ন্যায় অন্যায় যাই হোক কথায় কথায় বসের সাথে জী স্যার না বললে চাকুরী সুবিধার হয় না। সবাই করে। জী স্যার বলে বেশ সুবিধা আদায় করে নেয়। বড় সাহেবের বেশ আদর তো আছেই সাথে বাড়তি নগদ সুবিধা। বাজারের যা অবস্থা, এই বাজারে নীতি আদর্শ ধুয়ে পানি খেলে পেট ভরবে! তারচে বরং বস খুশী, সাথে পকেট গরম... এই সুবিধা কে হাত ছাড়া করতে চায়! এক জন চায়। অফিসে সবাই তাকে ছিটগ্রস্ত বলে জানে। বাসার। সবাই তাকে আড়ালে পাগলা বাসু ডাকে। বাসার জানে আড়ালে সহকর্মীরা তাকে পাগলা বলে ডাকে। এই নিয়ে তার দুঃখ নেই। দুঃখ একটা আছে তা হলো সুস্থ মানুষ গুলো দুর্নীতিতে দক্ষ হয়ে উঠছে...
পরিচালকের অধীনে হিসাবের কাজ করতো বাসার। প্রতিদিন জাল ভাউচার বানাতে হয়। গাড়ির জ্বালানি ক্রয়ের জাল ভাউচার, জাল যাতায়াত ভাউচার, মাস শেষে জাল ওভারটাইম ভাউচার। এই সব জালিয়াতি কাজ করতে অপারগতা জানায় বাসার। গত মাসে তাকে জায়গা বদল করে ষ্টোরের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
টঙ্গী থেকে তেজগাঁ আসতে এক দেড় ঘণ্টা লাগে। আটটায় গাড়িতে উঠে অফিসে লেট। অফিসের গেটে কন্ট্রাক্টরের সাথে ইউনিয়নের নেতা সাইফুলকে দেখে মেজাজটা বিগড়ে যায় বাসারের। আজও সেই ধান্ধাবাজী চলবে। না দেখার ভান করে অফিসের গেটে ঢুকছে এমন সময় ডান দিকের ফুটপাতে চায়ের দোকান থেকে ডাক দেয় সাইফুল। -স্যার আসেন, আপনের আপেক্ষাই করতাছি। বাসার অনিচ্ছায় এগিয় যায় কাছে। -বসেন চা বিড়ি খান, এই শুক্কুর, স্যারেরে এক প্যাকেট বেনসন দে। বাসারের হাত ধরে টান দিয়ে বেঞ্চে বসায় সাইফুল। শুক্কুরের হাত থেকে সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে বাসারের হাতে দেয় সাইফুল। বাসার প্যাকেট ফেরত দিয়ে বলে-নারে শুক্কুর প্যাকেট লাগবে না। একটা স্টার সিগারেট দে, এর দাম খাতায় আমার নামে লিখে রাখ। সাইফুল বাসারের কাধে হাত রেখে বলে-ভাইজান এত পর ভাবেন ক্যা? আমরাতো একই পরিবার তাই না? বাসার কোন কথা বলে না। কন্ট্রাক্টর চুপ করে বসে আছে সাইফুলের পাশে। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে সাইফুল বলে -চাহিদা পত্র দেনতো দেখি। সাথে সাথে কন্ট্রাকটর পকেট থেকে ভাজ করা কাগজটি বের করে বাসারের হাতে দেয়। কাগজটি হাতে নিয়ে খুলে দেখে দুই হাজার মিটার ক্যাবল। পরিচালকের সই স্বাক্ষর করা। এখন শুধু ষ্টোর থেকে ছাড় করতে হবে। সাইফুল চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী। নীচের স্তরের কর্মচারী হলে কি হবে এর দাপটে পরিচালক নিজেও ভয়ে আতঙ্কে থাকে। ইউনিয়নের নেতা। হাত অনেক লম্বা। এর হাতে অনেকের চাকরী গেছে। অনেকে এখনো ভোগান্তিতে আছে। প্রতিষ্ঠানটি অনেক আগে কোম্পানী হয়ে গেছে কিন্তু রাজনৈতিক দলের ইউনিয়নের ভুত এখনো ঘাড়ে চেপে বসে আছে। চা খেয়ে বাসার কন্ট্রাক্টর আর সাইফুলকে নিয়ে ষ্টোরে যায়। নিজের টেবিলে বসে রেজিষ্টার বের করে পাতা উল্টিয়ে কলম হাতে নেয়। সাইফুল বাসারের হাত ধরে বলে-একটা কথা আছে স্যার। -কি কথা বলেন। -এক হাজার মিটার বেশী দিতে অইবো, বড় স্যারের সাথে কথা অইছে। -কথা তো আপনার সাথে হইছে। আমার সাথে তো এমন কথা হয় নাই। -চলেন, স্যার রুমেই আছে, দরকার মনে করলে জিগায়া লন। -চলেন। বলে সাইফুলকে নিয়ে বাসার এগিয়ে যেতে থাকে পরিচালকের রুমের দিকে। ফলাফল কি হবে সবই জানা । দেশের সম্পদের এমন লুটপাট দেখে দেখে বড়ই ক্লান্ত সে। এই লুটের টাকার ভাগ কোন পর্যন্ত যায় সবাই জানে । তার কিছুই করার নেই। এই নিয়ে বেশী বাড়াবাড়ি করলে বরং নিজের বিপদ টেনে আনা হবে। বড় সাহেবের রুমে ডুকে সাইফুলের কন্ঠে অনুরোধ নয় দাবী -বাসার সাবরে একটু বইলা দেন স্যার। বাসার বড় সাহেবকে পাশ হওয়া চাহিদা পত্রটি দেখিয়ে বলে -স্যার আপনি দুই হাজার মিটার সই করেছেন। সাইফুল হিসাবের বাইরে এক হাজার মিটার চাইছে। -এক কাজ করেন, আপনি পাচশ মিটার দিয়ে দেন। বড় সাহেব বলেন। সাথে সাথে সাইফুল প্রতিবাদ করে -পাঁচশ মিটারে হবে না স্যার। পুরা এক হাজার মিটার লাগবো। কে কতো পায় স্যার আপনি তো সবই জানেন। আমার তো তেমন কিছু থাকে না। -দিয়ে দেন বাসার সাহেব। এই বলে অন্যমনস্ক হয়ে একটা ফাইলের পাতা উল্টাতে থাকে বড় সাহেব। বাসারকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে চোখ তুলে তাকায় বড় সাহেব। -দেখেন বাসার সাহেব, আপনি গান বাজনা করেন। নরম মনের মানুষ। দেশের হাওয়া বাতাস কিছু লাগায়েন গায়ে। যান দিয়া দেন। -ষ্টোরের মালের হিসাব আমি কিভাবে দিবো স্যার? -ঐ হিসাবের চিন্তা আপনের করার দরকার আছে? ঐ হিসাব যার রাখার সে ঠিকই রাখে। আপনার এই নিয়া মাথা ব্যথার কারণ কি? -মাথা ব্যথার কারণ আছে স্যার। মাথার এই ব্যথা আপনারও থাকা উচিৎ স্যার। বাসার পকেট থেকে ষ্টোরের চাবিটা পরিচালকের টেবিলে রেখে বের হয়ে আসে রুম থেকে। সবাই নির্বাক তাকিয়ে দেখে নির্বিকার বাসারের চলে আসা।
অফিস থেকে বের হয়ে বাসার ট্রাক স্ট্যান্ডে দাড়িয়ে থাকা শত শত ট্রাকের মাঝ খান দিয়ে হেটে বড় রাস্তার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। একটা ট্রাক বাসারকে পাশ কেটে চলে যায়। ট্রাকটি যেতে যেতে এক রাশ কালো ধুঁয়া আর ধুলা মেখে যায় বাসারের গায়ে। বাসার গায়ে মাখে না। মাথা উঁচু করে। চোখ যায় একটি সরকারী দপ্তরের সামনে টানিয়ে রাখা পতাকায়। বাতাস নেই । উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম কোন দিকে না। পতাকাটি ঝুলে আছে পাইপের সাথে। বাতাস লাগলেই উড়তে থাকবে। বাতাস দরকার। ছবিতে যে ভাবে পতাকা উড়তে দেখা যায় ঠিক সে ভাবে উড়া দরকার।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সোপান সিদ্ধার্থ
“বাতাস লাগলেই উড়তে থাকবে। বাতাস দরকার। ছবিতে যে ভাবে পতাকা উড়তে দেখা যায় ঠিক সে ভাবে উড়া দরকার” ...কথাগুলো অসাধারণ। বাসার সাহেবদের পাগলামি ছড়িয়ে যাক। অনেক ভালো লেখা। শুভকামনা জানবেন।
মোঃ আক্তারুজ্জামান
ট্যাটনে দ্যাশ ভইরা গেছে বাসু পাগলাগো পাবেন কোথায়? তবে আমাদের আসলেই অনেক অনেক বাসারের প্রয়োজন। তা নয়তো আমাদের অস্তিত্বই বিলীন হয়ে যাবে। আশাবাদের জয় হোক।
আখতারুজ্জামান সোহাগ
ছোট পরিসরে লেখা টিপটপ গল্প। মন ছুঁয়ে গেল। অন্যায়ের কাছে মাথা নত করল না বাসার, চাকরি ছেড়ে চলে গেল, বেছে নিল অনিশ্চিত গন্তব্য। কিন্তু তারপরও সে আশা করে বাতাস আসবে, পতাকা উড়বে পতপত করে। গল্প ভালো লেগেছে।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।