এক মাহিনের কবিতা লেখার অভ্যাস থাকলে এই মুহূর্তে নিশ্চয় সে একটা কবিতা লিখতো। মাথার উপর রুপালী চাঁদ,ঝিরিঝিরি হাওয়া সাথে ভেসে আসা নানা নাম না জানা ফুলের গন্ধ সেই সাথে একাকীত্ব। কিন্তু কি; মাহিন কবিতা লেখাতো দূরে থাক জীবনে কবিতা কয়টা পড়েছে সেটা হয়তো হাতের আঙ্গুল গুনেই বলতে পারবে।দুই চারতে কবিতার লাইন না শুনিয়েও যে প্রেমিকা জুটানো যায় এটা মাহিনকে না দেখলে আমার কখনো জানাই হত না। প্রেমে মাহিন বার বার পড়েছে তবে লীনার প্রেমে যেভাবে পড়েছিল ঠিক সেভাবে নয়।লীনার সাথে পরিচয় ও পরিণয় কলেজ জীবনে। বেশ কিছুদিন পরিণয়ের পর আধো আধো ছোঁয়া দিয়ে আর ওদের মন ভরছিল না, তখনই দুজন পালিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং সেই থেকে দুজন দুজনারই আছে। তবে কি বিয়ের খবর জানাজানি হোক তা ওরা চায়নি কারণ তাহলে দু’বাড়ি থেকেই দুজনকে বের করে দেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল ছিল।বিবাহের দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো তাদের মিলিত হতে হয় লোক চক্ষুর আড়ালে কখনো বা কোন বন্ধুর বাসা ফাঁকা পাওয়া গেলে।
দুই মাহিন এ গ্রামে এসেছে পনের দিন হল।গ্রামে আসার ইচ্ছা মাহিনের ছিল না কিন্তু চাকরি পেয়েও ছেড়ে দেওয়ার মতন আর্থিক অবস্থাতে তো মাহিন নেই। চাকরির শর্ত ছিল গ্রামে কাজ করতে হবে। সারাদিন কাজের শেষের এই সময়টুকুই মাহিনের খুব খারাপ লাগে। ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক সেই সাথে শেয়াল কুকুরের চিৎকারে প্রায় ঘুম ভেঙ্গে যায়। গ্রামে শীতটাও এসে পড়েছে, কিছুতেই শরীরটাকে উষ্ণ করা যায় না। দুপায়ের মাঝখানটার অস্থিরতা বাড়তেই থাকে। মোবাইলে হুরপরীদের রঙ্গলীলা দেখে দেখে কতটা আর শান্তি মেলে? তাই প্রতিটা রাতই ওর কাটছে আধো ঘুম আধো জাগরণে।
তিন মাহিন ঘুমিয়েই পড়েছিল হঠাৎ কিসের যেন শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো।চোখ থেকে ঘুম পালানোর পর স্পষ্ট হল শব্দটা কতগুলো নারীকণ্ঠের কান্নার। মাহিন দরজা খুলে বাইরে আসে। চারদিক নিসচুপ। হঠাৎ একটা পেঁচা ডেকে উঠে, সাথে সাথে মাহিনের বুক কেঁপে উঠে।মাহিন ঘরে ফিরে যাবে ভাবছে এমন সময় আবারও নারীদের কান্না শুনতে পেলো। মাহিন ভয়ে ভয়ে এগিয়ে যায়। চারিদিকে ঝোপঝাড় তারই মাঝখান দিয়ে রুপালী চাঁদ আলো জ্বেলে মাহিনকে পথ দেখাচ্ছে যেন।মাহিন এগিয়েই চলেছে কান্নাকে লক্ষ্য করে।দূরে একটা বাড়ি দেখা যাচ্ছে।এরকম বাড়ি এ গ্রামে মাহিন আর একটিও দেখেনি।এটা হয়তো পুরাতন রাজবাড়ী।বাড়ীর সামনে আসতেই একটা কালো বিড়াল তার জ্বলজ্বলে চোখ নিয়ে মাহিনের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে।ভয়ে মাহিনের গলা শুকিয়ে আসে।সে ভেবে পায়না সামনে বাড়ীর দিকে যাবে নাকি ফিরে যাবে। সিদ্ধান্ত নিতে চারিদিক একবার চোখ বুলিয়ে নেয় তারপর দেখে বিড়ালটা নেই।
চার মোবাইলটা বেজেই চলেছে।মাহিন হুড়মুড় করে ঘুম থেকে উঠে বসে।কোথায় আছে বুঝতে বেশ কিছুক্ষণ সময় লাগে।চারিদিকে চোখ বুলিয়ে দেখে সে তার ঘরেই আছে তবে কাল রাতে যে সে বাইরে গিয়েছিল। সেই রাজবাড়ী, সেই অর্ধ নগ্ন সুন্দরী নারী? মাহিনের মাথাতে যন্ত্রনা হতে থাকে।মোবাইলটা আবার বেজে চলেছে।এক কলিগের ফোন।অফিসে আসেনি কেন জানতে চায়লো। মাহিন কোনরকমে বলল শরীরটা ভালো না। রান্না ঘর থেকে খুটখাট শব্দ আসছে, মাহিন ভয়ার্ত গলায় বলে কে, কে ওখানে? কাজের বুয়া ময়নার মা সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসে।স্যারের কি শরিলডা খারাপ?অঘোরে ঘুমাইতে ছিলেন, কাছে আইসা দেখলাম ঘুমের মাঝে বকছেন?মাহিনের মাথার যন্ত্রনাটা বেড়েই চলেছে। ময়নার মা তোমার কাছে মাথাব্যথা কমানোর ওষুধ আছে? ময়নার মা চিন্তিত হয়ে মাহিনের কপালে হাত রাখে।ওমা জ্বরেতো আপনের গা পুড়ে যাচ্ছে, আপনে শুইয়া পড়েন, আমি মাথায় পানি পট্টি দিইয়া দেই ময়নার মা বলে।
পাঁচ ময়নার মার শুশ্রূষায় মাহিনের এখন একটু ভালো লাগছে । মাহিনের মাথাতে আবারও কাল রাতের স্মৃতি ফিরে আসছে। সেই রাজবাড়ীর ভিতরে কতগুলো নারী স্নান করছিলো প্রায় নগ্ন অবস্থাতে। মাহিন দৃশ্যটা দেখে কেন জানি চোখ ফেরাতে পারে না। নারীরা ওকে দেখে ফেলে। তারপর নারীকণ্ঠের উল্লাস মাহিনের কানে ভেসে আসে। উফ! কি যে যন্ত্রনা হচ্ছে মাহিন মাথায় হাত রাখে।ময়নার মা আবার পানি পট্টি দিতে শুরু করে। মাহিন মৃদু স্বরে ময়নার মাকে জিজ্ঞেস করে, তোমাদের এখানে যে রাজবাড়িটা আছে তুমি কখনো ওখানে গিয়েছো? ময়নার মা অবাক হয় রাজবাড়ি? হুম রাজবাড়ী। ওই সামনের ঝোপটা পেরোলে যে বড় পুরাতন বাড়িটা ওইটাকে তোমরা রাজবাড়ী বলো না? ময়নার মা আবারও অবাক হয়, আমাগো এইখানে আপনে বড়বাড়ী পাইলেন কই, তাও আবার ঝোপের পাশে? আমাগো এইখানে সবচেয়ে বড়বাড়ী হইতাচে চিয়ারম্যান সাবের বাড়ী সে তো ঝোপের ওইদিকে না। মাহিনের মনে খটকা লাগে তবে ও কি দেখলো? নিশ্চয় রাতে স্বপ্ন দেখেছে।
ছয় কিছুক্ষণ আগে লীনা ফোন করেছিল। জ্বরের কথা শুনে আজকেই সে এখানে আসবে বলে পণ করেছে।মাহিনের যদিও এখন একটু ভালো লাগছে কিন্তু সে কথা বুঝতে লীনা নারাজ।রাতের ঘটনা মাহিন আর লীলাকে বলে না।কাল রাতে সে স্বপ্ন দেখেছে ভেবেই মাহিনের মাথাতা হালকা লাগছে। মায়নার মা চলে গিয়েছে, মাহিন ঘরে একা। বিছানা ছেড়ে নামতে যেয়ে মাহিনের পা ব্যথায় কুঁকড়ে যায়, কোন মতে বিছানাতেই আবার বসে পড়ে। মাহিন বুঝতে পারে না পা টা কেন এতো ব্যথা।ট্রাউজার খুলতেই আবার সেই ভয়টা তাকে ঘিরে ধরে। তার উরুতে লাল হয়ে আছে দাঁতের দাগ। কাল রাতে যদি সে ঘরেই থেকে থাকে তবে উরুতে দাগ এলো কিভাবে? স্মৃতিতে ফিরে আসে নারীরা তাদের পোশাক খুলে ফেলছে তারপর সেই চার নারী এগিয়ে আসছে তার দিকে।উল্লাসিত নারীরা মাহিনকে ধরে ফেলছে।একে একে তার পোশাক খুলে নিচ্ছে তারা। মাহিনের আনন্দ হওয়ার কথা কিন্তু সেই সুন্দরীদের উল্লাস দেখে মাহিন ভয়ে জমে যাচ্ছে যেন। আহ! আবার সেই মাথা যন্ত্রণাটা ফিরে এসেছে মাহিন আর কিছু মনে করতে পারছে না।মাথা চেপে ধরে শুয়ে পড়ে সে। তার ক্ষুধা তৃষ্ণার অনুভূতি সব লোপ পেয়ে যায়। কতক্ষণ শুয়ে আছে জানে না। চোখ খুলে জানালায় তাকিয়ে দেখে বাইরের আলো নিভু নিভু।মাহিনের ঘরের ভীতরটাও আস্তে আস্তে অন্ধকারে ঢেকে যায়।তার শরীরে উঠে দাঁড়ানোর শক্তি নাই তাই বাতিটা আর জ্বালানো হয় না।বাইরে ঝিঁঝিঁ পোকা তার অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে আর কোন শব্দ নেই। হঠাৎ দরজার কড়া নাড়ার শব্দে মাহিনের বুকের মাঝে ভূমিকম্প শুরু হয়। এটা ময়নার মা নয় কারণ সে জানে দরজা বাইরে থেকে কিভাবে খুলতে হয়। দরজার ওপারে নতুন কেউ।মাহিন বলতে চায় কে কিন্তু তার গলা দিয়ে কথা বের হয় না। সে মোবাইলটা হাতড়াতে থাকে কিন্তু নাগাল পায় না। এবার কড়া নাড়ার শব্দের সাথে নতুন একটা শব্দ শুনতে পায়- নারী কণ্ঠের কান্না।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ওয়াহিদ মামুন লাভলু
নারী কন্ঠের কান্না শুনে মাহিনের বাইরে যাওয়া ঠিক হয় নি। বাইরে গিয়েই তো সে ভয়টা পায়। অবশ্য এরূপ ক্ষেত্রে এমন একটা আকর্ষণ কাজ করে যে না গিয়ে থাকাও যায় না। চমৎকার লিখেছেন। শ্রদ্ধা জানবেন।
সাদিয়া সুলতানা
খুব বেশি বানান ভুল নেই। দু’ একটা টাইপো আছে, কারণ আমি জানি এই বানান গুলো আপনি জানেন-‘ নিসচুপ, যন্ত্রনা, ভীতরটাও’। প্লটটা কিন্তু চমৎকার। তাড়াহুড়ো করে দিয়েছেন বেশ তো, আবার এক ফাঁকে বসে গাঁথুনি শক্ত করবেন। ভোট রইল।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।