বাঁচার শেষ চেষ্টা

বৃষ্টি (আগষ্ট ২০১২)

রফিকুল ইসলাম সাগর
  • ১২
চারিদিকে ঠান্ডা বাতাস। দুপুর বেলায় চারিদিকে অন্ধকার হয়ে এসেছে। আকাশে প্রচন্ড মেঘ জমেছে। ঝর হবে,প্রচন্ড ঝর। সমুদ্রের ঢেউ বাড়ছে। সমুদ্রে-নদীতে চলাচল কারী জাহাজ,লঞ্চ,স্টিমার,নৌকা নিরাপদ স্থানে থাকার জন্য রেডিওতে ঘোষণা প্রচারিত হলো। ৯ নাম্বার বিপদ সংকেত দেখানো হয়েছে। জাহাজের দুলাদুলিতে তুহিনের ঘুম ভেঙে গেলো। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখে বাইরে ঝর হচ্ছে,সাথে শিলা বৃষ্টি। ভয় পেয়ে যায় সে। তুহিন দৌড়ে ছাদের উপর উঠলো অন্য সব সহকর্মীদের খোজার জন্য। ছাদের উপর গিয়ে তিন সহকর্মীকে পেয়ে যায়। তাদের দেখে ভয় কিছুটা কমলো। জাহাজ ভর্তি সিমেন্ট। থাইল্যান্ড এর সীমানা অতিক্রম করে তারা মায়ানমার পৌছেছে। জাহাজ পাইলট কোনো এক পাড়ে জাহাজ ভিড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তূ ততক্ষণে জাহাজের নিচের এক অংশ পাথরের সাথে আঘাত লেগে ফাটল ধরে। পানি প্রবেশ করা শুরু হয়ে যায় ভিতরে। নিরাপদ স্থানে জাহাজ নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এক তালা অতিক্রম করে দোতলায় পানি প্রবেশ করতে শুরু হয়েছে। সিমেন্টের বস্তাগুলোতে পানি ঢুকে জমাট বাধছে। জাহাজটি পুরো পুরি ডুবে যাচ্ছে। জীবন বাচাতে পাইলট লাইফ জ্যাকেট ও টায়ার নিয়ে ঝাপিয়ে পরে সমুদ্রে। ওদিকে তুহিন,মোবারক ও রহিম লাইফ জ্যাকেট টায়ার কিছুই খুঁজে পাচ্ছে না। যেই কক্ষে লাইফ জ্যাকেট ও টায়ার থাকার কথা সেই কক্ষ পুরো পুরি পানির নিচে। তিন জন ধরে নিয়েছে নিশ্চিত মিত্যু। সাহসিকতা দেখিয়ে তুহিন পানিতে ডুব দিলো। কয়েকবার ডুব দিয়ে পেয়ে যায় একটি টায়ার ও লাইফ জ্যাকেট। এখন আর দেরী করা ঠিক হবে না। তুহিন লাইফ জ্যাকেটটি গায়ে পড়ে টায়ারের মাঝখানে বসে পড়ল। মোবারক ও রহিমকে টায়ারের সাথে দড়ি দিয়ে বেধে নিল যেন পানির স্রোতে কেউ হারিয়ে না যায়। বাচার শেষ চেষ্টা। জাহাজ পুরোপুরি ডুবে গিয়েছে। পানির স্রোত তাদের তিন জনকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। গন্তব্য কোথায় কেউ জানে না।

তিনজনের চোখে মিত্যুর ভয়। এক আরেকজনকে সাহস দিচ্ছে। রহিম গান ধরল। রোমান্টিক গান। তুহিন ধমক দিয়ে বললো ওই শালা আমরা তিনজন মরতাছি আর তুই রোমান্টিক গান শুনাছ। আইচ্ছা কী আর করার রোমান্টিক গানই গা। জীবনে তো বহুত বিরহের গান শুনলাম মরার আগে একটা রোমান্টিক গান শুইন্ন্যা মরি। মোবারক পাগলের মতো হাসতে শুরু করল। তুহিন বললো কিরে কী হইছে হাসিস কেন?
মোবারক: হাসতাছি একটা কথা মনে পইরা গেলো।
তুহিন: কী কথা?
মোবারক: গত ছুটিতে বাড়িতে গিয়েছিলাম। আমার রুমে শুয়ে একটা গান ধরছিলাম। জোসনা কথা বলোনা.........। পাশের রুম থেকে জোসনা ভাবি বলে বসলো কিগো দেওর আমি আবার কখন কথা বললাম?
মোবারকের কথা শুনে তিনজনই হাসতে শুরু করল। পানির স্রোত বেড়েই চলছে। বৃষ্টিও থামছে না। শীতে তিনজনের করুন অবস্থা। চিত্কার করে কান্না শুরু হলো। বিধাতার কাছে বাচার আর্তনাত। আশে পাশে কেউ নেই। দূর দুরান্তে আলো দেখা যায়না। কোথায় যাচ্ছে তারা কেউ জানে না। বিকেল পেরিয়ে রাত হয়েছে। কারো কাছে ঘড়ি নেই। আন্দাজ করে বুঝা যাচ্ছে পাচ-ছয় ঘন্টা অতিক্রম হয়েছে।

রহিমের পা জেলেদের মাছ ধরার জালে আটকা পড়েছে। জাল পা থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে পা আরও বেশি আটকে যায়। টায়ার সামনের দিকে যাচ্ছে না। এখন কী হবে? বাচার আর কোনো উপায় নেই। রহিম বললো তুহিন ভাই আমার শরীর থেকে দড়ির বান খুলে দেন।
তুহিন : তাহলে তুই মারা যাবি?
রহিম : কী আর করমু? আমার মিত্যু নিশ্চিত। আমার জন্য আপনারা মরবেন। আমারে ছাইরা দেন। যদি বাইচ্যা থাকেন তাইলে আমার জন্য দোয়া কইরেন। আর আমার বাপ-মা আত্বীয় স্বজন সবাইরে বইলেন আমি যদি কোনো ভুল করে থাকি তারা যেন আমারে ক্ষমা কইরা দেয়। আপনারাও আমারে ক্ষমা করে দিয়েন।

রহিম শরীর থেকে দড়ির বাধ খুলে দেয়া হলো। তুহিন ও মোবারকের সামনে তার চিত্কার। দুইজন দেখছে রহিমের মিত্যু। পানির স্রোত ওদের দুইজনকে অনেক দুরে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে। অদৃশ্য হয়ে গেলো রহিম। তিনজন এক সাথে ছিল এখন হয়েছে দুজন। দুজনের মিত্যুর ভয় আরও বেড়ে গেলো। দুজন দুজনের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিল। সৃষ্টিকর্তার নাম বার বার বলা শুরু হলো। ভয়ে দুজনের মুখের জবান বন্ধ গেয়ে গিয়েছে। পাড় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কোথায় আছে জানার কোনো উপায় নেই। দূর থেকে একটি লঞ্চ আসতে দেখা যাচ্ছে। তারাই পারে এখন সাহয্য করতে। বাচার চেষ্টায়, চিত্কার করছে ওরা দুজন। বাচাও......বাচাও........বাচাও.....।

লঞ্চের কেউ তাদের দুজনের ডাক শুনতে পেলনা। পাশ দিয়ে চলে গেলো। আন্দাজ করা যাচ্ছে প্রায় ভোর হয়েছে। এখন আর বৃষ্টি হচ্ছে না। পানির স্রোত কমে গিয়েছে। তুহিন নিশ্চিত আর একটু গেলেই হয়তো চড় বা পাড়ে ভিড়বে ওরা। বাচার শেষ চেষ্টা। পা দিয়ে নিচের দিকে মাটি খুজছে। মোবারককে বললো আর একটু......। মোবারক উত্তরে কিছু বলছে না। এই মোবারক ? মোবারক........? মোবারক কিছু বলছে না। শরীরে হাত দিয়ে দেখে মোবারকের শরীর ঠান্ডা শক্ত হয়ে গিয়েছে। বুঝতে পারল মোবারক মারা গিয়েছে। মোবারকের শরীর থেকে টায়ারে বাধা দড়ির বান খুলে দিলো তুহিন।

পানির সাথে বেচে থাকার যুদ্ধে ক্লান্ত হয়ে টায়ারের উপর শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে তুহিন। পানিতে ভাসতে ভাসতে পাড়ে গিয়ে ভিরে। নৌ বাহিনারা তুহিনকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে। ঘুম ভেঙে দেখে সে নৌ বাহিনীর হাসপাতালে।

তুহিনের মুখ থেকে শুনেছিলাম সেই ভয়ানক রাতের গল্প।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিলন বনিক সমুদ্র যাত্রা..সমূহ বিপদ...অতপর করুন পরিনতি...ভালো লাগলো...শুভ কামনা....
আহমেদ সাবের তিন বন্ধুর সমুদ্র ঝড়ে পড়ার সত্য ঘটনা অবলম্বনে রচিত গল্প। শরৎচন্দ্রের বার্মা থেকে ফেরার পথে সমুদ্র ঝড়ের গল্পটা মনে পড়ে গেল। তুহিন একে একে হারাল রহিম আর মোবারককে। ভাল লাগল গল্প।
আপনার সুন্দর মতামতের জন্য ধন্যবাদ ......
Sisir kumar gain সুন্দর গল্প।বেশ ভালো লাগলো।শুভ কামনা।
ভাল লেগেছে জেনে খুশি হলাম.... আপনাকে ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।
নৈশতরী সব্দ নির্বাচনে একটু গড়মিল আছে, তা বাদ দিলে সুন্দর একটা গল্প, সুভকামনা কবিকে !!
আপনাকে ধন্যবাদ। ধন্যবাদ ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্য। ভাল থাকুন।
Ashraful Alam সুন্দর প্লট। এটি আরও সুন্দর হল উপস্থাপনার জন্য। চমৎকার।
তানি হক অনেক অনেক ভালো লাগলো ..কাহিনীটি ..ধন্যবাদ আপনাকে ..
আপনার মতামতের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।
তান্নি গল্প টি সত্যি বেশ চমত্কার হয়েছে. আর কিছু বলার নেই, নিরবে মূল্যায়ন করে গেলাম.
মতামত পেয়ে খুব খুশি হয়েছি, উত্সাহিত হলাম আগামীতে আরও লেখার। আপনাকে ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।
সিয়াম সোহানূর এদেশে এরকম ঘটনা প্রায়শই ঘটছে। অনেক ভাল লিখেছেন। ধন্যবাদ সাগর ভাই।
হ্যা ! পত্র পত্রিকায় খবর দেখি জাহাজ,লঞ্চ ডুবার। কিন্তূ যে এই মুহূর্তু পেরিয়ে এসেছে তার মুখে ঘটনা শোনার অভিজ্ঞতা আমার জীবনে প্রথম। আপনাকেও ধন্যবাদ ভাই। ভালো থাকুন।
প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস গল্পটি খুব ভাল লাগলো। অভিনন্দন আপনাকে।
অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।
আরমান হায়দার গল্পের বর্ণনা ভঙ্গী এবং গল্প উভয়ই সুন্দর। ভাল নাগল।
ভালো লেগেছে জেনে খুব খুশি হলাম। অনেক ধন্যবাদ।

০৩ মে - ২০১২ গল্প/কবিতা: ১১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪