আজকে অনিকেতদের ক্রিকেট ম্যাচ । অনিকেতরা বিভিন্ন পাড়া থেকে এসে এখানে খেলে । তেমন কোন মাঠ নেই বলে প্রায় চারদিকে ফ্ল্যাট ঘর বাড়ির মাঝে ওরা সবাই খেলে । আজ মিরিকপাড়ার ছেলেদের সাথে খেলা । অনিকেতরা তৈরী । যদিও এখানে ম্যাচ খেলা প্রায় অসম্ভব । কেন না কিছুটা খেলার পর কেউ না কেউ কোন না ভাবে বাধা দেবেই আর খেলা শেষ না করে চলে আসতে হয় । তবুও এমনি খেলে আনন্দ করে চলে আসে । আজ তাই তিনটে থেকে এসে পড়েছে । সবার মনে একটা সফল ম্যাচ শেষ করার উচ্ছ্বাস কাজ করছে । বেশ স্ফূর্তিতে সবাই মাঠে নেমে পড়েছে । মাঠ বলতে যা বোঝায় সে রকম নয় । টস হল । অনিকেতরা হেরে গেল । মিরিকপাড়ার মোহিতদা একটু ডাকাবুকো । হামবড়া । তাই যে করেই হোক অনিকেতরা জিতলে আরো বেশি অনেকেই খুশি হবে । মিরিকপাড়া ব্যাট ছাড়ল না । দশ ওভারের ম্যাচ । অনিকেতদার উপরে সবার ভরসা । ঠিকমত উইকেট সাজিয়ে নিল । মাঠ ছোট তাই সেভাবেই খেলে এরা । টেনিশ বল তাও বেশ জোরেই চলে যায় । অনেকের লেগেছে , কাচ ভেঙেছে । আরো কত কি ? পাঁচ ওভার হয়ে গেল । মিরিকপাড়া তিন উইকেটে বত্রিশ । ভালোই খেলছে । আশে পাশে কেউ কিছু বলছে না , বরং বেশ উৎসাহ দিচ্ছে । তার মানে ম্যাচ শেষ করা যাবে । রমেশ মনোজ এমনকি অনিকেতদাও বল করল । তাও আটকানো গেল না । বিরাশি করে ফেলল । সবচেয়ে বড় কথা মোহিতদা মাত্র পাঁচ । তখনি উচ্ছ্বাস দেখাত কিন্তু ভয়ে দেখাতে পারে নি । কেননা না জিতলে কোন দাম থাকবে । তাই চেপে আছে । প্রথম পাঁচ ওভারে অনিকেতদের তিন উইকেটে মাত্র পঁচিশ । পাঁচ ওভার বাকি আছে । নির্ঘাত হারবে । মাঠে অনিকেত আছে তাই ভরসা । তবুও সবার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল । বলতে বলতে সবার মুখের দিকে তাকিয়ে অনিকেত বেশ একটু রাগের সঙ্গে হাত চালিয়ে শট মারল । বল ফ্ল্যাটের দিকে চলে গেল । পাশের একটা ফ্ল্যাটের একজনের বাড়িতে ঢুকে গেছে । ব্যাস হয়ে গেল আবার খেলা বন্ধ । ছেলেদের খেলার মত একটা মাঠ নেই । আনন্দটাই যেন রোজ রোজ মাটি হতে বসছে । জেতা হারা না থাকলে খেলার গুরুত্বটাই খেলো হয়ে যায় । স্পোর্টম্যান স্পিরিট তো এ ভাবে আজ একজন কাল আর একজন জিতবে অথবা হারবে এবং উচ্ছ্বাসের সাথে সাথে তা মেনেও নেবে আর খেলবে তবেই না গড়ে উঠবে । উঁচু দশ-তলা ফ্ল্যাট । তার চারতলার একটা ঘরের মধ্যে বল ঢুকেছে । সবাই মিলে গেল । সামনে সেই অনিকেতদা । মোহিতদা এখন পেছনে । শুধু ছোটদের কাছে হম্বিতম্বি । একজন মহিলা দরজা খুললেন । সরোজ বলল - ম্যাডাম । আসলে খেলতে খেলতে এমন হয়ে যায় । প্লিজ দিন না বলটা । -না । হবে না । বেশ ঝাঁলালো গলায় বললে পেছনে অনেকে সরে গেল । তিনি আরো বললেন- আমার গায়ে আর একটু হলে লাগত । কীরকম বেকায়দা ভাবে তোমরা ক্রিকেট খেল ? এক জোরে কেউ মারে ? সাবধানে খেলতে পারো না ? এর আগেও হয়েছে তোমরা গায় করো না । এবার আর বল হবে না । এবার মোহিতদা মস্তানের মত এগিয়ে গেল – বল তো লাগে নি । লাগলে কি হত পরের কথা । তাছাড়া ক্রিকেট তো আর আস্তে খেলা যায় না । অনিকেত কিছুতেই উচ্ছ্বাসটাকে মাটি করতে চায় নি তাই মোহিতকে সরিয়ে প্রায় বিনয়ের সুরে বলল – আমাদের আর খেলার জায়গা কই বলুন । আশেপাশে শুধু মাঠ , নানান খেলা হবে সে রকম কি আছে । আপনাদের একটু আধটু ডিস্টার্ব করে আমরা না খেললে যাব কোথায় , বড় হব কি করে ? আমরা তো এই আশে পাশের পাড়াতেই থাকি । প্লিজ । এত করে বোঝাতে ভদ্রমহিলা বুঝল । বলটা ফিরে পেয়ে সবাই মিলে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে নীচে এল । আবার উচ্ছ্বাস আবার উদ্যম । মোহিতদা হয়তো জিতবে , অনিকেতদাও হয়তো জিততে পারে । আবার খেলা শুরু হল । অনিকেতদার উপরে কি যেন ভর করল কে জানে । আর কি সুন্দর করে যেমন চাইল তেমন করে খেলল । আস্তে আস্তে পুরো পাঁচ ওভার প্রায় শেষ হতে লাগল । আর অনিকেতদাও জেতার পথে । চারধারে চুপ করে বসে থাকা সবাই অনিকেতদার মারা বলটা যেই মোহিতদার পাশ দিয়ে বেরিয়ে চার হয়ে গেল আর অনিকেতদা জিতে গেল অমনি খুব জোরে আনন্দের চিৎকার জুড়ে দিল । মোহিতদাও জড়িয়ে জড়িয়ে ধরল । প্রায় শেষ বিকেলে আমাদের এই উচ্ছ্বাস দেখার মত । যদিও কোন ট্রফি নেই তবুও অনেক বড় ট্রফি জয়ের আনন্দ হয়েছিল । জীবনের এই উচ্ছ্বাস আমরা আজও বেশ অনুভব করি
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ওয়াহিদ মামুন লাভলু
চমৎকার বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন। খুব ভাল লাগল। শ্রদ্ধা জানবেন।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।