প্রিয়তম সন্তান আমি তোমাকে বলছি তুমি আমার কথা শোন- তোমার বয়স একন নয় বছরের কাছাকাছি তুমি চতুর্থ শ্রেণিতে লেখা পড়া করছো তোমাদের পাঠ্য সূচিতে স্বাধীনতার কথা মুক্তিযোদ্ধাদের কথা জাতির ইতিহাসের কথা তেমনি লেখা নেই, লেখা নেই আমাদের পূর্বপুরুষের কথা। তুমি আস্তে আস্তে উপরের ক্লাসে উঠতে থাকবে আর ধীরে ধীরে সব ইতিহাসই জানতে পারবে জাতির মহানায়কের কথা, অগ্রনায়কের কথা মুক্তিযোদ্ধাদের কথা ও ত্রিশলক্ষ শহীদের কথা বৃটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের কথা ও তখনকার ইতিহাস অনাহারে উপবাসে জেগে থাকা মানুষের কথা আমার প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশের কথা- প্রিয়তম সন্তান আমি তোমাকে বলছি তুমি আমার কথা শোন- এই বাংলার মাটিতে এখনও প্রতিদিন রক্ত ঝরে দেশদ্রোহী নগ্ন ঘাতক আর সন্ত্রাসের মিলিত বন্ধুত্বে তাদের অত্যাচারী মৃত্যুর আর্তনাদ ধ্বনি শুনি। পিতার মুখ লজ্জায় অবনত- অসহায় আলোহীন জীবনের নির্মম ব্যর্থতায় এখনও সন্তান অনাহার ও উপবাসে দিন ও রাত্রি কাটায় এখনও দেশ প্রেমিকদের ও মুক্তিযোদ্ধাদের লাশের উপর ভাসে আমাদের প্রিয় জন্মভূমি আর স্বাধীনতা ক্ষীণ আলোয় নদীর মাঝি ছুটে যায় দূর অন্ধকারে গঞ্জের বাজারে মানুষের বুকে এখনও জমে আছে বেদনা ক্ষুধা ঘুমহীন এই স্বদেশের পবিত্র মাটির বুক ছুঁয়ে প্রিয়তম সন্তান আমি তোমাকে বলছি তুমি আমার কথা শোন- এখনও যন্ত্রণার ভেতর ভেসে আসে যুদ্ধের আওয়াজ এখনও ধর্মের লেবাসে ঘাতকের অত্যাচার অবিচারে হাত কাটা কিশোরের করুণ আর্তনাদ শুনি মাতৃত্বের অমূল্য মাটির বেদনায় নগরের বুকে অবুঝ শিশুরা প্রতিদিন ঝরে পড়ে অতন্দ্র রাতের প্রহরে বেদনার আগুন জ্বলে ক্লান্তির আঁধারে নিরত্তাপ প্রিয় জন্মভূমি ও পৃথিবী বিদায় বিষন্ন বিরামহীন যাত্রা করে সুহাস বক্ষের উপর তার ক্লান্ত চোখ আঁকা বাঁকা রাস্তার মতো চলমান নদী ভীষণ ¯স্রোতে নি:সঙ্গ একা একা অসহায় প্রিয়তম সন্তান তুমি শুনতে পাও সে কান্নার শব্দ আর বেদনা নি:শব্দ ধ্বনি তোমার পরষ্পরা বংশের রক্তে ছিল প্রতিবাদের আগুন আরও ছিল দেশ প্রেমিক মুক্তিযোদ্ধাদের বিরত্ব সাহস তারা গোপনে লুকিয়ে রেখেছিল স্বাধীনতার বেদনা এক তন্দ্রাহীন অক্লান্ত সূর্যের দিকে তাকিয়ে দুর-বহুদুর নীল অন্ধকারে সারারাত যুদ্ধ করেছিল আর হাজার কৃষকের বুকে স্বপ্ন ছিল নতুন শষ্যের আবাদ জননীর বুকে ছিল উল্লাস ও প্রত্যাশার ধ্বনি প্রিয়তমার গ্রামে শেফালী ঝরা প্রভাত জেগে উঠতো মাটিতে সৌরভ ছড়াতো বিস্ময় রাত্রির আধার ভেঙে তাদের অধিকারের আর্তনাদে আজন্ম শ্লোগান ভেসে আসতো তুমি কি শুনতে পাও প্রিয়তম সন্তান ? তাদের অধিকারের কথা- বিচলিত গ্রাম আর নগরের বুকে আলো জ্বালাতে গিয়ে ভালো বেসে যুদ্ধে গিয়েছিল তরুণ যুবক আর যুবতী প্রথম সূর্যের আলোতে সে জ্বলে উঠেছিল দেশপ্রেম ও মৃত্তিকার বুকে পবিত্র বীজের অংকুরে নতুন চারাগাছ চেতনা দিয়েছিল আমরা সূর্যের শিখার মতো জ্বলে উঠলাম রোদ্রের দাউদাউ উত্তাপে মাটির মমতার সংঘবন্ধ হলাম প্রিয় দেশের সবুজ ও লাল পতাকা হাতে আশার ধ্বনি বিজয় কণ্ঠ শোনালো ‘রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেবো তবুও এই দেশকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ’ তার সুগঠিত জাতির জনক যুদ্ধের তলোয়ার শানিত করলো এবং যুদ্ধ শেষে এক রক্তাক্ত স্বাধীনতা অর্জিত হলো। শত্রুরা অন্ধকারে লুকালো আমরা জেগে উঠলাম উজ্জ্বল রৌদ্রের উদ্ভাসিত আলোতে দেশ প্রেম মাটির প্রতি নতজানু হলো তখনই নিষ্ঠুর ভাবে হত্যা করা হলো সত্যের ভাষণ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী ও স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতাকে ও তার পরস্পরা বংশধরকে রক্তাক্ত আর হত্যা করা হলো ধীরে ধীরে হত্যা করা হলো স্বাধীনতার অগ্রনায়কদের প্রজ্বলিত সূর্যের আলো নিভে গেল ঘাতক শত্রুরা আবার জেগে উঠলো অভিশপ্ত রাত্রির বিষাদ তরঙ্গের মতো আজন্ম অবক্ষয় নগরের রাজপথে চতুর্দিক ক্ষুধা শস্যহীন মাটির বক্ষ নিষ্ফল বৃক্ষরাজী অনাহারী পাখি আদিগন্ত বাংলার প্রিয়তম পিতা প্রিয় জননীকে ইতিহাসের মাটিতে শহীদ রূপে ঘুমিয়ে পড়লো। প্রিয়তম সন্তান আমি তোমাকে বলছি ? তুমি আমার কথা শোন- পরিসমাপ্ত যুদ্ধে কথা এখনও শেষ হয়নি অনিবার্য সৌন্দর্যের সুকণ্ঠ ধ্বনি তুমি এখনো শোন নি গর্ভবতী বোনের ধর্ষিত লাশ তুমি সেদিন দেখ নি ভাসমান পিতার লাশের পাশে শমিরনের মৃত দেহ বিভৎস সেদিনের সেই রূপ তুমি তখন দেখ নি আবুল হোসেন এখনও নতুন বাজার থেকে ফেরেনি নিহত টিংকুর খবর কেউ জানেনা মালেকা বানু এখনও বেঁচে আছে নিজেকে বিধবা ভাবে না তার প্রিয় সন্তান এখনও বাবাকে খোঁজে এখনও আঁধার রাতে শিশুরা কাঁদে আহত নদীর বুকে ক্ষত চিহ্ন বিধ্বস্ত স্রোতে পানির বুকে ঢেউ তোলে মৃত লাশের গন্ধ কত বেওয়ারী লাশ মাটিতে পঁচে গিয়েছিল নিষ্ঠুর ঘাতকের বারুদের বিষে জ্বলে ছিল কত গ্রাম প্রিয়তম সন্তান তুমি শুনছো আমি তোমাকে বলছি বাংলার মাটিতে বৃটিশ বিরোধী বীর দেশপ্রেমিক তিতুমীরের বুক থেকে প্রথম রক্ত ঝরেছিল রক্ত ঝরেছিল সিরাজুদ্দৌলা, মোহনলাল রায়ের বুক থেকে মৃত্যুর জন্য ফাঁসির মঞ্চে উঠেছিল মাস্টার দা সূর্য সেন। আরও আরও অনেক অনেক দেশপ্রেমিক কত ঝরা পাতার বুকে মৃত দেহগুলো কেঁদেছিল আঁধার পথের পেছনে পেছনে দুর্বিনীত বিশ্বাস ঘাতক কত বিনিদ্র রাত প্রেম হারা যুবক ও যুবতী আকাশ জুড়ে কালো খন্ড খন্ড মেঘ শব্দহীন মৃত্যুর মত নীরব ক্ষত বুক বেঁধে উত্তাপহীন অসুখে জড়ানো জীবন দেহের ভেতর শীতল কান্না তবুও দিনের রোদের জন্য যুদ্ধ করেছিল আর শত আঁধার ভেঙে দিয়েছিল তারপরও রক্তে ও বিশ্বাসে বিষ ঢালে ছিঁড়ে ফেলতে চায় জাতির শেকড় তবুও প্রতিকুল অবিশ্বাসী বৃক্ষের ছায়ার নিচে আমাদের এই বসবাস ও দেশ প্রেমের কর্ম বিষফল বৃক্ষ তৃষ্ণায় কাঁদে কঠিন মাটির অক্ষম বেদনায় গ্লানির স্পর্শে জেগে ওঠে চাঁদের করুণ হাসি পৃথিবীর রাত জানে বিশাল অনিদ্রার কি শোক। দুর্যোগ অন্ধকার ভাঙা এক একটা প্রতিজ্ঞা কঠিন তিমিরে যাত্রাছিল আমাদের সংগ্রাম তাকে ভেঙে দিয়ে বিজয়ের ধ্বনিময় সুর উঠেছিল তাই প্রিয়তম মুখ হৃদয়ে আঁকি দু:খের রঙ দিয়ে ভালবাসার ঘর বাঁধি মাটির রঙে স্বদেশের ছবি আঁকি অনেক স্বপ্ন দিয়ে কষ্ট দিয়ে নতুন নির্মাণ করি তোমাদের আগামী দিনের সুন্দর পথকে প্রিয়তম সন্তান আমি তোমাকে বলছি তুমি আমার কথা শোন- হৃদয়ের মর্মমূলে ছবি আঁকো তোমার নিবিড় বিশ্বাসের ঠিকানায় নির্জন হৃদয়ের একটি ছোট ঘরে বাঁশি বাজাও ধ্বনি তোল চেতনার লাল মুখখানি জ্বলে উঠুক। জীবনের শ্রমগুলো শস্য বীজের খোলস ভেঙ্গে জেগে উঠুক মাটির দেহে অংকুরিত হোক সবুজ গাছ আদর্শ ও মর্যাদায় ধীরে ধীরে নিজস্ব গতিতে তারা বেড়ে উঠুক নি:শব্দের আলো ছড়াক বাস্তবতার পথে পথে মৃত্যুর অগ্নিবিষ হোমানোল শিখায় অশুভ বৃক্ষকে পেছনে ফেলে জীবনের আদর্শ যাত্রায় চলমান ধ্বনি তুলুক প্রিয়তম সন্তান তুমি হেঁটে চলো মানুষের চোখের অশুভ নিদ্রারেণু ভেঙে অপেক্ষার আলো জ্বালাও মাধুরী প্রেমে পূর্বাভাস জন্মের শেখরে বেড়ে উঠুক নতুন চেতনা তোমার বংশের কালো ক্ষত চিহ্ন মুছে দিয়ে তবেই শেষ হবে বেদনার দিন আর ফসলে ভরে উঠবে সোনালী সবুজ মাঠ সুষমবণ্ঠন ও সাম্য প্রেমে জেগে উঠবে জাতি সবুজ সতেজ এক সূর্যময় সুন্দর আগামীর জন্য অনর্গল জ্ঞান ছড়াবে আলোর জ্যোতি দীর্ঘ আঁধার রজনী মুছে যাবে আলোর প্রভাতে একদিন দু:খরা কেটে যাবে প্রিয়তম সন্তান তুমি পাবে ¯স্নেহদুগ্ধ নতুন সকাল। চাষাবাদের উপযোগী ফসলের মাঠ ও মৃত্তিকা প্রিয়তম অমিত সন্তান আমার তুমি হেঁটে যাও হেঁটে যাও আরও দূরে হেঁটে যাও এক সুস্থ ফুলের বুকে জাগিয়ে তোল আমাদের প্রিয় বাংলাদেশকে আঁধার কেটে যাক স্বচ্ছ আর আলো ফিরে পাক নতুন সকাল চন্দ্রের স্নিগ্ধ মাধুরী প্রথম জ্যোছনার হাসি মৌসুমী নদীর শিমুল ফোটা তীরে মুক্তিযোদ্ধারা দাঁড়িয়ে থাকবে শেষ স্মৃতি চিহ্ন ঝরা বকুলের গন্ধে আমরা তাদের কাছে গিয়ে দাঁড়াবো ¯স্নেহময় হাতের বিনীত পুষ্প মমতার সৌরভে সত্যের উদগত নতুন অংকুরে জেগে উঠবে জাতি এক প্রত্যয় প্রদীপ্ত জীবন যাত্রার আলোতে অতীত সমকাল ও ভবিষ্যত এক মহাচৈতন্যে মিশে মাটির ললাট স্পর্শ করে আগামীরা হেঁটে যাবে তোমাদের সাথে প্রিয়তম সন্তান আমি তোমাকে বলছি তুমি আমার কথা শোন-
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ম নি র মো হা ম্ম দ
আলোর প্রভাতে একদিন দু:খরা কেটে যাবে
প্রিয়তম সন্তান তুমি পাবে ¯স্নেহদুগ্ধ নতুন সকাল। অসাধারণ..শুভ কামনা, আমার পাতায় আসার আমন্ত্রণ।
ওয়াহিদ মামুন লাভলু
প্রিয়তম সন্তানের প্রতি পিতার আহ্বান খুব সুন্দরভাবে প্রকাশিত হয়েছে আপনার কবিতায়। সন্তান তার পাঠ্যসূচীর মাধ্যমে যে স্বাধীনতার কথা, পূর্ব পুরুষদের কথা, বৃটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের কথা, অনাহারে জেগে থাকা মানুষের কথা জানতে পারবে সে কথাই বলা হয়েছে। অনেক মানসম্পন্ন কবিতা। আমার শ্রদ্ধা গ্রহণ করবেন। কেমন আছেন আপনি? আপনার সফলতা কামনা করছি। শুভকামনা রইলো। সবসময় ভাল থাকবেন। শুভ নববর্ষ ২০১৮।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।