । রাত একটায় হাসপাতালে পৌছলেন । বাবা ছেলে দুজনই ভর্তি হল । পরদিন স্যার দশদিনের ছুটি নিলেন । মিন্টুর টাইফয়েড ধরা পড়ল । স্যার দিন-রাত কষ্ট করে বাবা ছেলেকে সুস্থ করে তুললেন ।

এরপর বহুদিন কেটে গেছে । মিজান স্যার অবসর নিয়েছেন । গায়ের সেই কাঁচা রাস্তা এখন আর নেই । পাকা রাস্তার বদৌলতে গাঁয়ের সাথে শহরের বন্ধন সুদৃঢ় হয়েছে । হটাৎ এক শরতের রাতে মিজান স্যার প্রচন্ড বুকে ব্যাথা অনুভব করলেন । ডাক্তার এলো, স্যারকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে । সমস্যা হল, দেশে অবরোধ চলছে, যানবাহন পুড়িয়ে দিচ্ছে দুর্বৃত্তরা । সেই রাতে একটা অটোরিক্সা আনা হল । স্যারকে নিয়ে শহর অভিমুখে যাত্রা শুরু করল অটোরিক্সাটি । মাঝামাঝি রাস্তায় এসে চালক থমকে দাড়ালো । রাস্তায় গাছের গুড়ি ফেলে রাখা, কিছু লোক চিৎকার করে ছুটে আসছে । তাদের সবার হাতে লাঠি । চালক দৌড়ে পালিয়ে গেল । নিরুপায় মিজান স্যার গাড়ির ভিতর বসে রইলেন । তার করার কিছুই নেই, একেতো তিনি বৃদ্ধ তার উপর মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রনা । কেউ একজন গাড়িতে এক বোতল পেট্রোল ঢেলে দিল, তারপর দিল আগুন । দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠল । মিজান স্যার স্পষ্ট আগুনের আলোয় অস্পষ্ট চোখে দেখতে পেলেন, বোতল হাতে যে দাড়িয়ে আছে সে মিন্টু । মৃত্যুর অন্তরালে তলিয়ে যাচ্ছেন স্যার । মনে হচ্ছে তার খুব কষ্ট হচ্ছে, না মৃত্যুর কষ্ট না । মনে হচ্ছে তিনি ভ্যান চালক, আনাড়ি হাত, অনভ্যস্ত পা, অপরিচিত পরিবেশ । না তিনি কোন কিছুরই তোয়াক্কা করেন না ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ঘাস ফুল সমসাময়িক প্রেক্ষাপটের ওপর নির্মিত গল্পটা ভালো লাগলো। কৃতঘ্ন ছাত্র মিন্টুর চরিত্রের মধ্যে দিয়ে প্রেক্ষাপটটাকে যথার্থ ভাবেই সাজিয়েছেন। অপরাজনীতির শিকার হয় মিজান স্যারের মতো মানুষেরা। তারপরও কী ওই সব অমানুষদের জয় হয় বা কখনো হয়েছে? প্রথম প্যারার শেষের দিকে ঘটনা প্রবাহ আপনি বেশ তাড়াহুড়ো করেই শেষ করে দিয়েছেন। তাইলে ওখানে আরও বেশী আবেগ ঘন পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারতেন, তখন শেষ প্যারার বক্তব্যগুলো জ্বল জ্বল করতো। গল্পের বার্তাটা প্রকট হয়ে ধরা দিত। তারপরও বলবো গল্পটা বেশ ভালো হয়েছে। ধন্যবাদ সোহাগ।
ভালো লাগেনি ২৮ জানুয়ারী, ২০১৪
আল জাবিরী এগিয়া jan...............
ভালো লাগেনি ২৭ জানুয়ারী, ২০১৪
দীপঙ্কর বেরা শুভ কামনা । ভাল লাগল ।
ভালো লাগেনি ২১ জানুয়ারী, ২০১৪
সুমন মানুষ গুলো এমন কেন হয়? কীভাবে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারতে পারে? হয়ত সেখানে মিজান স্যারের মতো কেউ ছিল না তবে তারা মানুষ তো ছিল। সুন্দর গল্প অল্পকথায় তুলে আনতে পেরেছেন, এটা আপনার সাফল্য।
ভালো লাগেনি ১৭ জানুয়ারী, ২০১৪
ঐশিকা বসু বিষয়টিকে ঠিক অনুধাবন করতে পেরেছেন মনে হল। লিখে যান। শুভকামনা রইল।
ভালো লাগেনি ১৩ জানুয়ারী, ২০১৪
মোঃ মহিউদ্দীন সান্‌তু খুব চমৎকাক ভাবে সাজিয়েছেন, ভালো লাগলো বেশ,
সাদিয়া সুলতানা ভালো। শুভ কামনা.......
বিন আরফান. সুন্দর চেষ্টার বহির্প্রকাশ. ভালো লাগলো.

৩০ অক্টোবর - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "পদত্যাগ”
কবিতার বিষয় "পদত্যাগ”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ জুন,২০২৫