আমার নাম তানভীর। আমি বর্তমানে কিতাবখানায় পড়ছি। আমি একদিন খ-লিদ সাইফুল্ল-হ ভাইকে আমার জীবনের একটা কাহিনী বলি। কাহিনীটা শুনে খ-লিদ ভাই বললেনঃ- “এমন কাহিনী তো লিখে রাখা দরকার। যাতে বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্ম কিছু হলেও শিখে” তারপর তিনি নিজেই আমার নাম দিয়ে কাহিনীটি লিখে ফেলেন। আমি তা দেখে অনেক খুশি হই এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও তার জন্য দোয়া করি –‘সে যেন প্রকৃত লেখক হতে পারেন।’ কাহিনীটি এমন- তানভীর নামের একটি ছেলে তখন হেফ্জখানায় পড়ে। বয়স আর কত হবে? বার কিংবা তের। এই বয়সের মাদ্রাসার ছাত্ররা শয়তানের সবচে’ বড় শত্রু হয় বিশেষ করে হিফজ খানার ছাত্ররা কারণ- তারা এখন যুবক, আর যুবকই পারে অনেক অসাধ্যকে সাধ্য করতে অনেক কঠিন ও উত্তম কাজগুলোকে সহজে করতে। তাছাড়া তানভীরের মত ছেলেরাই তো শয়তানের কাজে সবচে’ বড় বাঁধা হয়ে দাড়ায়; কেননা তারা সারাদিন ইবাদতে মশগুল থাকে। শুধু কি ইবাদত? বরং সর্বোত্তম (নফল) ইবাদত। শয়তানের তো আর এটা দেখে সহ্য হয় না যে, আল্লাহর কোন বান্দা সারাদিন সর্বোত্তম ইবাদতে মশগুল থাকুক? তাই কোমড় বেধেঁ লেগে যায় তাদের ভ্রষ্ট করার জন্য। তানভীরের বেলাতেও শয়তান এটা চাইলো না। একবার তাকে ফেলে দিল এক বিরাট ধোঁকায়। তাঁর আর পড়তে ভাল লাগছে না । মাদ্রসায় থাকতে ভাল লাগছে না। সে মাদ্রাসা ছেড়ে পালিয়ে যাবে। তবে বাড়িতে যাবে না কেননা -তার পিতা মহাদয়ই তো ওই মাদ্রাসার শিক্ষক যে মাদ্রসা সে পড়ে। যদি জানতে পারে যে, ‘আমার ছেলে পালিয়ে বাড়িতে গেছে’ তাহলে তো আর তাকে আস্ত রাখবে না। সে চিন্তা করলো- ‘নিরুদ্দেশ হয়ে যাবে’; কোথায় যাবে সে জানে না। এতটুকু জানে যে সে যাবে। কোথায় যাবে? কীভাবে যাবে? সবই তার অজানা। সে যাবে বাংলাদেশের যে কোন প্রাণ্তে। মুক্তি হবে এই পরাধীনতার জীবন থেকে!! এটা তো কঁচি মনের কাঁচা বুদ্ধি। সে তো জানে না-আমি পালিয়ে কোথায় যাব? রাস্তায় ঘুরে বেড়াব? টাকাই বা কোথায় পাব?? আচ্ছা বুঝলাম কিছু আছে কিন্তু… কিন্তু যা আছে তা ফুরিয়ে গেলে তারপর….??? আর সে যদি মাদ্রাসার কথা চিন্তা করত তাহলে বলত- ‘এখানেই তো ভাল আছি! সর্বদা লিপ্ত আছি সর্বোত্তম নফল ইবাদতে!! তত্ত্বাবধানে আছি পিতা ও পিতাতূল্য মুরব্বীদের!!!’ কিন্তু তার নির্মল ও সরল মনে সুন্দর ও গোছাল বুদ্ধিগুলো ধরলো না। ভাল কথাগুলোই তার মনে আসতে লাগল তিক্ত ও কাটা হয়ে। আর খারাপগুলো আসলো সুন্দর ও সু-শোভিত হয়ে। আস্তে আস্তে তার পালাবার মোক্ষম সুযোগটাও হাতে এসে গেল। আজ সে পালাবে। তাই আগের থেকেই বহু কষ্টে সে ১০০টাকা জমিয়েছে। সারাদিন পরিকল্পনা করলো – ‘পালিয়ে গিয়ে কোথায় থাকবে? কীভাবে কাটাবে?’ ইত্যাদি ইত্যাদি এভাবে চিন্তা করে করে সারাটা দিন পার করলো। একবার ঠিক করে কমলাপুর যাবে। আবার বলে- ‘না সেখানে তো অনেক নিম্ন মানের লোক থাকে সেখানে আমি কেন যাব?’ আবার ঠিক করে সোজা গিয়ে একটা হোস্টেলে উঠি। কিন্তুকিন্তু পরক্ষণেই টাকার দিকে তাকিয়ে সে চিন্তা বাদ দিতে হয়। অবশেষে ঠিক করলো বাইতুল মোকাররাম মসজিদে যাবে। কেউ সন্দেহও করবে না ভাববে- ‘হয়ত তাবলীগে আসছে’। পরে কোন একটা তাবলীগের সাথে থেকে থেকে দিন কাটিয়ে দেবে। পরিশেষে এটাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলো। সন্ধ্যা কাটিয়ে রাত বাড়তে লাগল। তার পালাবার সময়ও ঘনিয়ে আসতে লাগল। এখন সব ঠিক ঠাক। কিন্তু….? কিন্তু একটা সমস্যা হয়ে গেছে। কী সেই সমস্যা? পালাবার পথ রুদ্ধ হয়েছে? বাবা জেনে গেছে? সাথীরা বুঝে গেছে? না এ রকম কোন সমস্যা হয় নি। সমস্যা হয়েছে একেবারে মূল জায়গায়। মূল জায়গায় বলতে….? হ্যাঁ..!! তার বহু কষ্টে জমানো (১০০) টাকাগুলো হারিয়ে গেছে। টাকা হারানোতে সে একেবারে ভেঙ্গে পড়ে। পালানোর চিন্তা পালানোর চিন্তা তো মাথাথেকে গেলই। সাথে সাথে ভেস্তে গেলো শয়তানের দেয়া সব পরিকল্পনাও। পরে অবশ্য যখন তার ভুল ভাঙলো; মাথায় সৎ চিন্তার উদয় হলো; সারা জীবনের জন্য পালানোর চিন্তা বাদ দিল; তখন তার পিতার কাছে-যিনি ওই মাদ্রসার শিক্ষক-টাকাগুলো পেলো। তার কাছে এখন সবকিছুই স্পষ্ট যে, তার এই গোমরাহী থেকে বাচাঁর এবং সৎ পথে চলার একমাত্র মদদকারী হলেন সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা। কীভাবে…..? আল্লাহ তায়ালা যদি তার হাত থেকে টাকাগুলো কিছু সময়ের জন্য সরিয়ে না নিতেন তাহলে তার কী অবস্থা হত? আসলে তা কেই জানে না; জানেন শুধু একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই। হয়ত এই ছেলেটি আর ফিরে আসত না মাদ্রাসার পথে বা অন্য কোন শিক্ষালয়ে। হয়ে যেতে পারত সে পথের শিশু বা পথের ফুল কিংবা পথের কাঁটা। লাঞ্চিত অপমানিত হত মানুষের দ্বারে দ্বারে বা কাঁটা হয়ে বিঁধত মানুষের পাঁয়ে। কিন্তু….. কিন্তু আল্লাহ তায়ালার মদদ কখন কীভাবে আসে তা কেউ আগাম বলতে পারে না। হে আল্লাহ! এই ছেলেটির ন্যায় আমাদের মত দূর্বল ঈমানদারদেরকেও তুমি সকল রকম বিপদাপদ থেকে হিফাজত করো আমিন ! ছুম্মা আমীন!! ছেলেটি এখন হেফ্জ শেষ করে কিতাব খানার কয়েক বর্ষ শেষ করে ফেলেছে। যারাই এই কাহিনীটি পড়বেন তারাই একটু কষ্ট করে সবার জন্য দোয়া করার সাথে সাথে এই ছেলেটির জন্যও দোয়া করবেন- ‘ছেলেটিকে যেন আল্লাহ তায়ালা কবূল করেন এবং হক্কানী হাফেজ ও আলেম বানিয়ে দেন।’
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ মহিউদ্দীন সান্তু
অনেক সুন্দর একটা শিক্ষণীয় লেখা, আল্লাহ্ যা করেন তা মঙ্গলের জন্যই করেন, কিন্ত দুর্ভাগ্য আমাদের আমরা তা বুঝতে পারিনা। চমৎকার লিখেছেন। অনেক অনেক দোয়া রইলো।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।