আমার বউ ঐশ্বরিয়া

রম্য রচনা (জুলাই ২০১৪)

হাসান ইমতি
  • ২৫
“আপনার বউ মানে আমাগো ভাবী তো দারুণ সুন্দরী” । বাস কনট্রাক্টরকে ভাড়া দিয়ে মানিব্যাগ পকেটে রাখতে গিয়ে পাশের সিটে বসা সহযাত্রীর মুখ থেকে ভেসে আসা এহেন মন্তব্য তার দিকে দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। আনুমানিক বছর পঁচিশের এক ঠ্যাঙা লোক, ঢোলা প্যান্ট, আধ ময়লা জামা, সারা শরীরে লেগে আছে এক ধরনের ঢলঢলে গ্রাম্যতা । ব্যাক্তিগত বিষয়ে এমন গায়েপড়া মন্তব্যের কারন খুঁজতে গিয়ে চোখ পড়ল আমার মানিব্যাগে রাখা একটি পকেট ক্যালেন্ডারের উপর । এটি উল্টো করে রাখা আছে ফলে পেছনের ওয়ালপেপারের দিকটি দেখা যাচ্ছে। সেখানে বিশ্বসুন্দরী ঐশ্বরিয়া রাইয়ের হাসিমুখের একটি ছবি মদির চোখে দর্শকের দিকে নিস্পলক তাকিয়ে আছে। বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াতে হয় বলে দিন তারিখ হিসাবের জন্য আমি সব সময়েই ক্যালেন্ডারের এই খুদ্র ভার্সনটি মানিব্যাগে রাখি, এটি উল্টো করে রাখার কারন হল এই ক্যালেন্ডারটি গত বছরের, সদ্য নতুন বছর এসেছে এখনো নতুন ক্যালেন্ডার কেনা হয়ে ওঠেনি, তাই এটি পকেটে রয়ে গেছে, সাধারনত আমি সেলিব্রেটিদের ছবি সম্বলিত কোন ক্যালেন্ডার বা পোস্টার কিনি না, আমার পছন্দের তালিকায় আছে প্রাকৃতিক দৃশ্য বা স্কেচ, গত বছর যখন ক্যালেন্ডার কেনার জন্য দোকানে গিয়েছি, তখন অনেক ক্যালেন্ডারের ভেতর থেকে হঠাৎ এটি চোখে পড়ে, ছবির হাসিটি বেশ রহস্যময় ধরনের, এই ছবিটিতে ঐশ্বরিয়াকে এতোটাই অন্যরকম লাগছিল যে এটি ঐশ্বরিয়া রাইয়ের ছবি আমি তা প্রথমে বুঝতেই পারিনি, দোকানীকে জিজ্ঞেস করতে সে কার্ডের সারি দেখে বলে দিল এগুলো ঐশ্বরিয়ার ছবি, এটি বেশ আগের ঘটনা, তখন ঐশ্বরিয়া রাই হালের ক্রেজ, তরুন ও যুবকদের ঘুমকাড়া স্বপ্নের নায়িকা, তার সাথে তখনও বচ্চন পরিবারের নাম যুক্ত হয়নি, ছবিটির এই ব্যতিক্রমী লুক ও ঐশ্বরিয়ার রহস্যময় সৌন্দর্যের হাতছানিতে আমি আমার সহজাত স্বভাব ত্যাগ করে এই মিনি ক্যালেন্ডারটি পকেটদাবা করে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এসেছিলাম সেদিন । বছর শেষ হয়ে গেলেও নতুন ক্যালেন্ডার না কেনা ও ছবির রহস্যময়ীর মোহময় আকর্ষণে ওটা এখনো সগৌরবে আমার মানিব্যাগের শোভা বর্ধন করে চলেছে ।

যাইহোক, আমি কিছু না বোঝার ভান করে খানিকটা বিরক্তি মিশিয়ে জিজ্ঞাসু চোখে ঐ লোকটির দিকে তাকালে সে আবার কথা বলতে শুরু করল । “আপনি ভাই ভাগ্যবান মানুষ, সুন্দরী বউ সবাইর কপালে জুঠে না, আমাদের ভাবী তো অনেক সুন্দরী, আমার বউ দেখতে তেমন সুন্দর না, তারপরেও আপনের মত আমিও যখন নতুন বিয়া করছিলাম তখন বউয়ের ছবি পকেটে নিয়ে ঘুরতাম, আপনাকে দেখে সেইসব দিনের অনেক কথা মনে পইড়া গেল” । বুঝতে পারলাম গ্রামের সহজ সরল মানুষ, মানিব্যাগে ঐশ্বরিয়ার ছবি দেখে সে ধরে নিয়েছে এটি আমার বউয়ের ছবি, অপরিচিত কারো ব্যক্তিগত বিষয়ে যে নাক গলাতে হয় না সেই অভিজাত সংস্কৃতি এই শ্রেণীর মানুষেরা বোঝেও না, ধারও ধারে না, নিজের মত করে সাদা চোখে দুনিয়া দেখে, যা করতে ভালো লাগে করে ফেলে, কোন কথা বলতে ইচ্ছে হলে বলে ফেলে, কিন্তু এই সাদাসিদা মানুষগুলোর ভেতর আছে কাউকে ভালোবেসে খুব সহজে আপন করে নেয়ার একটি অদ্ভুত সহজাত দক্ষতা, এইসব মানুষদের এই ক্ষমতাকে আমি বিপুল বিস্ময়ের সাথে শ্রদ্ধা করি, আমরা আধুনিকতার দাবীদার হিসেবী মানুষেরা হয়তো এটি কোনদিন পারব না । এই অকৃত্রিম ভালোবাসার পরিচয় আমি বেশ কয়েকবার পেয়েছি তাই বিরক্তি ঝেড়ে ফেলে আধুনিকতার হিসেবে গেঁয়ো কিন্তু অকৃত্রিম এই মানুষটির সাথে আলাপচারিতার ব্যাপারে খানিকটা আগ্রহবোধ করলাম । “আপনি কোথা থেকে এসেছেন, বয়স তো মনে হয় বছর পঁচিশের বেশী হবে না, কিন্তু কথা শুনে তো মনে হচ্ছে অনেক দিন আগে বিয়ে করেছেন”। সে আবার কথা বলতে শুরু করল “আমার নাম দবির, গ্রামের বাড়ী নেত্রকোনা, পড়াশোনা তেমন করি নাই, হাল হালটি কইরা খাই, পাশের বাড়ির মরিয়মরে ভালো লাগতো, তেমন সুন্দরী না হইলেও ওর চোখ দুইটা ছিল খুব মায়াকাড়া, চোখের দিকে তাকাইলে কেমন জানি লাগতো, চোখ ফিরাইতে পারতাম না, বিরাট সংসার, ঘরে কামের মানুষ সেই হিসাবে নাই, আঠারো বছর পার না হইতেই মা বাপে বিয়ার দরবার তুলল, আমিও মায়েরে সাফ বইল্যা ফেললাম, বিয়া যদি করাইতে চাও, ছগির কাকার মেয়ে মরিয়মরে ঘরে নিয়া আসো, পাড়া পড়শি, ঘরের এতো কাছে বিয়ে দিলে কেমন হয়,নতুন বিয়ে দিয়ে নতুন আত্মীয় হওয়াই ভালো, এরকম কিছু গাইগুই করে শেষ পর্যন্ত আমি অনড় থাকেতে ঘটনা বিয়াতে গিয়ে ঠেকল । তা ভাইজান আমার কাহিনী তো শুনলেন, এইবার আপনার কাহিনিটা একটু বলেন তো দেখি”। অভিনয় ও রূপমুগ্ধ হলেও কষ্ট কল্পনায়ও বিশ্বসুন্দরী ঐশ্বরিয়া রাইকে ঘিরে আমার এহেন কোন বিলাসী ভাবনা ছিল না কখনো, তবে এই মানুষটির কথায় বেশ মজা পেলাম, আর তাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম একে নিয়ে একটু নির্দোষ মজা করব । তার কাছে সহজবোধ্য ও আকর্ষণীয় হবে ভেবে অনেক আগে পড়া একটি সিনেমা ধাঁচের লাভস্টোরির সুত্র ধরে কাহিনী বানানো শুরু করলাম “আপনার ভাবীর নাম শিমিন, ও শুধু সুন্দরীই নয়, অনেক শিক্ষিত ও বড়লোকের মেয়ে, আমরা ছোট বেলায় একই এলাকায় থাকতাম, ছোটবেলা থেকেই ওর মনটা খুব ভালো, ও সবার সাথে সহজভাবে মিশত, তখন আমাদের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো ছিল না, তাই বলে ও আমাকে কখনো ছোট চোখে দেখত না, ওর বাবা বিদেশে থাকতেন, আমরা প্রতিদিন একসাথে খেলাধুলা করতাম, ওর অন্যসব খেলার সাথীদের তুলনায় ও আমাকে অনেক বেশী গুরুত্ব দিত, আমাদের সবচেয়ে প্রিয় খেলে ছিল জামাই বৌ, আমরা প্রায়ই ঐ জামাই বৌ খেলা খেলতাম, ও বৌ সাজত আর আমি জামাই, ও সবসময় বলত, বড় হয়ে কিন্তু আমি সত্যি সত্যি আমি তোমার বৌ হব, তোমাকে কিন্তু সত্যি সত্যি আমাকে বিয়ে করতে হবে । আমি কিছু বলতাম না, শুধু হাসতাম, এতে ওর জেদ আরও বেড়ে যেত, আর আপ্রান চেষ্টা চালাত আমার থেকে কথা নেবার । এরকম আমরা একদিন জামাই বৌ খেলছিলাম, এমন সময় অনেকদিন পর ওর বিদেশ থেকে ওর বাবা ফিরে এসেই আমাদের এই খেলা দেখতে পেয়ে বেজায় রেগে গেলেন । ওর মা এবং বাড়ীর কেয়ারটেকারকে ডেকে বললেন “এই নোংরা ছেলেটি কে, এ আমার বাড়ীর ভেতর ঢুকল কি করে”? কেয়ারটেকার আমতা আমতা করে,“ও আমাগো এলাকার সর্দারের ছেলে”, বলতে গেলে তার উপর আরও কিছু অভিজাত গালিগালাজের বন্যা বয়ে গেল, শেষে আমাকে তখনি বাড়ী থেকে বের করে দিয়ে আর যেন এই বাড়ীর ত্রিসীমানায় ঘেঁষতে না পারি সে হুকুম জারি হয়ে গেল । তারপর আমি অনেক চেষ্টা করেও আর ওর দেখা পাইনি, পরে কেয়ারটেকারের কাছে জানতে পেরেছিলাম ওর বাবা ওকে নিজের সাথে করে বিদেশে নিয়ে গিয়েছিলেন, যাবার সময় ও নাকি অনেক মন খারাপ করেছিল, আমি ওকে একটি খেলনা পুতুল দিয়েছিলাম, সেটা বুকে জড়িয়ে ধরে নাকি অনেক কান্নাকাটি করেছিল, তখন আমার কাছে ওর স্মৃতি বলতে ছিল ওর দেয়া লকেটসহ একটি চেইন, যে লকেটেটি খুললে দুটি ছবি রাখার জায়গা আছে এবং সেখানে একটিতে ওর হাসিমুখের একটি ছবি” । আমার বানানো সিনেমাটিক গল্পটি এই পর্যন্ত আসতেই লোকটি চোখ টান টান করে উত্তেজিত হয়ে জানতে চাইল “তারপর, তারপর, তারপর কি হল”। আমার উদ্দেশ্য পূর্ণ হচ্ছে দেখে আমি ঐশ্বরিয়াকে আমার নায়িকা বানিয়ে উৎসাহের সাথে আবার গল্প বলা শুরু করলাম, “এরপর দীর্ঘদিন কেটে যায়, আমি ওর আর কোন খোঁজ পাইনি, কেয়ারটেকার চাচার কাছেও অনেকবার গিয়েছি, কিন্তু ওর আর কোন খবর পাইনি, তখন আমার দিন কাটে ওর দেয়া চেইন হাতে নিয়ে ওর ছবি দেখে আর ওর চিন্তায় । দিন যায় রাত আসে, আবার দিন, এভাবে মাস যায়, যায় বছর, দেখতে দেখতে কেটে গেল আমার জীবনের বেদনা ভরা সুদীর্ঘ এক যুগ, ওর চিন্তার পাশাপাসি বাস্তববাদী আমি ভেতরে ভেতরে আর একটি সুপ্ত জেদ ধরে রেখেছিলাম, ওর বাবার মুখে শোনা প্রথম ও শেষ কথা, আমি একটি গরীব ও নোংরা ছেলে, ঐ সময় আমি প্রতিমুহূর্তে ভাবতাম ভালোবাসাই শেষ কথা নয়, আমাকে ওর যোগ্য হয়ে উঠতে হবে, ওকে সুখী করতে হবে, আমার জন্য ওকে যেন কোন ভাবে ছোট হয়ে যেতে না হয়, আমি মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে, আমার সামনে নিজেকে ওর যোগ্য হয়ে ওঠার একটি মাত্র পথ খোলা আছে তা হল পড়াশোনার মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে তোলা । সবদিক ভেবে মাথা ঠাণ্ডা করে আমি সেই চেষ্টায় মনপ্রান ঢেলে দিলাম । তখন দিনে দশ ঘন্টা করে পড়াশোনা শুরু করলাম আমি, হাতে নাতে এর ফলও পেলাম কিছুদিনের মধ্যেই, স্কুলে রেজাল্টও ভালো হতে লাগলো, আগে রোল নম্বর ছিল দশের পরে, প্রথমে দশের ভেতর আসলো, তারপর পাঁচের ভেতর, তারপর প্রথম তিনজনের ভেতর এবং দুই বছরের মাথায় ক্লাসে প্রথম হলাম আমি, এরপর থেকে বরাবর প্রথম হতে লাগলাম, আমার এই উন্নতিতে বাবা, মা, শিক্ষকরা সব সবাই খুব খুশী হলেন যদিও তারা এর পেছনের আসল কারণটি জানতেন না। এস এস সি তে আমি মেধা তালিকায় স্থান পেলাম” এই পর্যন্ত বলার পর লোকটির প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য তার মুখের দিকে তাকালাম, দেখি তার মুখ হা হয়ে আছে, চোয়াল ঝুলে পড়েছে, এভাবে কিছুক্ষণ কেটে গেল, সম্বিৎ ফিরে পেয়ে আমি যে গল্প বলা বন্ধ করে দিয়েছি এটা বুঝতে তার বেশ কিছুটা সময় লেগে গেল, সে তখন হঠাৎ আমার হাত জড়িয়ে ধরে বলে উঠল, ভাইজান, আপনের হাতটা একটু ধইরা দেখি, আপনের গল্প যেন স্বপ্নের মত, আমার কি সৌভাগ্য আপনার মত একজন মানুষের দেখা পাইছি । তারপর কি হইল ভাইজান, আপনার গল্প শোনার জন্য আমার আর তর সইছে না । লোকটির আগ্রহে অনুপ্রাণিত হয়ে আমি আবার বলতে শুরু করলাম “এরপরের ঘটনা সিনেমার কাহিনীর মত, এস এস সির পর আমি এইস এস সিতেও বোর্ড স্ট্যান্ড করে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হলাম ডাক্তারি পড়ার জন্য, এর পেছনেও ছিল ওর পরিবারের প্রচ্ছন্ন প্রভাব, ওর বড় মামা ছিল ডাক্তার, সে ছিল ওদের পরিবারে বেশ সন্মানিত সেজন্য আমি এই লাইনে পড়ব বলে মনস্থির করেছিলাম । এর ভেতর দিয়ে অনেক সময় চলে গেছে, আমি কোন ভাবেই ওর কোন খোঁজ পেলাম না, ততদিনে প্রযুক্তির উন্নতির ধারায় ফেসবুক চালু হয়ে গেছে, পারিপার্শ্বিক বাস্তবতার প্রভাবে আমিও ফেসবুকে এক্যাউন্ট খুললাম, প্রথমে ভালো না লাগলেও ধীরে ধীরে ফেসবুক ভালো লাগতে লাগলো যখন নতুন পুরনো অনেক আত্মীয় বন্ধুদের এখানে খুজে পেলাম, এভাবে কিছুদিন চলার পর শিমি নামে এক মেয়ের আইডি দেখে বিদ্যুৎ ঝলকের মত মনে হল ফেসবুকে তো অনেককেই পেলাম, তাহলে তো শিমিনও থাকতে পারে, ও তো আধুনিক বিত্তশালী ঘরের মেয়ে, ফেসবুকে থাকাটাই স্বাভাবিক, শুরু করে দিলাম খোঁজা, কিন্তু পড়লাম নতুন এক সমস্যায়, খুঁজতে গিয়ে শিমি, শিমিন, শিমলা, শিমু, সুমি, শারমিন এই জাতীয় নামের অনেক আইডি পেলাম, ওকে দেখেছি সেই ছোটবেলায় সেই চেহারাটিই আমার মানসপটে আঁকা হয়ে আছে, শুধু ঐ চেহারার উপর নির্ভর করে ওর বর্তমানে চেহারা সম্পর্কে একটি ধারনা করার চেষ্টা করলাম, এতে খুব একটা সুবিধা হল না, তখন ভাবতে লাগলাম কি করা যায়, তখন ওর সম্পর্কে আর কি কি জানি ভাবতে লাগলাম, মনে পড়ল দিহান নামে ওর এক কাজিন ছিল, আমাদের কয়েক বছরের বড়, যেই ভাবা সেই কাজ, দিহান নামে খোঁজ শুরু করলাম, অভিজ্ঞতা একই রকম হল, অনেক ভীরের ভেতর খুঁজে পেলাম না দিহানকেও, আবার গোড়া থেকে ভাবতে লাগলাম, আর কে কে ছিল ওর পরিবার, বন্ধু ও আত্মীয়দের ভেতর যার চেহারা আমি মনে করতে পারব, এভাবে এক এক করে ওর গালিব মামা, ঝুমুর আন্টি সহ আরও কয়েক জনের নাম দিয়ে খুঁজলাম, এবং খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ ওর ঝুমুর আন্টির প্রোফাইল পেয়ে গেলাম, চেহারা কিছুটা বদলেছে, স্বাস্থ্য ভারী হয়েছে, কিন্তু চেনা যাচ্ছে, খুশীতে আমার নাচতে ইচ্ছে করছিল তখন, এবার দেখতে হবে ওনার ফ্রেন্ড লিস্টে আমার ছোট বেলার না বলা প্রথম প্রেম শিমিনকে পাওয়া যায় কিনা, যতটা খুশী হয়েছিয়াম খুঁজতে গিয়ে ধাক্কা খেলাম, ওনার ফ্রেন্ড লিস্ট হাইড করা, একবার ভাবলাম উনাকে ফেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাই, তাহলে আমি হয়তো ওনার ফ্রেন্ডলিস্ট দেখতে পারব, কিন্তু পর মুহূর্তে বুঝতে পারলাম তাতে কোন কাজ হবে না কারন আমার সম্পর্কে ওর পরিবারের যে ধারনা, উনি আমার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট রিসিভ করবেন না, আমাকে দেখে উল্টো ব্লক করে দিতে পারেন তাহলে তো উনাকে ভিত্তি করে আগানোর পথও বন্ধ হয়ে যাবে । হতাশ হয়ে বিকল্প খুঁজতে লাগলাম, উনার প্রোফাইলটি আবার দেখতে শুরু করলাম আর কোন কিছু জানা যায় কিনা এই আশায়, ফ্রেন্ড লিস্টে না থাকায় বা অন্তত পক্ষে একজন মিউচুয়াল ফ্রেন্ডও না থাকায় তার প্রোফাইলের তেমন কিছুই আমি দেখতে পারছিলাম না, বেশীর ভাগ ছবি, স্ট্যাটাস আমার কাছে হাইড হয়ে রয়েছে, খুঁজতে খুঁজতে যখন হতাশ হয়ে যাচ্ছিলাম তখন সহসাই ওনার রিলেশনশীপ স্ট্যাটাসে দেখলাম ব্রাদার হিসেবে শিমিনের বাবা আদিল চৌধুরীর প্রোফাইল, মানুষ হিসেবে ওনার প্রতি বিতৃষ্ণা থাকলেও শিমিনের বাবা হিসেবে ভালোলাগা কাজ করল, দেরী না করে সরাসরি ঢুকে পড়লাম ওনার প্রোফাইলে, বেশ স্বচ্ছন্দে দেখা গেল ওনার প্রোফাইল, পুরনো দিনের মানুষ তো, হয়তো ফেসবুকের এতো খুঁটিনাটি বিষয় জানা নেই অথবা পুরুষ মানুষ বলে মেয়েদের মত অত ঢাক ঢাক গুড় গুড়ের মধ্যে যাননি, এবং যা খুঁজছিলাম, ওনার প্রোফাইলে পেয়ে গেলাম আমার স্বপ্নের রাজকন্যার সন্ধান, শিমিন চৌধুরী, ওর প্রোফাইলে ঢুকলাম, ওর প্রোফাইলও হাইড করা, তবে প্রোফাইল ছবিতে দেয়া আছে ছোটবেলায় ওকে আমার দেয়া একমাত্র উপহার সেই মাটির পুতুলের ছবি, ওর বর্তমান চেহারা দেখতে পারলাম না, তবু আমার দেয়া পুতুলের অবস্থান দেখে খুশীতে মনটা নেচে উঠল, যার মনের দরোজা আমার জন্য খোলা, তার ফেসবুকের বন্ধ দরোজা খুলতে কতক্ষণ, এর পরে ঘটনা খুব দ্রুত ঘটতে থাকলো, ওকে মেসেজ ও ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দেবার পরদিনই ও রিকোয়েস্ট রিসিভ করে রিপ্লাই দিল, ও তখন লন্ডনে ছিল, অক্সফোর্ডে পড়ত আইন বিভাগে, অনেক কথা জমে ছিল আমাদের, মোবাইল নম্বর বিনিময় হল, মোবাইল ছাড়াও ফেসবুকে ঘণ্টার পর ঘন্টা চ্যাট হতে লাগলো, বুঝতে পারলাম, রাতেই সব তারাই আছে দিনের আলোর গভীরে, বাল্যের আধো আধো প্রেম এবার সত্যিকার ভালোবাসায় পরিনত হল । ও ছয় মাস পর বাংলাদেশে আসল, এবার ও আর সেই ছোট অবুঝ বালিকা নয় বা আমিও কোন নোংরা পথশিশু নই, তাই ওর পরিবার থেকে বাধা এলেও আমাদের ভালোবাসা তা রুখে দিল, পরিনতি ও আজ আমার প্রিয়তমা স্ত্রী” । গল্পের এই পর্যায়ে এসে আমি গন্তব্য স্থানের খুব কাছাকাছি এসে গেলাম, লোকটি তখন আমার গল্পের আবেশে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়েছে, আমি তাকে বললাম, ভাই আপনার সাথে অনেক কথা হল, কথা বলে ভালো লাগলো, আমি সামনে নেমে যাবো । এই কথা শুনে লোকটি আবার আমার হাত জড়িয়ে ধরল, বলল, ভাই আপনি খুব ভাগ্যবান মানুষ, সবাইর ভাগ্য এতো ভালো হয় না, আমার অনেক ভালো লাগতেছে যে আমি আপনের মত একজন মানুষের দেখা পাইছি, ফেসবুক না কি কয় ঐটার কথা আগেও শুনছিলাম, আগে ভাবতাম ঐটা বেকার আর অকামের মানুষের যায়গা, আপনার জীবনের কাহিনী শুইন্যা সেই ভুলও দূর হইয়া গেল, ভাই আপনি আমার আর আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন, ও ভালো কথা ভাই আপনের নামটাই তো জিজ্ঞেস করা হয় নাই, যদি বেয়াদবি না নেন তাইলে আপনার নামটা যদি একটু বলতেন তাহলে প্রানে খুব সুখ পাইতাম” । আমি বললাম “আমার গল্প আপনার ভালো লেগেছে জেনে আমারও ভালো লাগলো, আমার নাম সাজিদ, আপনি একজন ভালো মনের মানুষ, আপনি নিশ্চয়ই ভালো থাকবেন, পরিবার পরিজন নিয়ে সুখী হবেন” । লোকটি উত্তরে বলল “ভাই আপনি যদি অনুমতি দেন তাহলে আমার প্রথম সন্তান ছেলে হইলে তার নাম রাখবো সাজিদ, আর মেয়ে হইলে শিমিন, আর আপনি যদি কখনো নেত্রকোনা যান অবশ্যই আমার বাসায় দাওয়াত রইল”বলে সে আমাকে তার গ্রামের নাম ঠিকানা জানাল । ইতিমধ্যে আমার গন্তব্য এসে পড়াতে আমি “আপনার ভালো লাগলে অবশ্যই রাখবেন, আমারও খুব ভালো লাগবে ব্যাপারটি, আর আপনার নাম ঠিকানা তো জানাই রইল, যদি কোনদিন আপনার এলাকায় যাই তবে অবশ্যই যোগাযোগ করব” বলে বাস থেকে নেমে পড়লাম । হোস্টেলে ফিরে বন্ধুদের এই কথা বলতেই ওরা খুব মজা পেল, কয়েকজন আবার বলল, তুই শুধু শুধু গ্রামের সাদাসিধা একটি লোককে এভাবে মিথ্যে গল্প বলে কেন অহেতুক বোকা বানালি, লোকটি তোকে কত বিশ্বাস করল, তার বিশ্বাস এভাবে নষ্ট করা, তার সাথে মিথ্যে বলা কি ঠিক হল ? আমি উত্তরে বললাম “এই ঘটনা তো তার সাথে কোনরকম প্রতারনা বা অসৎ উদ্দেশ্যে আগে থেকে ভেবে চিন্তে করিনি, এটি একটি তাৎক্ষনিক ঘটনা, যেসব সিনেমা, নাটক, গল্প, উপন্যাস লেখা হয় সেগুলোও তো বাস্তবের সাথে কল্পনা ও সৃজনশীলতার মিশেল, এতে মানুষ বিনোদিত হয়, এটাও না হয় তেমন একটি সৃজনশীল বিনোদনমূলক ব্যাপার বলেই ধরে নিলাম, সিনেমা, নাটক বা বই পড়তে হলেও তাকে গাটের পয়সা গুণতে হত, চলতি পথে ঐ লোকটি বিনা পয়সায় বিনোদিত হল, আমারও ভালো লাগলো তাৎক্ষনিক ভাবনার ফসল হিসেবে এমন একটি নির্দোষ মিথ্যে গল্প দাড় করাতে পেরে, আর যে সুন্দরীকে ঘিরে এই গল্পের অবতারনা সেই ঐশ্বরিয়া রাইও হয়তো এটি শুনলে কিছু মনে করবেন না ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
শামীম খান খুব সুন্দর সাজানো গল্প । ভাল লেগেছে ।
দীপঙ্কর বেরা Aro choto kore lekha jeto bhalo laglo
sobkichur ekti size thake, beshi chot ba boro korte gele lekhar sotusfurtota byahot hoy ...
পুলক বিশ্বাস আমার ভালো লেগেছে। শুভকামনা থাকলো। আমার কবিতা পাড়ায় আমন্ত্রণ থাকলো। নিরন্তর শুভকামনা জানবেন।

১৯ আগষ্ট - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ৩৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "পরগাছা”
কবিতার বিষয় "পরগাছা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ জুলাই,২০২৫