রোদনে ভরা বসন্ত

রম্য রচনা (জুলাই ২০১৪)

মীর মুখলেস মুকুল
  • ৬৫
আমার পাড়াত নাম বগা, বন্ধুরা বলে মগা, আসল নাম হুদা, বউ বলে বেহুদা। রোগা-পটকা-লম্বাটে বলেই পাড়ার লোকেরা বগা নামে ডাকে। মাথায় মগজ নেই বলেই বন্ধুরা মগা বলে। তবে বউ কেন বেহুদা বলে, সেটা কিছুতেই মাথায় ঢোকে না। এ নিয়ে বিস্তর আক্ষেপ। সেই প্যাচালই পারব। যদি সময় থাকে তো শুনুন।
আমার বয়স কতই বা হবে! এই ত্রিশ-বত্রিশ। এই বয়সে বাতাসি মাছের মত অবস্থা। প্রশ্ন হতে পারে কেন? বলতে পারেন, বহুমাত্রিক সমস্যা। কেননা আমার মুখে ভয়াবহ রুচি। সর্বভুখ প্রাণী তেলাপোকার মত। ভাত কি দিয়ে দেবেন? শুধু নুন মরিচ? অথবা ডাল? বাটির ডাল ফুরিয়ে গেলে, ওটা আনতে আনতে পাতের ভাত শেষ। তবুও বাতাসি মাছের দশা! বুঝুন ব্যাপারখানা। এ যেন সেই পুরনো দিনের ¯েøাকের মতÑ‘সরু পেটে গরু আঁটে, ¯^াস্থ্য ভাল হয় না কপালের দোষে’।
তবে চলতে ফিরতে যা দেখি, কি বলবো! ডিস ভর্তি ভাত আর ভেজাল তেল খেয়ে খাঁটি তেলের ড্রাম। এমন খাওয়া খাবে যে, আকাশের দিকে মুখ করে চলতে হবে। মাথা নিচু করেছে তো সব গলা থেকে বেরিয়ে পড়বে। তারপরও বলবে, বিশ্বাস করুন কিছুই খাই না, মুখে একটুও রুচি নাই!
আমি নিয়মের ধার ধারি না। যতটুকু মানতে হয় তার পুরোটাই অনিচ্ছায় অর্থাৎ ঠ্যালায় পরে বাঘে ধান খাওয়ার মত। এটাতে সহায়ক হিসাবে কাজ করে কখনও আমার বউ, আর্থিক দৈনদশা অথবা কাজের বুয়া এবং সবগুলোর হোতা আমার ¯^য়ং ‘কপাল’। বলবেন সে কেমন? দু’শো গ্রাম চাল হলে আমার একটা দিন অনায়াসে চলে যায়। বুয়া একটু হলেও ওখান থেকে চুরি করে ভাগ বসায়। হাতের রান্নার যা ছিরি! ভাগ্যিস রুচিবান পুরুষ। তা না হলে নির্ঘাত কালবোশেখী নয় খোদ মোরসুমি বাতাসেই উড়িয়ে নেবার জন্যে যথেষ্ট ছিল। বুয়ার ধারণা আমি টের পাই না। মনে মনে আমি সন্তুষ্ট না হলেও শান্তনা এই, ওর পেট ঠাÊা হয়। আমার ওজন যা হয় হোক। বলবেন, বুয়ার হাতে রান্না কেন, বউ কোথায়? বউ থাকলে তো সব ল্যাঠা চুকে যেত। বউ ছিল না যে, তা নয়। ছিল। চলে গেছে। তবে পৃথিবী ছেড়ে নয়। আমাকে ছেড়ে। কারণ আমি নাকি খাসি গোছের পুরুষ। মেয়েদের পছন্দ পাঁঠা জাতের। বোধ করি সে জন্যেই কিনা, কোন ছেলে-পুলেও ভাগ্যে জুটলো না। কি বলবো, বউটা শুধু চলেই গেল না, আমার মাংস খেল, হাড় চিবোল, চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বানিয়ে বাজাতে বাজাতে মাথাটা দিয়ে ফুটবল বানিয়ে লাথাতে লাথাতে গেল। তবে বিয়ের আগে বউটি আমার এমনটি ছিল না। তার সাথে আমার দীর্ঘ সতের মাস, উনত্রিশ দিন, তেইশ ঘণ্টার প্রেম। এ সময় ওর সাথে আমার একটি দিনের জন্যেও রা-টি পর্যন্ত হয়নি। শুনেছি বিয়ের আগে মেয়েরা ভয়ানক গরম আর বিগলিত থাকে যেন যে পাত্রে রাখা যায় ঠিক তার আকৃতি ধারণ করে। বিয়ের পরে নাকি ঠাÊা হয়ে ঢালাই লোহা হয়ে যায়। তা না যায় ভাঙা না যায় চিমরানো। আর তাদের কাছে পাঁঠা তত্ত¡ও পরিস্কার হয়ে যায়। তখন ওদের আসল রূপ একটু একটু করে ধরা পড়ে। অনেকটা ফুল যেমন কুঁড়ি থেকে একটা একটা করে দল মেলে দেয়। এক এক দলের রূপ দোষ গুণ সৌন্দর্য এক এক রকম...।

ছোট বেলায় আমাদের ইংরেজি স্যারের কাছে একটা কথা শুনেছিলাম মানুষের জীবনকে যদি এ, বি অথবা সি এই তিনটি গ্রেডে ভাগ করা যায়, তবে নাকি বি অর্থাৎ ‘মিডল কোর্স ইজ দা বেস্ট’। সেটা আমার জীবনে বিভিন্ন পর্যায়ে ধরে রাখার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমি শত চেষ্টা করেও সি থেকে কখনও বি পর্যায়ে উন্নীত হতে পারি নাই। সেটাও যেমন ঠিক, সন্দেহ নাই, আবার এক অদ্ভুত ঘটনা আমার জীবনে ছায়ার মত সঙ্গি হয়ে আছে। সেটা হলো, আমার ডান চোখের ঘটনা। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, হঠাৎ যখন কোন কুটো বা ময়লা উড়ে এসে চোখে পড়ে, বেশির ভাগই তা সে আমার ডান চোখে পড়ে। বা কোন পাপড়ি খসে পড়লে সেটা ডান চোখে। আঘাত লাগলেও ডানটাতে। গোসলের সময় সাবান পানির ক্ষেত্রে একই ঘটনা। এমনকি আফটার সেভ লোশনটা মাখার সময় দুর্ঘটনাক্রমে চোখে পড়লেও তা ঐ ডান চোখেই পড়বে। আর এমনটা যেদিন হবে সেদিন বউ এর হাতে ধুলাইটা বিশ্ব-কাপ ক্রিকেটের অগ্রিম টিকিট কাটার মত পাওনা হয়ে যাবে অথবা সেটা অন্য কোন অশুভ ইঙ্গিত হয়ে দেখা দেবে। বিষয়টি কাকতালিয় না অদৃশ্যের হাতছানি, জানিনা। যদিও এর এক বিন্দু বিসর্গও বিশ্বাস করতে চাই না। তবুও এসএসসি পরীক্ষার আগে এমনটা ঘন ঘন হতে লাগল। তাই রেজাল্ট সি গ্রেডে গেল কিনা, তা ভবিতব্যই ভাল জানেন। তারপরও লেখা-পড়া সেভাবেই চলছিল...।
আমি তখন বিএ পাস কোর্সে। আমার বউ মানে প্রেমিকা, উঁ-হু আমার হবু প্রেমিকা তখন এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ফল পাওয়ার অপেক্ষায়। তার সাথে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে পরিচয়। সেই থেকে তার কি হয়েছিল, ছয় ছয়টি মাস আমার ধ্যান করেছে। আমাকে দেবতা ভেবে কত ধরনের জানা অজানা ফুল, এই ধরুন এলে ফুল বেলে ফুল দিয়ে পুঁজো করে তবেই নাকি আমার সান্নিধ্য পেয়েছিল। তাই প্রেম চূড়ান্ত হবার আগেই প্রশ্ন করেছিলাম দুনিয়ায় এতো ভালো ভালো তাগড়া জোয়ান থাকতে আমার মত কিম্ভুতকিমাকারকে কেন বেছে নিলে? যার কিনা প্রেম-ভালবাসা হবার প্রাথমিক তিন শর্তের সবগুলোয় অবর্তমান। এই যেমন অগাধ ধন-সম্পদ, তারকা খচিত দেহ-মুবারক অথবা প্রতিভা। ও শুধু এটুকুই বলেছিল গাধা টাইপের লোকেরা ¯^ামী হিসাবে অসাধারণ...।
অতএব প্রেম চূড়ান্ত। এখন সে আমার প্রেমিকা; তার অবস্থান কুঁড়ি পর্যায়ে। আমি তখনও ভ্রমর হয়ে উঠিনি; মাছি পর্যায়ে। এক সময় ঠেলেগুজে ডিগ্রিটা পাস করলাম। তারপর পেটের ধান্ধায় ঢাকায় এসে গার্মেন্টস-এ ঢুকে গেলাম। আমার যা যোগ্যতা তাতে গু সাফ করার কাজ না পেয়ে গার্মেন্টস জুটেছে এইতো ম্যালা। এখানে এসে ডান চোখের ঘটনার সাথে যোগ হল চোখ নষ্ট হবার দশা। যেদিকে তাকাই সেদিকেই শুধু মহিলা আর মহিলা। লেখা-পড়ার চেয়ে চাপা আর গতরের কদর বেশি। বুঝলাম সি থেকে বি-তে যাবার চেষ্টা বৃথা। ওদিকে আমার প্রেমিকার তর সইছিল না। সে নাকি গরমে গলে বাষ্প হবার যোগাড় । মাঝে মাঝে চিঠি লিখত; খেতে, পড়তে, বেড়াতে, কোন কিছুতেই মন নেই। বই খুললে তার পাতায় আমার ছবি দেখে। যত শীঘ্রই সম্ভব তাকে যেন বিয়ে করি। বিয়ের পর সে নাকি আমাকে ডিজিটাল প্রেম দিয়ে ভরে দেবে। আমি একদিন সাক্ষাতে প্রশ্ন করেছিলাম, ডিজিটাল প্রেম কি? সে বলেছিল, দাদী-নানীদের যুগের কথা জানিনে। বর্তমান এটা অনেকটা লম্বাটে। ক্ষেত্রে বিশেষ তেলতেলে বা আল যুক্ত। সেদিন ব্যাপারটা বুঝি নাই। আশায় ছিলাম সময়মত সবকিছু কড়ায়-গÊায় বুঝে নেব...।
অগত্যা বিয়েটা সেরে ফেললাম। এখন কুঁড়িটাকে ফোটানোর চেষ্টা চলছে। আমিও যথারীতি ভ্রমর হবার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। ফুল ফুটছে..., ফুটছে...। একটু একটু করে...। ভেবেছিলাম গোলাপ না হলেও নিদেন পক্ষে গাধা, থুবরি গাদা তো হবেই। ওমা, সেকি! এযে ধুতুরা ফুল! বিষে ভরা। ফলটাতে? কাঁটাও আছে, বিষও আছে। বিচি আরও ভয়ানক! বলে রাখা ভাল আমার বউ এর নাম জহুরা। পরে জেনেছিলাম জহর মানে নাকি বিষ। আর জহুরা...?
কি আর করা। ভ্রমর হয়ে মধুর বদলে বিষ পান করতে লাগলাম। অদৃষ্টের লেখা। কপাল মন্দ হলে নাকি রাস্তার দড়িও গোখরো সাপ হয়ে ফণা তোলে। বাসর রাত গেল, কটা মাসও পেরিয়ে গেল। ডিজিটাল প্রেমের আশায় মন ইতিউতি করে। পরে হাড়ে মাংসে চামড়ায় টের পেলাম, ওটা কী! সারাদিন অফিসে ডিজিটাল ঝারি, রাতে বাড়ি ফিরলে বউ দেয় ডিজিটাল প্রেম মানে বাঁশ। বুঝুন আমার তলদেশের পরিস্থিতি। তবুও মানুষ আশায় বুক বাঁধে। এ ভাবে বাসের ছাদে পাঁজা কোলা করে মাল সামানা তোলার মত করে কযেকটি বছর ঠেলেগুজে পার করে দিলাম। ইতোমধ্যে আমার গোটা তিনেক কম্পানিও চেঞ্জ করতে হয়েছে। এত দিনেও আমার ধুতুরা বধুর কোল জুড়ে চাঁদের কণা দুরে থাক কাকের কণাও এলো না। এতে করে বাঁশ ক্রমশ মোটা হতে শুরু করেছে। এর মাঝে আর এক কুঞ্চিওয়ালা বাঁশ এসে হাজির। আমার বউ এর বিধবা বান্ধবি। দু’বছরের বাচ্চাসহ। অবশ্য বাসায় স্থায়ীভাবে নয়। মাঝে মাঝে আসে, ছুটির দিনগুলোতে এবং সেদিনই; যেদিন আমার বউ কোন না কোন কাজে বাইরে যায়। দৈবক্রমে আমি আর সে একই গার্মেন্টসের কর্মচারি। যদিও আমি এ জন্যে এক বিন্দুও দায়ী না। আমি ধরেই নিয়েছিলাম এটাতে আমাকে ডিজিটাল প্রেমটা একটু চড়া মূল্য গুনতে হবে...।
অব্বাবা! মনের কথা মাটিতে পরার আগেই বউ বলে বসল, মনে মনে শয়তানি, তোমাকে ওই কম্পানি ছাড়তে হবে...।
আমি জানি কথা পেঁচিয়ে লাভ নেই।
সাথে সাথেই বলে ফেললাম, আলবত ছাড়ব, আমার চৌদ্দগুষ্টিও ছাড়বে।
খোঁজা খুঁজি শুরু করে দিয়েছি।
বলি বলি করে একদিন এক ছুটির বিকালে ওকে বলেই ফেললাম, একজন ভাল গাইনিকলোজিস্টের খোঁজ পেয়েছি। বিয়ের পাঁচ-ছটি বছর পেরিয়ে গেল, আমাদের ¯^প্ন পুরণ হল না। চল না যাই। চেষ্টা করে দেখি, কিছু হয় কিনা...।
সে মুখিয়ে উঠলো, তুমিই যাও, নিরীক্ষা পরীক্ষা যা করার তুমিই কর। যতসব ভাঁওতামি করে পয়সা ফাঁদা। এতোই যদি যেতে ইচ্ছে করে তো তোমার বান্ধবির সঙ্গে যাও।
বুঝলাম কথা বাড়ান মানে এক ডজন বাঁশ...।
কিছুক্ষন পর হঠাৎ করেই তার গজগজ, গদগদে রূপান্তরিত হল, বলতে থাকল, সন্তানাদি আল্লাহ্র দান। ডাক্তার বেঁটে খেলেও লাভ নেই। বরং ভাল একজন কবিরাজের খোঁজ জানা আছে, সেখানে চল।
কবিরাজখানায় যেয়ে দেখি বেশ ভীড়। নানা কিছিমের মানুষ গিজগিজ করছে। কবিরাজের পিয়নকে এক প্যাকেট বিড়ি ঘুস দিয়ে দ্রুত সাক্ষাৎকার পেলাম। তিনি যথারীতি দাওয়াই দিলেন। ওকে দিলেন কেঁচোর হালুয়া আর ব্যাঙের স্যুপ। এক ঠ্যাঙের স্যুপে এক, দুই ঠ্যাঙে জমজ বাবুর সম্ভবনা। আমাকে দিলেন জোঁকের তেল। দুই চা চামচ খাওয়া, এক চামচ বিশেষ অঙ্গে মালিশ। আমি খেয়াল করলাম জোঁকের তেল দেখতে অনেকটা মধুর মত। বাজার থেকে ঐ রকম একটা বয়েমে সমপরিমান মধু কিনে গোপনে জোঁকের তেলের বয়েম ফেলে দিয়ে মধু খেতে লাগলাম। আমার বউ দুই বেলা ওগুলো খায় আর ওয়াক ওয়াক করে। মাঝে মাঝে বমিও করে। যেন মর্নিং সিকনেস শুরু...।
সময় পাইই না, পেলেও ভয়ে টিভির আসে পাশে ভীড় করি না। তবুও একদিন রাতে কিছুতেই ঘুম আসছিল না। লুকিয়ে হিন্দি ছবি দেখছিলাম।
একটুবাদে বউ এসে চোখ বড় বড় করে বলল, নষ্ট লোক, চরিত্রহীন। খুঁজে খুঁজে মাতারীদের ন্যাংটো ছবি দেখ।
সে চ্যানেল পাল্টে কার্টুন নেটওয়ার্ক এ দিয়ে বলল, এখান থেকে সরেছ তো বলদ বানিয়ে দেব। সোফায় কার্টুন দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে ¯^প্ন দেখছি, আমি কার্টুন হয়ে গেছি। এক পুঁচকে কার্টুন আমার বন্ধু। সে বনের ধারে যেয়ে হিসি দিচ্ছে। ওর দেখাদেখি আমারও চেপে গেল। আমিও শুরু করে দিলাম। সকালে বউ এর ঝাটা পেটায় ঘুম ভেঙ্গে দেখি হিসি বন্যায় ভাসছি। মন খারাপ হলেও বিষয়টা নিয়ে একটু ভাবলাম। বোধোদয় হল। দোষটাতো আমারই...।

এমন অনেক তুচ্ছ সাধারণ ঘটনা আছে যা কিনা আমাকে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলে দেয়। যেমন ধরুন সকালে আমাকে জরুরী অফিসে যেতে হবে। কোন মিটিং সিটিং আছে। হাতের নির্ধারিত সময়ও শেষ। তড়িঘড়ি বের হব। ঠিক সেই সময় বউ এক কাপ আগুন গরম চা ধরিয়ে দেবে। অনন্যপায় হয়ে ফুঁ পেরে ফুঁ পেরে মুখ পুড়িয়ে চা পান করতে হয়। করতেই হবে, অন্যথায় বাঁশ। আবার দেরি হলে অফিসে বাঁশ। অথচ এমনও সময় আসে, হাতে অঢেল সময়। সময় ও মন উভয়কেই উপভোগ্য করে তোলার জন্যে যদি তখন বলি, ডার্লিং, একটু চা করে দেবে?
সাথে সাথে ঝেংটি, গা ব্যথা, পারবো না। সারা দিন খেটেছি। এখন ক্লান্ত। অথবা বলবে, দুধ নাই।
হয়ত কোন দিন দেয়ও। তবে হবে সেটা আমাদের পাড়ার মোড়ে মধুর বাপের দোকানের চা এর মত। যার চা এর পানি সারা জীবন কেউ কখনও কোন দিন ফুটতে দেখেওনি শোনেওনি। তার আবার হাত পা জ্বলা রোগ ছিল। তাই নাকি পানি গরম হওয়া সহ্য করতে পারতো না।
কখনও মনে হয় ভাগ্যটাকে ঝাটা পেটা করি। ধ্যাত কি সব বোকার মত বকবক করছি। আশে পাশে কেউ নাই তো? যে থাকে থাকুক, আমি কাউকে ডরাই? তয় সাহস একটাই, ভাগ্যিস বউ নাই। তবে যাই বলুন, আমি বোকা, কম শিক্ষিত, সহজ-সরল, গরীব হলেও ঘরের কথা কখনও পরের কাছে বলি না...।
মাঝে মাঝে গভীরভাবে চিন্তা করি, ওর সমস্যাগুলো হয়তো আমি ধরতে পারছি না। নিশ্চয় একদিন সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। সেদিন মনে অসীম আশা নিয়ে রাতে মশারির মধ্যে শুয়ে আছি। হা করে উপরের দিক তাকিয়ে ফ্যান ঘোরা দেখছি আর ভাবছি, ওটাকে পোঁ পোঁ করে ঘুরাচ্ছে বিদ্যুত আর আমাকে ঘুরাচ্ছে বউ। ইস কি মজাই না হত যদি আমরা এক অপরের হয়ে যেতাম ...। ভাবলাম, ওর কাছে আজ হালুয়ার মত নরম হয়ে যাব...। হাতে-হাত রেখে বলবো, ভুল-ভ্রান্তি ভুলে গিয়ে নাও আজ আমরা মজা করি। কত দিন যে তুমি আমাকে ... ।
ঠিক এমন সময় ডান চোখে একটা কুটো পড়ল। বুঝলাম কপালে মজা না ছাই আছে। ভয়ে ঘুমানোর ভান করে পড়ে থাকলাম। মাঝে মাঝে মুখ দিয়ে বাতাস ছেড়ে কৃত্রিম নাক ডাকার শব্দ করছি। ও বিছানায় এসে আমার এক হাত ফাঁকে শুয়ে পড়ল।
খানিক পর ধমকের সুরে বলল, সকালে পচা মাছ এনেছিলে, ওটাই খেয়ে গ্যাস হয়েছে। তাই বলে ওমন বিদঘুটে শব্দ করে বাতাস বের করছ কেন?
আমি উত্তর না দিয়ে পরে থাকলাম।
বুঝলাম নাক ডাকাটা সঠিকভাবে হচ্ছেনা। শেষে চুপটি মেরে গেলাম। ধরা পরে গেলাম, এই দূর্ভাবনায় আর এক ঘটনা ঘটল, নীচ দিয়ে বারবার পচা আতরের মত দূর্গন্ধ বাতাস বেরুতে লাগল।
বউ টের পেয়ে বলল, কড়া ওষুধ ঝেড়েছি, গ্যাস এখন মুখ দিয়ে নয়, নীচ দিয়ে বেরুতে শুরু করেছে...।
বেশ কিছুক্ষন বাদে সে কনুই দিয়ে ঘুতো মেরে বলল, দূর্গন্ধটা যাচ্ছে না কেন?
অগত্যা ঘুমের ভান ত্যাগ করে ভয়ে ভয়ে সত্যটাই বললাম, গ্যাসের সাথে একটু তরল পদার্থও বেরিয়েছে। বলতে না বলতেই দড়াম করে পিঠের উপর ছয় মন ওজনের এক লাথি পড়ল।
তো এতোক্ষন খুসবু শুকাচ্ছো কেন? বাথরুমে যাও।
আমি মশারি-টশারি ছিঁড়ে নিয়ে মেঝেতে পড়ে খলসে মাছের মত লাফাতে লাফাতে পেটের গোটা তরল পদার্থ ডালের মত বেরিয়ে গেল। বুঝলাম বাঁশ এতই মোটা হয়েছে যে নি¤œাংগ নিয়ন্ত্রনহীন হয়ে গেছে...।
সেদিন ছুটির দিনটাতে সোফায় বসে পত্রিকার পাতা উল্টাচ্ছিলাম। হঠাৎ সেই কুঞ্চিওয়ালা বাঁশ এসে হাজির। সে এমনভাবে আমার গা ঘেঁসে বসল, যেন অনুমতি থাকলে কোলের উপর বসত। অটোমেটিক ডান চোখে কোন কিছু পরার আগেই পানি ঝরতে শুরু করলো। বুঝলাম- দশ নম্বর মহা বিপদ সংকেত...। পালানোর পথও নেই...। তরিঘড়ি উঠতেই বউ দেখে ফেলল। সাথে সাথে ওর চুলের ঝুটি আর আমার কান ধরে দিল মাথার সাথে মাথার এক মহাজাগতিক ঘুতা। কিয়ামত কাকে বলে! টাল সামলিয়ে মহিলা দ্রুত বেড়িয়ে গেল। খানিকবাদে দেখলাম মাথা ফুলে আলু হয়ে গেছে। ভিজে গামছা দিয়ে জলপট্টি দিচ্ছি...।
বউ বলল, আগামীকালের মধ্যে যদি কম্পানি চেঞ্জ না কর তবে চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে বাড়ি ফিরবে, অন্যথায় আমিই সংসার থেকে চির ইস্তফা দেব।
আমি কাঁদ কাঁদ হয়ে বললাম, আমার একটু দোষও নেই। হঠাৎ চাকরি ছেড়ে দিলে খাব কি? কদিন পর ঈদ। বোনাসটাও হারাব। এও বললাম, তোমাকে বলতে ভুলে গেছি ঈদের আগের দিন তোমার আব্বা-আম্মা আসছেন।
সে মুখ খিচিয়ে বললে, তা মনে থাকবে কেন ? নিজের বাপ মা হলে ঠিকই মনে থাকত।
বাবা-মা আসার কথা শুনে বউ কিছুটা নরম হয়ে বলল, ঠিক আছে, নাকে কানে ক্ষত দাও। আর ওই মাগীটার সাথে একটা কথাও বলবে না। এর ব্যত্তয় ঘটলে বস্তুটা কেটে ভাজি করে খাওয়াব। তখন ওকে চির দিনের মত বান্ধবী বানিয়ে নিও।
কথাটা বউকে কিভাবে বলব ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। তিন দিন পর ঈদ। অবশেষে চুনকালি মাখা মুখ করে বললাম, আমি ভুল শুনেছিলাম তোমার নয় আমার আব্বা-আম্মা আসবে। বউ সাথে সাথেই আমার উপর চড়াও হল, মিথ্যুক কোথাকার, থাক তোমার বাপ মাকে নিয়ে। কাল সকালেই আমি বাড়ি ছাড়ছি। যেখানে আমার কোন মূল্য নেই, মা-বাবা, নিজ ভাই-বোনের কদর নেই, সেখানে আর এক মুহূর্ত না। তোমার সংসারে এই লাথি... থুঃ ...থুঃ ...থঃ...।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
শামীম খান সুন্দর হয়েছে । অনেকটা বাস্তব । শুভেচ্ছা ।
পুলক বিশ্বাস গল্পটা বেশ লেগেছে আমার। ভোট দিলাম। আামার কবিতা পাতায় আমন্ত্রণ ও ভোট প্রত্যাশা করি যদি আপনার আমার লেখা ভালো লাগে।
প্রজ্ঞা মৌসুমী হঠাৎ করে সঞ্চীব চট্টোপাধ্যায়ের কথা মনে পড়ে গেল। পড়ে শুধু আনন্দই হয় না, লেখা এতটাই সমৃদ্ধ অনেক কিছু শেখা যায়। আপনার লেখা পড়ে সেরকমটাই হলো; অনেক কিছু জানলাম। অভিযোগ বলতে স্ত্রী সম্পর্কে ধ্যান-ধারণা, ; ঐটা অবশ্য প্রায়ই দেখি। সে যাক, সবকিছু মিলিয়ে অসাধারণ... শুভ কামনা
ওয়াহিদ মামুন লাভলু দারুন হাস্য-রসাত্মক চিত্রাবলী তুলে ধরেছেন। খুব ভাল লাগল। শ্রদ্ধা জানবেন।

০৬ মে - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ২০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪