সে যে কতটা অসহায় তা সে নিজেও জানে না । কেননা কোন কিছু জানার জন্য যেটুকু মানসিক ভারসাম্য দরকার তা তার নেই । সে সে বলছি কেন, তার তো কোন না কোন নাম আছে ? না আসলে তার কোন নামও নেই । তার সম্পর্কে জানার কিছুই নেই, আবার যদি বলি কিছু যদি জানতে ইচ্ছা হয় ? তবে বলব সে উপায়ও নেই । আপনাদের মনে হতে পারে আমি এসব আবোল-তাবোল কি বলছি ? তাই না ? আসলে আমি যা বলছি সব ঠিকই বলছি ।
কেননা ডাস্টবিনে পড়ে থাকা শিশুর কোন নাম থাকে না, না নাম থাকতেই পারে যদি কেউ দেয় । তবে আমি যার কথা বলছি তার একটা অতি পরিচিত নাম আছে, অচেনা মানুষও কিছুক্ষণ তাকে দেখলে তার নামটা বলতে পারবে । আর সে নামটা হল পাগলী । আমদের সমাজে মানসিক ভারসাম্যহীন পথে পথে বেড়ানো মানুষগুলোকে এই ধরনের নাম ব্যবহার করে ডাকা হয় ।আমার এ নামটা বলতে ভাল লাগছে না, তাই মাঝের ‘গ’টাকে বাদ দিয়ে তার নাম পালী দেওয়া যাক । পালী জন্ম নিয়ে তো প্রথমেই বললাম কোন এক নিষ্ঠুর মা তাকে ডাস্টবিনে ফেলে রেখে যায় । আর এখান থেকেই তার জীবনের অসহায়ত্বের শুরু । সকালবেলা এক বৃদ্ধা ভিখারিনী ডাস্টবিন থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায়, না মমতার বশবর্তী হয়ে নয়; ভিক্ষার সুবিধার্তে । সদ্য জন্ম নেওয়া শিশু আবার কি ভিক্ষা করবে তাই না ? তবে বলব ভিক্ষা করবে না, ভিক্ষার সুবিধা করবে । কিভাবে ? সেই ভিখারিনী তখন সদ্য জন্ম নেওয়া পালীকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায় আর বলে- “বাচ্চা হওনের সময় আমার মাইয়া মইরা গেছে , অহন আমি এই বাচ্চারে খাওয়ামু কি ?”- এভাবেই সে কিছুদিন তার ভিক্ষাবৃত্তি ভালভাবে চালায়।
এই ভাবে পালীর চার বছর পর্যন্ত ওই ভিখারিনীর কাছে পালিত হয় । কিন্তু পালীর চার বছরের মাথায় সেই ভিখারিনীর মৃত্যু হয় । যার মাধ্যমে তার জীবনের আরেক অসহায়ত্বের শুরু হয় ।মাত্র চার বছর কি করবে ? কি আর করবে ওই বস্তির মধ্যেই থাকে, ছোট মানুষ বলে কেউ কেউ কোনদিন খেতে দিত বা থাকতে দিত । কিন্তু যখন বয়স আট বছর তখন বস্তির টোকাইদের সাথে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় । কিন্তু এখানেই তার মানসিক ত্রুটি ধরা পড়ে । তার সাথের সঙ্গীরা যেখানে টোকাইগিরি করে কিছু না কিছু উপার্জন করে, কিন্তু পালীর সেদিকে কোন খেয়াল থাকে না । সে নিজের মনে মনে কি যে ভাবে চুপ চুপ বসে থেকে তা বিধাতা ছাড়া কেউ জানে না ! তো এভাবেই একদিন হঠাৎ তার বস্তির সঙ্গীরা তাকে ভুল করে ছেড়ে চলে আসে । মানসিক ভারসাম্যহীন পালী তার আগের বস্তির কথা মনেই করতে পারে না । রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলে যায় ।
এভাবে কোন শহর থেকে যে কোন শহরে যে চলে গেছে তার ইতিহাস আর কে খুঁজতে যাবে, ডাস্টবিনের পচা-বাসি খাবার খেয়েছে তা আর কেইবা খেয়াল করতে গেছে । এভাবেই সময়ের সাথে সাথে পালী বড় হতে থাকে, প্রকৃতির নিয়মেই পালীর নোংরা-অপরিচ্ছন্ন দেহে যৌবনের ছোঁয়া লাগে । তার মত মানুষের কাছে কেই বা আর নিজের কাম-চরিতার্থ করতে যাবে ? কিন্তু না, পালী পাগল হলেও সমাজের বিকৃত রুচির পশুদের মধ্যে একজনের নজর গিয়ে তার উপর পড়ে ।আর সে কারনেই কোন এক রাতের আঁধারে কোন কিছু বোঝার আগেই সেই মানুষরূপী পশু পালীর মত মানসিক ভারসাম্যহীন এক অসহায় মেয়ের অসহায়ত্বের বোঝাটা আরও বাড়িয়ে দেয় ।
এর পড়ে দশমাস দুর্বিষহ যন্ত্রণার পড়ে পালী এক পুত্র শিশুর জন্ম দেয় । আর তার সন্তানেরও জন্ম হয় কোন এক ডাস্টবিনের পাশে । সকাল বেলা মানুষ এ অবস্থায় পালীকে দেখতে পায় । প্রাতভ্রমনে বের হওয়া এক ডাক্তার এ অবস্থা দেখে প্রথমে নাড়ি ছিন্ন করে। কিন্তু বাচ্চাটিকে যখন পালীর কোলে দেওয়া হয় তখন সে বাচ্চাটিকে নিয়ে তার গায়ে মাটি-আবর্জনা ইত্যাদি লাগাতে শুরু করে । নিস্পাপ শিশুটির জীবনের আশঙ্কা হওয়ায় পালীর কাছ থেকে বাচ্চাটিকে উদ্ধার করে এক এতিমখানায় দেওয়া হয় । আর পালীকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করে দেওয়া হয় ।আর জীবনের এই প্রথম পালীর জীবনে একটু মায়া-মমতার ছোঁয়া লাগে । কিন্তু তা মাত্র কিছুটা সময়ের জন্য ।
কেননা পালীর উপর মমত্ববোধ জেগে উঠা সেই বৃদ্ধ-ডাক্তার এক অসহায় সিদ্ধান্তে উপনীত হয় । কেননা পালীর মত মেয়ে সুস্থ হয়ে ফিরে গেলে আবার সমাজের সেই নিষ্ঠুর আচরণের স্বীকার হবে ! আর সে জন্যেই ডাক্তার পালীকে ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন । আর সেই একটা ধাতব সুচের মাধ্যমে পালীর জীবনের অবসান ঘটে ।
পালী তো এখন তাহলে অতীত, কিন্তু পালীর ছেলের কি অবস্থা ? হ্যাঁ পালীর ছেলে এতিমখানায় ছিল, কিন্তু একদিন নিঃসন্তান ব্যবসায়ী আলতাফ চৌধুরী এতিমখানা থেকে বাচ্চা দত্তক নিতে এসে পালীর ছেলের নিস্পাপ মুখের মায়ার বশবর্তী হয়ে তাকে নিয়ে যায় । আলতাফ চৌধুরীর স্ত্রী বাচ্চাটাকে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায় । তারা বাচ্চাটির নাম দেয় অমূল্য, এক পালীর কাছ থেকে জন্ম নেয়া অমূল্য তাদের জীবনের সবকিছু হয়ে দাঁড়ায় ।
তারপরে বিশটি বছর অতিবাহিত হয়ে যায়......................................................
অমূল্য এখন লসএঞ্জেলসে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার । মা-বাবাকেও সে তার কাছে নিয়ে এসেছে । অমূল্যর একটি মেয়ে আছে । মেয়েটি জন্ম নেওয়ার সময় অমূল্যর স্ত্রীর মৃত্যু হয় । আর অমূল্যর মেয়ে অনন্যা বাবা,দাদা,দাদির কাছে থেকে বড় হতে থাকে । কিন্তু পালীর মধ্যে ফোবিয়া দেখা যায়; সুচ দেখলে তার আচরণ পাল্টে যেত । অনন্যা আঠারোতে পা দিলে অমূল্য তার মেয়েকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে অনন্যা বলে-“Dad I don’t know that, it is phobia or not, because I can hear a horrible sound of a lady inside me, when I see a needle in a syringe.’’
অমূল্য তার আসল মায়ের সম্পর্কে কিছুই জানে না, হয়ত তাই সে তার মেয়ের এ কথার কিছুই বুঝতে পারল না । কিন্তু এও কি সম্ভব ? বিধাতা কি অনন্যার মাঝে পালীকে বাঁচিয়ে রেখেছেন ? তাহলে এ বাঁচিয়ে রাখার অর্থই বা কি ?
না বিধাতার লীলাখেলা বোঝা বড়ই কঠিন । তবে অসহায়ত্বের মধ্যে যে কোন ধনি-দরিদ্র, সুস্থ-পাগল বিষয় নেই ;
তা তাদের এই অবোধ-অসহায়ত্বের কাহিনীই বলে দেয় ।।
২২ সেপ্টেম্বর - ২০১৩
গল্প/কবিতা:
৭ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪