আঁখির পানে চেয়েছিলে

ঈর্ষা (জানুয়ারী ২০১৩)

সানোয়ার রাসেল
  • ১৭
  • ১৪
।।নবনী।।
বৃষ্টি ধরে গেছে খানিক আগে। পিচের রাস্তাটা ভিজে চুপসে আছে। বৃষ্টি থেমে গেছে যদিও, আকাশটা এখনো মেঘথমথমে। রেইনট্রিগুলো এখনো টুপটাপ জল ঝরিয়ে যাচ্ছে। কি আস্তে, নিঃশব্দে সন্ধ্যাটা নেমে এলো নবনীর ছোট্ট ঘরের জানালাটার বাইরে। এমনি দিনের শেষ আলোর মত নিঃশব্দে ধীরে চলে যেতে হবে। যাওয়াটাই কি তবে শেষ কথা? বসন্তের জন্মদিনে আর কি ফেরা হবে না? দীর্ঘশ্বাস ফেলে নবনী বাম চোখের কোণে জমা অশ্রু মুছলো বাম হাতের চেটো দিয়ে। ইদানীং সে প্রায়ই এইসব আনসান ভাবনা ভাবে; ভাবে না বলে বরং বলা যায় আনমনেই কত ভাবনা যে একাই আসে, আবার চলে যায়, মাঝে থেকে অস্থির হয় নবনী, ষোড়শী নবনী,কিশোরী নবনী, প্রথম বর্ষার জলস্পর্শ পেয়ে বেড়ে ওঠা কলমীলতার মতন নবনী।

আজকাল আচমকাই তার বুকটা হু হু করে ওঠে। ঝলমলে রোদেলা শুনশান দুপুরে, কিংবা দুপুর আর বিকেলের সন্ধিক্ষণে বাবা মায়ের বিশ্রাম নেবার সময়টায় সে যখন পড়ার টেবিলে বই সামনে নিয়ে বসে, অথবা আজকের এই সন্ধ্যাটার মতো কোন একাকী সময়ে তার মনের ভিতর একটা ডাহুক ডেকে ওঠে। আর তখনই বইয়ের পাতাগুলো ফাঁকা হয়ে যায় আর, ষোড়শী নবনী, কিশোরী নবনী, প্রথম বর্ষার জলস্পর্শ পেয়ে বেড়ে ওঠা কলমীলতার মতন নবনীর মাথায় ভাবনাগুলো আসে, যেগুলো আগে কখনো ভাবেনি সে, অন্ততঃ সেই ছেলেটার সাথে দেখা হওয়ার আগে!
।।শফিক।।
টাউন হলের সামনে চায়ের দোকানে, যেখানে রুবেল, বাচ্চু, সবুজরা বসে আড্ডা মারছে সেদিকে মন নেই শফিকের। সে তার রাইডার সাইকেলটাকে স্ট্যান্ড করিয়ে তাতে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর এক নজরে কলেজের গেইটটার দিকে তাকিয়ে আছে। সময়টাকে তার খুব প্রলম্বিত মনে হচ্ছে, যদিও এরকম অপেক্ষার মধ্যে বেশ একটা উপভোগ্য কিছু আছে বলেও শফিকের কাছে মনে হয়। রুবেল তাকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করে যে সে চা খাবে কি না। উত্তরে সে গলা দিয়ে এমন একটা আওয়াজ করে যার মানে হু বা উহু বা দুটোর কোনটাই নাও হতে পারে আর যা শুনে রুবেল বা বাচ্চু বা সবুজ কে যেন রোমিও না মজনু কি একটা বলে টীপ্পনি কাটলো তা সে খেয়ালও করে না। আপাতত তার সমস্ত মনোযোগ কলেজের গেইটটার দিকে। যে দিক দিয়ে একটু পরেই বের হবে সে, সেই এক টুকরো শান্ত সবুজ প্রকৃতির মত মেয়েটি যাকে সে আজ কদিন ধরেই অনুসরন করে আসছে। ভাবতে ভাবতেই প্রথম দেখার দিনটির কথা মনে পড়ে শফিকের।
আনন্দমোহন থেকে সাইকেলে করে বাচ্চুকে ক্যারিয়ারে নিয়ে সার্কিট হাউজ পার্কে যাওয়ার সময় টাউন হল মোড়ে আসতেই হঠাত্‍ চোখ আটকে গেল একটা চলন্ত রিকশার দিকে। শফিকের মনে হল এক টুকরো শান্ত সবুজ প্রকৃতির উজ্জল একটা আলো চলে যাচ্ছে তার সামনে দিয়ে। দৃষ্টি যেন চুম্বকের মত টেনে নিয়ে গেল তাকে, সেই রিকশার পিছনে, হুডের ফাঁক দিয়ে আবছাভাবে দেখা যাচ্ছে দুইটি বেণী, লাল হেয়ার ব্যান্ডে বাঁধা। সাইকেল নিয়ে সেই বেণীযুগলের পিঁছু পিঁছু সে গিয়েছিল কাঁচিঝুলি পর্যন্ত, বাচ্চুর বার বার জিজ্ঞাসাকে পাত্তা না দিয়ে, চিনে এসেছিল তার বাসার গলি। এপ্রন দেখেই বুঝতে পেরেছিল কোন কলেজের ছাত্রী সে।
এরপর থেকেই নানা ছুতায় বন্ধুদের নিয়ে ছুটির সময়টায় ঠিক চলে আসে টাউন হলের সামনে। বন্ধুরাও এখন বুঝতে পেরে গেছে কেন শফিকের কাছে কলেজ রোডের চে টাউন হলের টংয়ের দোকানের চা এত ভাল লাগে। এরপর আরো একদিন, মেয়েটি যখন তার এক বান্ধবিসহ কলেজ থেকে রিক্সা না পেয়ে মুমিনুন্নেসা পর্যন্ত হেঁটে যাচ্ছিল, তখন শফিক ও তার বন্ধুরা হাত দশেক দূর থেকে তাদের পিঁছু নিচ্ছিল, আর বাচ্চু না রুবেল না সবুজ কে যেন যেও না ক একলা না এই ধরনের কি একটা গানের কলি ওদের শুনিয়ে শুনিয়ে গেয়ে উঠেছিল তা শফিকের মনে না থাকলেও বান্ধবির কনুইয়ের গুঁতো খেয়ে মেয়েটি যে ঘাড় সামান্য কাত করে পিছনে চকিত চেয়েই আবার হাঁটা দিয়েছিল তা স্পষ্ট মনে আছে শফিকের।এরপর আর বন্ধুদের কাছে সব কিছু জলবত্তুরলং না হওয়ার কোন কারণই ছিল না এবং বন্ধুবান্ধবদের চাপাচাপিতে ও ব্যাপক অভয়বাণী শুনে শফিকেরও মনে হতে থাকে এবার আর মনের কথাটি না বললেই নয়। অন্তত বন্ধুদের সামনে সে যে কাপুরুষ নয় তা প্রমান করে না দিয়ে আজ সে ফিরবেই না। অতএব, হাতের তালুর ঘাম গোপনে শার্টে মুছে সে আজ দাঁড়িয়ে আছে সাইকেলে ঠেস দিয়ে। পিছন থেকে বাচ্চু না রুবেল না সবুজের গলা নিঃসৃত " ঐ যে বের হচ্ছে " শুনে শফিকের ভাবনার তার ছিড়ে যায় আর তখনই দেখতে পায়, হ্যাঁ, ঐ যে, বের হচ্ছে, সেই মেয়েটি, যাকে আজ শফিকের মনের কথাটি বলতেই হবে।


।। নবনী ।।
গেইট থেকে বের হয়ে ফুটপাত ধরে হাঁটছে নবনী। সাথে তার বান্ধবী তন্বী। কিছুদূর এগিয়েও যখন রিকশা পায় না ওরা ঠিক তখনই নবনীর চোখে পড়ে, সেই ছেলেটি! তার দিকেই তাকিয়ে আছে, রাস্তার ওপাশ থেকে। আরো কয়েকটি ছেলে তাকে ঠেলছে আর হাসাহাসি করছে, ওর বন্ধু বলে নবনী ওদের সনাক্ত করে। নবনী তন্বীকে বলে আরো কিছুদূর এগিয়ে গেলে হয়তো রিক্সা পাওয়া যাবে আর তন্বীও একমত হয়। আসলে নবনী দেখতে চায় সত্য
িই ছেলেটি তার পিঁছু নেয় কি না। যদিও সে ঠিক করতে পারে না এটা ভাল হচ্ছে না খারাপ, কিংবা ছেলেটি সত্যিই পিঁছু নিলে সে কি করবে এই সিদ্ধান্তেও সে পৌঁছতে পারে না, তবু সে দেখতে চায়। অনেকক্ষণ হাঁটার পর সে তন্বীকে বলে পিছনে কোন খালি রিক্সা আছে কি না তা দেখার জন্য এবং তন্বী পেছনে কোন রিক্সা দেখতে না পেলেও সেই ছেলেটিকে সাইকেলসহ হেঁটে আসতে দেখতে পায় যা সে নবনীকে জানায়। নবনী প্রথমে অবাক হবার ভান করে এবং পিছনে না তাকিয়েই তন্বীকে জিজ্ঞেস করে কি করা যায়। তন্বী আবার একটু ডোন্ট কেয়ার টাইপের মেয়ে এবং সে নবনীকে বলে তাদের আরো ধীরে হেঁটে ব্যাপারখানা কি তা দেখা উচিত। অতএব নবনী তার হাঁটার গতি শ্লথ করে এবং একসময় বুঝতে পারে ছেলেটি ওদের ঠিক পিছনে চলে এসেছে। যখন নবনী শুনতে পায় ছেলেটি পেছন থেকে বলছে " এক্সকিউজ মি " তখন এমনভাবেই নবনীর চলা থেমে যায় যেন এই কথাটি শোনার জন্যই সে অপেক্ষা করছিল আর তাই সে চোখে প্রশ্ন নিয়ে পিছন ফিরে তাকায়।
- আমার নাম শফিক। আ- আপনার সাথে একটু কথা ছিল।
নবনী যখন " আমার সাথে? কি কথা, বলুন?" বলবে বলে মনে মনে ঠিক করে ঠিক তখনই শুনতে পায় তন্বীর চিল চিত্কা রঃ
- আশ্চর্য লোক তো আপনি! সেই তখন থেকে ফলো করে চলেছেন আমাদের। রাস্তাঘাটে মেয়ে দেখলেই কথা বলতে ইচ্ছে করে, না? আপনার মতো ছেলেরা কি বলতে পারে তা আমার ভালমতোই জানা আছে। চেনা নেই জানা নেই রাস্তা আটকে কথা বলতে এসেছে। এই নবনী, তুই একে চিনিস?
নবনী হতভম্বের মত দুদিকে মাথা নাড়ে।
-"শুনুন।" শফিক বোঝাবার চেষ্টা করে।
- "আর একটা কথাও না।" তন্বী থামিয়ে দিয়ে বলে। " এক্ষুনি এখান থেকে কেটে না পড়লে আমরা কিন্তু লোক ডেকে সিনক্রিয়েট করবো । এই রিক্সা।" বলে নবনীর হাত ধরে টেনে রিক্সায় উঠে বসে।
পুরো ঘটনা এত দ্রুত ঘটে যায় যে নবনী কিছুই বুঝে উঠতে পারে না। কেবল তার মন বলতে থাকে, ঠিক হল ?

।।শফিক।।

আনন্দমোহনের ক্যান্টিনে বসে চা খেতে খেতে শফিক ভাবছিল সে দিনের কথা। বুকে এত সাহস সঞ্চয় করে সেদিন সে কথা বলতে গেল মেয়েটির সাথে, আর কি থেকে যে কি হয়ে গেল! মেয়েটির বান্ধবীর কথা শুনে সে আরও নার্ভাস হয়ে পড়েছিল, তার মুখে কোন কথা আসছিল না। কিন্তু সে তো তেমন কিছুই বলে নি! তবে ওরা এমন রাফ বিহেইভ করল কেন? না, ওরা নয়। নবনী তোয কিছুই বলে নি! আহ, কি সুন্দর নাম, নবনী, ঠিক যেন নামট
া বললে পৃথিবীতে ঐ একটা চেহারাই সবার মনে হবে এমনভাবে মানিয়ে গেছে ওর সাথে। নাহ, এই মুহুর্তে নবনীর বান্ধবীকে ক্ষমা করে দিল শফিক। আর যাই হোক, মেয়েটির কারনেই তো সে নবনীর নামটা জানতে পেরেছে। আচ্ছা, নবনীও কি তাকে খারাপ ছেলে ভাবছে? তার বান্ধবী এত কথা শুনিয়ে দিল, কই, সে তো একটা টু শব্দও উচ্চারণ করল না! তবে কি ওর বান্ধবীর কথাই ওর মনের কথা? কিন্তু নবনীর চোখ তো তা বলে নি! তার চোখে শফিক দেখেছে বিহ্বলতা, কেমন যেন শূণ্যে ভেসে বেড়ানো দৃষ্টি। নবনীর চোখ নিয়ে ভাবতে ভাবতে যখন শফিক কল্পলোকে হারিয়ে যেতে বসেছে তখনই শার্টের কলারে হ্যাঁচকা টান খেয়ে তার সম্বিত ফিরল। দেখল কাকতাড়ুয়ার মত চেহারার একটি ছেলে, যাকে সে আগেও দেখেছে হাতভাঙ্গা অপুর পিছে সাগরেদি করতে, তার কলার ধরে টানছে আর বলছে "অপু ভাই তরে ডাহে পুস্কুনির পাড়"।
শফিকের বুক ধক করে উঠে। অপু, হাতভাঙ্গা অপু, যে কিনা শুধু কলেজেরই নয়, সারা ময়মনসিংহের ত্রাস, সেই অপু কেন তাকে ডাকবে? সে তো কোন রাজনীতি বা দলাদলি করে না! কেন ডাকছে জানতে চাওয়ার সাহসও নেই তার। সে কাকতাড়ুয়ার সাথে পুকুরপাড়ে যায়। দেখে, অপু, আরও কয়েকজন কলেজরোডের গুণ্ডা, যারা তার কামলা বলে পরিচিত, সাথে নিয়ে পুকুরঘাটে বসে আছে। শফিক আসামীর মত দাঁড়ায় সেখানে। অপু তার ভাঙ্গা হাতটা ভীতিকরভাবে প্রদর্শন করে লাল চোখে কটমট করে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেঃ
- নাম কি?
- জ্বি, শফিক।
- কুন ইয়ার?
- ফার্স্ট ইয়ার।
- আমারে চিন?
- জ্বি ভাই।
- শুনলাম আইজকাল নাকি মাইয়াগো পিছে টাংকি মারো? রোমিও অইছো ?
- কি বলেন ভাই! এইসব আপনেরে কে বলছে?
- মনির, অর দুই গাল দুইডা চটকনা দে।
বলার সাথে সাথে এলোপাথাড়ি কিল, চড়, ঘুষিতে মাটিতে পড়ে যায় শফিক। মনির তাকে আবার তুলে দাঁড় করায়। শফিকের মাথা ভোঁ ভোঁ করছে। সে কিছু ভাবতে পারছে না।
- এইবার ক, পরশু নবনীরে ডিস্টার্ব করছিলি? আই লাবু কইছিলি?
সে আই লাবু না বললেও মাথা নাড়ে। এদের সাথে তর্ক করে লাভ নেই সে বুঝতে পারে।
- ফার্স্ট ইয়ারেই প্রেম উথলাইয়া উঠছে, না? আর যুদি কুনদিন হুনি তুই নবনীর পিছ পিছ গেছোস তাইলে পাও বাইঙ্গা আতো দরাইয়া দেম, গইর ফাইরা গইর ফাইরা বাইত যাবি। অহন সবার সামনে কান দর আর ক নবনী আমার বইন।
- নবনী আমার বোন। শফিক কানে ধরে বলে।
- ক আর কুনুদিন তারে ডিস্টাব করতাম না।
- আর কোনদিন ডিস্টার্ব করব না।
- হুন, তুই বালা মাইনসের পুত, লেহাপড়া করতে আইছস লেহাপড়া কর। তগ নামে মাইয়ারা বিচার দেয় ক্যা? যা, সুজা বাইত যা, আর যা কইলাম মনো থাহে য্যান।
চলে আসে শফিক। তার গাল লাল হয়ে আছে আঘাতে, আর কানটা লাল হয়ে আছে লজ্জা আর অপমানে। ছিহ্। নিজেকে ছোট মনে হচ্ছে। সে কি এতই বাজে যে নবনী তার নামে অপুর মত মাস্তানের কাছে নালিশ করেছে! নিজের উপর ঘৃণা বোধ করে শফিক আর ঘৃণা বোধ করে ভালবাসা নামক অনুভূতির উপর। ভালবাসা তবে সত্যিই বাজে! অক্ষমতার এক অসহায়ত্ব তাকে গ্রাস করে। বাড়ির পথে হাঁটতে হাঁটতে শফিক ভাবে " তবে তুমি যে আমার আঁখির পানে চেয়েছিলে আমি কি তার ভুল মানে করছিলাম, সবই কি ভুল?" বিষণ্ন আকাশের দিকে তাকিয়ে শফিক ভাবে " হ্যাঁ, সব ভুল, সবই মিথ্যে, সে আর কখনই সেই ভুল চোখের সামনে দাঁড়াবে না।"

।।নবনী।।

চিঠিটা পেয়ে খুবই অবাক হয় নবনী। তন্বী তাকে চিঠি লিখেছে! দীর্ঘ ছয়টি বছর পর! তার একসময়ের প্রাণের বান্ধবী, যে কি না হঠাত করেই অচেনা হয়ে গিয়েছিল নবনীর কাছে, সেই তন্বী তাকে চিঠি লিখেছে! দেরি না করে পড়তে শুরু করে সে।
নবনী,
জানি চিঠি পেয়ে অবাক হবি। আরো জানি ভালই আছিস। তাই আর কুশল জিজ্ঞেস করলাম না। ভাবছিস যেই আমি আজ ছয়টি বছর তোকে এড়িয়ে চলেছি, কথা পর্যন্ত বলিনি, সেই আমি কেন আজ চিঠি লিখলাম? না লিখলেও হয়তো হত। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তুইও পাল্টেছিস, আমিও। আর জীবনের এ পর্যায়ে এসে মনে হচ্ছে আজ যদি কথাগুলো না বলি তবে বাকি জীবনটা নিজের কাছে অপরাধী হয়ে থাকব।
তোর কি মনে পড়ে কলেজে পড়ার সময় একটি ছেলে আমাদের রাস্তা আটকেছিল বলে আমি খুব অপমান করেছিলাম। আর তাই, সেই অচেনা একটা ছেলের জন্য তুই, আমার আশৈশব বান্ধবী, আমাকে যা তা বলেছিলি। বলেছিলি আমি যেন জীবনে তোর সাথে কথা না বলি। বিশ্বাস কর, সেই অল্প বয়সের আমি তখন বুঝতে পারিনি তোর মনের অবস্থা। কেবলই মনে হচ্ছিল একটা উটকো ছেলের জন্য তুই আমাকে অপমান করছিস। জানিস, খুব রাগ হয়ে গেল ছেলেটার উপর, হয়তোবা তার সাথে ঈর্ষাও ছিল। মাথা গরম করে সেদিনের ঘটনাটা বাড়িয়ে বলেছিলাম বড় ভাইয়ার কাছে। ভাইয়া সব শুনে আনন্দমোহনের এক নেতার কাছে বিচার দেয়। শুনেছি ওরা ছেলেটিকে ডেকে শাসিয়ে দিয়েছিল। আর আমিও রাগ করে তোর সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিই, যদিও তুই অনেকবার আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছিস। এছাড়া পড়ে মনের মধ্যে একটা অপরাধবোধও তোর সাথে কথা বলতে আমায় বাঁধা দিত। কিন্তু আমি বুঝতে পারতাম তুই অনেকদিন ক্লাশ শেষে ঐ ছেলেটার জন্য অপেক্ষা করতি। মনে মনে খুঁজতি তাকে। আমি ভয়ে আর কিছু বলিনি তোকে। পাছে তুই আমায় ঘৃণা করিস।
মেঘে মেঘে অনেক বেলা হল। তুই আজ সংসারী হয়ে সুখে আছিস। নিশ্চয় সেই ছেলেটার কথা তোর মন থেকে ফিকে হয়ে গেছে। সেদিনের সেই সব ছেলেমানুষির কথা চিন্তা করে তুই হয়তো এখন মনে মনে হাসিস। তাই আজ তোকে কথাগুলো বলে হাল্কা হতে চাইছি। জানি তুই তোর এই অধম বান্ধবীকে ক্ষমা করে দিতে পারবি। সেই সাহসেই এই চিঠি লিখা। ভাল থাকিস, সুখে থাকিস।
তোর অপরাধী বান্ধবী তন্বী।

চোখের কোণে জমে ওঠা জল মুছে নবনী। তন্বী জানেনা অনেক আগেই তাকে ক্ষমা করে দিয়েছে সে। সে ঘটনার পর আরো একদিন শফিকের সাথে দেখা হয়েছিল ওর। সেদিন শফিকই জানতে চেয়েছিল কি দোষ ছিল তার যে তাকে নবনী ওভাবে মার খাইয়েছিল। বলেছিল তার ভালবাসার কথা যা তখন মরে গিয়ে ঘৃণার ভূতে পরিণত হয়েছে। জল ছলছলে চোখে কথাগুলো বলেই ঝড়ের বেগে সাইকেল চালিয়ে চলে গিয়েছিল। আর কখনো সামনে পড়েনি। সেদিনও নবনী কোন কিছু বলতে পারে নি শফিককে। সে বুঝতে পেরেছিল এই ঘটনার পিছনে তন্বীর হাত আছে। ক্ষমা করে দিলেও আর তার সাথে আগের মত সম্পর্ক রাখার প্রবৃত্তি ছিল না নবনীর। শুধু প্রথম প্রেমের শুকিয়ে যাওয়া নদীর রেখার মতই ঘটনার স্মৃতি তার হৃদয়ে দাগ রেখে যায়। আর তার ভেতরের ডাহুকটা একদিন শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। নবনী জেনে যায়, আর কোন আঁখির পানে চেয়ে তার মনে প্রেম জাগবে না। চিঠিটা কুটি কুটি করে ছিড়ে সে টুকরোগুলো ভাসিয়ে দেয় বিষণ্ন বাতাসে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
স্বাধীন সাবলীল সুন্দর গল্প, েবশ ভাল লাগল।
ভালো লাগেনি ২৫ জানুয়ারী, ২০১৩
ধন্যবাদ, স্বাধীন।
ভালো লাগেনি ২৬ জানুয়ারী, ২০১৩
মিলন বনিক রাসেল ভাই..সুন্দর গল্প...কাহিনীর বুননটা আপনার গড়ল্পে জীবন ফিরিয়ে দিয়েছে...খুব ভালো লাগল....
ভালো লাগেনি ২০ জানুয়ারী, ২০১৩
ধন্যবাদ ত্রিনয়ন
ভালো লাগেনি ২০ জানুয়ারী, ২০১৩
ওবাইদুল হক অনেক ভাল লিখেছেন আর টাইটেল অনেক উপমা দেয়ে একেছেন অনেক শুবকামনা রইল প্রথম লেখায় । ভোট দিলাম প্রথমবার ।
ভালো লাগেনি ১৮ জানুয়ারী, ২০১৩
ধন্যবাদ ওবাইদুল ভাই, আপনাদের মতামত আর অনুপ্রেরণাতেই এই পথ চলা।
ভালো লাগেনি ১৮ জানুয়ারী, ২০১৩
মোঃ আক্তারুজ্জামান সাধারণ ভাবনাও বর্ণনা বা উপস্থাপনা গুণে অনেক অনেক সুন্দর হতে পারে বলে আমি মনে করি| আমার কাছে খুব ভালো লাগলো| শুভ কামনা|
ভালো লাগেনি ১৭ জানুয়ারী, ২০১৩
ধন্যবাদ আক্তারুজ্জামান। ভাবনাটা আসলেই খুব সাধারণ ছিল। :)
ভালো লাগেনি ১৭ জানুয়ারী, ২০১৩
জান্নাত সেতু ভালো লেগেছে। ভোট দিলাম।
ভালো লাগেনি ১৫ জানুয়ারী, ২০১৩
আহমেদ সাবের কোনটা ইভ-টিজিং আর কোনটা সত্যিকার প্রেম, বুঝা মুশকিল। তন্বী হয়তো নবনীর ভালো করতে চেয়েছিল তাই নিজের অজান্তে শফিকের সত্যিকারের ভালবাসার ভ্রূণকে হত্যা করেছে। যাক, সাবলীল লেখা। গল্পটা বেশ ভালো লেগেছে।
ভালো লাগেনি ১৫ জানুয়ারী, ২০১৩
ভাবছিলাম কখন সাবের ভাইয়ের একটা মন্তব্য পাবো........ধন্যবাদ সাবের ভাই।
ভালো লাগেনি ১৫ জানুয়ারী, ২০১৩
পন্ডিত মাহী গল্প এগিয়ে গিয়েছে সাবলীল ভাবে। তবে কার কোন পার্ট সেটি "নবনী" বা "শফিক" উল্লেখ্য না করলেই ভালো হতো বলে মনে হয়। ঈর্ষা আরো ঘনীভূত হবার দাবি রাখে গল্পটিতে। সামনে আরেকটি গল্প পাবার প্রতীক্ষায়...
ভালো লাগেনি ১৪ জানুয়ারী, ২০১৩
dhonnobad mahi vai, vobisshote apnar poramorshoti mathay rakhbo.
ভালো লাগেনি ১৫ জানুয়ারী, ২০১৩
মোহাঃ সাইদুল হক ভালো লাগলো গল্পটি। শুভ কামনা রইলো।
ভালো লাগেনি ১৪ জানুয়ারী, ২০১৩
মনোয়ার মোকাররম এই গল্পের অনবদ্য দিক হচ্ছে বর্ণনা শৈলী আর ভাষার ব্যবহার ...শুভো কামনা...
ভালো লাগেনি ১২ জানুয়ারী, ২০১৩
ধন্যবাদ মোঃ মনোয়ার মোকাররম।
ভালো লাগেনি ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
নিলাঞ্জনা নীল বাহ !! বন্ধু ভালই লিখলে !
ভালো লাগেনি ১০ জানুয়ারী, ২০১৩
যাক, শেষ পর্যন্ত তোমার চোখে পড়ল !
ভালো লাগেনি ১১ জানুয়ারী, ২০১৩
স্ব প্রণোদিত হয়ে চোখে পড়ালাম :)
ভালো লাগেনি ১২ জানুয়ারী, ২০১৩

০১ ডিসেম্বর - ২০১২ গল্প/কবিতা: ১২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪