সেদিন বাসে উঠেই কন্ডাকটর বলছে – টিকিট কি জিয়ে । শহরের বাসে এই সমস্যা যতই সে বাঙালী হোক হিন্দিতে কথা বলবে । আমি নাছোড়বান্দা । সামনে একটা জায়গার নাম বললাম । বলল – ঠিক হ্যায় পাঁচ রূপিয়া দিজিয়ে । আমি দশ টাকা দিতেই বলল – খুল্লা নেহি হ্যায় । আমি বললাম – আমার কাছেও নেই । বলল – দেনা পড়ে গা । আমি বললাম – নেই তো কেমন করে দেব । - ও হাম কো মালুম নেহি । দেনা পড়েগা । নেহি তো এ লিজিয়ে । আমার দিকে দশ টাকার নোটটি নিয়ে একটা কাগজ বাড়িয়ে দিল । আমি বললাম – এটা কি ? - বাদ মে আপ জব বাস মে সফর করেঙ্গে এ দে দেনা চলেগা । - তা কি করে হয় তার মানে এ বাসে চড়তেই হবে । এবার কন্ডাকটর রেগে কি সব বলতে লাগল , আমি বুঝতে পারলাম না । বাধ্য হয়ে বললাম – বাংলায় বলতে পারছ না । তুমি তো বাঙালী । - কেন ? আপনার কি অসুবিধা হছে ? - বাংলায় বাস করছ , বাংলাতে আছ , বাঙালি তুমি | আর শুধু শুধু হিন্দী বলছো | সে খুব ঘাবড়ে গেল | থতমত খেয়ে বলল – আসলে বাংলা খুব কম লোক বোঝে | - তুমি ভুল জান , তোমার এই হিন্দী বলার জন্য যে জানে না সেও খটমট করে হিন্দী বলছে | বাসের মধ্যে সবাই কে জিজ্ঞেস করে দেখুন ?
বাস একটা স্টপেজে এল | লোকজন উঠানামার মাঝে বলল – এক দম হক কথায় বলেছেন | স্কুলে যাও ইংলিশ , সহরের রাস্তায় হিন্দী | খালি এক বুলি – বাংলা নাকি চলবে না | এক বৃদ্ধ বললেন – প্রাণ খুলে সেই গ্রামে কথা বলতাম | এখন হাটে বাজারে হিন্দী ইংরেজি আর বাংলার জগাখিচুরীতে প্রাণ খুলে বলাই দায় | আমি কন্ডাকটরের দিকে চেয়ে বললাম – কি ভাই | শুনলে তো তুমি যদি তোমার নিজের ভাষাকে না বলতে চাও তো অন্যে কেন বলবে ? - চুপ করুন তো , আপনার জন্য আমার ভুল হয়ে যাচ্ছে | আইয়ে আইয়ে ! বলেই লম্বা জিব বের করে – ওরে বাস ! আসুন আসুন ! সঙ্গে কয়েকটা জায়গার নাম বলল | আমারও স্টপেজ এসে গেল । নামতে নামতে বললাম – ভাই , বাংলা ভাষা খুব সুন্দর এক ভাষা । শুধু বাংলাতে খুব মধুরতা । কি সুন্দর – আমি তোমাকে ভালবাসি । বলতে বলতে বাস ছেড়ে গেল । ও বলে গেল – ছেলেকে কোথায় ভর্তি করেছো ? ইংলিশ মিডিয়ামে তো ? আবার বড় বড় কথা । আমি বললাম কিন্তু ও বোধ হয় শুনতে পেল না – না , আমার সে সামর্থ্য নেই । সরকারী ব্যবস্থায় পুরো ভরসা । তাছাড়া কোন ভাষাই খারাপ নয় , খারাপ হতেই পারে না । বিশ্ব জুড়ে ইংরেজী বেশ চলে । আমাদেরও সব সরকারী বেসরকারী আদেশ নির্দেশ সবই ইংরেজী । তাহলেও বাংলা একেবারেই অবহেলিত নয় । আমাদেরকেই তার মর্যাদা সবার সামনে তুলে ধরতে হবে । আমার কথা শুনতে শুনতে পথ চলতি মানুষ কেমন আড় চোখে তাকিয়ে চলে যাচ্ছে । আমিও এগিয়ে চললাম । ভাষা নিয়ে পড়ে থাকলে আর যাই হোক পেট চলবে না । তাছাড়া যুগের সাথে তাল মেলাতেই হবে । নিজে যে টুকু পারি তাই বলি না কেন ? লোক ঠিক আমার দেখে শিখতেও পারে । আমাদের ভাষার ভাণ্ডার তো পরিপূর্ণ । মলের মধ্যে একটা জোনে ঢোকার মুখে সিকিউরিটি – নমস্তে সাব ! আমি বললাম – নমস্কার বলুন না ! তুমি তো বাঙালী ! - আমার চাকরী চলে যেতে পারে ! ওরে বাপরে ! আমি তো আকাশ থেকে পড়ি । শুনেছি যে কাস্টমার যেমন সে ভাবেই তো কথা বলার মত সেলসম্যান নেওয়া হয় । যাক কি আর করা যাবে । সামনে এগিয়ে একটি ল্যাপটপের সামনে দাঁড়াতে একজন – ম্যাঁয় আই হেল্প ইউ ? - এর একটু কর্মপদ্ধতি বুঝিয়ে দিন না ? ও কিছু না বুঝে আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকল । যেন ও এরকম কথা কোনদিন শুনেই নি । ......... এই হয় !
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।