১
গ্রীষ্মের শেষ বর্ষা কাল । আষাঢ়ের শুরু , সেদিন বৃহঃবার । সকাল থেকে আবহাওয়াটা নরম শিক্ত শুক্ষ শুক্ষ ভাব । মনে হচ্ছে আজকে প্রকৃতির সেই অনন্ত মহিমান্নিত সর্গ হতে কোন না কোন সুখবর আজ তিনি নিজেই এই ছোট্ট সবুজ শ্যামলে ভরা পৃথিবীর বুকে নিয়ে এসেছেন । তাইত পৃথিবী আজ উজাড় করে দিচ্ছে তার সমস্ত ভালোবাসা ও নিজস্ব প্রতিভা । সূর্য যেন তার হাসজ্জল মুখখানা দিয়ে বিকট শব্দে হাসছেন । বিলিন করে দিচ্ছেন তার সমস্ত ভালোবাসার পবিত্র আলো । তাই নীল আবরন যুক্ত আকাশটা সাধা ধপধপে হয়ে গেছে । কোথাও কোন মেঘ নেই ।
আকাশের কোন এক অদূরে চিল যেন স্বাধীন ভাবে তার সমস্ত বিচরণ করে উড়ে বেড়াচ্ছে । পাখিরা স্বাধীন মনে তাদের ভাষা দিয়ে আনন্দে কিচিমিচি করে মনের ভাব প্রকাশ করে বৃক্ষলতার এ ডাল থেকে অন্য ডালে ছুটে বেড়ায় । আবার কোন কোন পাখি কিচিমিচি করে মনের দুঃখ প্রকাশ করে জীবিকা নির্বাহের জন্য অন্যত্রে চলে যায় ।
পথিকেরা ক্লান্তি শেষে তার মাটি দ্বারা তৈরি দেহখানাকে একটু জিরিয়ে নেয়ার জন্য কোন না কোন বৃক্ষের সাহায্য নিয়ে , তার গায়ে হেলিয়ে বসে , আর শীতল মধুর বাতাস উপভোগ করে । রাখাল গরুর পাল লয়ে মাঠে কি যেন আনমনা ভাবে আর মধুর সূরে গান গেয়ে গেয়ে তার মনের সমস্ত দুঃখ যন্ত্রণার ক্লান্তির অবসান নেয় । কৃষকেরা নিজ কাজে , নিজ মনে তার নীল সবুজ ক্ষেত নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরেছে । আর ঠিক সেই সময় কৃষাণী কৃষকের ব্যস্ততার আড়ালে একটু জিরিয়ে নেয়ার জন্য কাঁধে করে কলস ভরা ঠাণ্ডা শীতল পানি আর নিত্য দিনের সাথী পান্তা ভাত নিয়ে যায় । কৃষাণী আঁচল পেতে দেয় , কৃষক মনের সুখে খেয়ে দেয়ে মধুর কণ্ঠে দীঘল লম্বা সূরে গান গাইতে গাইতে আবার ব্যস্ত হয়ে পরে । কৃষাণী এক গাল মুখভরা হাসি নিয়ে ফেরার পথে পথে । সে সময় সমস্ত শিক্ষা প্রতিশ্তান গুলো তার নিজস্ব প্রতিভা , উজাড় করা ভালোবাসা , অসীম শক্তি দিয়ে মানুষ গড়ার কারিগর হয়ে , মানুষ তৈরির কাজে আজ ব্যস্ত ।
ঠিক সেই সময় ভরা রোদকে উপেক্ষা করে , অজানা অচেনা একটি ছেলে ক্লাস শেষ করে কলেজের আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে নরম সিক্ত শীতল ঘাসের ছোঁয়া নিয়ে একা একা ফিরছেন । হাতের ক্লিপ ফাইলটা দিয়ে বার বার অগ্নিকুণ্ডলিত সূর্যের সেই বিকট হাস্যেজ্বল মুকখানা আড়াল করে নিজেকে একটু ঠানডা শীতল ছায়া দেওয়ার চেষ্টা করেছেন । আর কি যেন আনমনা চিন্তায় চিন্তিত । হটাত ভাবতে শুরু হল , মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব , কে বানিয়েছে ? তার বিবেকের কাছে বার বার জানতে চায় । এই আকাশ , এই পৃথিবী , চন্দ্র , সূর্য , দিন ও রাতের অন্ধকারে আকাশ ভরা তারকা কে সৃষ্টি করছেন ? তার মনের গভীর অন্তরায় থেকে কে যেন বলছেন , হ্যাঁ , এ সবের নিশ্চয় একজন মালিক আছে । তিনি সর্ব শ্রেষ্ঠ , তিনি মহান , তিনি সৃষ্টিকর্তা ।
সে আর কিছু ভাবতে পারে না । হতভম্ব হয়ে নিস্তদ্ধ এলোমেলো মন নিয়ে নিজেকে বড় ক্লান্ত ভেবে এদিক সেদিক না তাকিয়ে ফিরে আসে একটি আম বাগানের নিচে । সেখানে কিছুক্ষণ দারিয়ে নিজেকে একটু জিরিয়ে নিয়ে , আবারও আনমনা হয়ে একা একা কি যেন ভাবতে ভাবতে চলে আসে । সে যেখানে থাকে , যেখানে ঘুমায় , খায় ও লেখাপড়া করে । এসে জামাকাপড় খুলে সোজা বাথরুমে গিয়ে নিজেকে ফ্রেশ করে নিয়ে , ডায়রিখানা প্রতিদিনের মত বইয়ে ভরা সাজানো গুছানো টেবিলের উপরে এবং কিলিপ ফাইলটা অন্যান্য ফাইলের উপ রাখে । তারপর একটি বই নিয়ে চেয়ারে বসে পড়তে থাকে । আসলে ছেলেটি কে ?
ওর নাম “সাহস” । জীবন যুদ্ধে নেমে জীবনের সংগে যুদ্ধ করে চলছে প্রতিনিয়ত । কিন্তু এই জীবন যুদ্ধের কখন যে সঠিক আবসান হবে সে জানে না । আর জানে না এই বিশাল পানি ভরা সাগরের কোথায় জীবন তরী থামানোর কুল কিনারা আছে । তাই একদা “সাহস” নিজেকে ভুলে গিয়ে , বড় অসহায় , বড় একা , ক্লান্ত ভেবে জীবন যুদ্ধে হেরে যেয়ে , জীবনের ভাঙা তরী ছেড়ে দিয়ে , জীবন যুদ্ধের অবসান নিতে উদ্যত ছিল ।
কিন্তু প্রকৃতির অসীম করুণা , কো থেকে ছুটে আসা ভালোবাসার মর্মস্পর্শনিয় নরম সিক্ত ছোঁয়া পেয়ে , সে তিলে তিলে সবকিছুকে ভুলে গিয়ে , আজ আর নিজেকে অসহায় , একা , ক্লান্ত না ভেবে , ভাঙ্গা তরীখানা সাজিয়ে গহীন জঙ্গলের মাঝ পথ দিয়ে বেয়ে বেয়ে , সমস্ত কিছুকে উপেক্ষা করে চলছে বীরের মতো । কারন তাকে সুন্দরভাবে বাচতে হবে । আর এই বাঁচার জন্য চাই লড়াই । সে এখন বুঝতে শিখেছে সুন্দরভাবে বাঁচতে হলে চাই সুশিক্ষা । আর এই সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সে বাঁচতে চায় । দাড়াতে চায় মুখুশধারি সমাজের প্রতি , অন্যায়ের প্রতি । দাড়াতে আভাব যুক্ত সমাজের প্রতি । সমাজকে সুন্দর সাবলীল সুশিক্ষায় গড়ে তুলতে চায়। চায় প্রতিবেশী , সমাজ ও দেশের মুখে হাসি ফুটাতে । তাইত সে খোঁদার কাছে প্রাথনা করে নিজস্ব কর্ম প্রতিভা দিয়ে আজ “অনার্সে” অধ্যায়নরত । পারি দিতে শুরু করেছে নীল গহীন সমুদ্রের পানিময় পানি বিস্তৃত সুদীর্ঘ পথ ।
“সাহস” একা একা তার রুমে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে বইতা নাড়াচাড়া করছে । সামনে টেবিলের উপরের জানালা দিয়ে রুমের মধ্যে সূর্যের আলো প্রবেশ করছে । সেই সাথে কিছু রোদ এসে সাহসের মুখের মধ্যে পরেছে । শুধু রুমের ফ্যানটা ধিরে ধিরে শো শো শব্দে ঘুরছে আর বাতাস দিচ্ছে । আর কোথাও কোন শব্দ নেই , মনে হচ্ছে কেউ এখনও ফেরেনি । “সাহসের’ চোখে পরে টেবিলের উপর রাখা সেই রজনীগন্ধা ফুলের স্টিক দুটি তার সমস্ত ভালোবাসার সুগন্ধ ছরিয়ে দিচ্ছে । সাহস আনমনা হয়ে একা একা সেই রজনীগন্ধা ফুলের উজাড় করা ভালোবাসা উপভোগ করছে । সেই সাথে মনে পরছে কলেজের কথা ।
একদিন সাহস ওর এক বান্ধবি সহ কলেজের কোন এক জায়গায় দারিয়ে গল্প করছিল । ওর নাম “কাব্য” , সাহস সহ এক সংগে পড়ে । সাহস প্রথম কলেজে এসে কাব্যর সংগে পরিচয় হয়েছিল । তখন থেকে কাব্য সাহসের সংগে সঙ্গ দেয় । সাহসও যেটুকু সময় কলেজে থাকে কাব্যর সংগে থাকে । যাই হোক সেই সময় হটাত করে পিছন থেকে একটি আওয়াজ আসল , ফুল লাগবে ফুল ? সাহস পিছন ফিরে তাকাতে না তাকাতেই একটি ছেলে এসে হাজির । ছেলেটির হাতে অনেকগুলো ফুল । ছেলেটি দেখতে মনে হয় কত ফুটফুটে ফুলের মত পবিত্র । ওর চোখে মুখে যেন উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ছোঁয়া । ছেলেটিকে দেখে সাহসের মায়া হলো , তবুও বলল না লাগবে না । কারন সাহসের ফুল কেনার অভ্যাস নেই । এর আগে কখনও সে ফুল কেনেনি । অবশ্য সাহসদের বাসায় অনেক অনেক ফুল গাছ ছিল , এখন তেমনটি নেই ।
ছেলেটি চলে যেতে যেতে কাব্যর দিকে চেয়ে করুন হাস্যজ্জল কণ্ঠে বলল , আপামনি আপনার লাগবে না ? কাব্য একটু হেসে মাথা নেরে বলল হাঁ লাগবে । হাতে থাকা ভ্যানিতি ব্যাগ থেকে টাকা বের করে দুটি রজনীগন্ধার স্টিক কিনে সাহসের হাতে দিয়ে বলল তোর জন্য কিনলাম । তখনি সাহস চমকে উঠে দেখল , সে এখনও চেয়ারে বসেই আছে ।
সেই মুহূর্তেই নিস্তব্ধতার দেহ চিরে কোন ধ্বনি , কিসের ধ্বনি , এত সুমধুর কণ্ঠে বহিতে লাগিল , সাহসের নিশ্চুপ মনমরা দেহখানা আকুল হয়ে গেল । মোয়াজ্জেম আযান দিচ্ছে । এর সেই সমস্ত কিষান কিষাণীরা ক্লান্তির অবসান নিতে ফিরছেন । রাখাল গরুর পাল নিয়ে হইহুল্লর করে গান গাইতে গাইতে ফিরছেন মুনিবের আস্তানায় । সকল ছাত্র ছাত্রীরা শিক্ষা নিয়ে ফিরেছেন দল বেধে দলে দলে শিক্ষাঙ্গন থেকে । তাদেরও ক্লান্তি মনে নিস্তার নিতে ছুটে চলছে খরের পাতা ভরা ছোট্ট কুঠিরে । পাশের জ্বলে ভরা পুকুরে সবাই হইচই করে গোসলে মেতে উঠেছে । ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা মনের উদ্ভাসিত আনন্দের প্রতিবেদনায় সাঁতার কেটে অতল তরঙ্গের ঢেউ তুলছে । পাখি সব গাছের ডালে ডালে বসে মধুর মিলন পথের অন্তরায় নীবির আলিঙ্গনে মেথে উঠেছে । ভালোবাসার কঠিন মমত্ব বেদনাদায়ক হৃদয়কে সমস্ত জ্বালাময়ী চিৎকার থেকে বঞ্চিত করার জন্য । ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে চিরকালীন , মনের গভীর অন্তরায়ের পথ খুলে বিদ্যুৎ শিখার মত উজ্জ্বল সুধুর প্রসারী আনন্দ সাগর গড়তে চায় তারাও ।
চলমান
২২ এপ্রিল - ২০১২
গল্প/কবিতা:
৮ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪