খোকা, ভেবেছিলাম তোকে এসব কোনোকিছুই আর জানাবনা। অন্তত এমনটাই ছিল তোর বাবার মৃত্যুকালীন কঠিন নির্দেশ। কিন্তু শেষমেশ সমাজের কথা ভেবে তোকে এ চিঠি লিখতে বাধ্য হলাম। গত পনের দিন আগে তোর বাবা এ দুনিয়ার মায়া কাটিয়ে চলে গেছেন। মৃত্যুর পর শবদেহকে নিয়ে যা যা করা হয় আমার একার দ্বারা যতটুকু করা সম্ভব ছিল ; গ্রামবাসীদেরকে নিয়ে তা করে আজ সন্ধ্যাতে তার সমস্ত পারলৌকিকক্রীয়া সমাপ্ত করে তারপর এ চিঠি লিখছি। গ্রামবাসীরা বারবার তোদের কথা আমাকে জিজ্ঞাসা করছিল আমি এটা-ওটা হাজার বাহানা দেখিয়ে কোনোভাবে কাটিয়ে দিয়েছি।
ভাবছিস, আমি এতদিন কেন তোকে তোর বাবার মৃত্যুসংবাদ দিই নি ? প-নে-র-দি-ন তোদের খাবার টেবিলে কোনো মাছ-মাংস থাকবেনা আর সেটাও কিনা তোর বুড়ো-গরীব-বোকা-গেঁয়ো বাপের কারণে— আমি তোর মা হয়ে, কি করে তা মেনে নিতে পারতাম বল। তোদের কথা নাহয় ছেড়েই দিলাম ; কিন্তু তোদের বাড়ির সেই বিশ্বস্ত কুকুরটা কি পারত ? তার স্বাস্থ্য ভেঙে যেত না ! শেষবার সামান্য কিছু পয়সা চাওয়ার অপরাধে যাকে তোর বউ তোর বাপের পিছনে অতি-হিংস্রভাবে লেলিয়ে দিয়েছিল। আর তোর বুড়ো-অসুস্থ বাপ সেখান থেকে ছুটে পালাতে গিয়ে সদর দরজাতে মাথা ঠুকে, রাস্তায় পড়ে হাত-পা ছড়ে নিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছিল। তোর বউয়ের নরম-মধুর হৃদয়ের কথা আমরা প্রত্যেকেই জানতাম কিন্তু তার হৃদয়খানা যে এতবেশি নির্মম-নরম ছিল... সেটাই শুধু জানতাম না। ভালো। আর তাই তো সেদিন বাড়ি ফিরে এসে কালমেঘ আর চিরতার জল হজম করা তোর বাবা সেই কথা হজম করতে না পেরে আমার কোলে, ছেলেবেলায় কষ্ট পেয়ে তুই যেখানে মাথা রেখে কাঁদতিস ; সেই একই জায়গার মাথা রেখে কি মরা-কান্নাটাই না কাঁদল। আমি তবুও তোদেরকে অভিশাপ দিন নি। শুধু মনে মনে মুক্ত করে দিলাম।
গ্রামে আমাদের কিভাবে অর্থাভাবে দিন কাটে তাতো তোর অজানা নয়। মদ, বিড়ি, জুয়া, মেয়ে কোনো নেশাই যে কোনোকালে তোর বাবার ছিল না সেটাও বোধহয় নিশ্চয় জানতিস। আর তোকে শহরে রেখে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করবার সাধ্যাতীত-উচ্চনেশায় আমি পয়সা জমানোর নেশাটাকে নেশা হয়ে উঠবার আগেই সেসব কবেই ছেড়ে দিয়েছিলাম।
তবুও চলে যাচ্ছিল। কিন্তু ইদানিং কয়েকদিন তোর বাবার বুকে এক অসহ্য-দুর্বোধ্য ব্যথা হচ্ছিল। বিশেষ করে, রাতে প্রায়ই ঘুমাতে পারতনা। প্রখর গ্রীষ্মের সমস্ত পুরানো রেকর্ড-ভাঙা রোদে লাঙল হাতে যে লোকটা দানব হয়ে সারাটাদিন বেমালুম এখেত থেকে ওখেত চষে বেড়াত ; তারপর গরমের গুম খাওয়া দুপুরে গরুগুলো হাঁপিয়ে ক্লান্ত হয়ে উঠলে গরুগুলোকে ছায়াতে বেঁধে রেখে, নিজে গরুদের হয়ে কাজ করত ; (তোর জন্য— আর আমার জন্য—) সেই মানুষটির এই অসহ্য-অফুরন্ত ব্যথাতে চুপ করে থাকতে না পেরে বলতে পারিস, হাতের কাছে অন্য আর কোনো উপায় না পেয়ে... একপ্রকারের জোর করেই, তোর বাবাকে তোদের ঐখানে পাঠিয়েছিলাম। বিশ্বাস কর ওতে তোর বাবার এতটুকুও দোষ ছিল না। যা দোষ সব আমারই ছিল।
ছুক্ ! ছুক্ ! কিরে খুব দুঃখ হচ্ছে তাই না ? এবার থেকে তোর আর তোর বউয়ের হুমকি দেওয়ার একটা লোক কমে গেল। থাক আর চিঠি বাড়িয়ে তোর দীর্ঘ ব্যস্ত সময়ের বারোটা বাজাবনা। তোকে চিঠি লিখে দুঃসাহস দেখানোর জন্য তোদের কাছে আমি অগনিতভাবে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, বাবা। ভালো থাকিস। ইতি তোর মা।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ONIRUDDHO BULBUL
এটা কবিতা না গল্প তা বুঝতে পারি নি তবে হৃদয়গ্রহিী হয়েছে। জানি না আপনি সম্প্রতি পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রতিযোগী কিনা, তা না হলে ২০ লাইনের বেশি কবিতা হওয়ার কথা নয়। গল্প হলে ঠিক আছে। সবচে' অবাক হলাম আপনার 'ম্যানার' দেখে; মন্তব্য কারীদের আপনি অর্ধেক শব্দের ধন্যবাদ (ধন্যবাদটুকুও পুরো নয়) দিচ্ছেন! একজন লেখক/কবি বিনয়ী হয় বলেই জানি কিন্তু আপনি এত উন্নাসিক তা ইতোপূর্বে আর দেখি নি। ভাল থাকুন। ধন্যবাদ।
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্
এ রকম উদাহরণ এখন ঘরে ঘরে সৃষ্টি হচ্ছে আর সে জন্যই তো বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যাও বাড়ছে । তবুও, দুঃখিনী মায়ের ব্যথাকে কবিতার ভাষায় খুব সুন্দর করে উপস্থাপনের জন্য অশেষ ধন্যবাদ ।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।