জীবন, সাহিত্য, মুক্তিযুদ্ধ ও বাবার গল্প

স্বাধীনতা (মার্চ ২০১৩)

হাসান ইকবাল
  • ১২
আমার বাবাকে নিয়ে সম্ভবত এটাই আমার প্রথম লেখা। এর আগে কিছু লিখেছি কিনা মনে পড়ছেনা। ভীষন আত্মপ্রত্যয়ী, বিনয়ী ও সাহসী একজন মানুষ। সারাটা জীবন যার কেটে যাচ্ছে জ্ঞান সাধনা আর বইয়ের পিছনে।
বই পোকা এই মানুষটিই আমার বাবা। খুব কাছের একজন বন্ধু। আমার চলার পথে প্রতিটি¶ন যিনি আমাকে সত্য সাহস আর অনুপ্রেরণা জুগিয়ে চলেছেন।
বাবার জন্ম বাংলা ১৩৫২ সনের ২৮ চৈত্র/১১ এপ্রিল ১৯৪৬ ইং। ব্রিটিশ শাসনের চিহ্ন তখনও মুছে যায়নি । হয়ে গেলো বাংলা বিভক্তি। আমার দাদা তখন পুঁথির আসর বসাতেন বাড়ীর উঠোন জুড়ে। সারা গায়ের লোক বাহŸা দিত। কি সুন্দর ও কর“ন ছিল সেই পুথির সুর। তাছাড়া সংগৃহীত পুথির মধ্যে ছিল-নূর পরিচয়, শুনাভানের পুঁথি, গাজীকালু, কড়িনামা, সফরমুল-ুক, জঙ্গনামা, হরিণনামা, মহব্বতনামা, হাশর মিছিল, ছয়ফুল বেদাত, সাত
কইন্যার বাখান ইত্যাদি। সিলেটি ‘ভেদকায়া’ পুথির সূচনা পর্বের কিছু অংশ তুলে ধরছি। নাগরী ভাষায় রচিত ‘ভেদকায়া’ রচয়িতা ছিলেন শাহ ছুফি আবদুল ওহাব চউধুরী।
পরথমে সরন করি আল-া নিরনজন
কায়াতে চেতন কইলে ভরিয়া পবন।।
বিন্দু জলে বান্দিলে কেমন পুতলা
মাটির ঘরে র“হ ভরি করিলে উজালা।।
অন্ধকার ভাংগিল চক্খু দান দিয়া
এ ভবের রংগ দেখি চক্খু দান পাইয়া।।
করনও দিল ধনি সব সুনিবার
জবান দান র্ছিজি দিল মজা বুঝিবার।।
আরওত ছিফাত আল-ার জবানের মাঝার
জবানে আর দিলে হয় জিকির আল-ার।।
তখন আইয়ূব শাসন ¶মতায়- বাবা তখন বড় হচ্ছেন ধীরে ধীরে। প্রাইমারী স্কুলের সীমানা পেড়িয়ে বাবা ভর্তি হয়েছিলেন বারহাট্রা সি.কে.পি হাই স্কুলে। পারিবারিক কারনে পরিবর্তন করতে হয়েছিল এই স্কুল। ভর্তি হন ময়মনসিংহ মহকুমার অš—র্গত নেত্রকোনা আটপাড়ার বানিয়াজান সিটি হাইস্কুলে। বাবার কষ্টগুলো বাড়তে লাগলো পুরনো বন্ধুদের ছেড়ে আসার কারনে। বাবার এক ক্লাশ উপরেই পড়তেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। তখনও তিনি পুরোদ¯—র কবি হয়ে উঠেননি। ব্রিটিশের ঢামাঢোল শেষ হতে হতে প্রেসিডেন্ট আইয়ূব খানের “মৌলিক গণতন্ত্রের” মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠছিল বাবার শৈশব ও কৈশোর। মৌলিক গণতন্ত্র মানুষ ভালো ভাবে নেয়নি ।
পরাধীনতার শিকল থাকলেও ছিল সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার অনেক বড় বড় ¶েত্র। ১৯৬৮ সালের দিকে বাবা প্রেসিডেন্টের কাছে থেকে পেয়ে গেলেন পূর্ব পাকি¯—ানের সেরা পুরস্কার “উন্নয়ন দশক” রচনাকর্মের জন্য।
তিনি “প্রভূ নয় বন্ধু” নামের একটা ¯^রচিত বইও উপহার দিয়েছিলেন বাবাকে।
বাবা তখন পুরোদ¯—র লেখক। পুরো শিশুতোষ লেখার পটু বাবার লেখা ছাপা হতে থাকে সেই সময়কার বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। পরিচয় হতে থাকে নেত্রকোনার বিখ্যাত সাহিত্যিকগনের সাথে। কবি রওশন ইজদানী, খান মোহাম্মদ আব্দুল হেকিম,ও¯—াদ জালাল উদ্দিন খাঁ, কবি খালেকদাদ চৌধুরী, আলী উছমান সিদ্দিকী (তৎকালীন পূর্ব পাকি¯—ানের সিদ্দিক প্রেসের মালিক), জনাব মুশফিকুর রহমান এসডিত্ত প্রমূখ। উত্তর আকাশ পত্রিকা ছিল
তদানীš—ন পূর্ব পাকি¯—ানে নেত্রকোনার একমাত্র সাহিত্য সাময়িকীর মূখপাত্র। বাবা এই পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন
কবি খালেকদাদ চৌধুরী ছিলেন তার প্রেরনার বড় উৎস। বাবার লেখা ছাপা হতে থাকে সমকালীন পত্রিকা মাহেনও, সওগাতসহ, নবার“ন, কচিকাঁচা পত্রিকার মতো শিশুতোষ বিভাগের পাতায়।
আমি তখন খুব ছোট ; বাবার লেখা একটা শিশুতোষ ছড়া মনে পড়ে- “ইতলে ভূত, বিতলে ভূত, মামদো ভূত তিনে,
ঝগড়া করবে ঠিক করলো মঙ্গলবারের দিনে।
শক্তি তারা করবে পরখ কাহার কতখানি, মালকোচাতে সাজলো তাই করতে হানাহানি।
প্রথমেতে ইতলে-বিতলে যুঝলো কত¶ণ, জখম হয়ে ভীষণভাবে, ভাঙলো নাকো রণ।
অবশেষে ইতলে-বিতলে ক্লাš— হয়ে হায়,
কোমর ভেঙ্গে পড়লো তারা ভীষন মুর্ছায়।
মুর্ছা তাদের ভাঙ্গে নাকো কোনকালেই আর,
এসব দেখে মামদো ভূতে কান্না করে সার।
কান্না শুনে ধেয়ে আসে আন্দা ছান্দা ভূত,
লেংটিতে সে বেঁধে আনে ল¶ ভূতের পুত।
ভূতের দলে এসে সবাই জাগিয়ে তোলে রোল,
পথে-ঘাটে বন-বাদাড়ে ভূতের গÊগোল।
বাবার লেখা অসংখ্য ছড়া কবিতা ছড়িয়ে আছে সেই সব পুরনো পত্রিকায়। সংগৃহীত সাময়ীকি, পত্র-পত্রিকাগুলো
এখন বাবার প্রতিষ্ঠিত শুনই প্রগতি পাঠাগারকে সমৃদ্ধ করেছে।
আমাদের গ্রামে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই পাঠাগার। আমার গ্রামের নামেই পাঠাগারটির নাম ‘শুনই প্রগতি পাঠাগার’। বর্তমানে সংগৃহীত বইয়ের সংখ্যা দুই হাজারের মতো। সেটার র¶ণাবে¶ন করেন আমার বাবা-মা। এই পাঠাগারটি এখন সবার জন্য উন্মুক্ত। আমাদের পরিবারের সদস্যদের বাইরেও অনেক মানুষ সেখান থেকে বই নিয়ে পড়ে।


অজপাড়া গা একটি গ্রাম।
যেখানে বিদ্যুতের আলো এখনো পৌঁছায়নি। গায়ের পথ ধরে হাটলে অনেক সবুজের সমারোহ চোখে পড়বে।
কাদা মাটির পথ পেরোলেই সেই আলোর রাজ্য। নেত্রকোনা জেলা থেকে ২০ কিলোমিটার পূবে আটপাড়া
থানাধীন ‘শুনই’ গ্রাম। আটপাড়া থানা থেকে আড়াই কিলো পাকা রা¯—া পেরিয়ে আধা কিলো কাচা রা¯—া, তারপর
আমাদের গ্রাম। আমাদের গ্রামে যেখানে সৃজনশীল ও মননশীল বিনোদনের অন্যকোন মাধ্যম নেই সেখানে আমার
বাবার পাঠাগারটি এখন পাঠকদের কাছে একটি ভালোবাসার জায়গায় পরিণত হয়েছে।
১৯৯৭-২০০৫; এই সময়টা ছিল আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন কালীন একটা গুর“ত্বপূর্ন সময়। বাড়ি ছেড়ে আমি
অনেক দূরে। বাবা-মা ভাই-বোন সবার জন্য মন খারাপ হতো প্রতিদিন। বিশ্ববিদ্যালয় হলে অনেক বন্ধু পেলাম
তবুও একটা শূন্যতা কাজ করতো সারা¶ন। সেই শূন্যতার মাঝে বাবাই ছিল আমার একমাত্র বন্ধু।
১৯৯৮-৯৯ সালের দিকে মৌলবাদীদের নামকরণ বিরোধী আন্দোলনের ফলে বিশ্ববিদ্যালয় পুরো আট মাসের
জন্য বন্ধ হয়ে গেল খুব হতাশ হলাম। অনেক আন্দোলন, মানববন্ধন করলাম আমরা। লেখক হুমায়ুন আহমেদ ও জাফর ইকবাল স্যারও আমাদের সাথেই ছিলেন প্রতিনিয়ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে আমরা খবরের কাগজ বিছিয়ে সেখানে বসে অনশন করে প্রতীকি প্রতিবাদ করেছি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার জন্য, বিশ্ববিদ্যালয়তো রাজনীতির খেলার মাঠ নয়। বাবার লাঙ্গলের ফলা থেকে উঠে আসা কষ্ঠার্জিত টাকা খরচ করে এখানে পড়তে এসেছি। আমাদের শি¶কেরা আমাদের কষ্ঠটা উপলব্দি করতেন বলেই আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। তাই স্যাররাও আমাদের সাথে ছিলেন প্রতিনিয়ত। কথা বলেছেন, সাহস জুগিয়েছেন এবং অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। আমাদের মাঝে যখন বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদে যোগ দিলেন, আমরা একটু ভরসা পেলাম। স্যারের সাথে অনেক কথা হতো আমাদের সেই খারাপ সময়গুলোতে। আমাদের জীবন
থেকে যে মূল্যবান সময় গুলো হারিয়ে যাচ্ছে, তার ¶তিপূরন কে দেবে? দিনের পর দিন আমরা সত্যি সত্যি হতাশ হচ্ছিলাম। ক্লাশ নেই, পরী¶া নেই। হল ছেড়ে দেয়ার নোটিশ পাঠিয়েছে কতৃপ¶। তখন মোবাইল ফোনে বিল বেশি ছিল বলে আমি বাবাকে চিঠি লিখতাম। বাবাও আমাকে নিয়মিত চিঠি লিখতেন। এক একটা চিঠির মমার্থ আমাকে খুব নাড়া দিত। বাবার চিঠিতে জীবন, দশর্ন, সাহিত্য, বা¯—বতা, উপদেশ সব কিছই লুকিয়ে থাকতো, এই চিঠি গুলো সংকলন করলে একটা চমৎকার পত্র সাহিত্যে রূপ নেবে।
৭১-এ যখন যুদ্ধ শুর“ হয়ে গেলো।
বড় চাচা চলে গেলেন মুক্তিযুদ্ধের ক্যাম্পে প্রশি¶ন নিতে। বাবা একা হয়ে পড়লেন। আমার দাদাকে রাজাকাররা ধরে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং বেঁধে রেখে নির্যাতন করা হয়েছিল। আমার মা তখন তাঁর গর্ভে ধারন করে বয়ে চলেছেন আমার বড় বোনকে। সেই কষ্টের দিনে শীতের কুয়াশায়- ভোরে আমার গর্ভবতী মাকে নিয়ে বাবার গ্রাম ছাড়তে হয়েছিল পাক হানাদার বাহিনীদের জন্য। তারা সত্যি সত্যি মেরে ফেলতো সবাইকে।
সংবাদ চলে গিয়ে ছিল এই পরিবারের এক জোয়ান মুক্তিযুদ্ধের ক্যাম্পে প্রশি¶ন নিতে গিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে অংশ্রহণের জন্য। তখন আমন ধানের চাষ হতো ব্যাপক, লম্বা শীষওয়ালা ধানের ¶েত পেরিয়ে বাবা-মা পৌঁছে ছিলেন অন্য গায়ে। ধান শীষের আঘাতে রক্তাক্ত হয়ে গিয়েছিলো সেদিন আমার মায়ের পা।
যুদ্ধের ভয়াবহতা বেড়েই চলছিল দিনের পর দিন। রাজাকাররা আমার দাদাকে ছেড়ে দিয়েছিলেন কিন্তু আমাদের গ্রামের বাড়ীতে চলেছিল ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও লুটপাট। অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিলো ধানের গোলায়, উঠোনে কেটে রাখা ধানের ¯—ুপে। দাদী সেই গুলির খোলস বাঁশের টুকরীতে জড়ো করে রেখেছিলেন-আর বিলাপ করতেন সময়ে অসময়ে। সেদিন পাশের বাড়ির লাল মিয়া কাকা গুলিতে আহত হন। মাকে নিয়ে বাবা চলে যান মোহনগঞ্জে

আমার বড় খালার বাড়ীতে। সেখানে পনের দিন থাকার পর জানা গেল আটপাড়ার অবস্থা ভালো। অনেক পাক
আর্মি ও রাজাকার মারা গেছে। আটপাড়া থানার বেল গাছের নিচে মেরে পুতে রেখেছে এইসব জানোয়ারদের।
বাবা ফিরলেন বাড়ীতে। মা আবার গুছাতে শুর“ করলেন সংসার।
যুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে মা মাছ খাওয়া ছেড়ে দিলেন। বিলে-ঝিলে, নদীতে তখন সর্বত্রই মানুষের লাশ। নদীর
কিনারে আটকে থাকা ভেসে আসা মানুষের লাশ বাঁশের লগি দিয়ে প্রতিদিন ভাসিয়ে দিতেন আমার দাদা। কার
¯^জন ওরা কেউ জানে না- এখনো জানে না
বাবার লেখা আত্মজীবনীমূলক গ্রন্হ “জীবনবৃত্তে” স্মৃতিচারন করেছেন যুদ্ধের ভয়াবহতার কথা, সেখান থেকে কিছু
উদ্ধৃত করছি-
“আরেকটা গল্প বলি। এটা আসলে গল্প নয়, সত্যি কথা।
সময়টা ১৯৭১ সালের ২৭শে মার্চ। ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের খেলার মাঠের পাশে যেখানে পাকহানাদার বাহিনী একাত্তরে চালিয়েছিল নৃশংস হত্যাকান্ড। আর আর সেখানে জন্ম হয়েছিল একটি নতুন
কবিতারও। কবি নির্মলেন্দু গুণ লিখছিলেন একটি অসাধারন কবিতা “জগন্নাথ হল: সাতাশে মার্চ একাত্তর”।
২৪মার্চ ২০১২।
আমার বই প্রকাশনার কাজে আমি তখন নেত্রকোনা থেকে এসেছি ঢাকায়। দেখা হলো গুণের সাথে সেই
বধ্যভূমির পাশে।
মনের জানালায় ভেসে উঠতে লাগলো সেই একাত্তুরের দু:সহ স্মৃতি। কত লাশ, কত ঘর হারা মানুষ। মা ও
আমার অš—সত্ত¡া স্ত্রীকে নিয়ে দৌড়াচ্ছি অজানা এক গš—ব্যে। বাবাকে রাজাকাররা বেধে রেখেছে। ছোটভাই
শামছুর রহমান তখন যুদ্ধের প্রশি¶ন ক্যাম্পে। বাবা যখন ছাড়া পেলেন, বাড়িতে তখন উঠোনের কাটা ধানের মাচায় দেখতে পেলেন অসংখ্য গুলির খোসা। চালের মটকা গুলো খালি। আমার পাশের বাড়ির প্রতিবেশী ভাই লাল মিয়া গুলিবিদ্ধ হয়ে কাতরানোর সুর। বাড়ির পূব পাশে লালচান্দের বাজারে পাশ দিয়ে বয়ে চলা “বিষনাই”
নদীতে আটকে আছে অসংখ্য নারী-পুর“ষের লাশ। আমার বাবা নৌকার লগি দিয়ে ভাসিয়ে দিতেন এই সব লাশ।
অনেকদিন পর বধ্যভূমির পাশেই কবির কন্ঠে রেকর্ডিং হলো সেই সময়ের কথা গুলো। বাংলাদেশী একটি স্যাটেলাইট টিভি এই অনুষ্ঠানটি স¤প্র্চার করে। ভয়াবহ সময়ের কবিতার কিছু ছবির কিঞ্চিত অংশ এখানে তুলে
ধরছি।
জগন্নাথ হল: সাতাশে মার্চ একাত্তর মাত্র কয়েক ঘন্টার জন্য কার্ফ্যু তুলে দেয়া হলো, দেড় দিন দেড় রাত্রি গৃহবন্দী থেকে আমরা দু’জন নগরীর র“প দেখতে বাইরে বের“লাম। আজিমপুর মোড়ে বেয়নেটবিদ্ধ এক তর“নের লাশ ¯^াগত জানালো আমাদের। তারপর বৃদ্ধ একজন।
অগ্নিদগ্ধ মর্টার বিদ্ধ¯— এই প্রাচ্য নগরীকে মনে হলো প্রান স্পন্দনহীন এক মৃত প্রেতপুরী।
অপসৃত অদম্য প্রানের গর্ব, ডানে বাঁয়ে সর্বএ মৃত্যুর হাতছানি। যুবতী কন্যাকে নিয়ে পালাচ্ছেন পিতা, মা’র কোলে দুগ্ধপোষ্য শিশু।
প্রিয়জনের খোঁজে উদ্বিগ্ন মানুষ ছুটছে সতর্ক, যেমন সন্ত্রাসবিদ্ধ বনের হরিন ¶িপ্ত নেকড়ের তাড়া খেয়ে ছুটে ।”
আমার বাবা ছেলেবেলা থেকেই বাবা কাপড়ের ব্যবসা করতেন। নেত্রকোনার হরেন্দ্র- ধীরেন্দ্র সাহার কাপড়ের দোকান হতেই বাবা তার দোকানের মালা-মাল আনতেন। প্রতি সপ্তাহেই প্রায় নেত্রকোনা যেতেন। বাবার সাথে আমিও মাঝে মাঝে নেত্রকোনা যেতাম।

একদিনের কথা মনে আছে আমাদের পাশের বাড়ীর কদর আলী মামা, বাবা ও আমি রনত্রকোনা যাই। তখন শীতকাল। শীতের কাপড় কিনব। শহরে যেয়ে জানতে পারলাম যে অনেক জায়গাতে কলেরা, ডায়রীয়ার প্রাদূর্ভাব। বাবার কাপড় কেনা হলে, সুমš— বাবু নামে দোকানের এক পরিচালকি কছু কমলা ও ফল-মূল কিনে এনে আমাদের দিয়ে বলেন, শহরে কোন হোটেলে কোনকিছু খাবেননা। আমরা কিছুনা খেয়েই তাড়াতাড়ি শহর থেকে বের হয়ে আসি। বাবার জীবনের অনেক কিছুই আজ ভুলে গেছি। এখন আর মনে করতে পারছিনা।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাবাকে দেখেছি সংখ্যালগু হিন্দুদের প্রতি দরদী সহানুভূতিশীল বন্ধুরূপে। অনেক বিপন্ন হিন্দু আপন মালামাল বাবার কাছে গচ্ছিত রেখে তারা সীমাšে—র ওপারে চলে যায়। দেশ মুক্ত হলে এসব মাল তাদের ফেরত দিয়ে দেয়া হয়। আমতলার জোগেশ মাষ্টার বাবার কাছে তার এক গাভী রেখে যান।
নেত্রকোনার“ সোনালী মেডিকেল হলের মালিক যতীন বাবু লাল রঙের ফিলিপস রেডিও রেখে যান। ¯^রমুশিয়া গ্রামের যতীন্দ্র ও আমতলা গ্রামের গোপাল কিছু টাকা হরেন্দ্র – ধীরেন্দ্র সাহার কাছে গচ্ছিত রেখেছিল। যখন নেত্রকোনার সোনালী ব্যাংক লূট হয়ে যায় তখন হরেন্দ্র-ধীরেন্দ্র সাহার কাছে যে টাকা গচ্ছিত ছিল তা” তারা ফেরত দিতে ব্যর্থ হন। তখন তারা যতীন্দ্র ও গোপালকে বলে দেয় ; তোমরা শুনই গ্রামের ইসহাক আলী মিয়ার কাছে যাও তাঁর কাছে আমাদের কিছ টাকা পাওনা আছে। যখন গোপাল ও যতীন্দ্র বাবার কাছে আসে। তখন বাবা ১৩ টাকা মন দরে ধানবিক্রি করে তাদের টাকা পরিশোধ করে দেন। এই যতীন্দ্র গোপাল বাবার প্রশংসায় পঞ্চ মুখ ছিলেন।
নেত্রকোনার ছোট বাজারে হাসেমিয়া লাইব্রেরীর কাছেই সুরেশ গোয়ালার চিড়া-মুড়ি, দই দুধের দোকান ছিল। সংগ্রামের সময়ে সে আমাদের শুনই গ্রামের বেপারী বাড়িতে আশ্রয় নেন। যে বাড়িতে এসে তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন, সেই আশ্রয় দাতারাই তার দোকান দখল করে নেয়। অন্যায় ভাবে সম্পদ দখলদারীদের অš—রালের সেই কথা গ্রামের সবাই এখনো জানে। সীমাšে—র ওপার থেকে সুরেশ এসে দেখে যে, আশ্রয়দাতারাই তার দোকান দখল করে নিয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “দুই বিঘা জমি’র” উপেনের মতোই তার কান্নার কোন মূল্য হয়নি।
অনেক বিপন্ন মানুষের মানসম্ভ্রম র¶ায় তিনি অগ্রনী ভূমিকা পালন করতেন। অনেক শরনার্থী ও বিপন্ন মানুষের খাবার ও টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করতে দেখেছি তাঁকে। কুনাপাড়া গ্রামে“ বড় আবু” ধান-পাটের ব্যবসা করতেন। সংগ্রামের এক সঙ্গীন মুর্হূতে পাক- হানাদার- বাহিনীর ভয়ে বিপন্ন হয়ে দু’টি সুন্দরী যুবতী মেয়ে ও ¯^র্ন টাকা নিয়ে আমাদের গ্রামে আসে। আমাদের গ্রামের হেকিম ও আলাল তার সাথে ব্যবসা করতেন, বড় আবু তখন তাদেরকে বলেন, তোমরা আমাকে সীমাš— পার করে দিয়ে সাহায্য কর। গ্রামের দুজন লোকের কাছে ¯^র্ন গচ্ছিত রেখে দু’টি মেয়েকে নিয়ে বড় আবু সীমাš— পার হবার আগেই মেয়ে দু’টিকে সন্ত্রাসীরা ছিনিয়ে নেয়। এই শোকেই বড় আবু এখানে মৃত্যুবরন করে। দেশ মুক্ত হবার পর বড় আবুর ছেলে এসে ¯^র্ন দাবি করলে, পূবোর্ক্ত ব্যক্তিরা সম্পূর্ন ভাবে অ¯^ীকার করে, ইত্যকার কত কান্নার গল্পইনা এখানে লুকিয়ে আছে।
আমি “ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে” (ন্যাপ) যুক্ত ছিলাম। অধ্যাপক মোজাফকর আহমদ এর গ্র“পে। বেগম মতিয়া চৌধুরী ও সুরঞ্জিত সেন গুপ্তকে আমরা নির্বাচনী প্রচারনায় আটপাড়া এনেছি। আমার ছোট ভাই শামসুর রহমান মুক্তি বাহিনীর ক্যাম্পে চলে যায়। পাক-হানাদার বাহিনী এ খবর পেয়ে যায়।
পাক বাহিনী যখন আমাদের বাড়ি অগ্নিসংযোগের জন্য আসে তখন পূর্ব দিক হতে মুক্তি বাহিনীর গুলির আওয়াজ পেয়ে পূর্ব দিকে তারা সরে যায়। এই ভাবে আমাদের বাড়ি র¶া পেয়ে যায়। এটাও আল−াহর অসিম অনুগ্রহ।
আমাদের পাশের বাড়ীর লালমিঞা ও মোর্শেদ মিঞা গুলিবিদ্ধ হয়ে যায় ও মাটিতে তারা লুটিয়ে পড়ে। এর পরের বাড়ির লুদু মিঞার স্ত্রী তখন গর্ভবতী ছিলেন। উঠানে ধান রোদ দেয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হন। গুলির আঘাতে তার গর্ভপাত হয়। সে দিনের সে সš—ান আজও বেঁচে আছে। তার নাম রাখা হয়“গুলিচান”। এরপরে
পাক-বাহিনী প্রত্যেক বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এই আগুনের তাপে বাতাসের ধোঁয়ায় সব কিছু আচ্ছন্ন হয়ে যায়। দূর থেকে যারা এই অগ্নিকান্ড দর্শন করেছে , সবাই বলছে আমাদের বাড়িতে আগুন জ্বলছে। আমার এক ছোট বোন শামসুন্নাহার আমার বই গুলির জন্য আ¶েপ করেছে যে, আমার সংগৃহীত বই গুলি পুড়ে গেছে বলে ধারনা করেছে। অথচ আল−াহ্ আমার এই বইগুলি র¶া করেছেন। আমার বাবা তখন বাড়িতে ছিলেন। দেখেছি তার মাঝে অসীম মনোবল, পাক-বাহিনীর হাতে ধরা দেওয়ার দুরš— সাহস। কিন্তু,তখন পাক-বাহিনী আমাদের বাড়িতে আসেনি। আমরা বাড়ি হতে তখন পালিয়ে গেছি, আমার স্ত্রী তখন গর্ভবতী। সব ¶েতে তখন ধান, এই ধানি জমি পেরিয়ে আমার স্ত্রী ও অন্যান্য মেয়েরা দূরবর্তী গ্রামে চলে যায়।
প্রায় নয় মাস ধরে পাক-বাহিনীর অত্যাচার চলে। তাদের ভয়ে আমার মা ও অন্যান্য মেয়েরা মোহনগঞ্জ থানার কমলপুর গ্রামে আমার বোনের বাড়ি চলে যান। এর পর দেশ তাড়াতাড়ি মুক্ত হয়ে যায়। আমাদের থানার পাকবাহিনী সরে যায়। আল্বদর ও রাজাকারদের মেরে থানার পূবপাশে গর্তে পুঁতে রাখা হয়। আমার মা সে দিনের কথা স্নরণ হলেই কাঁদতেন। ¯^াধীনতার পর পরেই আমাদের বাড়িতে ডাকাতি হয়। কাপড়ের দোকান ও অন্যান্য মালামাল নিয়ে ডাকাতেরা নৌকা যোগে সরে পরে।
তখন বর্ষাকাল। আমাদের বাড়ীর পশ্চিম পাশে হাওর বর্ষাকালে নৌকা নিয়ে চুরি ডাকাতি করা সহজ। ডাকাতির শেষ পর্যায়ে ডাকাতেরা আমার দেড় বছরের মেয়ে নার্গিসকে নিয়ে চলে যেতে উদ্ধত হয়। আমার মা টাকা-পয়সা ও অলংকার দিয়ে ডাকাতের হাত থেকে মেয়েকে ফিরিয়ে আনে। একথা স্নরণ হলেই মা কাঁদতেন।"
বলছিলাম বাবার কথা ।
আমার মায়ের সাথে বাবার মান-অভিমান হতো শুধুমাত্র বই নিয়ে। সারা বাড়ি জুড়ে বই। আলমিরা, টেবিল, বুক সেলফ যখন ভর্তি হয়ে যেত-সবশেষে শোবার বিছানা দখল করতো বইয়ে। এই নিয়ে মায়ের কতশত কথা ।
তবুও বাবা নিরবধি বই নিয়ে ছিলেন-আছেন-বই বিতরণ করে বই পড়েই বাবার আত্মিক শাšি— এটাই বাবার আপন জগত।
বাবার সংগৃহীত প্রতিটি বইয়েই গোটা হাতের অ¶রে লেখা আছে-
“আমার জীবন উৎসর্গ করেছি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ- জ্ঞান অর্জনের জন্য।”
প্রচন্ড নজর“ল ভক্ত বাবা। নজর“লের প্রতিটি বইয়ের প্রথম সংস্করণ বাবার কাছে আছে। প্রতিটি বই যেন বাবার এক একটা আত্মা।
বাবা অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ-এর ন্যাপ ছেড়ে আসলেন কম্যুনিস্ট পার্টিতে। চলল অনেক দিন। কবি গোলাম মো¯—ফার “ইসলাম ও কমিউনিজম” পড়ে বাবা প্রভাবিত হয়েছিলেন। প্রগতি প্রকাশন মস্কোর এক আলমিরা বই বাবা পুড়িয়ে ফেলেছিলেন। খুব আফসোস হয়েছিল বাবার কাছে এই গল্প শুনে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার সময় সেসব বই আমাকে নতুন করে টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা শেষ করে আমি তখন পূর্ণাঙ্গ পোষ্ট গ্রাজুয়েট। নিজেকে একজন ¶ুদে সমাজবিজ্ঞানী মনে করছি আর গর্বে বুক ফুলাচ্ছি।
হঠাৎ একদিন বাবার সাথে সমাজ সাহিত্য ও রাজনীতি নিয়ে অনেক যুক্তি-তর্ক-গল্প। আমার দীর্ঘ ছাত্র জীবনের সব জ্ঞান কেমন যেন মিছেমিছি মনে হলো। হেরে গেলাম বাবার কাছে। মনে হলো আমার বাবাই শ্রেষ্ঠ সমাজবিজ্ঞানী, আমার বাবাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা, আমার মা-ই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা।
এই লেখাটা ঢাকায় বসে লিখছি। খুব মনে পড়ছে আমার মা’কে, বাবা’কে আর আমার প্রিয় ছোট বোন টুনি কে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ কবির হোসেন প্রিয় হাসান ভাই আপনার লেখা কেমন হল সে মন্তব্য করব না শুধু বলব অসাধারন. ধন্যবাদ.
আহমেদ সাবের বাবা এবং স্বাধীনতার গল্প মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে। চমৎকার স্মৃতিচারণ। কত ত্যাগের বদলে আমাদের স্বাধীনতা পাওয়া! দুঃখ, কিছু লোক তা অস্বীকার করে।
এশরার লতিফ বাবাকে নিয়ে একটি তথ্যময় আবেগময় লেখা যেখানে কখনো ব্যক্তিগত স্মৃতি জাতির ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাথে মিশে গেছে। মূল্যবান লেখা। তবে লেখকের ভাষ্য থেকে হঠাৎ বাবার ভাষ্য এসেছে যেন জানান না দিয়েই।
রোদের ছায়া এটাকে গল্প বলা যাচ্ছে না , তবে স্মৃতিকথা বা প্রবন্ধ হিসাবে খুব ভালো , খানিতা কি আগে কোথাও পড়েছি, সেরকমই মনে হচ্ছে । তবে বিষয় ভিত্তিক লেখা আগামিতে পাবো সেই প্রত্যাশা থাকলো। শুভকামনা ।
তাপসকিরণ রায় কাহিনীর ডালপালা কিছুটা বিক্ষিপ্ত থাকলেও খুব মনটানা গল্প বলে মনে হয়েছে।আপনার বাবা,মার গল্প শুনে নিজের বাবা মার কথা খুব করে মনে পড়ছে। আমি জানি,আমার চোখের কোনে জলের রেখাও চিকচিক করছে।তার মানে খুব মনন মুখী এ লেখা আপনার।ধন্যবাদ নেবেন আমার।আমিও এক বছরের ছিলাম,আমায় নিয়ে বাবা মা অজস্র ধন সম্পত্তি ফেলে রেখে ভারতে চলে আসেন।অনেক দিন ভিখারির মত দিনপাত করতে হয়ে ছিল।আমরা ঢাকার নারায়ণ গঞ্জ সাব-ডিবিসনের খিদিরপুর গ্রামে ছিলাম।সেখানকার থানার নাম ছিল মনহরদি।সে সব বহু যুগ আগের কথা,ভাই !আজ আবার সে সব কথা মনে পড়ে গেলো।
এফ, আই , জুয়েল # অনেক তথ্য সমৃদ্ধ ও জ্ঞানগর্ভ একটি লেখা । এতে চিন্তা ও চেতনাকে জাগাবার মত অনেক ইঙ্গিত আছে । অনেক সুন্দর ও অসাধারন । = লেখককে ধন্যবাদ ।।
মিলন বনিক হাসান ভাই...প্রথমত: আপনার বাবার প্রতি হেটস অফ করছি....বাবাকে নিয়ে লেখা আত্মজীবনীমূলক লেখাটি আমার ধারনা আমার মত আরও অনেককে প্রভাবিত করবে...খুব ভালেঅ লাগল...তবে কষ্ট একটু হচ্ছে এই ভেবে কোথাও আপনার বাবার নাম ব্যবহার করেননি...আর যদি কখনও সুযোগ হয় তবে “শুনই প্রগতি পাঠাগার”-এ যাবার ইচ্ছা পোষন করছি...পাঠাগারটি আরও সমৃদ্ধ হোক...এই কামনা...

২৪ ডিসেম্বর - ২০১২ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী