মতো বিকৃত ভাষা তার জানা নেই , তার ভুলটা এ সংসারে ঢুকেই সে অনুধাবন করতে পেরেছিলো , সংসারে সেও ছিলো অনাকাংখিত , মা তাকে জন্ম দিয়েই মরেছিলো, বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করায় মামা বাড়ি তার স্থান হোয়েছিলো, সেখানে মামা মামী কেউ তার বিয়ের কথাটি তুলতো না, সংসারে এমন সস্তা কাজের বুয়া কোথায় পাবে তারা, মোবাইলে ফেসবুক খুলে সে কাজের ফাঁকে ফাঁকে দেখতো, তারপর কিভাবে একসময় জড়িয়ে পড়ে মিথুনের সাথে ।
এখানে এসে সে অনুভব করেছে, ভালোবাসা কি জিনিস, কাকে বলে স্বামী আর সন্তান স্নেহ, কিভাবে মানুষ থাকতে পারে নির্লিপ্ত ।
সেও মনে মনে অনুভব করে এখানে তাকে মানায় না, একটা অত্যন্ত শান্ত পরিবারে সে অশান্তির বাঁশি বাজিয়েছে , সেও পালাতে চায়,
কিন্তু রুনু, নারী না দেবী সে বোঝে না । গভীর রাতে পায়চারী করতে দেখেছে রুনুকে , আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখেছে অপলক , পল্লবী স্বামীর কোলে শুধুই দেহের সুখ বিলিয়েছে ।, সংসারের যাবতীয় হিসেব পত্র থেকেছে রুনুর কাছে ।কিন্তু রুনু নিস্ব, সারাদিন ঘৃহের কর্তৃত্ব অথচ রাতের বেলায় এই শুন্য
নারীর একাকিত্বের দহন কেউ জানে না । রুনু সযতনে আগলে রেখেছে নিজের একাকীত্বের যন্ত্রনাকে ।
তার জন্য পল্লবী নিজেকে দায়ী করতে পারে না, পল্লবী না হোক, কাউকে না কাউকে মিথুন তার আবেগের সাথী করেই নিতো ।
রুনু তো সেই দিন একা হোয়েছে , যেদিন মিথুন ঘর ছেড়ে বাইরে মন ভাসিয়েছে, সে পল্লবী বা আর যে কেউ, কারো প্রতিই তার ক্ষোভ নেই, তার সমস্ত ক্ষোভ জ্বালা তার নিজের ভাগ্যের উপর , ভাগ্যের উপর নির্ভর করে অকর্মারা, রুনু তা বিশ্বাস করে না । মন তো কারো জোর করে আটকে রাখা যায় না, তা নিয়ন্ত্রনের হাতও কারো নেই, মিথুন যেদিন মন থেকেই তাকে ভুলে , অন্য কাউকে মন দিয়েছে সেদিনই তো ভীতরে ভীতরে সবটুকুই সে হারিয়ে ফেলেছে, আজ যতই সে গঙ্গা জলে, বা ঝাড় ফুঁক করে নিজেকে শুদ্ধ করতে চায়, সে কি আর সেই পুরোনো মানুষ আছে ? যে গলা বাড়িয়ে বিনা কারণে রাত দিন , হৈচৈ করে সংসারের একটা সামাঞ্জস্যতা বজায় রাখতো , আজ কি পারবে সেই দিন গুলি ফিরিয়ে আনতে?
সকালে অফিস যাবার মুখেই পল্লবী বললো,- আমি কি যাবো ?
মিথুন তাকালো তার পানে,-হিসেব না করেই যাবে ?
-কিসের হিসেব ?
-আমাকে দেখে নেবে বলেছিলে ?
-রুনু, আপার মুখের দিকে তাকিয়ে হিসেবটা নাই বা করলাম ?
-তাকে তো আমি হারিয়েই ফেলেছি !
-কাল থেকে যে আমাকেও হারালে ?
-তোমাকে আমি কখনও নিজের বলে ভাবিনি, আত্মার সাথে মিশে আছে আমার রুনু ।
-তুমি , সত্যি বলছো ?
-হা, কাল সারা রাত আমি ছাদের উপর একা পায়চারী করেছি, আমার সামনে ছিলো বিশাল আকাশ, একটা তারায় সেখানে জ্বলজ্বল করছিলো সে রুনু ।
- আর আমি ?
-তোমার অস্তিত্ব কোথাও পাইনি ।
-তাহলে কি চলে যাবো ?
-ইচ্ছে, রুনুর কাছে শুনে নিও ।
-তার কাছে কেনো ?
-কারণ প্রত্যেকের জীবনেই কিছু ভুল থাকে, ভুলের ভীতর দিয়েই সে তার আসল ঠিকানা খুঁজে পায়, রুনু ছাড়া আর আমার কোন ঠিকানা নেই, আমার আসল সিদ্ধান্ত সেই দেবে ।
হন হন করে বেরিয়ে যায় মিথুন সাহেব , তাকিয়ে থাকে সেই পথের দিকে, খুব শুন্য মনে হয় তাকে, জানে রুনুকে বললে সে তাকে যেতে দিবে না, সে হারিয়ে যাবে, একা, কাউকে দেবে না তার ঠিকানা , নিরবে বেরিয়ে পড়লো রাস্তায় , এ বাড়ীতে দু'বছর থেকেও আজ সে শুন্য হাতেই বের হোলো , সামনে নিরবিচ্ছিন্ন অন্ধকার পথ তাকে ডাকছে ।