# ঘুম জড়ানো চোখে নিতু জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো,ট্রেনটা একটা ব্যস্ত স্টেশন অতিক্রম করছে।ভোর বেলা,সূর্য এখনো পুরোপুরি কুয়াশা ভেদ করতে পারেনি। চারদিকে এখনও হালকা অন্ধকার।প্লাটফরম শিশিরে ভিজে আছে, কুয়াশা ভেদ করে আসা অল্প অল্প সূর্যের আলোয় সেই শিশিরে ভেজা প্লাটফরম চকচক করছে। চারদিকে ঘন কুয়াশার চাদর।খুব বেশী দূরে দৃষ্টি যায়না।নিতু উঠে দাড়িয়ে ব্যাগ নামাবে।সামনের স্টেশনটাই ওর ।শেষ রাতের দিকে কাঁদতে কাঁদতে ও ঘুমিয়ে পড়েছিল।রাতে মনটা খুব খারাপ ছিল ।বাবা মারা যাওয়ার পর এই প্রথম ও বাড়ি ফিরছে।বাবা মারা গিয়েছিল ঢাকাতে।হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক,তড়িঘড়ি করে ঢাকা নিয়ে আসা হল।তবুও বাঁচানো গেল না।ওর তখন অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা চলছিল।মাত্র দুটো পরীক্ষা বাকি।বড় ভাইয়া অনেক বুঝিয়ে ওকে তখন রেখে এসেছে।কিন্তু পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা করেনি।বাবা মারা গিয়েছে আজ সাতদিন।সবাই বলে সময়ের সাথে সাথে সব ঠিক হয়ে যায়।কই কিছুই তো ঠিক হয়নি,ওর কাছে তো কিছুই অস্পষ্ট হয়নি।মনে হয় হাত বাড়ালেই ও পারবে, ওর বাবাকে ছুঁয়ে ফেলতে।ট্রেনের একটা লম্বা হুইসিল শুনে ও তাড়াতাড়ি জানালা দিয়ে বাইরে উকি দিবে।ট্রেন স্টেশনে ঢুকতে শুরু করেছে। ও ব্যাগ নিয়ে তাড়াহুড়া করে দরজার দিকে এগুলো।ট্রেন স্টেশনে থেমেছে। দুহাতে ব্যাগ নিয়ে স্টেশনে পা রাখতেই ওর খুব পরিচিত একটা মুহূর্ত চোখের সামনে ভেসে উঠবে।সূর্যের সোনালী আলোয় ভেজা স্টেশন চকচক করছে।ওর একদম স্পষ্ট মনে পড়ছে,যতবার ও বাড়িতে এসেছে সবসময় ওর স্টেশনে নেমেই প্রথমে চোখে পড়েছে বাবার হাসি মাখা স্নেহ ভরা মুখটা। ও ট্রেনের দরজায় দাঁড়ালেই দেখতো উৎসুক নয়নে ভিড়ের ভেতরে বাবা ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। চোখে চোখ পরলেই মুখ থেকে দুশ্চিন্তার ছাপ দূর হয়ে বাবার মুখে ফুটে উঠত হাসি আর তাড়াহুড়া করে ওর কাছে ছুটে এসেই ব্যাগ কেড়ে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আদর করতেন।সেই মানুষটা আর কোনদিন আসবে না।ওভাবে তাকিয়ে আর হাসবে না।বাবার চিরচেনা মুখটা হঠাৎ করে আর ওকে দেখে খুশিতে ভরে উঠবে না। সব ঠিক সেই আগের মতই আছে, সেই স্টেশন, সেই মানুষের ভিড়, সেই রোদ চকচকে শীতের সকাল শুধু নেই ওর সেই চিরচেনা প্রিয় বাবা। নিতু আর ভাবতে পারল না, ও হাত দিয়ে ওর গালের গড়িয়ে পরা পানি মুছবে। -আপা কই যাবেন? ও চমকে উঠে সামনে তাকাবে।এক মাঝ বয়সী রিকশা ওয়ালা অবাক হয়ে ওর ভেজা চোখের দিকে তাকিয়ে আসে।রিকশা ওয়ালা আবার বলল,কই যাবেন আপা? ‘সামনে’,অস্পষ্ট স্বরে কথাটা বলে নিতু রিকশায় উঠে পড়বে।
#বাড়ির সামনে এসে নিতু রিকশা থেকে নামল।পুরো বাড়ি নীরব হয়ে আছে।ও গেট খুলে ভেতরে ঢুকবে। উঠানে রোদের আলো পরে ঝলমল করছে। একপাশে বাবার করা ফুলের বাগান। বড় বড় ডালিয়া ফুল ফুটে আছে। নিতু উঠান পেরিয়ে বাড়িতে ঢুকল। এই সেই ওদের বাড়ি। কত স্মৃতি জড়ানো রয়েছে এই বাড়িকে ঘিরে। নিতু উঠান পেরিয়ে এসে বাড়ির বারান্দায় উঠবে। বাড়ির ভেতরে মা সুর করে কোরআন পড়ছে। নিতু ব্যাগ রেখে একটা চেয়ার টেনে বারান্দায় বসবে। এই বারান্দা ঘিরে কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে। নিতুর মনে পড়ে কত ঝড়-বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যা কেটেছে বারান্দায় বাবার গাঁ ঘেঁষে বসে রূপকথার গল্প শুনতে শুনতে। বাবার গল্প শুনতে শুনতে ও আর ওর বড় ভাইয়া ভয়ে কেঁপে উঠলে বাবা ওদের কাছে টেনে নিতেন আর বলতেন ‘আমি থাকতে কিসের ভয়’। বাবা বলো এখন তো তুমি নেই এখন তোমার নিতু ভয় পেলে কে ভয় দূর করতে কাছে টেনে নিবে? নিতু চোখের পানি মুছবে। ওর মনে আছে একবার নিতুর খুব অসুখ করেছিল। প্রচণ্ড জ্বর। সারারাত ও ঘুমাতে পারত না। ওর বাবা ওকে কোলে নিয়ে সারারাত উঠানে হাঁটতেন আর গল্প বলতেন। অসুস্থ শরীরে সারারাত বাবার বলা গল্প শুনে ও ক্লান্ত হয়ে যখন শেষ রাতের দিকে ঘুমিয়ে পরত তখন বাবা ওকে বিছানায় শুইয়ে দিত,কিন্তু নিজে ঘুমাতেন না ফজরের নামাজ পড়ে বাকি সময়টা কাটাতেন আল্লাহর কাছে ওর সুস্থতার জন্য দোআ আর কান্নাকাটি করে। এসব ভেবে নিতুর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরতে থাকবে। হঠাৎ শব্দ শুনতেই ও চোখ তুলে তাকিয়ে দেখবে ওর মা এসে বারান্দায় দাঁড়িয়েছেন। ও উঠে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করবে।
# সন্ধ্যাবেলা,কিছুক্ষণ আগে সূর্য ডুবে গেছে। চারদিকে অন্ধকার নেমে আসছে। শীতের সন্ধ্যার ঠাণ্ডা বাতাসে নিতু একটু কেঁপে উঠবে। দুই একটা জোনাকি টিম টিম করে আলো জ্বেলে আশেপাশের ঝোপঝাড়ে উড়ছে। নিতু ওর বাবার কবরের সামনে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে। সারাটা বিকেল ও এভাবে দাড়িয়ে ছিল। বাড়িতে এলে ও কখনও বাবার কাছ থেকে দূরে থাকেনি, বাবাও তার সব কাজ ফেলে বসে থাকতেন ওর কাছে। তাহলে ও এখন কিভাবে দূরে থাকবে? ও তো জগতের এই নিষ্ঠুর পরিবর্তন মেনে নিতে পারবে না। বাড়ি থেকে মায়ের গলার ডাক শোনা যাচ্ছে। নিতু কোন জবাব দিবে না।মা হারিকেন হাতে আসছেন নিতুকে বাড়ি নিয়ে যেতে। নিতু আকাশের দিকে তাকাল। সন্ধ্যার আকাশে একটা দুইটা করে তারা ফুটে উঠতে শুরু করেছে। ও অসহায় চোখে মার দিকে তাকাবে। ও জানে না কিভাবে ও ওর প্রিয়তম বাবাকে ছাড়া বেঁচে থাকবে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
বশির আহমেদ
গল্পের মাধ্যমে পাঠকের মনে একটা মায়াজাল সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন । গল্পের বেশ কিছু জায়গায় চলচিত্রের মত চিত্রকল্প তৈরী করেছে । লেখককে অনেক অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা ।
রোদের ছায়া
প্রথম গল্প এই আসরে , খুব ভালো হয়েছে , বানান , বাক্য গঠন সব ঠিকঠাক শুধু একটু সমস্যা হয়েছে ...অনেক জায়গায় আছে ... করবে , থাকবে , ভাববে , দেখবে , তাকাবে এরকম কিছু শব্দ .....এটাকি কোনো ভবিষ্যত চিত্র ??? নাকি ঘটমান ..???
আরমান হায়দার
গল্পে কোন কমেন্ট নেই কথাটি ঠিক নয়। ৪৮ ঘন্টা আগেই মন্তব্য দিয়েছি , কেউ কেউ গতমাসে কমেন্ট করেছে। তবে কমেন্টের সংখ্যার কথা যদি বলেন, তাহলে আপনার মাথায় রাখতে হবে লেখাটি গল্প না কবিতা, বড় না ছোট, ----------------------------------------------------------------------------------।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।