স্মৃতিগুলো ঝাপ্সা হয়ে যায়। নীরব ক্লান্ত শ্রান্ত শরিরে রাজশাহি রেল স্টেশনের ২ নং প্লাটফর্মের দক্ষিন দিকের ফাকা জায়গায় বসে পরে হতাস হয়েই।দীর্ঘ ১০ বতসরের প্রেমের আজ পরিসমাপ্তি টেনেছে সে মৌমিতার সাথে।মৌমিতা রক্ষনশীল পরিবারের মেয়ে। কলেজের ২য়বর্ষে পড়ার সময় নীরবের সাথে দেখা হয়েছিল।শ্রান্ত মুখশ্রির উজ্জ্বল শ্যামা বর্ণের এই মেয়েটিকে নীরবের এত ভাল লাগে যে সে বিমোহিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। শ্যামা মেয়ের মুখস্রি এত সুন্দর হতে পারে? সুনিপুন কারিগরের স্থাপত্য নিদর্শণ এই মেয়ের শরীরের প্রতিটি ছন্দে। যেখানে যতটুকু দরকার ঠিক ততটুকুই আছে।যেমন কমতি নাই তেমন বাড়তিও নাই।
মৌমিতা কলেজের ক্যাম্পাসে দুই বতসর ধরে এসেছে, নীরবের সাথে যেদিন প্রথম দেখা হয়েছে সেদিন থেকে গতকাল পর্যন্ত সব ঠিক ছিল।কিন্তু আজ সকালে ওর ফোনে কেমন সব ঝাপ্সা হয়ে গেল। মৌমিতা ফোন করে সকালে অকতশ্যাত জানালো সে আর এই সম্পর্ক রাখতে চায় না।অথচ নীরবের এখনো মনে আছে যেদিন প্রথম মৌমিতা ওকে ফোন নং দিল সেদিন থেকে কোনদিন কেউ দীর্ঘ কথা না বলে থাকেনি। সে ছিল রাস্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র। এই বিভাগ পরীক্ষার আগের দুইরাতের পড়াশুনায় উত্রানো যায়। ওর কাজ ছিল প্রতিদিন ৪: ঘন্টা টিউশনি করা, রাতে নিয়মিত ২ ঘন্টা নিজের পড়ালেখা করা আর ৬ ঘন্টা ঘুম ২ ঘন্টা অন্য সব কাজে ব্যায়, বাকি সময় মৌমিতার সাথে সময় দেয়া।
মৌমিতা এইচ এস সি পাশ করে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়। কত স্বপ্ন যে অদের দুই জনের চোখে মুখে বুকে। মৌমিতা মেডিকেল কলেজে যাওয়ার আগে নানুর বাড়ির সকলের সাথে দেখা করতে যায়। বুদ্ধি করে সাথে নেয় নীরব কে। ওর এক বন্ধুর বাড়িও ছিল মৌমিতার নানার বাড়ির গ্রামে। দুই জনের প্রথম যৌবনের স্বাধিন ভ্রমনে কি যে উন্মত্ততা।বাধাহীন সেই সময়ে বাজ পাখির ছোবল খেতে উন্মত্ত ছিল মৌমিতা। ক্লান্তি শ্রান্তি তখন পরাভুত, মৌমিতার সব উজার করে দেয়া.. আর ভাবতে পারে না নীরব! প্লাট ফর্মের ফাকা সিমেন্টের বেঞ্চে মুখ চেপে হুহুহু করে কেঁদে উঠে।
মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় মৌমিতা অনেক স্বাধিন হয়ে যায়।আজকাল মোবাইল ব্যবহারের যুগে এই স্বাধিনতার সীমা অসীমের কাছাকাছি। বাবামাকে কি সুন্দর..মিথ্যা বলে পাড় পাওয়া যায়।যেমন রাজশাহীর পদ্মার পাড়ে নীরবের হাত ধরে গোধুলির রক্তিম আভায় যখন দুই জনে সিক্ত হয়ে হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছিল তখন মায়ের ফোন এল। মৌমিতা হাসতে হাসতে বলে চল্লঃ মা, আমি এখন এনাটমী আইটেম দেবার জন্য খালিদ স্যারের সামনে বসে আছি।মা জানো খালিদ স্যার খুব মজার মানুষ, কি সুন্দর করে হাসে।আমাকে গত আইটেম এ ৮ দিয়েছে। মা রাতে তোমাকে ফোন দিয়ে সব বলব, উম্মাহ। আই লাভ ইউ।
মৌমিতার এই আচরনে সেইদিন নীরব খুব মজা পেলেও বাবামায়ের সাথে মিথ্যা বলাকে মেনে নিতে পারেনি। এইনিয়ে ওদের মাঝে বেশ কিছুদিন তিক্ততার সৃষ্টিও হয়েছিল। মৌমিতা মুচকি হেসে সেসময় নীরবকে বুঝিয়েছিল এত সব্যসাচি হয়ে চললে প্রেম করা যাবে? বলেই কারো কোন তোয়াক্কা না করেই.. নীরবের কপালে ধুপধাপ দুই দুইটা চুমু বসিয়ে দিয়ে শব্দ করে উঠলঃ উম্মাহ!
নীরব মৌমিতার এই আগ্রাসি তারনাকে খুব উপভোগ করত। মৌমিতা যখন বলত জীবনের স্বাভাবিক গতিতে সেক্স এক্টি উতকর্ষ মাধ্যম। সে কখনই ভাবেনি এই সুসম্পর্ক একদিন ধুসর হতে পারে। নিজে টিউশনি করে নিজের পড়াশুনা চালিয়েছে, সেই সাথে মৌমিতার সব খরচের আব্দার মিটিয়েছে।রাজশাহি কালিমন্দির ছুঁয়ে দুইজনে বিয়েও করেছে।গত ৪ মাস আগে মৌমিতা ডাঃ হবার পর দুইজনে দিনাজপুর টুর করেছে ৭ দিনের।এরপর নিজের চাকুরির ব্যস্ততায় কয়েকদিন এক্টু দুরে ছিল। ফিরে এলে মৌমিতাকে ফোন দিয়ে তেমন নাগাল পাচ্ছিল না।
চাকুরির স্থল দিনাজপুর থেকে ছুটি নিয়ে রাজশাহি গিয়েছিল নীরব।রাতে কলেজ ক্যান্টিনে হাস্যরসে আরেক ক্লাসমেট রজনীর সাথে দেখে বেশ উষ্মা প্রকাশ করে সে। এতে মৌমিতা রেগে যায়। তাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলেঃ পুরুষ মানুষ থাইল্যান্ডের সুখ নেবার জন্য সবসময় মুখিয়ে থাকে। আদি রসের লোভ দেখাইলে ভালবাসার পুরুষের অভাব হয় না।
মৌমিতার এই আচরনে ক্লান্ত নীরব কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যায়।নারীদের প্রতি অসীম ঘৃনায় মন গুলিয়ে যায়। নতুন চানক্যে উজ্জীবিত মৌমিতার সাথে তর্কে লিপ্ত হতে চায় না।বরং ১০ বতসরের সীমাহিন দুরন্ত প্রেমের কবর রচনা করে ফিরে যেতেই বেশি সুখ বোধ করে।ধীর পায়ে কলেজের ক্যান্টিন থেকে বেড়িয়ে রিক্সা নেয় রাজশাহি রেলস্টেশন এর গন্তব্যে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সৃজন শারফিনুল
আমার ভাল লেগেছে অনেক শুভ কামনা আর ভোট রইলো।
ওয়াহিদ মামুন লাভলু
মৌমিতার আচরণে কষ্ট পাওয়টাই স্বাভাবিক। কারণ মানুষের সাথে মানুষ তো কথা বলতেই পারে, কিন্তু কথা বলাটাকে খারাপ দৃষ্টিতে নিলে দুঃখ পাওয়াটাই স্বাভাবিক। খুব ভাল লাগল। শ্রদ্ধা জানবেন।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।