মুক্তি -দেখ শহীদ সব কিছু নিয়ে বাড়াবাড়ি করা তোর একটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে।
শহীদ -বাড়াবাড়ি নয়। এটা মত আদর্শের ভিন্নতা। প্রত্যেকের একটা নিজস্ব মত থাকতে পারে। আমরা পরমত সহিষ্ণুতা ক্রমেই হারিয়ে ফেলছি।
বিজয়া -তাহলে তুই বলতে চাস একজন যা খুশী তা বলবে আর অন্যরা তা সহ্য করবে এটাই পরমত সহিষ্ণুতা?
শহীদ -না তা নয়। প্রত্যেকে নিজের মত ব্যক্ত করবে। কারোটা খণ্ডন করার উদ্দেশ্যে নয়। অথবা নিজেরটা প্রতিষ্ঠা করার জন্য নয়। যেটা সে বিশ্বাস করে সেটাই বলবে। অন্যের বিশ্বাসকে আঘাত করার কোন অধিকার কারো নেই।
জয়া -তাহলে ঐক্যমত কিভাবে হবে? মতদ্বৈততার মীমাংসাইবা কিভাবে সম্ভব? যখন বিরুদ্ধ মত উপস্থাপিত হবে তখন কি করণীয়? সমাজ, রাষ্ট্র, সম্প্রদায়, সম্মানিত ব্যক্তির মানহানি, কটুক্তি, অত্যুক্তি, উত্যক্ত করা এসব ক্ষেত্রে কি হবে?
শহীদ -কেন পরষ্পরের মতের মিল হলে মত ঐক্য হবে। যেখানে মিলবেনা সেখানে মতদ্বৈততা রয়ে যাবে। বিরুদ্ধ মত শক্তিশালী হলে হয় তা মেনে নিবে নয়তো এড়িয়ে যাবে। সমাজের বিপরীত মত প্রকাশ করলে সমাজচ্যুত হবে, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করলে রাষ্ট্র থেকে বহিষ্কৃত হবে, সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে গেলে নতুন সম্প্রদায় হবে, সম্মানিত ব্যক্তির সম্মান টুনকো হলে তা নষ্ট হবে, মজবুত হলে তা টিকে যাবে, কটুক্তি, অত্যুক্তি, উত্যক্ত করার বিষয়টা স্পর্শকাতর এবং আপেক্ষিক বিধায় ব্যক্তি তার অবস্থা অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
সংগ্রাম -কিন্তু যখন কেউ মত চাপিয়ে দেয়, অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন করে তার মত মেনে নিতে বলপ্রয়োগ করে তখন?
শহীদ -সেটা বল বা শক্তির বিষয়। সেক্ষেত্রে সবল দুর্বলের উপর আধিপত্য করবে। প্রকৃতিতে আমরা এমনই দেখি।
স্বাধীন -দুর্বলের কিছুই করার নেই?
শহীদ -আছে। বল বৃদ্ধি। ব্যক্তিক অথবা সামষ্টিক উপায়ে। সংঘবদ্ধ হওয়া। মতের ভিত্তিতে দল। প্রয়োজনের ভিত্তিতে দল। আমি সেই কথাই বলতে চাইছি। বাঙ্গালী সময়ের প্রয়োজনে এক হতে পেরেছিল বলে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। কুটনৈতিক প্রয়োজনে মুক্তিবাহিনীর সাথে মিত্রবাহিনী যোগ দিয়েছিল। পররাষ্ট্র নীতির প্রয়োজনে অষ্টম নৌবহর আমাদের সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছিল। ফলে শক্তিশালী পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী, চীন ও মার্কিনীদের সহযোগিতায় লাফালাফি করেও বহির্বিশ্বের কুটনীতি ও পররাষ্ট্রনীতির কাছে হার মেনে যুদ্ধ শেষ করতে বাধ্য হয়েছিল। তাই এ বিজয় একটি সামগ্রিক বিজয়। এই বিজয় গাঁথা সকলকে স্বীকার করেই রচনা করতে হবে।
মুক্তি -আমরাতো তা অস্বীকার করছি না। আমরা বিশেষ ভাবে আমাদের স্বজনরা যারা যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছে, অংশগ্রহণ করেছে, জয় ছিনিয়ে এনেছে তাদের স্মৃতির সম্মানে বিজয় দিবস পালন করছি।
শহীদ -কিন্তু কাদের নিয়ে? কারা পালন করছে? যাদের স্মৃতি তাদেরকে অবহেলা করে? স্মৃতিচারণ করছে যাদের কোন স্মৃতি নেই তারা? আলোচনাসভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পুষ্পস্তবক অর্পন এসব আনুষ্ঠানিকতা যাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে তারা ও তাদের হারানোর ব্যথায় যারা ব্যথিত তাদের বাদ দিয়ে এ কেমন স্মৃতিচারণ?
বিজয়া -তাদের আমরা কোথায় পাবো? এখনতো মুক্তিযোদ্ধাদের সনদ নিয়েও সমস্যা। কে আসল মুক্তিযোদ্ধা কে নকল বোঝার সাধ্য নাই।
শহীদ -তাহলে চিন্তা করে দেখ আমরা বিজয় দিবস পালন করতে ব্যস্ত। আর আড়ালে একদল ষড়যন্ত্র করছে আমাদের উপর সাম্রাজ্যবাদ বিস্তারের। কখনো জল সীমা, কখনো স্থল সীমা, কখনো আকাশ সীমা আমাদের আওতার বাইরে চলে যাচ্ছে।
জয়া -একের পর এক চুক্তি করেও বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। বিশ্বায়নের যুগে স্বদেশ ধারণাই নির্মূল হতে যাচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো আসিয়ান ধারণা প্রভাব বিস্তার করছে।
সংগ্রাম -যার ভিত্তিতে যুদ্ধ হয়েছিল ভাষা, সংস্কৃতি, জাতিসত্ত্বা তার কিছুই আর টিকে নেই। আন্তর্জাতিক ভাষা, আকাশ সংস্কৃতি, ধর্মের ভিত্তিতে জাতিসত্ত্বাই এখন প্রাধান্য পাচ্ছে।
স্বাধীন -এর এক একটা জয় আমাদের ধারাবাহিকভাবে করতে হবে।
শহীদ -আসলে বিজয় একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এটা ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর হঠাৎ করে অর্জিত হয়ে শেষ হয়ে যাওয়ার কোন বিষয় নয়।
মুক্তি -আমাদের সমুদ্র জয়, খেলায় জয়, বিশ্বের উচ্চতর প্রতিযোগিতায় নিজেদের অংশগ্রহণ, প্রতিনিধি প্রেরণসহ হাজারো বিজয় অর্জন করতে হবে।
বিজয়া -আমাদের সরকারী কর ফাঁকি দিয়ে আমাদের বন্দর স্বর্ণ ও অস্ত্র চালানের কাজে ব্যবহৃত হয়। আমাদের প্রাণীজ, খনিজ, বনজ সম্পদ আমরা রক্ষা করতে পারি না। ব্যবহারও করতে পারি না।
শহীদ -হাজারো ব্যর্থতা ও পরাজয়ের গ্লানি ঢাকতে শুধু একটা বিজয় দিবসই কি যথেষ্ট?
জয়া -দেশের মধ্যে এখনো দেশের শত্রুরা দুবির্নীতভাবে চলা ফেরা করছে। ধর্মীয় সংগঠনের নামে বৈদেশিক অর্থে পরিচালিত হচ্ছে দেশের অর্থ, ঐতিহ্য, পুরাকীর্তি পাচারকারী বিভিন্ন গোষ্ঠী।
সংগ্রাম -তাহলে আমাদের অনুষ্ঠানের শিরোনাম কি হবে?
স্বাধীন -'বিজয় একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া'
সবাই সহমত পোষণ করলো এবং সভা শেষ করে যার যার বাড়িতে ফিরে গেল।
২০ অক্টোবর - ২০১৩
গল্প/কবিতা:
৩৬ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪