জ্বলজ্বলে অন্ধকার

অন্ধকার (জুন ২০১৩)

মোজাম্মেল কবির
  • ১১
  • 0
  • ১২
এই শুনছো?
-হুম...
একটা কথা বলবো ?
-বলো।
না থাক।
-কি বলতে চাও বলো না।
মনির পায়ে মোজা পড়তে পড়তে স্ত্রীর দিকে তাকায়। সে জানে রোকসানা কিছু বলবে না। তার পরও জানতে ইচ্ছে করে। অন্তত মনে থাকুক। একসাথে যদি কখনো বাড়তি কিছু টাকা আসে সব ইচ্ছে পূরণ করে দিবে।
ছাটখাট করে সংসার চলে। আসলেই কি চলে! প্রতি মাসে লম্বা হয় কিছু তালিকা। সন্তানের ইচ্ছা পুরনের তালিকা। ডাক্তার লিখে দিয়েছিলো এক মাস পর দেখা করবেন। বাড়ি ভাড়া ছেলের পড়ার খরচ আর চাল ডাল কিনে ডাক্তারকে দেয়ার মতো পয়সা থাকেনা হাতে। দেই দিচ্ছি করে স্ত্রীর চাওয়া গুলো বছর পেরোচ্ছে । তীব্র ভাসনার এমন দুর্বল প্রকাশ দেখে দ্বিতীয় বার স্ত্রীর মুখের দিকে তাকাতে ভয় লাগে মনিরের। সে তো আর অযৌক্তিক কিছু চায় না। সোনা গয়না অলংকার না। এই সংসারের টুকটাক দরকারী কিছু জিনিস পত্র। যেমন একটা প্রেশার কুকার একটা ফ্রাই পেন এই সব।

অফিসটা শুরু থেকেই জাহান্নাম মনে হয় মনিরের কাছে। কোম্পানীর মালিক রাজনীতি করে। বড় দলের বড় নেতা। সাংসদ। মঞ্চে বক্তৃতার ঝড় তোলে। দেশ প্রেমের কথা বলে। মানুষ তার নামে স্লোগান দেয়। অফিসে বসে মনিরকে জাল কাগজ পত্র বানাতে হয়। কি ভাবে একশ বত্রিশ কোটি সাতাশি লাখ লাভের টাকার সারে সাইত্রিশ ভাগ কর সরকারের রাজস্ব বিভাগের হাত থেকে রক্ষা করা যায়। বরাবরের মতো এবারো হিসাব বিবরণীতে পাঁচ ছয় কোটি টাকা লোকসান দেখাতে হবে।
এক কোটি পচিশ লাখ টাকায় নতুন ম্যাডামের নামে কুয়ালালামপুরে বাড়ি কিনেছেন। এই টাকা কিভাবে দেখাবো? বসের কাছে জানতে চাইলে চটে যায় বস।
বলে- এই মাদারচুত, তোর সেটা জানা দরকার আছে ?
মাঝে মাঝে পাকিস্তানী গালিটাও শুনতে হয়- এই ব্যাহেনচুত।
মনিরের ঘেন্না লাগে। আমরা ব্রিটিশদের তাড়িয়েছি কিন্তু দেশ প্রেমিকরা এখনো ব্রিটিশদের গালিটাকে তাড়াতে পারিনি মন থেকে। যেই পাকিস্তানীরা আমাদেরকে এই গালি দিয়েই শুধু খ্যান্ত থাকেনি। লাখ লাখ মা বোনের ইজ্জত লুণ্ঠন করলো! আজো আমরা দেশ প্রেমিকরা সেই পাকিস্তানী গালিটাও চর্চা করে যাচ্ছি! মনিরের কানে বার বার বাজে- এই মাদারচুত... এই ব্যাহেনচুত...। তখন মনিরের মেরু দণ্ডের সোজা উপরের দিকে ঘাড় আর মাথার পিছনের অংশে তীব্র ব্যাথা অনুভব হয়। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে অন্তত তিন মাস পর পর একবার ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিৎ। দেড় বছর হয়ে গেলো।
আজ সকালে আয়কর ফাইলটা নিয়ে বসের সাথে কথা বলতে গেলে ব্রিটিশ গালিটা শুনতে হয়। এর পর থেকে মনে হচ্ছে আজই তার ডাক্তারের সাথে দেখা করা উচিৎ। ব্যথাটা তীব্র থেকে আরও তীব্রতর হচ্ছে।
ই ডি সাহেব খুব ভালো মানুষ। ষাট বাষট্টি বয়স। এমন সৎ মানুষ খুব বেশী চোখে পরেনি মনিরের। একমাত্র এই মানুষটিই পারেন মালিকের চোখের সামনে মাথা উচু করে কথা বলতে। কিন্তু তিনিও মনে করেন মনিরের চলে যাওয়াই উচিৎ। সামনে ওর জন্য অনেক সুন্দর সময় অপেক্ষা করছে। লাঞ্চের পর ই ডি সাহেব তার রুমে ডেকে নিলেন মনিরকে।
বসো বাবা মনির।
-জি স্যার।
দুই কাপ চা দিতে বললেন। চা খেতে খেতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন মনিরের চোখের দিকে। মনিরের দৃঢ় দৃষ্টি বরাবরই আকৃষ্ট করে আনোয়ারকে। যে কথা সে বলতে চাচ্ছে এর অর্থ খুব সহজেই বোঝার সামর্থ্য রাখে মনির।
- বাবা মনির। তোমার জন্য অনেক সুন্দর সময় অপেক্ষা করছে। তোমরা পরিবর্তনের সামর্থ্য রাখো। এই শক্তিটা কাজে লাগাও। আপোষ করে করে আমদের অনেক সময় পার হয়ে গেছে। আমরা বড়ই ক্লান্ত। আমাদেরকে দিয়ে আর কিছু হবে না।
একটা খাম মনিরের হাতে তুলে দিয়ে বলেন -এখানে তোমার পাওনা আটাশ হাজার সাত শত টাকা আছে। কাল থেকে তোমাকে আর অফিসে আসতে হবে না। ভালো থেকো মনির।
দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে। বিকেলে রোদ। আকাশ পরিস্কার। বাসায় ফিরতে ইচ্ছে করছে না মনিরের। পার্কের বেঞ্চে বসে থাকতে ইচ্ছে করছে। বৃষ্টির পর গাছগুলোকে বেশ সতেজ লাগে। যেন সদ্য স্নান সেরে নতুন বসনে রমণী। পার্কার বেঞ্চে কিছুক্ষণ বসে থাকার পর ইচ্ছে হলো শরীরটা ছেড়ে দিয়ে একটু শুয়ে পড়তে। শবাসন করলে ঘাড়ের ব্যথাটা কমে যায়। কাছেই ছোট ছোট বাচ্চা ছেলে মেয়ে চ্যাঁচামেচি করছিলো। মনঃসংযোগে কিছুটা সমস্যা হয়। কিছুক্ষণ পর থেমে যায় বাচ্চাদের কোলাহল। মনির চোখটা বন্ধ করে। চোখ বন্ধ করলে যে অন্ধকার ভেসে উঠে তা অনেক বেশী আলোকিত অনেক বেশী উজ্জ্বল। আলোকিত পৃথিবীর অনাচার চোখে পড়ে না। নিজেকে দেখা যায়, নিজের ভিতরের শক্তি পরখ করা যায়। দেখা যায় নিজের অপরাধ অন্যায় গুলো। একটা পেন্সিলকে দেখা যায় বৈদ্যুতিক পিলারের মতো বড়।
মনে হচ্ছে কোনো এক পাহাড়ের চুড়ায় নির্জন স্থানে শুয়ে আছে। এর পর হারিয়ে যায় অন্ধকারে। শুধুই অন্ধকার। যখন ঘুম ভাঙ্গে ততোক্ষণে চার ঘণ্টা পার হয়ে গেছে। চোখ খুলে বিশাল আকাশটা ভেসে উঠে। আকাশের তারা এতো উজ্জ্বল হতে পারে জানা ছিলোনা। উত্তর দক্ষিণে একটা আলোর রেখা স্পষ্ট ভাসছে। এটাই মনে হয় আমাদের গ্যালাক্সি মিল্কি ওয়ে। যার একটা অংশ আমরা দেখতে পাই। এর পর আরও কতো লক্ষ কোটি গ্যালাক্সি... বিশ্বব্রহ্মাণ্ড...। এর কাছে আমরা কতো অসহায় কতো তুচ্ছ! অথচ আমরা এই অন্ধকারে সৃষ্টির বিশালত্বে মুগ্ধ হওয়ার সময় পাই না। অন্ধকারে উৎসবে মেতে উঠি মানুষের স্বপ্ন গুলো লুটপাট করতে। বাহিরের অন্ধকার ক্রমেই ঢেকে দেয় ভিতরের আলো। স্বীকার করতে জড়তা আসে- যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা’ আলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালন কর্তা।

মনির এই অন্ধকার থেকে এক অদ্ভুত আলো আর শক্তি সঞ্চয় করে। নিজের মধ্যে লুকিয়ে থাকা শক্তি গুলো এক এক করে তাড়া করছে।
ডান পকেটে খাম আর বাম পকেটে মোবাইল ফোন। ঠিক আছে। সময় দেখতে ফোনটা বের করে । আটটা পচিশ বাজে। এর মধ্যে রোকসানা ছয় বার কল দিয়েছে। ছয়টি মিস কল। মনির হেটে হেটে কাছের একটি ক্রোকারীজ শপে যায়। একটি প্রেশার কুকার আর একটি ফ্রাই পেন কিনে বাসার দিকে হাটতে থাকে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
শামীম খান নিজেকে টেনে তোলার গল্প । দাঁড়িয়ে যাবার গল্প । ভাল লাগা রেখে গেলাম ।
মিলন বনিক অনেক সুন্দর অনেক বাস্তবভিত্তিক প্রেক্ষাপট নিয়ে একটি সুন্দর গল্প...খুব ভালো লাগল.....
এফ, আই , জুয়েল অনেক সুন্দর ও আবেগী লেখা । বর্তমানের করুন বাস্তবতা ফুটে উঠেছে ।
বাস্তবতা মানুষকে বাঁচতে শিখায়। শক্তি যোগায়। পরিপক্ক করে তোলে। ভালো থাকুন।
সূর্য অনেক কিছুই করে ফেলা যায়, বৃটিশ তাড়িয়েছি, পাকিদের তাড়িয়েছি... অথচ যখন মনির একা মনের শক্তিটা সেখানে নেহায়েত আত্মহত্যার পথেই নিয়ে যাবে। আমাদের আরেকটা হ্যা আরেকটা বিশাল ঝাকুনি দরকার যার ঝক্কিতে টলে যাবে সমস্ত অন্যায়, অনিয়ম। যেখানে মানুষ কাজ করবে তার প্রাপ্য সম্মান নিয়ে। এখন শুধু বিবেক নিয়ে পরাজয়ের সময়........ এ সময়টা বদলাতে হবে। গল্প শেষের আবেগ মন ছুয়ে গেলো।
আমাদের আরেকটা বিশাল ঝাকুনি দরকার যার ঝক্কিতে টলে যাবে সমস্ত অন্যায়, অনিয়ম। যেখানে মানুষ কাজ করবে তার প্রাপ্য সম্মান নিয়ে। আমি আপনার সাথে একমত পোষণ করছি। আমাদের অপেক্ষা শেষ হবে... বেশী দেরী নেই। ভালো থাকুন সূর্য।
মোঃ আক্তারুজ্জামান নিজেকে দেখার সুন্দর গল্প| খুব ভালো লাগলো- অনেক অনেক শুভ কামনা|
মামুন ম. আজিজ বাস্তবতার কাছ দিয়ৈ ছূটে চলা এক গল্প।
আমরা প্রতিদিন অনেক কঠিন বাস্তবতার সাথে হাত ধরে চলি। এর কতটাই বা লিখতে পারি... যতটা ধারণ করি মনে। অনেক ধন্যবাদ আজিজ ভাই।
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি মনির চোখটা বন্ধ করে। চোখ বন্ধ করলে যে অন্ধকার ভেসে উঠে তা অনেক বেশী আলোকিত অনেক বেশী উজ্জ্বল। আলোকিত পৃথিবীর অনাচার চোখে পড়ে না। নিজেকে দেখা যায়, নিজের ভিতরের শক্তি পরখ করা যায়। দেখা যায় নিজের অপরাধ অন্যায় গুলো। একটা পেন্সিলকে দেখা যায় বৈদ্যুতিক পিলারের মতো বড়।.....................// বাস্তবতার নিরিখে আমাদের অসহায়ত্বের কথা উঠে এসেছে......কতিপয় নামধারী বস যাদের অসৎ কাজের হাতিয়ার হিসেবে মনিরের মতো মানুষদের ব্যাবহার করে আসছে বহুকাল ধরে.............প্রতিবাদ করলেই চাকরী নাশের সম্ভাবনা থাকে ............তবু অন্তর্জাল্বায় মনিরের প্রতিবাদী চরিত্রটি লেখককের অসাধারণ আবিস্কার বলে মনে হয়েছে.......সেই দিক থেকে লেখক নিঃসন্দেহে স্বার্থক..............খুব ভাল একটি গল্প উপহার দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ কবির ভাই.............
বিশ্লেষণধর্মী চমৎকার মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ জ্যোতি ভাই... গল্পটি আরও ভালো হওয়া উচিৎ ছিলো, আমি নিজেই লেখায় সন্তুষ্ট নই। ভালো থাকুন।
এশরার লতিফ সুন্দর গল্প। দারুন আশাবাদী।
আশা-স্বপ্ন-সৃষ্টি... অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকুন।
তাপসকিরণ রায় ভাল লাগল আপনার গল্প--সামান্য কাহিনীকে আকর্ষণীয় করে তূলতে পেরেছেন,ভাই !বলবো, আপনার লেখার হাত ভাল।লিখে যান।শুভেচ্ছা রইল।
দীর্ঘ দিন লেখালেখি থেকে দূরে ছিলাম। একটা অভিমান ছিলো। আবার ফিরে এলাম। আপনার মন্তব্য অনুপ্রাণিত করছে। ভালো থাকুন দাদা।

২৫ মে - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ৪৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী