কবি ঘুমিয়ে আছো? আমার কথা গুলো শুনতে পাচ্ছ? নিকষ কালো আঁধারের ভেতর বৃক্ষের বিদায়ী কণ্ঠ কবি স্বপ্নের ভেতর শুনতে পায়। সেই স্বপ্নের ভেতর দহন জ্বালাময় অতীতের গান ভেসে আসে। স্মৃতি ভরা গভীর বেদনায় মলিন ইতিহাস জেগে ওঠে।
কবি শুনছো আজ সকালে কাঠুরিয়া এসেছিল আমার দরদাম ঠিকঠাক করতে। হয়তো রাতের গভীরে ঘুম ভাঙ্গলে ওরা আমার বুকে করাত চালাবে। গতকাল তুমি আমার ছায়ায় কবিতা লিখেছিলে জাতীর বুকে চেতনা জাগাবার জন্য।
তুমি শৈশবে কতদিন স্কুলে ক্লাস শেষে আমার শাখা প্রশাখার নীচে দাঁড়িয়ে ইছামতী নদীর বাহারি স্রোত দেখতে। ফোটা ফোটা বৃষ্টি ঝরা পানিতে তুমি সাদেক, মান্নান, ওমর, হামিদ, আলম সহ আরো অনেকে বল খেলতে।
মান্নান, কালু, উত্তম দত্ত, কটু দা, বাচ্চু মামা অনেক আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে মাটির বুকে, নিবিড় ম্লান সময়ের স্মৃতিতে। বিলম্বিত আঁধারের প্রস্ফুটন নক্ষত্রের সাথে একদিন চাঁদ হাসতো, তোমাদের মাথার উপর। আমার দেহের নীচে তরুণ বর্ষার অনন্ত প্রেম, ইশারায় উঁকি দিত। অবিশ্রান্ত কমল বাতাসে বাউলরা গান গাইত আমার সবুজের মমতায়।
আমরা পরস্পর নিবিড় ভাবে জড়িয়ে থাকতাম শিশির ভেজা আদরে। কিছু কাল আগেও কাশেম, কটু, তাইজাল, বাঁশী, সুলতান, আক্কাজ, বাচ্চু, ফটিক, মতিন কুদ্দুসরা গাদন আর ডুগডুগ খেলতো, আবার কখনো বাতাবী লেবু দিয়ে দারুণ উৎসহে ফুটবল খেলতো আমার ছায়া ভরা এই স্কুল মাঠে।
নিবিড় স্বপ্নমগ্ন পাখিরা তখন গান গাইতো আমার শাখায়। তখন সবুজ পাতাগুলোর বুকে দহন বিরহ বিচ্ছেদ জাগাতো গভীর ভালোবাসার প্রেমে। আজ আমার বুকের ভেতর খুব কষ্ট। আমার শান্ত ডালপালার বিষণ্ণ কান্নায়, আগামী সকালে দহন আনবে। আমার দেহের আশ্রয়ে থাকা পাখি গুলো তাদের বাচ্চা নিয়ে কোথায় যাবে। আমার ভাষা পাখিরা বোঝেনা, আমি বারবার পাখিদের বলার চেষ্টা করছি, কিন্তু দুঃখের বিষয় পাখি আর আমার ভাষা এক নয়।
তুমি কবি তাই বৃক্ষের ভাষা বোঝো; জীবন বোঝো, গাছদের স্বপ্ন ভালোবাসা বোঝো। কবিরা চায় গাছ বেঁচে থাকুক পাখিরা চায় গাছ বেঁচে থাকুক। গাছদের হত্যা করে লাভ কি? এটা কেবল রূপের পরিবর্তন। এই পুরাতন খোলসের মায়া তোমার স্মৃতিকে ব্যথিত করবে। খুব ভোরে পাখিমাতা তার সন্তানদের রক্ষা করতে না পেরে বেদনায় কেঁদে উঠবে।
পাখি বাচ্চাদের মৃত দেহের উপর আমার শাখা প্রশাখা ঘুমিয়ে পড়বে। গাছের জীবন বেদনা শেষে মানুষের জন্য তৈরি হবে আনন্দ আসবাবপত্র। যেখানে প্রিয় নারী পুরুষ ঘুমিয়ে থাকবে। তুমি কবি তাই তোমার কাছে আমার আকুতি গাছদের রক্ষার জন্য তুমি লিখে যাও। সব কবিদের বলো তারা যেন গাছ রক্ষার জন্য লিখে যায়।
গাছ: গাছদের মৃতদেহ নিয়ে তোমরা আনন্দ কর। সুখের আসবাবপত্র বানাও তাতে তোমাদের জন্য আমাদের কল্যাণ কিন্তু মানুষ হিসাবে তোমারা বেশীর ভাগই অকল্যাণে লিপ্ত থাকো।
কবি: এটা মানুষের স্বভাব। কিন্তু সব মানুষই এক হয় না। কিছু কিছু মানুষ কল্যাণে লিপ্ত থাকে।
দেখোনা অনেক মানুষ বাগান করে সেখানে অনেক জাতের বৃক্ষ গড়ে তোলে। তোমাদের প্রতি ভালো বাসা গড়ে তোলে।
গাছ: আমাকে হত্যা করে তোমারা শুধু খোলস বা দেহ পাও, যা দিয়ে বিভিন্ন খাট পালং তৈরি হয়। কিন্তু মনে রেখো আমাদের দেহ দিয়ে খাট পালং তৈরির আগেই আমরা প্রকৃতির কোলে নতুন রূপে জন্ম লাভ করি। তাই আমাদেরকে হত্যা করে তোমরা শেষ করতে পারবে না। আমাদের বুকের ভেতর জেগে থাকে নতুন জন্মের শেকড়।
কবি: গাছ তোমারাও মরণশীল মানুষও মরণশীল। শুধু একটা গাছ আর একটা গাছকে হত্যা করে না। কিন্তু মানুষ মানুষকে হত্যা করে। মানুষে মানুষে যুদ্ধ করে শিশুদেরকে হত্যা করে, নারীদেরকে লাঞ্ছিত করে। কোন কোন ক্ষেত্রে নারীরাও ছলনাময়ী হয়ে ওঠে। তোমাদের ভেতর তো এমন নিষ্ঠুরতা নেই।
গাছ: কবি আমার ব্যথার বীজ থেকে জন্ম হয় প্রকৃতি। যার রঙ হয় সবুজ, নীল লাল সাদা বেগুনী হলুদ বাদামী। বাতাসে সে অক্সিজেন ছড়ায় তাতে তোমরা সুস্থ থাকো।
কবি: গাছ তোমাদের কল্যাণে মানুষ সব সময়ই উপকৃত হয়। তোমাদের কল্যাণের কথা কবিরা সব সময়ই লিখে যাবে।
গাছ: কবি তুমি পক্ষী মাতাকে বলো ওরা যেন ভোর হওয়ার আগেই নির্জন কোন স্থানে চলে যায়।
কবি: পাখিরা তো আমার ভাষা বোঝে না। এই বিক্ষুব্ধ জ্বালাময় রাতে পাখিরা ঘুমিয়ে আছে নতুন স্বপ্ন বুকে নিয়ে। কিন্তু ভোর হওয়ার সাথে সাথে ওরা কান্নায় জেগে উঠবে করাতের শব্দে।
গাছ: কবি আজ ভোরে পক্ষিমাতা দুঃখ দুঃখ বলে কেঁদে উঠবে। প্রভু রক্ষা করো প্রভু রক্ষা করো। কেউ শুনবে না, তবুও সে কাঠুরী করাত চালাতে থাকবে আমার দেহে।
কবি: অবাধ্য কাঠুরী সে অন্ধ। তার দিব্য নয়ন খোলে নাই, তাই তার প্রবৃত্তি দিয়ে সে কাজ করে যায়। একদিকে গাছের জীবন অন্যদিকে সুখের আসবাবপত্র। তার চোখের মধ্যে সুখের স্বর্গ।
গাছ: কবি তুমি আমাদের চেনো, যখন মাঝরাতে আমার শরীর থেকে সুগন্ধি ছড়ায় তোমার নির্জন গ্রাম ও নগর কোলাহলে দিবস ও রাত্রির মধ্যয়াসে আমার শরীর থেকে অক্সিজেন নিয়ে ওরা ঘুমায় আবার জেগে ওঠে।
কবি: গাছ এই গ্রামেই আমার জন্ম। আমার শরীরের মধ্যে অসংখ্য চারাগাছ আর অনেক ছোট ছোট নদী জেগে আছে। আমাদের শৈশব যৌবন এখন ক্লান্ত। যে নদীতে সাঁতার কাটতাম অসংখ্য কুমারী চুল বাঁধতো সে নদী গুলো আজ প্রায় মৃত।
গাছ:: কবি মানুষ তাদের নীল দংশনে ঘুমিয়ে আছে। যেন মরণ খেলায় মেতেছে নদী আর গাছ। গাছ ও নদীর কোন পরিত্রাণ নেই। মধ্য রাত গড়িয়ে যায় কবি স্বপ্ন দেখে, কত সুন্দর বিচিত্র নবীন শস্য ঝরে পড়ছে, আলো আর অন্ধকারের কুরুক্ষেত্রে।
মনে হচ্ছে উত্তপ্ত জীবন গুলো নিশিদিন পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত। যেন নিরাশ ভবিষ্যৎ বিরহ হৃদয় অবাক বিস্ময়ে ঘুরে ঘুরে একই বৃত্তে এসে মিশে যাচ্ছে। দীর্ঘশ্বাসের শব্দ যাযাবর পাখিদের গান নৈঃশব্দ্যের চেতনা আনে অনিবার্য মৃত্যুর ডাক। যেন সাগর উত্তাল এই রাত ভরা জোয়ারে জেগে আছে।
আকাশে রূপবতী চাঁদ আলো জ্বালায়, আলো নেভায় কি বিস্ময়। কবি গোপনে কানে কানে শোনে সে তরঙ্গ কথা। হৃদয়ের প্রেমে জমে থাকা শান্ত গোপনে স্পর্শ করে হঠাৎ শব্দময় খট খট আওয়াজে কবির ঘুম ভেঙ্গে যায়।
কম্পমান দুঃখের ভাঙ্গনে বিষাদের তীব্র যন্ত্রণা ভেসে আসে কবির কানে। কবি জেগে ওঠে এবং হাঁটতে থাকে। ততক্ষণে ঝাউ গাছটি মাটির বুকে ঘুমিয়ে পড়েছে বিষণ্ণ পৃথিবীর বুকে দীর্ঘ ব্যথার ধ্বনি দিয়ে।
জীবন ও মৃত্যু দুজনই মিশে গেছে এক হয়ে। ঈশ্বরের আলোকিত রঙে মিশে, তারা আবার জেগে উঠবে নদীর বাঁকে বাঁকে, ছোট ছোট পথে প্রগাঢ় বন্ধন আর বিচ্ছেদের যুগল প্রেমে।
২১ অক্টোবর - ২০১২
গল্প/কবিতা:
৯৫ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৫