লেখালেখির অভ্যাসটা অনেকদিনের। প্রায় অর্ধ যুগেরও বেশী। তখন আমি সবেমাত্র কলেজ চত্তরে পা রেখেছি। চারিদিকের বিরূপ প্রকৃতি ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রেক্ষিতে লেখালেখিটা আজ প্রথাগত অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তবে কলম ধরা হয় দিবস-রজনীর কর্মব্যস্ততার শেষে একান্তই অবসরে, যখন হাতের কাছে একটুকরো সময় এসে ধরা দেয়। যদিও সময় কারো কাছে স্বেচ্ছায় ধরা দেয় না; বরংচ সময়ের কাছেই জীবনের একান্ত প্রয়োজনে নিজেকে ধরা দিতে হয়। পৃথিবীটা বড় বৈচিত্রময়; বড় নির্মম। বৈচিত্রময় এই পৃথিবীর অসংখ্য মানুষের ভীড়ে আজ আমি অবহেলিত এক ভবঘুরে পথিক। নির্মমতা আমার জীবনের সমস্ত স্বপ্নসুখ, আশা-আকাঙ্খা আর কামনা-বাসনা গুলোকে দীর্নবিদীর্ণ করে নিক্ষেপ করেছে শহরের ঐ নোংড়া ডাষ্টবিনে। হৃদয়ের লালিত কল্পিত প্রেম আজ আশাহীন অব্যক্ত বেদনায় বুক চিড়ে আর্তনাদ করে আর কান্না হয়ে বেড়িয়ে আসে বড় অস্থিরতায়। হৃদয়ের মনিকোঠায় ব্যাখ্যাহীন অবজ্ঞা ঘৃনা আর নির্মম কুঠারাঘাতে ঝরেছে অজস্র রক্ত; জমেছে বুকের ভেতর এক নিষ্ঠুর চাঁপা ব্যথা। তাই হঠাৎ মাঝরাতে স্বপ্নের বিভোরে ভেসে উঠল প্রেয়সীর সেই মায়াবী অবয়ব, যা গতকাল খুব নিবিড়ভাবে দর্শণ করেছিলাম। আর তাইতো কলম ধরে লিখতে ইচ্ছে হলো কবিতার মত কিছু একটা ছাই-পাস।
নীল শাড়ী
গতকাল পরেছিলে তুমি নীল শাড়ী,
দেখে শুনে মনে হল ডানা কাটা পরী।
কালো টিপ কপালেতে ছিল আঁধা ঝুলে,
শ্বেতশুভ্র ফিতা তাই বেঁধেছিলে চুলে।
গলেতে পড়েছিলে শঙ্খেরই মালা,
ছোট দুল কানে ছিল রং ছিল কালা।
ঠোটে ছিল গোঁধলীর রক্ত রাঙ্গা রবি,
একবার দেখিলে কেউ হয়ে যাবে কবি।
চোখ ছিল ছলছল অশ্রুতে ভরা,
মনাকাশে পড়েছিল চৈত্রেরই খরা।
আল্পনা একেছিলে হৃদয়ের মাঝে,
দিশেহারা হয়েছিলাম তোমারই সাঁজে।
অভিমানে করেছিলে মুখখানি ভার,
সান্তনা দিতে পারে সাধ্য আছে কার।
পূর্নিমার চাঁদ যেন উঠেছিল কাল,
এই মন চুরি করে ফেলেছিলে জাল।
অপরূপ সুন্দরের পূঁজারী তুমি,
ঈষা করে মরে যাই সারাক্ষণ আমি।
কবিতা রচনার শেষে আবার হারিয়ে গেলাম অসীম শূন্যতার মাঝে। হয়তো নীল বেদনার প্রতীক, তাই নীলের মাঝেই জীবনের সীমাবদ্ধতা খুঁজি। সত্যহীন পৃথিবীর সমস্ত বাধাঁর প্রাচীর ভেদ করে, স্বপ্নভরা চোখে ছুটে চলি এক নিদ্রাহীন হতাশায়। অবাধ প্রশ্রয়ে জীবনের কৈশরিক দিনগুলো প্রবাহমান স্রোতের ন্যায় কেমন যেন জীবন থেকে বিলিন হয়ে গেছে। তাই নিজেকে বড় অসহায়-বড় নিঃস্ব মনে হয়। বিম্বিসার এই অবনীর ধূসর পথে-প্রান্তরে খুঁজেছি নিঃস্বার্থ প্রেম, চেয়েছি এক চিলতে সুখ কিন্তু আজও অবদি তা পাইনি। জানি মানুষ নিংড়ানো এই সংসারে বেঁচে থাকা জটিলতার মতই এক অভিশাপ। তবুও নিদ্রাহীন মনের ঝড়ে জেগে আছি ক্ষনিক স্বস্থির আশায়, বেঁচে আছি উন্মাদনায়, বেঁচে আছি উৎপীড়নে; বেঁচে আছি ব্যথার মাঝে এক নতুন ব্যথায়। হয়তো এই এক জীবনে তোমাকে কখনো পাব না, তোমার রেশম কোমল হাতে হাত রেখে বলতে পারব না এ জীবন তোমার-আমার। সেখানেই প্রেম পলাতক কিংবা প্রাচুর্যতার কাছে পরাজিত। আর সেই পরাজয় আমাকে উপহার দিয়েছে চোখ জলে ভেঁজা বালিশ; দিয়েছে ভরাডুবির আশঙ্খাতে স্বর্গহীন পৃথিবী আকড়ে ধরার ক্ষণিক আশ্বাস; দিয়েছে অস্থিরতায় এক ঘৃনার জীবন। যে জীবন সান্ত¡নাহীন দুঃস্বপ্নে ভরা; যে জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত শূন্য হাহাকারময়; যে জীবনের সকল স্বপ্ন আজ মরে গেছে। তবে সে জীবনকে কি আর জীবন বলা চলে, আদৌ না। তবুও নিদারুণ এই বাস্তবতায় মনকে অবোধ সান্ত¡নাই দিয়ে যাই। আজ ধূলি মলিন পৃথিবীর বৈচিত্র-বীভৎস অবয়বে আমি এক নিঃস্ব অপদার্থ ভবঘুরে পথিক। নিঃস্বল অসহায়ত্বের অনাবিল অঙ্গিকারাবদ্ধে আমি ছুটে চলি পূষ্প শূন্য অন্তহীন দিগন্তের পথে, চারপাশের শব্দময় যান্ত্রিক অবনীর বিজয় রাগিনী-আনন্দ-উল্লাস, স্বর্গসুখ তথা স্বপ্নীল অনুভূতি আমার এই অবহেলীত জীর্ন হৃদয়ে এতটুকু আবেদন কিংবা অতৃপ্ত আনন্দের সাড়া জাগাতে পারেনি। জীবনের শৈশব থেকে কৈশোর তথা যৌবনে এসে আজ হৃদয়ে এতটুকু প্রান চাঞ্চল্য; এতটুকু প্রানময়তা নেই; নেই এতটুকু স্বস্তি; নেই কিঞ্চিত সুখানুভূতি। জীবনের চৌত্রিশটি বসন্ত পেরিয়ে আজ আমি বড় ক্লান্ত-প্ররিশ্রান্ত। হয়তো জন্মেছিলাম দিবসের শেষে নিশির নিস্তব্ধ প্রহরে এক আঁধারের আবর্তে। আর তাইতো আঁধারের মাঝেই আছি আর আঁধারেই আমার চির বসবাস। জানি আমার জীবনাকাশের রবি কখনো উদিত হবে না; আলোকিত হবে না মরুময় এই জীবনের রুদ্ধ প্রকৃতি, প্রভাতি পাখির ডাকে হবে না প্রভাত, ঝরবে না নিঃশব্দে শিউলি-বকুল, মাধবীর সৌরভে সুরভিত হবে না চারপাশ। আঁধার সেতো আঁধারই থেকে যাবে। আর হারিয়ে যাব সেই আদি-অন্তহীন আঁধারের আবর্তে। আমি চাই না ঐশ্বর্য-ভাতি, চাই না যশের খ্যাতি, চাই শুধু একটুকরো ভালবাসা নয়তো ব্যাখ্যাহীন ঘৃনা। জীবনের অনেকটা পথ পেরিয়ে আজ আমি অন্যের সমাপ্তিহীন ক্ষুধায় রত; রিক্তের জরাজীর্ন দোয়ারে দাঁড়িয়ে এক নিঃস্ব ভিখারী। আমার কষ্টগুলো গিয়ে মিশেছে বেদনার নীল নীলয়ে। তাইতো কবিতার ভাষায় বাধ্য হয়ে কলম ধরতে হয়-
কষ্টের আকাশ সীমাহীন আকাশ হলেও
কখনো তা স্পর্শ করতে চেওনা,
সুখ নামের একটি প্রহর
যদি আসে এই দুঃখময় জীবনে
না চাইলেও বিলিয়ে দেব
একান্তই আপন মনে স্বেচ্ছায়।
বাধঁন হারা নিঃসঙ্গ বিহঙ্গের মত
একাকিত্বে যেখানেই থাকি;
যত-দুরই যাই না কেন
আসব ফিরে ভালবাসার টানে
যদি তুমি গাথঁ মায়ার বাধঁনে।
দেখবে তুমি তখন-
ভালবাসার রক্তিম পাঁপড়ি গুলো
গোলাপ হয়ে ফুটে আছে হৃদয়ের কাননে;
ভ্রমরেরা আনন্দে গান গাইছে,
প্রকৃতি তার অপরূপ সাজে সজ্জিত আর
সাগর খুঁজে পেয়েছে তার মোহনা।
স্বপ্নলোকে যদি থাক তুমি
চোখ খুললেই দেখবে তখন,
বাস্তবিক যেখানেই চেয়েছিল-
ঠিক সেখানেই দাড়িয়ে আছি আামি
একটুকরো সুখ নিয়ে।
যদি দুঃখগুলোকে ছুড়ে ফেলা যেত শহরের ঐ নোংড়া ডাষ্টবিনে; তবে হৃদয়ের সুখগুলোকে সুখ পাখি রূপে উড়িয়ে দিতাম অন্তহীন আকাশের নীল নীলিমায়, যেখানে বৃষ্টির সাথে নীলিমার গভীর মিতালী। আমি ছন্নছাড়া এক দুঃখী মানুষ, দুঃখই আমার আজন্ম সাথী। তিল তিল করে গড়া দুঃখগুলোকে একত্রিত করে আজ বুকের ভেতর গড়েছি এক দুঃখের পাহাড়। দুঃখগুলো একান্তই আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি থেকে সঞ্চিত। তাই দুঃখকে আজ আমি ভয় করি না। তবে গভীর রাতে যখন দু’চোখের পাতাকে একত্রিত করি তখন কেবলই মনে হয় আমার চারিদিকে এক অজানা দুঃস্বপ্ন এসে ভীড় করছে আর সহসাই কর্ণকুহরে এসে প্রবেশ করে বৈচিত্র্যময় এই পৃথিবীর চারপাশের দারিদ্র্য পীড়িত; ক্ষুধার্ত মানুষের অন্তীম কষ্টের হাহাকার। তাদের কেউবা অন্নহীনতায়, কেউবা বস্ত্রহীনতায়-পৈত্রিক নিবাসহনিতায় রাস্তার ধারে, ফুটপাতে, বস্তিতে বস্তিতে আবার কেউবা পার্কের ধারে জীর্ন পোশাকে অযতেœ-অনাদওে রুদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর অতি কষ্টে বেঁচে থাকার নির্মম তাগিদে দিনাতিপাত করছে। আবার কেউ কেউ জন্মসূত্রে পৃত পরিচয়হীনতায়-অভাবের তারনায়, অর্থের লালসায়, বাধ্য হয়ে বিপথে চালিত হয়ে পরিণামে খুনী আসামী হয়ে ফেরারী মন নিয়ে অপ্রত্যাশিত আর অনিশ্চয়তার মাঝে বেঁচে থাকে। বেঁচে থাকে জীবনের তাগিদে; বেঁচে থাকে সময়ের তাগিদে অনন্ত দুঃখকে সাথী করে। তাদের দুঃখগুলো একান্তই তাদের নিজেস্ব। ভুলেও কেউ দয়াপরবশ হয়ে তাদের দুঃখের অংশীদার হতে চায় না। হৃদয়ের সমস্ত আশা-আকাঙ্খা আর চাওয়া-পাওয়ার সমন্বয়ে দুরাশাই তাদের একমাত্র সম্বল হয়ে উঠে, ভাললাগাহীন এই বৈচিত্র্যময় প্রতিমুহুর্তে। জীবনের পদে পদে ক্ষণে ক্ষণে তারা অবহেলীত-ঘৃনিত। কোথাও পায় না একটুকরো সান্ত¡না; পায় না এতটুকু ভালবাসা, ঘৃনা-বিদ্বেষ আর অবহেলায় তারা- ছুড়ে ফেলা কাগজের মত নিতান্তই অচল মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। তাদের ছোট-খাট ইচ্ছে গুলো তারা সযতেœ তুলে রাখে অদৃষ্টের নড়বড়ে আলনায়, দুঃখ গুলো সারা বেলা খেলা করে তাদের হৃদয়ের ক্ষুদ্র আঙ্গিনায়, হাজারো অনাগত স্বপ্নসুখ-কাঙ্খিত কল্পিত প্রেম আর অনন্ত কষ্ট গুলো নিতান্তই ঝুলে থাকে অনন্তকালের পুরোনো হ্যাংগারে। এমনিভাবে দিন গড়িয়ে মাস, মাস গড়িয়ে বছর, এক সময় বছর গড়িয়ে পার হয় যুগ, তবু বিধাতা তাদের দিকে চোখ তুলে তাকায় না আর তাদের ভাগ্যেরও কোন পরিবর্তন হয় না। আর এভাবেই দারিদ্র্যতার সাথে সংগ্রাম করে; জীবনের সাথে যুদ্ধ করেই বেঁচে থাকে- বিধাতার আদেশিত অন্তীম মুহুর্ত পর্যন্ত। তখন ওদের দেখে মনে হয় আমার কষ্টের সাথে ওদের কষ্টগুলো গিয়ে মিশেছে অস্তগামী বেদনার নীল আকাশে। আর আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলি থোকা থোকা বেদনার গভীর আঁধারের কোন এক ক্ষুদ্র আরশিতে। তাই সমস্ত বেদনার নীল যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেতে, রচনা করে যাই আশ্চর্য এক ¯প্নীল ভুবন। আর সেই ভুবনে আমি বড় একা, শুধুই একা। বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাওয়া স্মৃতিগুলো বার বার আমাকে নিয়ে যায় অন্তহীন আকাশের কষ্টের নীল নীলয়ে। বেদনার নীল নীলয়ে শাড়ীর আঁচলের মতই জীবন গ্রন্থের পুরোটাই আজ নীল বেদনায় আচ্ছাদিত। পরাজয়ের এইতো জীবন!
০৩ মে - ২০১২
গল্প/কবিতা:
১২ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪