সেদিন রাত ছিল । সবাই ঘুমোচ্ছিল । দুজন চোর এল । অবশ্যই চৌর্যবৃত্তির জন্য । প্রথম চোর বলল, “কোন বাড়িতে যাবি ?” “রামলালের বাড়িতে চল । আজ রামলাল বাড়িতে নেই । বাড়ি বন্ধ ।” দুজনে রামলালের বাড়িতে গেল । উঠোন দিয়ে দরজায় চলে গেল। প্রথম চোর হাতুড়ি বার করল । এক ঘা মারতেই তালা দু ভাগ । ভিতরে পুরো অন্ধকার । সব দরজা জানালা বন্ধ বলে কোথাও আলোর ছিটেফোঁটাও নেই । কোথায় কোন জিনিস আছে তা ঠিক ভাবে বোঝা যাচ্ছে না । প্রথম চোরের নাম হরিদাস । তার সাথে তার ভাই রঘু । এরা পেশায় চোর নয় । কিছুদিন আগে কিছু দুষ্কৃতি তাদের ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দেয় । তখন থেকে তারা এই পেশায় যুক্ত । এ বাড়িতে তারা আগেও এসেছে । রামলাল তাদের সাথে বহুবার ঠক-জালিয়াতি করেছে । হরিদাসের বিশ্বাস রামলালই লোক ঠিক করে তাদের বাড়ি পুড়িয়েছে । অনেকদিন ধরে রামলালের বাড়ি চুরি করার ইচ্ছা ছিল , কিন্তু পারেনি । আজ সুযোগ এসেছে । এ বাড়িতে আগেও আসার জন্য হরিদাসের জানা আছে কোথায় কি আছে । তাই সে তাড়াতাড়ি আলমারির কাছে গেল , কিন্তু চাবি ? চাবি কোথায় আছে তা তো তার জানা নেই । রঘু ততক্ষণে টর্চ জ্বালিয়েছে । হরিদাস বলল, “রঘু , আলমারির চাবি খোঁজ , আমি অন্যগুলো সরাচ্ছি ।” চাবি পাওয়া গেল । সব নিয়ে তারা বেরিয়ে পড়ল । রঘু একটা আলাদা তালা সাথেই এনেছিল । সেটা দিয়ে দরজায় তালা দিয়ে দিল , যাতে কেউ কিছু না বুঝতে পারে । তারপর যেখান দিয়ে এসেছিল অর্থাৎ পেছনের বারান্দা দিয়ে নেমে পড়ল । জানে কুকুর আছে । ঘেউ ঘেউ করবে , আগেই বিস্কুটের টুকরো দেওয়াই ছিল । সেই তল্লাট ছেড়ে চলে এল । রাস্তার আলোর পেছন দিকে দুজনে বিড়ি ধরিয়ে বলল – কোথায় যাবি ? -বউ ছেলে যে ভাবে রাস্তায় ঝুপড়িতে আছে সেখানে এত টাকা পয়সা চলবে না । চল গ্রামেই ফিরে যাই । -তাই চল । সেখানে এখনো তো আমাদের বাপ ঠাকুরদাকে অনেকে চেনে । বেটা রামলালকে উচিৎ শিক্ষা দিলাম । -ও সব কিছু হবে না । ওরা কোটিপতি । বীমা করা আছে । কোথায় কত আছে তাই জানে না । দেখলি না আমাদের কত কষ্টের কেনা জায়গা কি করে বে-আইনি বলে ঘর জ্বালিয়ে দিল । -তবে আমাদের লড়াই নিজেদের সঙ্গে । এ সব ভেবে লাভ নেই । রাত হল । সকালেই এই অন্ধকার শহর ছেড়ে চলে যাব । -এ ছাড়া উপায় কি ? আমরা চোর নই । চোর বানিয়েছে । ওরা বলে বলে চুরি করে তাতে তদন্ত হয় আর আমাদের ভাগ্যে জুটে ......। -চল , পুলিশ কিন্তু খদ্দেরের গন্ধ পায় । চলে এলে জীবন শেষ । -চল সেই এক ব্যাপার । বলেই হাঁটা দিল মেন রাস্তা বাঁচিয়ে । এখানে কত আলো । মনে হয় রাতেও দিন আর রঘু , হরির বাড়িতে রাত তো রাত দিনেও রাতের অন্ধকার । সত্যি , রাত কারও কাছে এমনও হয় । রঘু আর হরি পরদিন ট্রেন ধরে গ্রাম । তারপর তাদের রাত কেটে সকাল হল কি না কে জানে ?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ইব্রাহিম খলিল আমিদ
তার গুলো এভাবেই কেটে যায়। রঘু, হরিদের কপালে কি থাকে তা ইশ্বরই ভালো জানেন। তবে পরকালের শান্তি যে রামলালেরা কখনো পায় না তা কিন্তু নিশ্চিত হয়েই বলা যায়।
আখতারুজ্জামান সোহাগ
খুব ছোট পরিসরে জমাট কাহিনীর গল্প বুনেছেন। দু’জন মানুষ কিভাবে জীবনের প্রয়োজনে এ পেশা বেছে নিয়েছে সেটা ফুটিয়ে তুলেছেন বেশ সুন্দর করে। শুভকামনা।
ক্যায়স
একটি মুভিতে একটি ডায়ালগ শুনেছিলাম, সেটি ছিল এমন " যখন গরীবের কাছে খাবার মত কিছু থাকবেনা তখন গরীবরা ধনীদেরকেই খাওয়া শুরু করবে"। আপনার গল্প শুনে সেটা আবার মনে পরে গেল। অনেক ভালো লিখেছেন ভাই। ভালো থাকবেন।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।