আজ আমি আপনাদেরকে বাংলার রুপ নিয়ে তিন/চারটা কাহিনী শোনাব এবং এটাও প্রমান করার চেষ্টা করব যে আমাদের দেশের ক’জন মানুষ খাটি বাংলায় কথা বলে আর ক,জন ১৯০বছরের অত্যাচারি শাসক ইংরেজদের ভাষার সংমিশ্রনে । সাথে থাকবে কিছু হাস্যরসও। রিক্সাওয়ালা যখন বাংলাভাষা বোঝে না!! আমার বড় ভাই জামিল ঢাবিতে পড়ে। একদিন তার সাথে দেখা করার জন্য গেলাম। আমি জায়গাটা ভালভাবে চিনতাম না। তাই অনেক কষ্টে একদম কাছাকাছি গিয়েও গন্তব্যে পৌছতে পারলাম না। না চিনলে যত সহজ পদ্ধতি আছে তার মত একটা হলো- কোন রিক্সাওয়ালাকে সেই জায়গার নাম বলে সিটে উঠে বসলেই সে সুন্দর করে সেখানে নিয়ে যাবে। এটা আমাকে আমার এক বন্ধু শিখিয়েছিল। আমিও এই পদ্ধতি অবলম্বন করলাম- এক রিক্সাওয়ালাকে সম্বেধন করে বললামঃ- ‘এই যে ভাই! ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ যাবেন?’ রিক্সাওয়ালা এমনভাবে আমার দিকে তাকাল যেন, নামটা উচ্চারণ করে একটা বড় অপরাধ করে ফেলেছি! একটু পরে বললো- ‘এইডা আবার কোন জাগায়? এমন নাম তো জীবনেও হুনি নাই।’ আমি বললাম- ‘কত বছর হলো এই অঞ্চলে আছেন?’ - তিন বছর চলে। - আশ্চর্য! এতো দিনে ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ একবারও যান নাই? - ক্যা? না চিনাডা কি আমাগো অপরাধ? কথা শনে আমি রীতিমত ভড়কে গেলাম। তাই তাড়াতাড়ি বললামঃ- ‘না, তা নয় তবে এত কাছে এবং এত পসিদ্ধ একটা জায়গায় কোনদিন আপনি যাননি?’ অবশেষে লোকটা বললো- ‘কী দরকার হাম্মের (আপনার) লগে কতা কইয়া হাম্মের দামী সময়গুলান নষ্ট করার? হ্যা চেয়ে ভাল অইব অন্য কাউরে কই।’ এটা বলে সে অন্য একজনকে ডেকে বলল- ‘এই দেখ তো এই ব্যডাডায় কী কয়?’ এই বলে সে তার রিক্সা নিয়ে অন্যদিকে চলে গেল। এদিকে আমি বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লাম। খোদাই জানে কোথায় আইস্যা ঠেকেছি। পূর্বের রিক্সাওয়ালা যাকে দেখতে বলল তার কথায় আমার ভাবনার ছেদ পড়লোঃ- কই যাইবাইন? তাকেও সেই নামটা বললাম- ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ তারও একই অবস্থা। তারপর আরো কয়েকজনকে বললাম। সবাই একই উত্তর দিল যে- ‘তারা চিনে না’। একটু পরে দেখলাম জামিল ভাইয়াই এদিকে আসছেন। কোন কাজে হয়ত বাইরে গিয়েছিলেন। ভালই হলো। কাছে এসেই বললেন- আরে ফাহিম! তুই কোথা থেকে? - আর বলবেন না ভাই, বাড়ি থেকে আসলাম গতকাল। হাতখরচের জন্যহাত খরচের জন্য মায়ের কাছে তৎক্ষণাত টাকা না থাকায় আপনার কাছ থেকে নিতে বলেছেন। আমি তো আর ভালভাবে চিনি না। তাই এই পর্যন্ত এসে আটকা পরে গেলাম কেননা কোন রিক্সাওয়ালাই আপনাদের এলাকা চিনে না। - কে বলল? আরে!! আমাদের জন্যই তো তাদের পেটে ভাত যায়। চল, তাড়াতাড়ি। তারপর এক রিক্সাওয়ালাকে জিজ্ঞাস করলেন- এই ভাই! যাবেন ইউনিভার্সিটি ‘অমুক’ হলের সামনে।(নামটা মনে নাই তাই অমুক শব্দটির প্রয়োগ করা হলো সামনেও হবে) মনে নাই তাই অমুক শব্দটির প্রয়োগ - হ, যামু উডেন। আমি অবাক হয়ে লক্ষ করলাম- “‘বিশ্ববিদ্যালয়’ আর ‘ইউনিভার্সিটি’র পার্থক্য!!!” এবার বলব একটু অন্য ধরনের দুটি গল্প। যারা ইংরেজী বলে সভ্যতার পরিচয় দিতে চায়। অথচেএতে তাদের মূর্খতাই বেশি প্রমান হয় প্রথম ঘটনাঃ- একবার ছুটিতে গেলাম কোন এক দর্শনীয় স্থানে। আমার মত যাদের ছুটি ও মন আছে তাদের মধ্যেও অনেকে এখানে এসেছে। একটু পরে কোন কারনে সবাই এক জায়গায় জমা হলাম। সবাই জানে যে, এখানে বেশ কিছুক্ষণ দেরী হতে পারে তাই সবাই এদিক ওদিক হাটাহাটি করতে গেল। আমার পাশের ভদ্রলোকটি আমাকে বললো- ভাই! এখানে অনেক্ষণ সময় নষ্ট হবে তারচে’ ভালো হবে চলেন! ‘ল্যাট্রিনে’ গিয়ে কিছু খেয়ে আসি। আগের থেকেই তার সাথে মোটামোটি কথা হয়েছে। বাইরে টিকিটি কাউন্টর থেকে এই পর্যন্ত সবখানেই একসাথে আছি। কেননা সেও একা আমিও একা। প্রথম থেকেই তার ইচ্ছাকৃত বাংলার মাঝে অশুদ্ধ ইংরেজীর ব্যবহার লক্ষ্য করছিলাম। যা মোটামুটি টেনেটুনে শুদ্ধের কাতারে দাড়া করানো যায়। কিন্তু এবারের উচ্চারন আমাকে প্রথমে মেজাজ খারাপ পরে হাস্যরসে পরিণত করলো। প্রথমে আমার ভ্রু কুচকে গেলেও পরে বুঝে নিলাম – বেচারা ‘ক্যান্টিন’কে ‘ল্যাট্রিনে’ পরিনত করেছে। দ্বিতীয় ঘটনাঃ- এক বন্ধুর সাথে আরেক বন্ধুর দেখা। ১ম বন্ধুঃ- কীরে কী খবর-সবর তোর? ২য় বন্ধুঃ- এই তো চলছে কোনমতে। আর তোর কী খবর? বিয়া তো করলি এক বছর হলো এখনো তো কোন সংবাদ পেলাম না। ১ম বন্ধুঃ- ওহহো! তোকে তো বলতেই ভুলে গেছি। আমার বউটা না ‘ম্যাগনেট’ (†cÖM&b¨v›U )হয়েছে!!! একটু দোয়া করিস। হয়ত কিছুদিনের মধ্যেই তোকে কোন নতুন খবর দিতে পারব। আচ্ছা বল তো ‘ছেলে’ হলে ভালো হবে না ‘মেয়ে’ হলে!!! দ্বিতীয় বন্ধুর মাথা তার প্রথম কী একটা আজগুবি শব্দ শোনার পরই ঘুরছিল। কিন্তু পরের কথা গুলে শুনে আস্তে আস্তে মাথার ব্যাথা মুখের হাসিতে পরিণত হল।‘ম্যগনেট’ নামক আশ্চর্য শব্দটি শুনে প্রথমে ভ্রু কুচকে থাকলেও ‘প্রেগন্যান্ট’ নামক আসল শব্দটি বুঝে চুপ থাকল। হায়রে বাঙ্গালী যদি ইংরেজী বলতেই হয় পুরোপরি বলো। অর্ধেক বলে কেন নিজের মান নষ্ট করো? এখনো মনে পড়ে আমার একজন প্রিয় শিক্ষকের বানী— যে কোন ভাষায় কথা বলতে হলে পুরোটাই সে ভাষায় বলো। কেননা এক ভাষায় অন্য ভাষার মিশ্রণ ওই ভাষাকে অপমান করে। যদি কথার মাঝে অন্য ভাষার প্রয়োগ করতেই হয় তাহলে মাতৃভাষার সাথে সাদৃ্শ্যপূর্ণ বা উৎপত্তিস্থল অথবা ভিন দেশী নতুন আবিষ্কার কোন বস্তু হলে তা বলো। যেমন- ১/ সাদৃশ। সাধারণত ভারত-পাকিস্তানের অনেক শব্দ বাংলার সাদৃশ ২/ উৎপত্তিস্থল। আরবী,ফার্সী,হিন্দী,সাংস্কৃত ইত্যাদি ৩/ ভিনদেশি কোন নতুন শব্দ। কম্পিউটার,টেবিল,চেয়ার ইত্যাদি
এবার আমার প্রাণপ্রিয় শিক্ষকের কিছু আচারণ উল্লেখ করি। তিনি আমাদের বাংলা ভাষার গুরুত্ব সম্বন্ধে অনেক সময় অনেক কিছু বলেন। যার একটা আভাস উপরের বানীতে স্পষ্ট। তার কিছু কাহিনী দেখলে অন্য কেউ অবাক না হয়ে হয়ত পারবে না। অথচ যুক্তির বিচারে এটাই ঠিক এবং এমন আচারণই হওয়া দরকার বাংলার প্রতিটি জনগনের। তার সামনে কথার মাঝে কেউ ইংরেজী শব্দ ব্যবহার করতে পারে না।
একবার তিনি একজনকে বললেন- যাও তো দেখো নাজমুল হাসান কোথায় আছে? তাকে একটু বলো যে, আমি তাকে ডেকেছি। তখন সে ওই ছাত্রের খোজেঁ হলো। এবং কিছুক্ষণ পর এসে জানালো- স্যার সে তো ‘ক্লাসরুমে’ আছে। স্যার অত্যান্ত স্বাভাবিক ভাবেই বললেন- তাহলে দেখ তো শ্রেনীকক্ষে’ কে আছে?!!!।
আরেকবার স্যার জিজ্ঞাসা করলেন- আজ শ্রেনীকক্ষ ঝাড়ু হয় নি কেন? এক ছাত্র দাড়িয়ে বলল- স্যার আজ অমুকের ‘ডিউটি’।!! স্যার তখন বললেনঃ- ডিউটিওয়ালাকে কোন অফিসে পাঠিয়ে দিয়ে যার ‘খেদমত’ তাকে একটু ডাকো!!!!
তিনি একবার আমাকে বললেনঃ- এই মুজাহিদ! মোবাইলে ৫০টাকা ভরে দিতে পারবে? আমি এখন খুব ব্যস্ত তাই দোকানে যেতে পারছি না। তার মোবাইল নাম্বার আমার মুখস্থ ছিলো না। তাই নাম্বারটা চাইলাম। তিনি বললেন- এই মুহুর্তে তো আমার কাছে কলম নাই তাই লিখেও দিতে পারছি না। আমিঃ- ঠিক আছে। আমি কাগজ-কলম আনছি। তারপর তিনি এমনভাবে নাম্বার বললেন যা সাধারণত কেউই বলে না। ঠিক এভাবে- কী তৈরী হয়েছো? আমি বলছি লেখো-- শূন্য!এক!সাত!...........!!! আমার ধারণামতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যে তরুনরা তাদের কথার মাঝে এত ইংরেজী ব্যবহার করে তাদের অধিকাংশই বাংলা ভাষা শুদ্ধরুপে জানে না।তাই প্রয়োজনের মুহুর্তে ইংরেজী ছাড়া আর হাতড়ে কিছু পায় না। তবে কেউ আছেন ‘দেখার মত’ সাহিত্যিক। তাদের কথা ভিন্ন। এই বাস্তব বিষয়টা যে কোন মানুষের বোঝা উচিত ছিলো যে, যেই শাসকরা আমাদের প্রায় ২০০বছর চাকর বানিয়ে রেখেছিল তাদের ভাষা আমরা কীভাবে গ্রহন করি। একটু লজ্জাও কি আমাদের নেই। অনেকে বলেন যে- আন্তর্জাতিক ভাষা তো তাই একটু শিখতে হয়। নইলে পৃথিবীর মাঝে মাথা উঁচু করে দাড়াব কীভাবে? ((এর প্রাথমিক জবাব তো এই যে)) তাই বলে মাতৃভাষা ভুলে গিয়ে সে ভাষার গোলাম হতে হবে? এর থেকেও ভয়ংকর ভাষায় সুন্দভাবে উত্তর দিয়েছেন বর্তমান বিশ্বের প্রসিদ্ধ পর্যটক উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তি পাকিস্তানের সাবেক জাস্টিস আল্লামা তাকি উসমানী সাহেব। তার বিখ্যাত সফরনামা ‘জাহানে দীদাহ’ নামক কিতাবে তিনি যা লিখেছেন তার সারমর্ম হলোঃ- তিনি একবার স্পেন সফরে যান। সাথে শুধু একজনকে নেন। সেও ছিল নতুন। তাই তাদের রাতে থাকা নিয়ে একটু বিপাকে পড়তে হলো। আশেপাশে কোথাও কোন হোটেল পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে রাতেও থাকতে হবে। তাই হোটেল খোজা শুরু হলো। দু’জনই নতুন হওয়ায় স্থানীয় কয়েকজনকে ডেকে ইংরেজীতে হোটেল কোথায় পাওয়া যাবে জিজ্ঞাসা করলেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো কেউই তাদের কথা বুঝছে না। পরে অনেক কষ্টে হোটেল খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। পুরো সফরটাই প্রায় এরকম ছিলো যে, প্রায় কেউই ইংরেজী পারে না। যার যার মত নিজেদের মাতৃভাষায় কথা বলেই স্বাচ্ছন্দবোধ করে। বিশেষ জায়গার বিশেষ কিছু লোককে হয়ত জোর করে শিখানো হয়েছে। ঘটনাটি উল্লেখের পর তিনি একটা কথা লিখলেন যার অর্থ মোটমোটি এই দাড়ায় যে- ইংরেজী ভাষা শিখে তারপর তার উপর গর্ব করে নিজেদের শিক্ষিত বলে দাবি করার মত হীন ও লজ্জাস্কর কাজ এশিয়া ও আফ্রিকা ব্যতীত বিশ্বের অন্য কোথাও দেখা যায় না। সবাই তাদের নিজ মাতৃভাষার গুরুত্ব আগে দেয়। তারপর অন্যভাষাকে। আমাদের তো বাংলার পর মুসলিম হিসেবে এবং বাংলার উৎপত্তি হিসেবে আরবী ভাষা শিখার প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু আমরা এমন বাঙ্গালী যে, পরভাষা তো দূরের কথা! নিজের ভাষাই আমরা ভালভাবে শিখিনা। অথচ মাতৃভাষা শিখা এবং সাহিত্য চর্চা করা এটা আমাদের প্রিয় নবীর (صلى اللّه عليه وسلّم) সুন্নতও।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
নাফিসা রহমান
যেখানে গোলামী করতে আমরা সেই শাসক শ্রেণীর দেশে যাওয়ার জন্য নিজের ভিটে মাটি বিক্রি করে দেই সেখানে ভাষার গোলামীটা নগণ্য... আর এখন ইংরেজি ভাষার চেয়েও বেশি অনুপ্রবেশ ঘটছে হিন্দি ভাষার... দেশের প্রায় প্রতিটি ঘরে হিন্দি চ্যানেল চলছে নিয়মিত... কজন আর বাংলা চ্যানেল দেখে... বাচ্চাদের কার্টুন পর্যন্ত হিন্দিতে... আমার এক ফুফাতো বোনের মেয়েকে নাম জিজ্ঞাসা করলে হিন্দিতে জবাব দেয় !! আসলে আমাদের মধ্যে গোলামীটা এমনভাবে শেকড় গেড়েছে যে এখন আর উপড়ানোটা খুব সহজ নয়... ভালো থাকবেন...
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।