কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন,ধনরাজ অথচ ভিখারি কিম্বা দুঃখী লোকের নাম সুখময়--এমন তো কত আছে।গজানন জানে না বা তাঁর মনে নেই কে তাঁর নাম গজানন দিয়েছিল।ওঁর চেহারা গজের ধরণের বললে ভুল হবে না,কিন্তু তারপর আনন মানে গিয়ে মুখ,গজের মত মুখ তো তাঁর নেই,তবে তিনি গণেশ ঠাকুর সাজতে চান না,এত সাহস তাঁর নেই!সে যাই হোক এ সব নাম টাম দিয়ে হবে কি?
--তোমার ওই বাছার উপাধিটা কেমন করে এলো,কত্তা?গ্রামের বেচু মণ্ডল জিজ্ঞেস করলো। গজানন ভাবল,সত্যি তো বাছারের ব্যাখ্যাও তো তাঁর জানা নেই!আসলে হয়েছে কি--এসব নাম, উপাধি মেলাবার সময় তিনি পান নি।অল্প বয়সে বাবা তাঁর মারা গেলেন।নাম উপাধির হিসাব যাঁর রাখার কথা তিনিই যখন রইলেন না--আর ওসবের অর্থ টর্থ দিয়ে হবেটা কি !
গজাননের মনে হল এ সব উল্টো পাল্টা প্রশ্ন করা লোকের একটা মন্দ স্বভাব।এই যে বেচু মণ্ডল, ওর নামখানারই বা কি অর্থ?গজানন পাল্টা প্রশ্ন করলেন,আচ্ছা বেচু,তুমি পরের নামের অর্থ নিয়ে পড়েছ,বল তো তোমার বেচু নামের অর্থ কি?
--ঠাকুরদার কাছে শুনেছি কত্তা,অভাবের তাড়নায় নাকি সংসারের এমন হাল হোয়ে ছিল যে সন্তানকে বিক্রি করার অবস্থা হয়ে গিয়েছিল ! আর সেই জন্যেই নাকি আমার নাম বেচু হোয়ে ছিলো।
গজানন হো হো করে হেসে উঠলেন,বললেন,দূর বেটা!কোনো কারণ না পেয়ে অকারণকে ডেকে আনিস না তো--গোঁজামিলের চেষ্টাটা কম কর দেখি!এমনি সময় গ্রামের মোড়ল,বটব্বেল এসে হাজির হলেন।দুই গ্রামের গপুড়ে এক জাগায় দেখে তিনিও গজাননের দোকানে গিয়ে ঢুকলেন।
গজানন বটব্বেলকে দেখেই বলে উঠলেন,এই যে আমাদের মোড়ল বটব্বেল এসেছেন।ওঁর কাছে জিজ্ঞেস করো দেখি ওর নামের অর্থ কি?
--আবার নামের পেছনে লাগলে কেন বাপু,ও সব বাপ ঠাকুরদাদের ইচ্ছে গুলোকে নিয়ে বেশী নাড়াচাড়া নাই বা করলে!বটব্বেল কেন নামের মাহাত্ম এড়িয়ে যেতে চাইলেন বোঝা গেলো না।
--আচ্ছা বলই না তোমর নামের কি অর্থ?গজানন যেন আজ এ সব অর্থ টর্থ নিয়েই পড়েছেন।আসলে দোকানে এখন লোক নেই--এই ভর দুপুরের সময় দোকান প্রায় ফাঁকাই থাকে। আর তখন গ্রামের এই মাঝ বয়স ছাড়িয়ে যাওয়া লোকরা এসে আড্ডা জমাবার চেষ্টা করেন।
বটব্বেল হাসলেন খানিক,দোকানের পাতা লম্বা বেঞ্চিতে বসে কাঁধের পাতলা চাদরটা তুলে মুখ পুছে তারপর সেটা দিয়েই ঘুরিয়ে মুখে একটু হাওয়া খেয়ে নিয়ে বলে উঠলেন,বুঝলে গজানন, আমার ঠাকুমার দেওয়া নাম,ওই আমাদের পূর্ব বঙ্গের বাড়ির ধারে নাকি কোথাও বট আর বেল গাছ এক জাগায় জড়াজড়ি করে উঠে ছিল।সেটা দেবতার থান বনে গিয়েছিল।সবাই সেই থানকে খুব ভক্তি করত।আর সুযোগ বুঝে কোথাকার কোন সাধু এসে ওই গাছ তলায় পাথরের নুড়ি বসিয়ে দিলো।ব্যাস,আর কি--মানুষের ভক্তি আর দেখে কে--ভক্তিতে একেবারে গদগদ আরকি!এর পর দেখতে না দেখতে ওই থানে মন্দির তৈরি হল--বাবা শিবের স্থাপনা হল।
এসব ঘটনা গিয়ে সেই ঠাকুমার সময়কার।ওই বিখ্যাত বটব্বেল সমাহারে আমাদের উপাধি বটব্বেল হোয়ে গেলো।আমার ঠাকুরদা ছিলেন ভক্তি ভাবে একেবারে গলমান।সে সঙ্গে জুটে গিয়ে ছিলেন ঠাকুমা।দু জনের হরিহর আত্মা--ওই বটব্বেল মন্দিরের অনেক মানত নাকি ফলে গিয়ে ছিল।সবচে বড় মানত নাকি ছিল তাঁদের ছেলের এক সন্তান পাওয়া।আমার বাপ মা অনেকদিন নাকি নিঃসন্তান ছিলেন।শেষে মানতের ফল স্বরূপ আমি বংশের সবে ধন নীলমণি জন্মালাম।আর অতি ভক্তিতে আমার জন্মের সাথে সাথে উপাধিটাও পাল্টে গেলো--বর্মণ থেকে একেবারে বটব্বেল হোয়ে গেলো!
ব্যাখ্যা মন্দ নয়,বলে গজানন হাসতে লাগলেন।
বেচুও সেই হাসিতে যোগ দিলো।ও তার অনেক জান্তার ঝুলি থেকে বের করল সব অদ্ভুত অদ্ভুত নাম--বলল কতগুলি,এসব উপাধি নামের কোন মাথা মুণ্ড নেই!এই ধর গিয়ে দাউ,কাটারি, কুল্হারি,কি নেই বল?
গজানন বলে ওঠেন,ঠিক বলেছ তুমি,মেদনী পুরে মামা বাড়ি একবার ঘুরতে গিয়ে ছিলাম।মামা সে সময় সরকারী চাকরি নিয়ে সেখানে থাকতেন।ওখানে গিয়ে জানলাম,মামাদের আশেপাশে ওই কাটারি,দাও,কুল্হারীদের বাস--কি ভাবে এ সব নাম হল কে জানে!
এমনি সময়ে দোকানে এক খরিদ্দার এলো,জিজ্ঞেস করলো,ভালো মিষ্টি আছে?
গজানন বললেন,ভালো মন্দ জানি না,ওই তোমার সামনে কাঁচের মধ্যে দিয়ে দেখা যাচ্ছে,কোনটা নেবে ?
লোকটাকে গ্রামে নতুন মনে হল।গজানন আগে কখনো তাকে দেখেন নি,হবে কারো বাড়িতে বেড়াতে এসেছে !
লোকটা বলল,ওই রসগোল্লা কটা টাকায়?
গজানন তাকালেন লোকটার মুখের দিকে,দেখলেন শিক্ষিত বলে মনে হচ্ছে।মিষ্টি ফিস্টি কি খায় নি কখনো না কি?নাকি নিজের পয়সায় কোন দিন কিনে খায় নি ! বললেন তিনি,টাকায় কটা না,দু টাকায় একটা।মিষ্টির দাম শুনে কেন যেন খুব অবাক হোয়ে গেল লোকটি,তার চোখ দুটো বড় বড় হোয়ে গেলো।গজানন বলে উঠলেন,মিষ্টি কোন দিন কেন নি নাকি!--দু টাকা শুনে তোমার চোখ যেন ছানা বড়া হোয়ে গেল ?
--না,না,তা না,আসলে--লোকটা কথা শেষ করার আগেই বেচু বলে উঠলো,আচ্ছা কত্তা,তোমার দোকানে ছানাবড়া আছে?ব্যাপারটা কেমন জেনো হোয়ে গেলো,দোকানের সবাই এমনি কথাতে হো হো করে হেসে উঠলো।লোকটা হেসে বলল,দশটা রসগুল্লা দেন।
এ সময় দোকানে খুব কম লোক মিষ্টি নিতে আসে।দোকানের যে দুজন কর্মচারী রাখা আছে তারাও বিকালের দিকে আসে।গজানন দুপুরের দিকটা একাই অনায়াসে গল্পগুজবের মধ্যে দিয়েই সামলে নিতে পারেন।গজানন লোকটাকে দশটা রসগোল্লা দিয়ে পয়সা নিয়ে খুচরো পয়সা ফেরত দিতে গিয়ে হঠাৎ মনে হল—আচ্ছা,এই লোকের নামটা জানলে কেমন হয় ! সাধারণ নাম হলে তো ঠিক আছে,আর আমাদের মত অস্বাভাবিক কিছু যদি হয় তবে মজার হতে পারে—গজানন ইচ্ছে অনিচ্ছার মধ্যেও ফট করে প্রসঙ্গ টেনে জিগ্যেস করে ফেললেন,আচ্ছা,তুমি কোথাকার লোক?
--আমি চাকদাতে থাকি। এখানে আমার মেসমশাই থাকে।
--আচ্ছা,তাই নতুন দেখছি তোমাকে,তোমার মেসমশাইয়ের নামটা কি?গজানন জিগ্যেস করলেন।
--লম্বোদর সরকার,লোকটা নাম বলল।
গজানন তাকালেন বটব্বেলের দিকে দেখলেন,বটব্বেল মোছের নিচে হাসছেন!গজানন ধীরে হেসে বলে উঠলেন,কিন্তু সরকার মশাইয়ের উদর মানে পেট তো লম্বা না,অমন বেঁটে খাটো লোকটার নাম কি করে লম্বোদর হোল ?
--ওই যেমন আমাদের হয়েছে!বটব্বেল মাঝখান থেকে ফোঁড়ন কাটলেন।
এবার গজানন ঈষৎ সঙ্কোচের সঙ্গে লোকটিকে বলে উঠলেন,আচ্ছা, তোমার নাম কি?
লোকটা নিজের নাম বলতে গিয়ে কেন যেন থমকাল,সত্যি নামটা তার একটু বিদঘুটে বটে!কিন্তু কি করা যাবে বাপ ঠাকুরদাদের দেওয়া আদরের নাম!লোকে জিগ্যেস করলে বলতেই হয়,আর তা ছাড়া এই নামই তার পোশাকি নাম।অগত্যা লোকটি ধীরে ধীরে বলে উঠলো,আমার নাম আত্মারাম।নাম বলে লোকটা উপাধির দিকে আর এগোল না।এখানেই ক্ষান্ত হোল।
ইচ্ছে না থাকলেও বেচু,বটব্বেল,গজানন তিন জনেই এক সঙ্গে হেসে উঠলো ।
বেচারা আত্মারাম তখন বোকার মতই অসহায় । সে সবার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো।
গজানন দেখলেন ব্যাপারটা ঠিক হচ্ছে না,শত হলেও লোকটা তার দোকানের খরিদ্দার।আবারও তো ও দোকানে মিষ্টি কিনতে আসতে পারে।তিনি বলে উঠলেন,মনে কিছু করো না ভাই, আমাদের সবার নামই বড় রগুড়ে!তাই হাসি সামলাতে পারি নি।তা বস না--গল্প করা যাক খানিক সময় !
আত্মারামের তাড়া ছিল।তবু বসলো।বাকি লোকগুলির নাম জানার তার বড় ইচ্ছে হোল।
বটব্বেল মোড়ল হেসে বললেন,আত্মা মানে তো ভুত বলা যায়,আর সেই সঙ্গে রাম যুক্ত হয়েছে –দুটো শব্দ বড় বেতাল ভাই,অনেকটা ভুতের মুখে রাম নামের মত ঠেকছে না? বেচারা আত্মারাম কি করবে--বাপ ঠাকুরদাদের দেওয়া নাম অস্বীকার করার ক্ষমতা তার নেই।সে বলল,কি করবো বলুন,সবই ওনাদের ইচ্ছে!
বটব্বেল বললেন,ওনাদের মানে,ভূতদের?
আবার,হো হো হেসে উঠলো সবাই--কেবল আত্মারাম ধীরে ধীরে হাসল।
গজানন এবার জিজ্ঞেস করল,দেখুন আমার উপাধি হল গিয়ে বাছার,বেচুর উপাধি মণ্ডল,আর বটব্বেল হল উপাধি,তেনার নাম হল গিয়ে বিচরণ বটব্বেল।তেনার এখানে ওখানে ঘোরা ফেরার অভ্যাস আছে,তাই নাম তেনার সার্থক—বিচরণ।এবার আমরা তোমার উপাধি কি বল তো দেখি ভাই!
আবার থমকাল আত্মারাম।এবার উপাধি বললে তো আবার সবাই হাসবে।কি করা যায় বুঝতে পারলো না,আমতা আমতা করতে থাকলো।
গজানন আবার বলে উঠলেন,আরে ভাই এত শরম কিসের?আমরা সবাই তো আপনার দলে আছিই।তবে আর বলতে আপত্তি কেন?
অগত্যা প্রকাশ করতে হল আত্মারামকে তার উপাধির রহস্য কথা।ধীরে ধীরে সে বলে উঠলো, খাঁচা।
--খাঁচা?তিন জনে যেন আঁতকে উঠলো,খাঁচা!
তার মানে হল গিয়ে তোমার নাম,আত্মারাম খাঁচা!বেচু যেন তামাশার মত করে বলে উঠলো, সবার হাসির রোল পড়ে গেলো।ধীরে হলেও আত্মারাম খাঁচাও হেসে উঠলো।
মোড়ল বটব্বেল চাপা হাসি মুখে রেখে বলে উঠলেন,বাপ ঠাকুরদাদের কিছু বলার না থাকলেও নিজেই তোমার নামটা একটু সুধার করে নিলে পারতে?,তাহলে নামটা অন্তত পূর্ণত্ব লাভ করতো!
গজানন জিজ্ঞেস করলেন,কেমন করে?
বটব্বেল বলে উঠলেন,এই ধরো গিয়ে আত্মা রামই যখন নাম হবে উপাধি তা হলে হওয়া উচিত ছিল--খাঁচা ছাড়া!—তবেই তো একটা লজিকে আসা যেত আর কি!
--সেই তো বেচারাকে ভূতের পর্যায়ে নিয়ে গেলে তুমি,গজানন হাসতে হাসতে বলে উঠল।
সবাই একার,হা,হা,হো হো,করে হেসে উঠলো।
মুখে হাসির রেখা নিয়ে আত্মারাম দোকান থেকে বের হোয়ে গেলো।সত্যি তার নাম যেন বড় বেকায়দা।এমনি সময় দোকানে ঢুকল দোকানের এক কর্মচারী।গজানন ভাবল নামের মহত্বে এর কোন ভূমিকা হতে পারে কি?অবশ্য কর্মচারীদের বেশী আস্কারা দিতে নেই--এ কথা তাঁর জানা আছে কিন্তু আজ মনে হল--আসর জমানো কি করে সম্ভব যদি না দু একটা নাম এমনি হ য ব র ল না পাওয়া যায়!
--আচ্ছা পরাণ,তোর নামের অর্থ জানিস?
গজানন হঠাৎ এমনতর প্রশ্ন করায় দোকানের কর্মচারী,পরাণ একটু অবাক হল--বলা নাই, কওয়া নাই—হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেন!তবু উত্তর তো একটা আছে,আর সেটা সে জানে.জানা কথা গলায় বাজায়ে রাখা বোকার লক্ষণ,সে বলল,হ্যাঁ,পরাণ মানে,প্রাণ!
--না,জমল না,বেচু মাঝখান থেকে বলে উঠলো।
এবার বটব্বেল জিজ্ঞেস করলেন,আচ্ছা তোর উপাধি কি?
--পাত্র,পরাণ বলে উঠলো।
গজানন বলে উঠলো,তার মানে কি হল?
পরাণ বলল,প্রাণ পাত্র।
--ভালো নাম রে তোর--প্রাণ পাত্র মানে গিয়ে হল,হৃদয়,যারে বলে!বলে গজানন হাসল।
এবার তেমন হাসি হাসল না কেউ।এমনি সময় দোকানের আর এক কর্মচারী এসে গেলো।
গজানন তাকে শুরুতেই পথ আটকে জিজ্ঞেস করলেন,খেঁড়ু,তোর পুরা নাম কি?
খেঁড়ু হঠাৎ এমনি প্রশ্ন শুনে ভেবাচেকা খেয়ে গেলো,চেনাজানা লোকটা তার পুরা নাম কেন জানতে চায়!এর রহস্য জট সে খুলতে পারলো না।নিজের পুরো নামতা সে মনে করার চেষ্টা করল।
--খেঁড়ু নাম খারাপ কি?বেচু হেসে বলল।
--না দেখি উপাধির মধ্যেও কোন রহস্য থাকতে পারে!
কর্মচারী ছোকরা বলে উঠলো,আজ্ঞে,আমার ভালো নাম,মানে,পুরা নাম--খড়ম--
--আগে বল,থামিস না,গজানন বলে ওঠেন।
--আজ্ঞে,খড়ম চেটু,বলে থামল খেঁড়ু।
তিনজন আবার হো হো করে হাসতে লাগলো,খড়ম চেটু!খড়ম চেটু!!হাসতে হাসতে নিজেরাই বারবার উচ্চারণ করতে লাগলো,নাম,খেঁড়ু--খড়মচেটু!
--এবার উপাধি বল,গজানন বলে উঠলো।
--আজ্ঞে,গোঁসাই,খেঁড়ু বলে বলল।
হাসির রোল পড়ে গেলো,চারজন মিলে হো হো ...হা হা...শেষে হি হি-তে গিয়ে থামল।
সবার মুখে তখন লেগে আছে হাসি।খেঁড়ুও হাসছিল,তবে ওর হাসি যেন ঠিক হাসি ছিল না--কি ধরণের হাসি ঠিক ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না--বলা যায় রকমারি হাসি--বলা যায় কি ধরণের হাসি হাসা উচিত বুঝতে না পেরে এক এক রকমের স্পেশাল হাসি ছেড়ে যাচ্ছিল ও।
এক সময় হাসতে হাসতে গজানন খেঁড়ুকে প্রশ্ন করল,তোরা জাতে কি--নাপিত নাকি?
--না,না,আমরা গিয়ে পণ্ড ক্ষত্রিয়।খেঁড়ু যেন নাপিত শব্দে অপমানিত হচ্ছিল,বলল,আমরা গিয়ে গোঁসাই।
বেচু কম যায় না,বলে উঠলো,তোর ঠাকুরদারা অন্ধ্র প্রদেশের ছিল নাকি রে?
--না,না,ঠাকুরদারা বাংলা দেশের ছিল।
বেচুর আবার প্রশ্ন,বাংলা দেশে এমন নাম পেল কি করে?
খেঁড়ু পড়েছে মহা বিপদে.হ্যাঁ,হ্যাঁ,হঠাৎ তার মনে পড়ে গেলো।তার দাদা ঠাকুর এ নাম দিয়ে ছিলেন। খেঁড়ু ছোট থাকতে গুরু দেবের খড়ম চেটে ফেলে ছিল,আর তারপর থেকে--ও এবার ঘটনা মনে মনে সাজিয়ে বলতে শুরু করল,ছোট থাকতে নাকি খেঁড়ু ওদের পরিবারের গুরুদেবের খড়ম চেটে খাচ্ছিল।তারপর থেকেই ঠাম্মা তার নাতির নাম খড়ম চেটু রাখে।সে নাম আর বদলাল না,কারণ গুরুদেবের ব্যাপারে আর কোন কথা চলতে পারে না ! তাই ওর বাপ মার প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও এই নামই থেকে গেছে। আর খড়ম চেটু নাম থেকে তার ডাক নাম হোয়ে গেছে–খেঁড়ু!
সবাই প্রায় খুলে হাসল।সারা দুপুর আনন্দে কাটল।হাসির ঠেলায় সবার মুখ যেন কেমন লাল লাল দেখাচ্ছিল!এমন হাসির আসর বহু দিন পরে বসলো। আজের দিন গজাননের কাছে একটা স্পেশাল দিন মনে হল।তিনি এবার, হাঁক দিয়ে উঠলেন,খেঁড়ু,আমাদের জন্যে করাক করে ক’কাপ চা বানা তো!খড়ম চেটু গোঁসাই চা বানাতে দোকানের ভিতর দিকে ঢুকে গেলো।