সুখের উচ্ছাস

উচ্ছ্বাস (জুন ২০১৪)

অমিত বাগচী
“ফেসবুকে তোর স্ট্যাটাসগুলো কেমন যেন হতাশায় ভরপুর!” অভিযোগের সুরে বলল রিফাত। “আনন্দ পাওয়ার মত কী বা এমন ঘটলো যে আনন্দে নাচার মত সব স্ট্যাটাস দিতে হবে?” অপুর কঠিন উত্তর! থমকে গেল রিফাত। এই কথার উত্তরে বেশি কিছু না বলাই ভাল। গভীরভাবে চিন্তা করতে পারে অপু। এরকম কঠিন ভাবে চিন্তা করতে কবি সাহিত্যিকরাও পারেন কিনা সন্দেহ। বৃষ্টির মাঝে সবাই যখন হলের ছাদে অনেক মজা করে ভিজে হুটোপুটি করে, তখন তাদের দিকে তাকিয়ে করুণার হাসি হাসে অপু। যেন মনে মনে বলে ” কী ছেলে মানুষ এরা!” বৃষ্টি ভাল লাগে না অপুর। বৃষ্টি নাকি আকাশের কান্না। এতে ভাল লাগার কিছু নেই! ওকে দেখে সবচেয়ে বেশি অবাক হয় নিশাত। অপুর কিছু কিছু আচরণতো মেলাতেই পারে না ও। ছেলেটা চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে প্রায় বারো ঘন্টা গান শোনে। মাঝে মাঝে কবিতা লেখে। প্রচন্ড হতাশার কবিতা সেগুলো। এমন সব কবিতা, পড়লে বেঁচে থাকার ইচ্ছাই যেন চলে যায়!
এই হতাশাবাদীতার বিষয়টা শুধুমাত্র অপুর মাঝেই নেই। ওদের বন্ধুদের অনেকের মাঝেও আছে। মাঝে মাঝে তর্কও হয় ওদের সাথে অনেকের। এই যেমন একদিন ঋতু অপুকে বলল, “পৃথীবিতে খারাপ লাগার মত অনেক কিছু আছে, এটা ঠিক। কিন্তু ভাল লাগার মতও জিনিষও কিন্তু আছে।” সাথে সাথে অপু উত্তর দিল,”ভাল কিছু যদি থাকবেই তাহলে প্রথিবীতে সুখী মানুষ একজনও নেই কেন?” “একজনও নেই কথাটা ভুল। অনেকেই আছে, যারা জীবনে যা হতে চেয়েছিল তাই হতে পেরেছে। যা চেয়েছিল তাই পেয়েছে। বিলগেটসকে দেখ, তুই কী বলবি উনিও সুখী মানুষ না? মিস্টার বিনকে দেখ। একজন বিশ্বখ্যাত মানুষ তিনি। তুই কি বলবি তিনিও সুখী না?”। হেসে ফেললো অপু, “না তিনি সুখী না। তুই বোধহয় জানিষ না, বিষন্নতা রোগের জন্য তিনি একবার ডাক্তার দেখিয়েছিলেন! ভাবতো একবার, যে মানুষটা পৃথীবির কোটি কোটি মানুষকে হাসাতে পারেন তিনি নিজেই একজন হাসতে পারেন না!! শুধু তাই না, চার্লি চ্যপলিন বলেছিলেন, তিনি বৃষ্টি ভালবাসেন, কারন বৃষ্টির মাঝে কেউ কারোর চোখের জল দেখতে পায় না!! তিনি যদি সুখী মানুষ হতেন, তাহলে এমন কথা বলতে পারতেন?” কথাগুলো শুনে অবাক হলো ঋতু। খুব বেশি অবাক হলো ঋতু। এই মানুষগুলোর জীবনে কী নেই? সবইতো আছে! তবুও কেন এত অসুখী তারা। আর কী পেলে তারা সুখী হবে??
*****
বন্ধুরা সবাই মিলে এসেছে দূর্গা পূজা দেখতে। পূজার মন্ডপে অসংখ্য মানুষের ভীড়। নতুন জামা-কাপড় পড়ে সবাই একসাথে জড়ো হয়েছে সেখানে। প্রত্যকের মুখে হাসি। নতুন কাপড়ের দ্যুতিতেই যেন আলোকিত হয়ে আছে চারিদিক। এই মুহুর্তে চলছে প্রসাদ বিতরণ। সবাই প্রসাদ পাচ্ছে। সবার হাতে প্রসাদ। একাসাথে প্রসাদ খাচ্ছে সবাই। মুখে প্রসাদের প্রসংশা। কোথা থেকে যেন হাজির হলো সাত আট বছরের একটা টোকাই মেয়ে আর তার সাথে দুইটা ছোট ছোট “পিচ্চি”। পিচ্চি দুইটার পরনে তালিমারা প্যান্ট; গায়ে কিছুই নেই। বোঝারই উপায় নেই এরা ছেলে না মেয়ে। মেয়েটা হঠাত ঋতুর সামনে এসে দাঁড়ালো। ঋতু ভাবলো সম্ভবত কিছু চাইবে ওর কাছে। ভিক্ষাবৃত্তি প্রচন্ড ঘৃণা করে ও। তাই তখনই মেজাজটা খারাপ হতে শুরু করলো। কিন্তু মেয়েটা কিছু না বলে ওর পায়ের কাছে নীচু হয়ে কী যেন খুঁজতে লাগলো। পাশেই ছিল অপু। কিছুটা অবাক হয়ে দেখতে লাগলো ও। পা ধরবে নাকি? এটাও একটা স্টাইল। জোড় করে পা ধরে ভিক্ষা নেয়া। কিন্তু, আজতো ওরা না খেয়ে আছে বলতে পারবে না। পূজার প্রসাদ ওদেরকেও দেয়া হচ্ছে। এসব যখন ভাবছিল থিক তখনই মেয়েটা বলে উঠলো,”আরসির বোতলটা কোই?” আরেক দফা অবাক হলো ওরা। মাত্রই খেয়ে ফেলে দেয়া সেভেন আপের বোতলটা পায়ের কাছ থেকে কুড়িয়ে নিয়ে মেয়েটার হাতে দিল অপু। তারপর দেখতে লাগলো কী করে মেয়েটা।
খালি সেভেন আপের বোতলটা হাতে নিয়ে ওটার আগে মুখ খুললো মেয়েটা। বোতলটা, ঐ মুখের উপর ধরলো। বোতলের মুখে জমা হওয়া সেভেন আপটুকু ভাগ করে দিল দুই ভায়ের মাঝে। তারপর নিজের মুখটা উঁচু করে বোতলটাকে খানিকটা উপরে ধরে রাখলো মেয়েটা। বোতলের একদম তলাণীতে জমা হওয়া সেভেনাআপটুকু অতি ধীর গতিতে নামতে লাগলো।একসময় এসে পৌছোল ওর মুখে। পরম তৃপ্তিতে স্বাদটুকু উপভোগ করলো মেয়েটা।
ওদের তিনজনকে দেখলো অপু। মনে হচ্ছে এই পৃথীবির সবচেয়ে সুখী মানুষ ওরা!!!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সকাল রয় খুব ভালো লাগলো গল্পটি
biplobi biplob Konikar jönno akta hasi futalan.
Gazi Nishad গল্পটা বিশেষ ভাল লাগলো।
Salma Siddika ভালো লাগলো, ধন্যবাদ
ওয়াহিদ মামুন লাভলু মূল্যবান কিছু ধারণা তুলে ধরেছেন। খুব ভাল লাগল। শ্রদ্ধা জানবেন।
এফ, আই , জুয়েল # বেশ ভালো -----,, অনেক সুন্দর একটি গল্প ।।
জাকিয়া জেসমিন যূথী খুব ভালো। একেবারে আলাদা একটা কাহিনী তুলে এনেছো। এবং আমাদের খুব চেনা গন্ডি থেকে যা দেখার জন্য বিশেষ দৃষ্ট লাগে। চলতে থাকুক, এই অঙ্গনে তোমার পথ চলা।

২১ জুন - ২০১২ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪