বিকৃত সাধীনতা

মুক্তির চেতনা (মার্চ ২০১২)

সিয়াম আল হেলাল
  • ১০
  • 0
তখনও সূর্য ওঠার খানিক বাঁকি। বৃক্ষশাখা মেতে উঠেছে কূজন রবে। পল্লবের আড়াল থেকে কুহুতান। রাতে ফোটা হাসনাহেনার গন্ধ এখনো মিলিয়ে যায়নি। মিলিয়ে যায়নি রাতের জোছনা গুলোও। ফজরের আজান পেরিয়ে গেছে । পূবাকাশজুড়ে রূপালী আলোর ছটা সোনালী জোছনার সাথে মিতালি করে মেঘের ক্যানভাস রাঙিয়ে তুলছে মায়াবী সাজে। দখিনের নীলাকাশ ছুঁয়ে অবিরত চঞ্চল বাতাসের আনাগোনা। বসন্তের এই শেষবেলায় বিষন্ন প্রকৃতি। গ্রীষ্মের দাবদাহকে বরণের জন্যে নয়; এ ঋতুরাজের বিদায়ের ব্যাথা। মেঘেরা আকাশজুড়ে ছুটে চলেনা শরতের মত। মেঘের স্থীরতা করুণ আকাশের ভাব বয়ে আনে। যদিও শ্রাবনের মত অশ্রুধারা নেই। তবু এ যেন শোকার্ত বার্তা বাহক। একটু পরেই রোদ উঠবে। ঝলমল করে উঠবে ধরণী। পাখিদের চঞ্চলতা কমে যাবে। খাবারের সন্ধানে হারিয়ে যাবে তারা। যে কাঁঠালগাছটা এখন কূজনমূখর সেখানে নীরব চাদর ঢেকে ফেলবে।

দাদনচক গ্রামের মেঠোপথ আাঁকাবাঁকা হয়ে চলে গেছে সবুজ মাঠের ভেতর দিয়ে। এ গ্রামে আজ হাটবার। দুপুর গড়ালেই হাটুরে দলের চলাফেরা শুরু হয় এ পথ দিয়ে। ভোরবেলা শান্ত প্রকৃতি। ছোট্ট মেয়ে নুরি রোজ এখানটায় ছুটে আসে। মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙলেই আড়মোড়া কেটে অলসতা ভাঙে। ব্রাশটা মুখে পুরে সরু পথ ধরে ছোট ছোট পায়ে হেটে যায় খানিক দূর। সবুজ ক্ষেতের পরশ বুলায় দুটি কচি হাতে। পাখিদের কিচিরমিচির কলরবের সাথে সেও ছড়া কাটে। তার বইয়ের ছড়া। ঝাউয়ের শাখায় শন শন শন ..................... মাটিতে লাটিম বন বন বন। মায়ের কাছে সাঁঝের বেলা বই নিয়ে বসে নুরি। পড়া শেষে গল্প শোনে। চাঁদের গল্প, নবী-রাসুলের গল্প, আমাদের দেশের গল্প, বিজয়ের গল্প, মুক্তিসেনার গল্প, পতাকার গল্প, আরও কত কি। শুনতে শুনতে কখনো ঘুমিয়ে যায়। কচি মনে স্বপ্ন দেখে একজন ভালো মানুষ হয়ে গড়ে ওঠার। যাকে নিয়ে মা গর্ব করবে। দেশের সবাই ভালোবাসবে।

সূর্য যখন ডিমের কুসুমের মত মুচকি হেসে তাকিয়ে থাকে সবুজ মাঠের দিকে। নুরি হেঁটে আসে। সে দেখে অকুল সবুজের রাজ্য। সবুজ সাগরের মাঝে সে একটি ছোট সাম্পান। বয়ে যায় সে কুল হতে অকুল দিগন্তে। চাঁদটাকে তখন আর আকাশের বুকে খুঁজে পাওয়া যায়না। দূর থেকে ঝিঁ ঝিঁ পোকারা তখনো ডেকে চলে একটানা। চাষিরা লাঙ্গল গরু নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। নুরি লাল সবুজ পতাকার কথা ভাবতে থাকে। মায়ের কাছে প্রায় শোনে পতাকার কথা। স্বাধীনতার কথা। স্বাধীনতার অপার মোহময় স্বাদ সে বুঝতে পারে। স্কুলে প্রতিদিনের গাওয়া জাতীয় সঙ্গীতের মর্ম খোঁজে। সে দেখে পতাকার মতই সবুজ এ মাঠ। কিন্তু মাঝের লালবৃত্ত কি সূর্যের লালিমা না-কি রক্তের দাগ। নুরি সে ভাবনায় ডুবে যায়। দাঁতে ব্রাশ ঘোষতে ঘোষতে পা বাড়ায় বাড়ির দিকে। ফিরে এসে মুখ ধোয়। পাটি পেতে লেখাপড়ায় মন দেয়। নুরির বাবা আজিজ। মেয়ের পড়ায় মনোযোগ দেখে খুশি হন। কাছে এসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। নুরি বাবাকে জিজ্ঞেস করে, "আব্বু পতাকার মাঝের বৃত্ত কি সূর্য না-কি রক্ত?" আজিজ মুচকি হাসেন, বলেন
-মাঝে রক্তের দাগ মা। দীর্ঘ নয়টি মাসে যে রক্ত সবুজ বাংলায় ঝরেছে এ তারই প্রতীক। তবে বৃত্ত সূর্যের আকার।
আজিজ কঠিন সব কথাগুলো সহজভাবে মেয়েকে বুঝিয়ে দেন। নুরি পড়ায় মন দেয়। আজিজ উঠে যান। হাটবারে সকাল সকাল বেরিয়ে যেতে হয় তাঁকে। হাটে গমের পাইকারি ব্যবসা তাঁর। পাশে একটি প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষকতা তাঁর পেশা। বাজার থেকে ফিরেই গোসল করে বেরিয়ে পড়েন স্কুলে। গ্রামের ঘরগুলো থেকে ভেসে আসছে বই পড়ার শব্দ। ভোর থেকেই এ আয়োজন। খুব ভোরে ঘরগুলো থেকে কোরআন পাঠের সুমধুর সুর ভেসে আসে। আজিজও ভোরে উঠেন।

আজিজের বাবা অর্থাৎ নুরির দাদা ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি শহীদ হয়েছিলেন যুদ্ধে। তাঁর বিরত্বের কথা সারা গ্রামে জানা। গ্রামের সবাই চেনে এই হোসেন বাড়ি। নাম ডাক আছে ভালোই। এই বাড়ির আদি ব্যবসা গমের। প্রায় পনের বিশ বিঘা জমি জুড়ে শুধু গমের চাষ। গত বছর লাভের টাকার সাথে আরো কিছু ব্যাংকলোন নিয়ে দুই বিঘা জমি কিনে নেন আজিজ। সব মিলিয়ে ভালোই আছেন। ষন্মাষিকভাবে কিছু টাকা স্কুল তহবিলে দান করে থাকেন। এছাড়া একটা সমাজকল্যান সংস্থা চালু করেছেন। এখান থেকে গ্রামের নানা ধরনের উন্নয়নমূলক কাজও করছেন। রাস্তা মেরামত, শাঁকো সহ টিউবয়েল স্থাপন আদর্শ বাজার ইত্যাদি ছোট খাটো কাজের জন্য চেয়ারম্যান কিংবা সাংসদের প্রতি মুখিয়ে থাকতে হয় না। নিজেরাই নিজেদের সঞ্চয় থেকে নিজেদের উন্নয়ন করে চলেছেন এই সংস্থার মাধ্যমে। জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন আজিজ। তবে এর বিরোধীরাও আছে। এটাই স্বাভাবিক। অনেকে রটাচ্ছে আজিজ এবার ইলেকশনে দাঁড়াবে। একারনেই এই জনসেবামূলক কাজ। তবে এ সংস্থার সদস্যরা এসব কথা পরওয়া করেনা। তারা আজিজকে ভালোই জানে। আজিজের নিঃস্বার্থ কাজের কারনে গ্রামের চেয়ারম্যানও এসেছিল তার কাছে। কোন অভিনন্দন বা উৎসাহ দেবার জন্য নয়। আগামী ইলেকশনে দলে পাবার জন্য। আজিজকে মেম্বার পদের লোভও দেখায়। আজিজের জনপ্রিয়তা যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে তাতে মেম্বার তো বটেই চেয়ারম্যান পদেও সম্ভাবনা লক্ষনিয়। যার কারনে টনক নড়েছে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের। আজিজ সোজা "না" করে দিয়েছেন। বলেছেন, "দেখুন আমি একজন সাধারণ মানুষ, আমাদের গ্রামে কখনও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। আপনি পরপর তিনবার চেয়ারম্যান হয়েছেন। তবু তেমন কিছুই করতে পারেননি। গ্রামের লোক আপনার কাছে অনেকবার গিয়েছে এই রাস্তাটা পাকা করার জন্য। আমিও গিয়েছি। কোন উপকার পাইনি। অবশেষে আমরাই একটা সমাজকল্যান সংস্থা খুলি। যেহেতু উদ্যেগটা আমারই ছিল তাই আমাকে সভাপতি করা হয়েছে। কিন্তু এখানে কারও অবদানই ছোট করে দেখার নয়। অবশেষে এলাকার সবার সম্মিলিত সহায়তায় আমরা এই রাস্তাটা পাকা করেছি। আমার একার কোন নেতৃত্ব নেই এখানে। এমনকি আমি এখানে নেতা হতেও আসিনি। আমার চেয়েও অনেক বিজ্ঞ আর মুরবি্ব লোকেরা আছেন।
-দেখো মেম্বার হলে তো তুমি আরও উন্নয়ন করতে পারবে তোমার এ গ্রামের। তুমি মেম্বার পদে দাঁড়ালে পাশ করার ব্যাপারে তোমার কোন চিন্তা করা লাগবেনা।
-ভাই, আমি নিজে রাজনীতি করিনা, সেটা পছন্দও করিনা। অন্তত আমাদের দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি। আমি জানি সব মেম্বার চেয়ারম্যান এক। আমি যদিও মেম্বার হই তবে আমিও তাদের মতই হবো। অযথা আমাদের সংস্থা একজন সদস্য হারাবে। আমি সেটা চাই না।
-ছি ছি তুমি এটাকে রাজনীতি বলছো কেন? নিজের গ্রামের উন্নয়নের কথা ভেবে রাজি হয়ে যাও। তাছাড়া তোমার এ গ্রামের প্রতি আমারও ব্যক্তিগত মায়া কাজ করে। এ গ্রামেই আমার শ্বশুরবাড়ি তুমি তো এটা জানো। তোমরা আমার কাছে গিয়েছিলে। আমি তো কখনো করবোনা বলিনি। এসব কাজের আগে কিছু নিয়ম কানুন আছে। কিছু সিস্টেম আছে। এসব না করেই তো আর কাজে হাত দেয়া যায় না। তুমি তো আমাকে সে সময়ই দিলেনা।
-দেখুন আপনি আমকেই টার্গেট করে কথা বলছেন। এসব কাজ কখনোই আমার একার সিদ্ধান্তে হয়নি। আমি আপনাকে আগেই বলেছি আমার চেয়েও অনেক মুরবি্বরা আছেন। সবার সিদ্ধান্তেই আমরা আমাদের পরিবর্তন করতে পেরেছি। আর আমার মনে হয় কোন গ্রামের এটুকু রাস্তা করার জন্য এক চেয়ারম্যানের তিন বছর লেগে যায় না। সে যত বড়ই সিস্টেম করতে হোক না কেন।
আজিজের কথায় কিছুটা রাগান্বিত ভাব চলে আসে। শেষের দিকে উঁচু স্বরেই কথাগুলো বলে ফেলেন।
-দেখো তোমার সাথে কথায় পারবোনা। তবে আমি বলবো আরেকবার ভেবে দেখো। সেটা তোমার আমার দুজনরই উপকার হবে।
এখানেই শেষ নয়। এরপরও চেয়ারম্যান কয়েকবার লোক পাঠায়। কখনো নিজে আসে। কিন্তু আজিজের প্রতিবার একই উত্তর ও একরখা ভাব দেখে চেয়ারম্যান তাঁকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যেতে থাকে।

দুপুর গড়িয়ে গেলেই হাটুরে দলের যাতায়াত শুরু হয়ে যায়। ক্ষেত পেরিয়ে কাঁঠাল আর আমগাছের ছায়াঘেরা বাগান। । নিচে পাতার ফাঁক দিয়ে আসা টুকরো রোদেরা খেলা করে। । সারি বেঁধে হাটুরের দল হেঁটে যায়। হাটবারে আজিজ একটু আগেই দুপুরের খাবার খেয়ে বেরিয়ে যান। গিয়ে আড়ত থেকে কলাই বা কখনো জব কিনে হাটে পাইকারি বিক্রি করেন। এরপর আর কাজ থাকেনা। সন্ধ্যা না হলে বাড়ি ফিরতেও ইচ্ছে করেনা। পাশে কালুর ছোট চায়ের স্টলে বসে চা খান। পরিচিত অনেকের সাথেই দেখা হয় সেখানে।

পারভীনকে একটু সকাল সকাল রান্না সেরে ফেলতে হয়। কাঁটাশাক আর আলু টমেটোর সাথে টেংরা মাছ। আজিজ মেয়েকে নিয়ে খেয়ে নেন। পারভীন একটু পরেই খায়। তাড়াতাড়ি রান্না করার কারনে গোসল হয়না তার। রান্না করে ভাত তরকারী বেড়ে দেয়। ঘরে উঁচু করে টাঙানো তার থেকে শাড়ি কাপড় নামিয়ে নিয়ে বেরিয়ে যায় গোসলে। ফিরে আসতে আসতে বাবা মেয়ের খাওয়া হয়ে যায়। আজিজ বেরিয়ে যান। নুরি শুয়ে পড়ে। পারভীন ভেজা কাপড়গুলো রোদে মেলে দিয়ে চুল শুকানোর জন্য কিছুক্ষন রোদে বসে থাকে। চুল সিঁথি করে খেতে বসে। নুরি ততক্ষনে ঘুমিয়ে পড়ে। খাওয়া শেষ করে উঠতে উঠতে তিনটা বেজে যায়। ঘর পরিস্কার করে। আলনায় কাপড়গুলো গুছিয়ে রাখে। সেলাই মেশিনে টুকটাক কাজ থাকলে তা সেরে ফেলে। এরপর সেও বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। ঘুম হয়না তার। একটু পরেই উঠে পড়তে হয়। বিকালে উঠানে বসে মেয়ের চুল বেঁধে দেয়। ঝাড়ু দেয়। নানা কাজ।

সন্ধ্যাবেলায় আজিজ হাট থেকে ফিরে আসেন। বাবাকে নিয়ে পড়তে বসে নুরি। আজিজ মেয়েকে যত্ন করে পড়ান। স্বপ্ন দেখেন মেয়েকে অনেক বড় করার। পাশের বাড়ির শরিফা বা শিউলির মত ছোট বয়সেই মেয়ের বিয়ে দিতে চান না। একজন আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবেন তাকে। একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়ে তিনি গর্বিত। বাবার আদর্শ আর দেশপ্রেম তাঁর মধ্যেও আছে। মেয়েকেও নিজের আদর্শে গড়ে তুলতে চান। মুক্তিযুদ্ধে কত নারী যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। দেশমুক্তির পেছনে তাদের অবদান কোন অংশে কম নয়। তাদের সেই ত্যাগ সেই দেশপ্রেমের চেতনা মেয়ের মাঝেও ফুটিয়ে তুলতে চান। মেয়েকে তাই মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনান। নুরি সেইসব কথা শুনে আর উৎসাহিত হয় দেশের জন্য কিছু করার। বাবার কথায় দেশমাতাকে আরো চেনে নুরি, আরো ভালোবাসে আমাদের এই তারা ভরা আকাশ। সোনালী জোছনার মেঘ। নুরি পড়ায় মন দেয়।

দূর থেকে ঝিঁ ঝিঁ পোকারা ডেকে যায়। হঠাৎ হঠাৎ গ্রাম্য কুকুরের দু একটা ঘেউ ঘেউ। মেঠো পথে হাটুরের দলের হেঁটে যাবার শব্দ। তাদের মাঝে টুকটাক কথা। দূরের কোন ঘরে যেন ঝগড়া লেগেছে। ছোটবাচ্চাটার কান্নার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। তাকে ধরার কেউ নেই। পাশের ঘরে স্বামি-স্ত্রীর মাঝে চাপা স্বরের কথা। সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে বলে পাখিদের কলরব আর নেই। তবে মাঝে মাঝে রাতজাগা পাখিরা ডেকে যায়। বাদুড়রা গাছের হালকা ঝুলন্ত পাতায় বসতে গিয়ে খোসে পড়ে। বাঁশবাগানের শনশন শব্দ শিহরীত করে দেহমন। এইতো আমার দেশ। এই আমাদের গ্রাম, সরল শ্যামল ভালোবাসা। মায়ের হাঁসির মতই সি্নগ্ধতা।

ভোর না হতেই চিৎকার আর ডাকাডাকি শুনে আজিজের ঘুম ভাঙে। বাইরে বের হতেই দেখেন ক্ষেতের কামলা, মনু।
-কিরে কি হয়েছে? এত রাতে ডাকাডাকি শুরু করেছিস কেন?
মনু হাঁপাতে হাঁপাতে খুঁটির বাঁশ ধরে বারান্দায় বসে পড়ে। বলে, "সব শেষ"।
আজিজ অবাক হয়। কপাল জড়ো হয়ে আসে। বোঝার চেষ্টা করেন মনু কি বলতে চাচ্ছে।
মনু আবার বলে, "চাচা ক্ষ্যাতে কেটা জানি আগুন দিছে"।
-কি বলিস? চিৎকার দিয়ে ওঠেন আজিজ।
-হঁ্যা চাচা, চেঁচামেচি শুইন্যায় উঠ্যা দেখি এ ঘটনা।

আজিজ মনুকে নিয়ে দ্রুত হেঁটে যায় গমক্ষেতে। মনে হয় যেন পা দুটো ভারি হয়ে আসছে। গিয়ে দেখেন সবুজ সেই ক্ষেত ছায় হয়ে গেছে। তখনো দু এক যায়গায় আগুন জ্বলছে। আরও কিছু কামলারা জড়ো হয়ে বাঁকি আগুনটুকু নেভানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। আজিজ আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেননা । শিশুর মত কান্না জুড়ে দিয়ে বসে পড়েন। ততক্ষনে গ্রামের আরো কিছু লোক এসে জড়ো হয়েছে। নানা জনের নানা কথা। আজিজের কাছে জানতে চায়, কে করতে পারে এ কাজ? আজিজের বুঝতে বাঁকি থাকেনা কে করেছে এই কাজ । তবু তিনি কোন কথা বলেননা। শুধু দুচোখ মেলে চেয়ে থাকেন ধু ধু ছায়ের মরুভুমির দিকে। আজান পড়ে আসে। লোক সমাগম বাড়তে থাকে। গুনগুন থেকে হৈ হুল্লোড়ে রূপ নেয় কথা বার্তা। তবু আজিজের কানে যেন নিস্তব্ধতা। চোখের সামনে আাঁধার এক রাজ্য।
আজ সকালে নুরি মুখে ব্রাশ নিয়ে আসেনি এই মাঠে। সে এসেছে মায়ের হাত ধরে। মায়ের কান্নার সাথে সেও স্তব্ধ হয়ে গেছে। এই ভোরবেলা সে কখনো একসাথে এত মানুষ দেখেনি এই যায়গায়। পুবাকাশে চেয়ে দেখে লাল গোলাকৃতি সূর্য উঠেছে। সে খুঁজতে থাকে সেই সবুজ ক্ষেত। শুনতে পায় গাছে গাছে পাখিদের কলরব। সে খোঁজে তার ছড়ার লাইন। নুরি এগিয়ে যায় বাবার দিকে। আজিজ মেয়েকে বুকে টেনে ডুকরে কেঁদে ওঠেন। নুরি যেন থমকে যায়।

আজ সেই কচি হাত সবুজ শিষের ছোঁয়া পাবেনা। আজিজ ভাবতে থাকে ঘৃণ্য রাজনীতির এই দেশে কি করে বেড়ে উঠবে নুরি। তার কি অপরাধ? সে কেন বঞ্চিত হবে সবুজের মাঝে হারিয়ে যাবার অধিকার থেকে। নুরির মাঝে যে শ্যমলতার কচি চারাটা গজিয়ে উঠছিল তা যেন কে মাড়িয়ে দিল। যে মুক্তির চেতনা নিয়ে সে বেড়ে উঠবে তা আজ কলঙ্কিত। নুরি হয়তো জানেনা যে মায়ের কোলে সে বেড়ে উঠছে সেই কোলেই বাস করছে ভয়ঙ্কর চিওড়। কিন্তু যখন জানতে পারবে। সে কি থমকে যাবে না? সে জানে না তার আকাশে শুধু সোনালী জোছনাই নয় মাঝে মাঝে কিছু ভয়ঙ্কর উল্কা ছুটে আসে। ভষ্ম করে দেয় সবকিছু। ধুসর করে দেয় সবুজ মাঠ। আমরা হারিয়ে ফেলি পতাকার রং। এ এক বিকৃত রূপ আমাদের স্বাধীনতার। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা জ্বালিয়ে দিচ্ছে ভবিষ্যৎ কর্ণধারের শ্যামল সম্ভাবনা।

আজিজের চোখ মুখ শক্ত হয়ে ওঠে। দুই হাত দিয়ে অশ্রু মুছে ফেলেন। না শুধু নিজের ক্ষেতের কথা ভেবে কান্না নয়, ভাবতে হবে নুরির কথা। তার ভবিষ্যতের সম্ভাবনা কখনোই নষ্ট হতে দেয় যাবে না । এখনই সময় এই বিকৃত রাজনীতি সমূলে উৎপাটন করা। মেয়েকে নিয়ে তিনি তাকিয়ে থাকেন পুবাকাশের রাঙা সেই সূর্যের দিকে। তিনি সেখানে দেখতে পান শহীদের রক্ত। পাখিদের কুজন আর সেই লালিমা যেন তাঁকে সেই কাজে তাড়া দিয়ে ওঠে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিলন বনিক সুন্দর একটি গল্প..ভালো লাগলো...সেই সাথে শুভ কামনা.....
শাহ আকরাম রিয়াদ ভাল লাগল... আপনার জন্য শুভ কামনা থাকল...
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি থুব ভালো লাগলো গল্পের কাহিনী এবং নির্মান শৈলী সব মিলিয়ে দারুন একটা গল্প....সায়েম....আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ......৫
আহমেদ সাবের গল্পের নামের "সাধীনতা" শব্দটা "স্বাধীনতা" হবে। সেটা শুদ্ধ করে দেবার জন্য গল্প-কবিতা কর্তৃপক্ষকে বার্তা পাঠান।
আহমেদ সাবের গল্পের প্রথম কয়েক লাইন পড়ে ভাবিনি, এমন চমৎকার একটা গল্প পড়তে যাচ্ছি। আমাদের বিকৃতমনা রাজনীতিবিদদের আসল চেহারা বিশ্বস্ত ভাবে ফুটে উঠেছে গল্পে। আজিজের মত মানুষেরা, যারা দেশের কল্যাণ চায়, তাদেরকে পড়তে হচ্ছে চেয়ারম্যান সাহেবদের মত অসৎ রাজনীতিবিদদের রোষানলে। এমন সুন্দর একটা গল্পে পাঠক নাই কেন বুঝতে পারলাম না।
Abu Umar Saifullah অপূর্ব একটি গল্প
ধন্যবাদ, আরো ভালো করার চেষ্টা থাকবে
Lutful Bari Panna প্রথম গল্পেই বাজীমাত। চমৎকার গল্প।

০২ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪