ঘুমের ঘোরে এক অদ্ভূত নাকি সুরে জিকির করে সাত্তার। মাঝে মাঝে বিচিত্র ভঙ্গিতে লাফিয়ে উঠে পরক্ষণেই আবার শুয়ে পড়ে। বাড়ীর সকলের ধারণা তাকে জ্বীনে ধরেছে। বাড়ীর কর্তা কফিল চৌধুরী প্রায় সময় ইমাম সা’বকে সাত্তারের জ্বীন তাড়ানোর ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেন। কিন্তু ইমাম সা’ব তার কথা হেসে উড়িয়ে দেন।
সিলেটের সুরমা বিধৌত অঞ্চলের চৌধুরী বাড়ীর ‘কামলা’ সে। সুনামগঞ্জ জেলায় তার বাড়ি। কিশোর বয়স থেকে এ বাড়িতে তার ‘কামলাগিরি’ শুরু এখন সে টকবগে এক যুবক। কিন্তু বিগত কোনো বছরই সে ঘুমের ঘোরে এমন জিকির করে নি। একই ঘরের এক কিনারায় থাকে সে এবং অন্য এক কিনারায় থাকেন মসজিদের ইমাম সাব।
দু’একদিন পর পর জিকির করতে করতে সে চলে যায় পুকুর পাড়ের জঙ্গলে। পুকুরের দু’পাশে ঝোপ-জঙ্গল এবং আরেক পাশে কবরস্থান। তাই সন্ধার পর ওদিকে ভয়ে কেউ পা বাড়ায় না তবে সাত্তারের যেন কোনো ভয়-ভীতি নেই। তার এই সাহসিকতা ইমাম সা’বকে ভাবিয়ে তুলে। তিনি ভাবেন, ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে কিসের নেশায় সে এতো রাতে চলে যায় জঙ্গলে? তিনি তার পিছু নেয়ার সিন্ধান্ত নেন। একদিন খানিকটা দূরত্ব বজায় রেখে তার পিছনে পিছনে বেরিয়ে পড়েন ইমাম সা’ব।
জঙ্গলে ঢুকে একটু পর বেরিয়ে আসে সাত্তার। টর্চের ক্ষীণ আলোতে লতাগুল্মাদি আচ্ছন্ন কবরস্থানের পাশ দিয়ে ধানি জমির আইল ধরে সোজা দক্ষিণ দিকে যেতে থাকে সে। দূরত্ব বজায় রেখে অতি সন্তর্পনে ইমাম সাব তাকে ফলো করে। কয়েকটি বাড়ী পেরিয়ে সে এখলাছ মেম্বারের বাড়ীতে ঢুকে পড়ে। পুরো বাড়ীটি বাঁশ ঝাড়, সুপারির বাগান আর ঝোপ-জঙ্গলে ঘেরা। বাড়ীর সামনে এবং পিছনে একটি করে পুকুর। গ্রামের রাস্তা থেকে ছোট একটি মেটে পথ পুকুরের ঘাট পর্যন্ত গিয়ে পশ্চিম দিকে বাক নিয়ে বাড়ীর উঠোনে গিয়ে শেষ হয়েছে। বিশাল উঠোনের পশ্বিম পাশে অবস্থিত বড় চৌচালা টিনের ঘরটিতে বাস করে মেম্বার।
কড়া নাড়তেই খুলে যায় দরজা। সাত্তার ঘরে ঢুকার খানিক পর হারিকেনের আলো কমে যায়। সুপারী বাগান থেকে বেরিয়ে ইমাম সাব ধীরে ধীরে চলে যান মেম্বারের ঘরের পাশে। অজানা শঙ্কায় তার গা শিউরে উঠে! উত্তেজনায় ঢেউ খেলে যায় তার সারা গায়ে। ভিতরে কী হচ্ছে তা দেখার জন্য অস্থির হয়ে উঠেন। ব্যাকুল হয়ে উপায় খুঁজতে থাকেন। সহসা তার চোখে পড়ে টিনের বেড়ার একটি ফোড় ভেদ করে হারিকেনের স্বল্প আলো বাইরে গড়িয়ে পড়ছে। বাম চোখ বন্ধ করে ডান চোখ ফোড়ে রেখে ভিতরে তাকানোর সাথে সাথে ইমাম সাবের পায়ের পাতা থেকে মাথা পর্যন্ত বিদুৎ খেলে যায়। গা দুলে দুলে উঠে।
কী জঘন্য কাণ্ড! ইমাম সাব যেন আর দাড়িয়ে থাকতে পারছিলেন না, ধীর পায়ে পুকুরে গিয়ে অঞ্জলি ভরে কয়েকবার মাথায় পানি দিয়ে শান বাঁধানো ঘাটের সিড়িতে ধপাস করে বসে পড়েন। কিছুক্ষণ পর বাড়ির শেষ মাথায় সাত্তারকে এগিয়ে দিয়ে মেম্বার চলে যায় ঘরের দিকে আর সাত্তার গ্রামের রাস্তা ধরে যেতে থাকে চৌধুরী বাড়ীর দিকে। পেছনে পেছনে ইমাম সা’বও।
সাত্তার ঘরে ঢুকে বিছানায় ইমাম সা’বকে দেখতে না পেয়ে ঘাবড়ে যায়। চটজলদি টয়লেটের দিকে তাকিয়ে দেখে আলো নেই। তার মনে শঙ্কা জাগে তাহলে কি ইমাম সা’ব . . .। ওর ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে ইমাম সা’ব ঝড়ের বেগে ঘরে প্রবেশ করেন। বিছানায় বসতে বসতে বললেন, সাত্তার কোথায় গিয়েছিলে? ভীতু কণ্ঠে কাঁপা স্বরে সে বললো, হুজর আমি তো কিছু বলতে পারি না জ্বীন আমাকে কোথায় নিয়েগেছিল! ক্ষুব্ধ ইমাম সা’ব তার মুখের কাছে হারিকেন ধরে চোখের ওপর তীক্ষè দৃষ্টি রেখে ধমক দিয়ে বললেন, বল কোথায় গিয়েছিলে? আচমকা সে ইমাম সা’বের পা জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চাইতে থাকে।
মাথা নীচু করে সাত্তার বলে, হুজুর আমার কোনো দোষ নেই। মেম্বার তার স্ত্রীকে খুশি রাখার জন্য সে নিজেই আমাকে এ কাজে বাধ্য করেছে। তা না হলে তার স্ত্রী চলে যাবে বাপের বাড়ি। কারণ মোটর সাইকেল দূর্ঘটনায় অণ্ডকোষে ব্যথা পেয়ে মেম্বার শারিরীকভাবে অক্ষম হয়ে পড়ে। স্ত্রী চলে গেলে মেম্বার সামাজিকভাবে মাথা উঁচু করে দাড়াতে পারবে না ভেবে অনেক অনুনয়-বিনয় করে আমাকে রাজি করেছে। তাছাড়া মেম্বার যেমন প্রভাবশালী তেমনি ভয়ংকর। আমি তার কথা না রেখে পারি নি। সাত্তারের কথা শুনতে শুনতে ফজরের আজান হয়ে যায়। ইমাম সা’ব চলে যান মসজিদে।
গ্রামের ছেলে-মেয়েরা আরবী পড়তে এসেছে মক্তবে। এসেছে মেম্বারের সুন্দরী কন্যা সামিয়াও। সে সুর করে আরবী পড়ছে আর ইমাম সা’ব অপলক নয়নে তার মায়াবী চেহারার দিকে তাকিয়ে আছেন। চমৎকার অঙ্গসৌষ্টব। কী সুন্দর চোখ। ঈগলের ঠোঁটের মত উন্নত নাসিকা। পাহাড়ের মতো ঢালু মসৃণ চিবুক। বরফের মতো শুভ্র চিকন চিকন দাঁত। দুধে-আলতা গায়ের রং। চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে সামিয়া। এ বয়সেই তার দিকে তাকালে সহজে কেউ চোখ ফেরাতে পারে না। সে নাকি তার মায়েরই ডুপ্লিকেট। ওর মায়ের কথা ভাবতেই কষ্টে ইমাম সা’বের বুক ভারী হয়ে উঠে। দু’একজনের পড়া নিয়ে আগে-ভাগেই মক্তব ছুটি দিয়ে দেন।
পৌষের এক সকালে সোরগোল শুনে পাড়া-প্রতিবেশীরা ছুটে আসে কফিল চৌধুরীর বাড়ীতে। পুকুরের এক কোণে টয়লেটের পাশে ইমাম সা’বের লাশ দেখে সবাই হতভম্ব! কারো মুখে রা সরছে না। হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে মেম্বার। মেম্বারকে দেখে কফিল চৌধুরী হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। মেম্বার কালবিলম্ব না করে ইমাম সা’বের লাশ নেড়েচেড়ে দেখতে লাগলেন। হঠাৎ চিৎকার দিয়ে বলে উঠেন, ইমাম সা’বের তো ঘাড় মটকানো! সর্বনাশ বুকে-পিঠে তো জ্বীনের আঙ্গুলের ছাপ! নিশ্চয় ইমাম সা’বকে জ্বীনে মেরেছে! মুহূর্তের মধ্যে রাষ্ট্র হয়ে যায় চৈতালপুরের ইমাম সা’বকে জ্বীনে মেরে ফেলেছে!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিলন বনিক
গল্পটা খুব সুন্দর হয়েছে...রহস্য গল্প মনে হলো...এবং কিছুটা অসম্পূর্ণ মনে হলো....ঈমাম সাহেবের খুনি কি মেম্বার নিজে? তাইত মনে হচ্ছে..এবং সেটা হয়েছে সামিয়ার কারণে....
সূর্য
এরকম কিছু ঘটনা শুনেছি খুব পরিচিতদের কাছে তাই খুব একটা চকিত হইনি। তবে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়া মেয়েটার গড়ণের বর্ণনা আর শেষ প্যারাটা খুব দ্রুতলয়ে শেষ হওয়ায় ঐ বর্ণনাটুকু অপ্রয়োজনীয় মনে হয়েছে অথবা যেটুকু ছোয়া দেয়ার চেষ্টা লেখক করেছেন তা পাঠকের আন্দাজ করা কঠিন। গল্প বেশ ভালো লেগেছে।
ভাই আপনি লেখেছেন .. তবে সেইরাম গল্প..। এ রকম পজিটিভ মন্তব্যে আমি নিজেও সেইরাম হয়েগেলাম! পান্না ভাই দোয়া করবেন। আর লেখাটি দুবার এসেছে তা ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। এডিট করার কোনো অপশন পাচ্ছি না। এডিট করার চেষ্টায় আছি ....।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।