ভয়ানক বিপদ

কৈশোর (মার্চ ২০১৪)

সাফাত সোয়েব বিস্ময়
  • ৬৫
অনেকদিন ধরে কোনোকিছু লেখা হচ্ছে না।এর প্রধান কারন মাথায় নতুন এমন কিছুই আসছে না যা দিয়ে পাঠকদের একটা বার্তা এবং বিনোদন একসাথে দেয়া যায়।ঠিক তখনি মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেল। জীবনে তো কত মজার ঘটনাই আছে।পাঠকদের সাথে সেগুলা শেয়ার করতে দোষ কি? পাঠকরা তো পরিবারের মতই। যাই হোক, ঘটনা শুরুর আগেই বলে নেই এটা একটা বাস্তবিক ঘটনা। এবং আমি জানি এই ঘটনা পরে অনেক পচানিমূলক কমেন্ট আসবে, কিন্তু সেই সব পচানিমূলক কমেন্ট লিখে আপনেরা যে বিনোদন পাবেন তাতেই আমার সার্থকতা । তো ঘটনা শুরু করি -

ছোটবেলা থেকেই আমার ক্রিকেট খেলার ঝোঁক। তাই খুব ছোটবেলা থেকেই টিভিতে ক্রিকেট খেলা দেখতাম এবং প্রায় প্রতিদিনই পাড়ার রাস্তায় ক্রিকেট খেলতাম, কেননা পুরান ঢাকায় মাঠ নাই বললেই চলে । যেই কয়েকটা আছে তাতে আমাদের বয়সের প্লেয়ারদের খেলাত দূর ঢুকাও প্রায় নিসিদ্ধ! যাই হোক, এতো সব প্রতিকুলতা জয় করেও আমি ভালো প্লেয়ার হিসেবে পরিচয় পেয়ে গিয়েছিলাম।যার ফলে ক্লাসে সেরা ১১জনের মধ্যে নাম উঠে গেল। ফলে যখনই অন্য কোনো ক্লাসের সাথে খেলা পড়ত আমার ডাক পড়ত। যাই হোক তেমনই একদিন খেলার সময় আমি লং অফে ফিল্ডিং করছিলাম। ব্যাটিং করছিলো ওই দলের সেরা প্লেয়ার সানি। যাই হোক, বোলার বল করার সাথে সাথে সানি আমার দিকে উঠিয়ে মারল।আমিও বলের দিকে দৌরে গিয়ে বল ধরার উদ্দেশে সুপারম্যানের মত একটা লং জাম্প দিলাম।

বলটাকে হাতে নেয়ার সাথে সাথে আমি বাতাসে থাকার সময়ই ছিরররররররর......... একটা শব্দ শুনলাম। চারপাশে দর্শকদের চিৎকারে তা যদিও খুবই মৃদু। বুঝলাম না, ওটা কিসের শব্দ। দেখলাম আমার সব সতীর্থ আমার দিকে ছুটে আসছে। আমার পিঠ চাপরে দিতে দিতে তারা বলল "দোস্ত,এটা কি ক্যাচ ধরলি? আজ তোর কারনেই আজ ম্যাচটা জিতলাম।" তখনি পারলে তারা আমাকে ঘাড়ে নিয়ে ঘুরে, কিন্তু ক্লাসের ঘণ্টা আমাকে বাঁচিয়ে দিলো। সবাই যার যার মত ক্লাস করতে চলে গেলাম এবং নিজ নিজ জায়গায় গিয়ে বসলাম।তখনই দেখলাম আমি ক্যাচটা নেয়ায় জামায় ময়লা লেগে গিয়েছিল। তাই আগে ওয়াসরুমে গেলাম ফ্রেস হতে ।
ক্লাসে ঢুকার সময় ক্লাসের সব ছাত্ররা আমার জন্য চিৎকার দিল।ইশ......এক ক্যাচে জনগনের হিরো হয়ে গেছি। সবাইয়ের ব্যবহারে আজ কেমন যেন পরিবর্তন ! মানুষ যে গিরগিটির থেকেও দ্রুত নিজের রঙ বদলাতে পারে তা আমার জানা ছিল না। সবাই আমাকে আমাদের ক্লাসের জনপ্রিয় সিট মানে লাস্ট বেঞ্চে বসতে দিলো।এর মধ্যে স্যার এসে পড়ল এবং সবাই নিজের জায়গায় ফিরে গেল। স্যার ঢুকে প্রথম যেই কথাটা বললেন তাহলো "কই?আমার বাঘের বাচ্চা সাফাত কই?"

আমি উঠে দাঁড়ালাম এবং নিচের দিকে তাকিয়ে আছি,বুঝতে পারলাম আমার সেই বীরত্বগাথা কৃত্তির কথা স্যারও পেয়েছেন।

স্যার বললেন "তুই নাকি আজ ক্যাচ নিয়ে আমাদের জিতিয়েছিস?ব্যাপারটা কি সত্যি?" পুরা ক্লাস চিৎকার দিয়ে উঠল "জী স্যার" তবুও স্যার আমার মুখে শুনার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন।

আমি মিনমিনে গলায় "জী, স্যার"।
স্যার বলে উঠলেন "আরে ছাগল,এরকম খেলার পর কেউ এভাবে কথা বলে । BE BRAVE । যাই হোক, এটা যেন শেষবার না হয়। ভবিষ্যতে এরকম খেলে আমাদের নাম আরও উজ্জ্বল করবি। " এই বোলে তিনি রোল কল শুরু করলেন।

১ম পিরিয়ড ম্যাথ ক্লাস ভালভাবেই শেষ হল। স্যার ৩ টা অঙ্ক দিলেন এবং সৌভাগ্যক্রমে ৩ টাই আমি পারলাম। মনে হয় দিনটা আজ আমারই।

যথাক্রমে দ্বিতীয় ক্লাস পদার্থ বিজ্ঞান। স্যার যথারীতি ক্লাস এ ঢুকলেন ও বাড়ির কাজ চেক করা শুরু করলেন ।স্যার এক সপ্তাহ আগে গতি নিয়ে ১০টা অঙ্ক বাড়ির কাজ দিয়েছিলেন। খেলার উত্তেজনায় আমি দিব্যি ভুলে বসে আছি। একমাত্র খোদাই আজ আমাকে বাঁচাতে পারেন । স্যার আমাদের আজ নিমতলির আগুন জ্বালাবেন বলেছেন। স্যার এর সব মাইরের কিছু সাঙ্কেতিক নাম আছে ,যেমন -রোলার কোস্টার {কান মলা ৩ মিনিটের} ,জাপানের ভুমিকম্প { গাল লাল করা চড়} ,নিমতলির আগুন { পশ্চাৎদেশে বিখ্যাত সেই লালটেপ পেঁচানো বেত্রাঘাত } ইত্যাদি ।আজ যেহেতু স্যার বলেছেন নিমতলির আগুন,তার মানে স্যার আজ আমাদের পশ্চাৎদেশে কারুকাজ হবে, শত দোআ দুরুদ পড়েও লাভ হল না।কারন স্যার যথারীতি আমার কাছে আসলেন এবং এইচডব্লিউ চাইলেন।আমি করুন সুরে স্যারকে আমার ভুলে যাওয়ার কথা বললাম ।স্যার আমার পরেরজনের কাছে এইচডব্লিউ চাইলেন, এভাবে একে একে সবাইয়ের টা দেখা হল। ক্লাসে পিনপতন নিরবতা। সবাই স্যার কি বলেন টা শুনার অপেক্ষাই আছি। স্যার যারা এইচডব্লিউ আনেনি তাদের সবাইকে ক্লাসের মাঝে লাইন দাড়াতে বলল । আমরা কেউই এটা শুনতে প্রস্তত না ।তবুও স্যার এর কথা মত আমরা সবাই লাইন এ দাঁড়ালাম। একে একে স্যার আগুন জ্বালাতে নিজের দক্ষতা দেখাচ্ছেন এবং লাইন যত আগাচ্ছে আমার হার্ট বিট তত বাড়ছে। আমি নিজেতো টা শুনছিই , কিছুক্ষণ পর মনে হয় অন্য সবাইও তা শুনতে পারবে।গলা শুকিয়ে কাঠ,হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। অবশেষে আমার নাম্বার আসলো। আমি পজিশন নিয়ে মাইরের অপেক্ষা করছি। ঠিক তখনি সারা ক্লাসে হাসির শব্দে কেপে উঠল। আমি স্যার এবং অন্যদের দিকে তাকিয়ে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম।আমি স্যারের দিকে তাকিয়ে দেখলাম স্যারও হাসছেন। আমি অবাক দৃষ্টিতে স্যারকে দেখতে লাগলাম। ব্যাপারটা মনে হয় স্যার বুঝতে পারলেন এবং বললেন পিছনে হাত দিয়ে দেখতে।আমি পিছনে হাত দিয়ে বুঝলাম আমার প্যান্ট আর পড়ার যোগ্য না। আমি খেলার সময় সেই মৃদু শব্দের রহস্য উদঘাটন করি, যদিও অনেক দেরি হয়ে গেছে। আমি স্যারের কাছ থেকে জরুরি ভিত্তিতে ছুটি নিয়ে বাসার উদ্দেশে রওয়ানা করি।সেদিনের মত দিন আমার জীবনে খুব কমই এসেছে।এর পর থেকেই স্কুলে আমার নাম ছিঁড়া সাফাত হয়ে গেলো।

বিশেষ দ্রষ্টব্য -"আমি প্যান্টের ভিতর কক্ষনোই বক্সার পড়িনা "।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আফরান মোল্লা হাহাহা।দারুণ. . . .॥
আফরান মোল্লা হাহাহা।দারুণ. . . .॥
নাফিসা রহমান খুব মজা পেলাম ছোট ভাইয়া...
ওয়াহিদ মামুন লাভলু লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়ার গল্পটায় খুব মজা পেলাম। ভালো লিখেছেন। শুভেচ্ছা।
ধন্যবাদ, আপনাকেও শুভেচ্ছা।

১১ অক্টোবর - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪