লাইট ক্যামেরা অ্যাকশন “আপনারা কি আমাকে চিনতে পেরেছেন ? ফুলের নামে নাম আমার যে ফুলের না আছে রঙ না আছে গন্ধ , কি পারলেন চিনতে ? আমি টগর । সেই টগর যে তার মায়ের প্রেমিকের অস্বীকৃত সন্তান । মা তাকে ৯ মাস গর্ভে ধারণ করেছে, যেমন কোন স্বীকৃত সন্তান থাকে গর্ভে । জন্মের পর মা তাকে নিজের স্তন দিয়েছে মুখে । শুধু কোন বাবা দেয়নি আযান , করেনি খুশির কান্না , বেলায় নি মিষ্টান্ন । তাতে কি শিশুটি ঠিক ঠিক বেড়ে উঠেছে । আমার অবিবাহিত মা সমাজের রক্ত চক্ষু থেকে বাঁচতে ছেড়েছেন জন্ম স্থান , আত্মীয় পরিজন । আমার বেড়ে ওঠা তাই পাহাড়ি এলাকাতে । আমার স্কুলে পড়া হয়নি, আমার মায়ের কাছেই নিয়েছি শিক্ষা । পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরে কাটিয়েছি সময়। সভ্য সমাজ থেকে দূরে এই পশ্চাৎপদ সমাজের মানুষের ভালবাসায় হয়েছি সিক্ত। ” মেয়েটা তার গল্প বলা এভাবেই শুরু করল ।
শিশির আহমেদ নতুন অনুষ্ঠান পরিচালনা শুরু করেছে । হঠাৎ করে তার মাথায় আইডিয়া এসেছে যেসব ছেলেমেয়েদের বাবার পরিচয় নাই তাদের নিয়ে একটা অনুষ্ঠান করবে । এরই ধারাবাহিকতায় “ ফুলের নামে নাম ” অনুষ্ঠানটা এখন অনইয়ারে যাচ্ছে । শিশিরের বন্ধু মাধবের মাধ্যমে টগরের জীবনের ঘটনাগুলো তার জানা । টগরতো প্রথমে আসতেই চায়নি অনুষ্ঠানে । তার একটায় কথা সে কখনও তার বাবার সাথে দেখা করতে চায় না , মা নয়নতারাই তার মা এবং বাবা । আসলে বাবার প্রতি তীব্র অভিমান সেই সাথে ঘৃণা ও জমা আছে তার মনে ।
টগর তার জীবনে ঠিক টগরের জীবনের গল্প নয় বরং বলা যায় নয়নতারার জীবনের গল্প বলা শুরু করে “সবাই আমার মা নয়নতারা কে ডাকে মাষ্টার দিদিমণি কারণ তিনি মহিলাদের বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান দেন আর আমাদের বাড়িটার সামনের বট গাছ তলাতে একটা স্কুল দিয়েছেন । এটা কোন নিবন্ধন ভুক্ত স্কুল নয় , মা তার ইচ্ছামত বিষয়ে এখানে পাঠ দান করেন আর একজন আছে যে মাকে বিভিন্ন কাজে সহায়তা করেন, মৃণ্ময় মামা । মৃন্ময় মামা শহরে চাকরি করেন। ছুটিতে এখানে আসেন আর মার জন্য বই ও বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পত্র নিয়ে আসেন । মৃন্ময় মামার সহায়তায় মা আমাকে নিয়ে এখানে আসেন একযুগের ও বেশি সময় আগে । তখন আমার বয়স তিন , তাই কোন স্মৃতি ই আমার মনে নেই । মনে হয় যেন জন্মের পর থেকেই এখানে আছি । আমার মার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু মৃন্ময় মামা । একমাত্র মৃন্ময় মামাই আমার আর মার সব কিছু জানে । মৃন্ময় মামাই আমাকে বলেছে মা অনেক ভাল ছাত্রী ছিলেন আর একটা বছর পড়লেই মা সার্টিফিকেট পেতেন যা দিয়ে আকর্ষণীয় বেতনের চাকরি পেতেন আর চায়লেই সংসার সাজাতে পারতেন ধনী ও সুদর্শন কোন যুবকের সাথে । অথচ মা সব ছেড়ে সব মায়া ত্যাগ করে আমাকে নিয়ে আছেন এই দুর্গম এলাকাতে । শুধু আমাকে নিয়েই কেন থাকলেন মা ? নিজেকে বড় অপরাধী লাগে আর প্রচণ্ড ক্ষোভ জন্মে সেই লোকটার প্রতি যে কিনা আমার জন্মটা চায়নি।
মাঝে মাঝে মধ্য রাতে ঘুম ভাঙলে দেখেছি মা কাঁদছে , বুকে একজনের ছবি আঁকড়ে ধরে । আমি নিশ্চিত ছবিটা সেই লোকটার যাকে আমি ঘৃণা করি আর খুব সম্ভবত আমার মা তাকে এখনো ভালবাসে । আমাকে কখনো তার ছবি দেখতে দেয়নি , শুধু নানাবাড়ির লোকদের ছবি একবার দেখিয়েছে । ছবি সব মা তালাবন্দি করে রাখে । মার কাছে যখন কান্নার কথা জানতে চেয়েছি প্রতিবারই একই উত্তর দিয়েছে বড় হও একদিন জানতে পারবে ।
একদিন মৃন্ময় মামা তার বাড়িতে ডেকে নিয়ে আমাকে বাঁধানো একটা ছবি দিল। ছবিতে ছিল আমার মা , মৃন্ময় মামা আর একজন যে আমার মায়ের কাঁথে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । দেখে ই আমি আন্দাজ করতে পারছিলাম লোকটা কে , অনেকটা আমার চেহারার আদল। তবুও মামা যখন জিজ্ঞেস করলো চিনতে পারলি লোকটাকে আমি বললাম না । মামা বলল ওর নাম অরণ্য রায়হান , তোর বাবা । আমি তখন বলেছিলাম আমার কোন বাবা নেই। হ্যাঁ , এটা ঠিক জন্মদাতা একজন আছেন । তাহলে এই সেই মানুষ যার জন্য আমার মায়ের এতো কষ্ট । মামা বলল তোর মা এখনো ওকে ভালবাসে জানিস ? তোর দায়িত্ব তোর মার সব কিছু তাকে ফিরিয়ে দেওয়া যা সে হারিয়েছে । তোর নানি এখন অনেক অসুস্থ বলে শুনেছি তার সাথে ও তোর মার দেখা করা দরকার । তারপর মামা আমার মা নয়নতারার জীবন কাহিনী আমাকে শুনাতে থাকেন ।
তোর মা আর অরণ্য একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ত । তোর মা অর্থনীতিতে আর অরণ্য বাংলাতে । দুজনের পরিচয় একটা বিতর্ক প্রতিযোগিতাতে । ওরা দুজন সেখানে প্রতিযোগী ছিল । এরপর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ওদের দেখা হতো । অরণ্যের গানের গলা ভাল ছিল সেই সাথে চমৎকার আবৃতি করতো। তোর মা তো কবিতা লিখত সেই সাথে উপস্থাপনাটা ভাল করতো । তাই ভার্সিটির সব অনুষ্ঠানে ওদের দুজনের ডাক পড়ত । এখান থেকেই ওদের ভাললাগা ও ভালবাসা । নয়নতারা অরণ্যয়ের চোখে চোখ রেখে হারিয়ে যেত কোন এক গভীর অরণ্যের মাঝে , যেখানে কোন সীমারেখা নেই , সেখান থেকে বের হতে দিকবিদিক শুন্য হতে হতো। এভাবে কেটে গেলো অনেক গুলো বছর । নয়নতারার বাড়িতে এ কথা জানাজানির পর অন্যখানে বিয়ের ব্যবস্থা করা হল। অরণ্য গ্রামের নিম্নবিত্তের ছেলে তার পক্ষে ওই সময় বিয়ে করা সম্ভব ছিল না । সে নিজেই টিউশনি করে পড়ার খরচ চালাত। নয়নতারা যখন জানল তুই তার গর্ভে তখন কি করবে ভেবে পাগল প্রায় অবস্থা । আমি বরাবর ওর ভাল বন্ধু ছিলাম আমার সহায়টায় নয়নতারা বাড়ি থেকে পালিয়ে আসে অরণ্যের কাছে । অরণ্য বাচ্চা আবরসন করতে বলে আর পারলে আরও ২ বছর ওর জন্য অপেক্ষা করতে বলে । আসলে অরণ্য একটা কাপুরুষ ছিল নইলে নয়নকে ফেরাতে পারতো না । নয়ন আর বাড়ি ফিরে যায়নি । ওর এক স্কুল ফ্রেন্ড নুপুরের কাছে চট্টগ্রাম চলে যায় । চট্টগ্রাম আমি ই ওকে নিয়ে যায় । নূপুরের সহায়তায় এক বুড়া বুড়ির সাথে সাবলেটের ব্যবস্থা করি আমরা। সেখানেই তোর জন্ম । আমি মাঝে মাঝে ঢাকা থেকে খবর নিতাম, নূপুর খবর নিত। সেখানে কবছর থাকার পর আমি আমাদের পাহাড়ি এলাকাতে নিয়ে আসি তোদের। মামা এখানে থামলে আমি জানতে চাই , আর অরণ্য কোন খবর নেয়নি ? অরণ্য আমাদের ২ বছর সিনিয়র ছিল ও একটা স্কলারশিপ নিয়ে মালয়েশিয়া চলে যায় । আমার সাথে আর কখনো দেখা হয় নি।আর আমার নানি কোন খবর নেয়নি। হ্যাঁ, তোর নানি আমাকে লুকিয়ে টাকা পাঠাতো । কিন্তু তোর মাকে আমি জানাতাম না এ কথা । একদিন জানালে আর কোন টাকা যেন না নেয় বলে তোর মা। নানাবাড়ির সাথে আর কোন যোগাযোগ রাখতেও নিষেধ করে।
মামার কাছে মায়ের গল্প জানার পর আমি মাধবকে সব জানায় ।মাধব মৃন্ময় মামার ছেলে । ওকে বলি আমার নানির খবর নিতে । মাধব ঢাকাতে পড়ে। তাই ওর পক্ষে খবর আনা সহজ হবে । কিছু দিন পর মাধব আসে । আমি দৌড়ে যাই ওর কাছে কি খবর এনেছো বলো । ও আমার নানির সাথে দেখা করেছে , নানির হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পর থেকে হাঁটাচলাফেরা করতে পারে না । খুব নাকি কেঁদেছেন মেয়ের কথা বলে। আমাকে ও দেখতে চেয়েছেন ।
আমি, মৃন্ময় মামা ও মাধব মিলে মাকে ঢাকা নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করি । মা প্রথমে রাজি না হলেও আমাদের সবার অনুরোধ আর নানির অসুখের কথা শুনে রাজি হয়ে যান।
সে এক অন্য রকম অনুভূতি। ১৬ বছর পর এক মেয়েকে তার মায়ের সাথে মিলাতে নিয়ে যাচ্ছি । আমি এর আগে কখনো ঢাকা যাইনি । যখন পৌঁছালাম দেখলাম মা কাঁদছেন আমি ও মায়ের সাথে কাঁদলাম ।
তারপর গেলাম নানাবাড়ি। এই বাড়িতে আমার মায়ের জন্ম । আমি আমার মাকে তার মায়ের সাথে মিলাতে যাচ্ছি । বারবার মনে হচ্ছিল পারব কি, শেষ পর্যন্ত হবে তো দেখা । আমার উত্তেজনা টের পেয়ে মাধব আমার হাত চেপে ধরে। আমরা নানাবাড়ির ড্রয়িংরুমে বসে আছি । একজন হুইল চেয়ার ঠেলে আনছে । চেয়ারটা এখন আমাদের সামনে , চেয়ারের মাঝে একজন অসুস্থ বৃদ্ধা বসে আছেন । আমার মা সেই বৃদ্ধার কোলে ঝাপিয়ে পড়ে চিৎকার করে কাঁদছেন আর বৃদ্ধা নিরবে কেঁদে চলেছেন আর কি যেন বিড়বিড় করে বলছেন বোঝা যাচ্ছে না । সেদিনের সব কিছু আমি এখনও চোখ বন্ধ করলে স্পষ্ট দেখতে পাই । অবশেষে আমি আমার মাকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছি । এরপর আমার মায়ের ভাই আর ভাইয়ের স্ত্রী আসলো । ভাই এসে বলল ওরা নাকি অনেক খুঁজেছে কিন্তু পায়নি । আমার নানা মারা যাবার আগে খুব দেখতে চেয়েছিল মাকে । আরও ১০ বছর আগে নানা মারা গেছেন । মায়ের বান্ধবী নূপুরের কাছে জেনেছে মা প্রেগন্যান্ট ছিল তাই পালিয়ে গেছে । মাধব মামার গ্রামের বাড়ির ঠিকানা জোগাড়ের অনেক চেষ্টা করেও জোগাড় করতে পারেনি । মায়ের ভাই বলল কোথায় না খুঁজেছি তোমাকে বল , পত্রিকাতে পর্যন্ত বিজ্ঞাপন দিয়েছি। তুমি আমাদের সবার সাথে আগে আলোচনা করতে আমরা তোমার সমস্যার সমাধান দিতে না পারলে তারপর পালিয়ে যেতে । আর সমাজ থেকে জীবন থেকে পালানো মানে কাপুরুষতা , আপু তোমার কাছে আমরা এটা আশা করিনি কখনো । মৃন্ময় দা তুমি আমাদের কেন জানালে না ।
আমার কাছে ও মনে হয় এভাবে পালানোর কোন মানে নেই । জানিনা আমার মায়ের হারানো সব আমি ফিরিয়ে দিতে পারবো কিনা । তবে আমি একটা সত্যের মুখমুখি হতে চাই । আমার ও আমার মায়ের জীবনের গল্প আপাতত এটুকুই । ”
টগরের জীবন কাহিনী দর্শক ভালই পছন্দ করেছে । এখন শুধু দেখার বিষয় যাকে খুঁজে পেতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন তাকে পাওয়া যায় কিনা । অরণ্য রায়হানকে খুঁজে পেলে তবেই আমাদের অনুষ্ঠানের সার্থকটা ।
এরপর বেশ কিছুদিন কাটল । টগর প্রতিদিন কলিং বেলের শব্দে চমকে উঠেছে এই বুঝি ওর বাবার খবর নিয়ে কেউ আসলো ।
দেখতে দেখতে দুসপ্তাহ পার হল হঠাৎ একদিন একটা ছেলে টগরের সাথে দেখা করতে এলো । কাজের মেয়ে এসে বলল অরণ্য রায়হানের খবর জানাতে এসেছে একটা ছেলে । ১৫ বছরের মত বয়স হবে ছেলেটার । ছেলেটি টগরকে বলল আমি “ ফুলের নামে নাম ” অনুষ্ঠানে আপনাকে দেখেছি । আমার বড় চাচার সাথে আপনার বলা কাহিনী একদম মিলে যায় । তাছাড়া আপনার চেহারা ও অনেকটা আমার চাচার মত।টগর বলল , আপনার চাচার কোন ছবি দেখাতে পারবেন ? হ্যাঁ, পারবো আর চাচা আপনাকে একটা চিঠি লিখেছেন সেই চিঠিটাই আমি দিতে এসেছি । ছেলেটা তার চাচার একটা ছবি দেখাল , ছবির লোকটা অনেক বয়স্ক হলেও টগরের চিনতে কোন অসুবিধা হল না যে এই ব্যক্তিই তার জন্মদাতা। টগর বলল চিঠিটা আর আপনার ফোন নং রেখে যান আমি পরে আপনার সাথে যোগাযোগ করব। উত্তেজনায় টগর কাঁপছিল কি লেখা থাকবে চিঠিতে । অনেকক্ষণ চিঠিটা নিয়ে বসে থাকল কেন জানি চিঠিটা খুলতে সাহস হল না ওর । মাধবকে ফোন দিয়ে বলল অরণ্য রায়হানের খবর পাওয়া গিয়েছে তুমি এখনই আমার এখানে আসো । মাধব আসলে টগর আস্তে আস্তে চিঠিটা খুলতে শুরু করল
“মা মনি ,
আমি তোমার ঘৃণিত বাবা । জন্মের আগেই আমি তোমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলাম । কেন চেয়েছিলাম জানো ? কারণ সন্তানকে পৃথিবীতে আনার জন্য যে জীবনযুদ্ধে আমাকে অংশ নিতে হতো তার জন্য কোন ঢাল তলোয়ার আমার ছিল না । শুধু ঢাল তলোয়ার কেন যুদ্ধে অংশ নিতে অনিবার্য হয়ে পড়ে যে জিনিসটার তা হল সাহস , এই সাহসই আমার ছিল না । তোমার মা ছিল ধনীর দুলালী আর আমি অতি দরিদ্র কৃষকের ছেলে । আমরা ছিলাম পাঁচ ভাই বোন , আমি সবার বড়। আমার দায়িত্ব ছিল তিন বোনকে বিয়ে দেওয়া আর ভাইকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করা । আর মা বাবার প্রতি দায়িত্ব তো ছিলই। তোমার মনে হয়তো প্রশ্ন আসছে , তবে কেন আমার মাকে ভালবেসেছিলে , কেন স্বপ্ন দেখিয়েছিলে ? হ্যাঁ , আমার সোনামণি , আমি অনেক বড় একটি অন্যায় করেছিলাম । তখন আমার যে বয়স ছিল ওই বয়সে তোমার মায়ের মত সুন্দরী একজন প্রেমিকা সবাই পেতে চাইবে । আমিও চেয়েছিলাম । তবে বিয়ে করার মত মানুসিক প্রস্তুতি আমার ছিল না । তোমার মা ছিল ভীষণ সাহসি আর আমি ভীতু কাপুরুষ । তবে কি জানো যখন আমি আর্থিক ও মানুসিকভাবে বিয়ের জন্য প্রস্তুত হয়েছিলাম তখন তোমার মাকে অনেক খুঁজেছি । ওর যত বন্ধুদের আমি চিনতাম সবার কাছে গিয়েছি এমনকি তোমার নানাবাড়ির দারোয়ান আমাকে চিনতো ওর কাছে ও খোঁজ নিয়েছি। কোথাও তোমার মাকে পাইনি । আর আমি কখনো ভাবিনি তোমার মা সত্যি সত্যি আমার সন্তানকে পৃথিবীতে আনবে । তোমার মা এতোবড় দুঃসাহসিক কাজটা করেছিল আমি জানতেও পারিনি । তোমার মা তো দেবীতুল্য । একজন দেবী আমার মধ্যে কি যে দেখে এতো ভালবেসেছিল জানিনা । তুমি হয়তো বিশ্বাস করবে না, আজ আমি নিঃস্ব । মাবাবা ভাইবোনের দায়িত্ব পালন শেষে আমি আমার মায়ের পছন্দের এক মেয়েকে বিয়ে করি এবং আমাদের একটা পুত্র সন্তান হয়। কিন্তু ৭ বছর আগে এক সড়ক দুর্ঘটনাতে আমার স্ত্রী ও সন্তান মারা যায় আর আমার দুটো পা কেটে ফেলতে হয়। আমি আমার পাপের শাস্তি পেয়েছি। তুমি যদি মনে কর আমার আরও শাস্তি পাওয়া উচিত তাহলে আমাকে অভিশাপ দিও যেন কোন দিন তোমাদের সাথে দেখা না হয়। আর যদি মনে কর আমার পাপের শাস্তি আমি পেয়ে গেছি তবে একবার এখানে এসে আমাকে বাবা বলে ডেকো । এখন আমি গ্রামের বাড়িতেই থাকি । রেজার কাছে তোমার কথা জানতে পারি । রেজাই আমার খোঁজখবর রাখে । শেষে শুধু এটাই বলতে চাই তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা হয় । তোমার মঙ্গলময় জীবন কামনা করি।
তোমার বাবা । ”
চিঠিটা পড়তে পড়তে টগরের চোখ দিয়ে টপটপ পানি পড়ছিল । সেই পানির প্রতিটি ফোটার সাথে বাবার প্রতি জমিয়ে রাখা ঘৃণা অভিমান সব ধুয়ে মুছে জাচ্ছিল। টগর কোন কথায় বলতে পারছিল না । চিঠিটা মাধবের কাছে দিয়ে বাবা , বাবা আমাদের জীবনটা কেন এমন হল বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো ।
০৫ অক্টোবর - ২০১২
গল্প/কবিতা:
১৮ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪