আমরা লালবাগের ১৩নম্বর গলিটিতে নতুন উঠেছি। এখানের বাসায় সবচেয়ে যেটি পছন্দ হয়েছে তা হল বিশাল বারান্দা দেওয়া করিডোর। আমি করিডোর দিয়ে তাকিয়ে থাকতে খুব পছন্দ করি। আমি চোখ বন্ধ অবস্থায় আনমনে ভাবতে পছন্দ করি। ভাবনা গুলি যে খুবই সুশৃঙ্খল তাও না। এলোমেলো ভাবনা ভাবতে থাকি। আবার পরক্ষণেই ভুলে যাই কি ভাবছি। ভাবনার মাঝেও যে এত সুখ পাওয়া যায় তা না ভাবলে বুঝা যায় না। নিজের মনে মনেই ভাবনা তৈরি হয়ে যায়। আমার মা অবশ্য এই বিষয়টা কখনো পছন্দ করে না। তবে মানুষ শারীরিক ভাবে জোর খাটাতে পারলেও মানুষিকভাবে জোর খাটাতে পারে না। মনকে কোন আইন-কানুন দিয়ে বেঁধে রাখা যায় না। মন তার বিভিন্ন শাখা প্রশাখা বিস্তার করে আপন মনে চলতেই থাকে। পৃথিবীর কোন জিনিস স্বাধীন না হলেও মন স্বাধীন। করিডোর দিয়ে তাকিয়ে থাকি, আনমনে ভাবতে থাকি। পাশাপাশিই দুটি বিল্ডিং। পাশের বিল্ডিং থেকে একটি ছেলে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। কোন ইশারা- ইঙ্গিত বা অন্য কোন অঙ্গভঙ্গিও করে না যাতে করে বোঝা যায় ছেলেটি কি চাচ্ছে। শিরিন ভাবে এভাবে তাকিয়ে থাকবে কেন। তাকিয়ে থাকলেও এত নীরব কেন। প্রথম কয়েকদিন শিরিন দেখেও না দেখার ভান করে অন্য দিকে তাকিয়ে রইল। ছেলেটি প্রতিদিন নিয়ম করে শিরিনের দিকেই তাকিয়ে থাকে। শিরিন না পারে সরে যেতে না পারে তাকিয়ে থাকতে। একদৃষ্টিতে এভাবে মানুষ তাকিয়ে থাকতে পারে তা ভাবাই যায় না। শিরিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হিসাব বিজ্ঞানে পড়ে। ওর এমন একটা অভ্যাস হয়ে গেছে ক্লাস থাকলেও সে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবে, না থাকলেও যাবে। তাই তাকে প্রতিদিনই বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হয়। রবিবার সকাল সকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হবে। আজ ক্লাস আছে। মা খাবার দিতে দেরি করায় আজকে একটু বেশি দেরি হয়ে গেছে। দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েও নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে নিয়েছে। নিচে নামার সাথে সাথেই করিডোরের ছেলেটিকে দেখা গেল। ছেলেটি ডেব ডেব তাকিয়ে আছে। এভাবে তাকিয়ে থাকার মানে কি। শিরিনের প্রচণ্ড রাগ উঠে গেল। সামনে গিয়ে কিছু বলবে ভেবেই এগিয়ে গিয়ে আবার কি মনে করে পিছনে ফিরে এলো। রাগ নিয়েই ক্লাস করতে চলে গেল। বিকালে বারান্দায় বসতে বসতেই ছেলেটি এসে হাজির। কিছু বলে না শুধু শুধু তাকিয়ে থাকে। আজ কয়েক মাস ধরেই এই অবস্থা। কিছুই বলে না। শুধু তাকিয়ে থাকে। অক্ষির পাপঁড়িও একবারের জন্য পড়ে না। এভাবে নির্লজ্জের মত তাকিয়ে থাকতে পারে কেউ তা শিরিন কল্পনাতেই আনতে পারে না। শিরিন বাধ্য হয়ে বিভিন্নভাবে বোঝাতে চেষ্টা করে ছেলেটি কি চায়। ছেলেটির কাছ থেকে কোন ফলাবর্তন পাওয়া যায় না। যতই অঙ্গ ভঙ্গি করা হোক না কেন ছেলেটি ছেলেটির মতই তাকিয়ে আছে। শিরিন এমন কোন সুন্দর মেয়ে না যে তার দিকে তাকিয়ে থাকতেই হবে। মা বাবা শিরিনকে নিয়ে চিন্তা করে মেয়েকে বড় ঘরে বিয়ে দেওয়া যাবে না। মেয়েটা এরকম শ্যামলা হল কেন। সব কিছুই ঠিক ছিল মেয়েটার চামড়া যদি একটু ফর্সা হত তাহলে ছেলেদের লাইন পড়ে থাকত। তখন ভাল ভাল ছেলে গুলোকে বাছাই করে একটা সাথে দিয়ে দিলেই হত। আমরা কত সুন্দর আমাদের মেয়ে এরকম হল কেন। শিরিন বাবা মার কোন কথাতেই একমত পোষণ করে না। আবার সরাসরি কিছু বলে ও না। মনে মনেই চিহ্নত করে নেয় আমি এই কাজটি করব অথবা করব না। বাবা মাকে কিছুই বলে না। এদের সামনে কোন কথাই বলে না। মেয়ের বাবা এবং মা মেয়ের প্রতি খুবই বিরক্ত। তারা চায় মেয়ে তাদের কিছু বলুক। তাদের পরামর্শ নেক। তাদের সাথে বিভিন্ন বিষয় শেয়ার করুক। শিরিন তার কিছুই করে না। মার সাথে কোন কিছু বলতে গেলে টাকার সমস্যা, বাবার বংশধরদের পছন্দ হয় না, তুই এত কাল হলি। তুকে নিয়ে যে কি করি। কথা না বললেও এই কথাটা উনি দিনে চার পাঁচবার বলবেনই। বুঝার পর থেকেই মার এই কথাটা শুনে আসছি। জন্মের পরপরই মনে হয় এই বিষয়টা উনার মাথায় ঢুকে গেছে। বাবার সাথে কথা বললে উনি কয়েক কথার পরই বলবেন, আজকাল মেয়েদের বিয়ে দেওয়া যা একটা অবস্থা। যৌতুক দিতে হয়, মেয়েকে সাজিয়ে দিতে হয়, মেয়ের জামাইকে চাকুরীও দিয়ে দিতে হয়। তারপরও মেয়ে নিতে চায় না। সুন্দর হলে অবশ্য ভিন্ন কথা। কারো যদি চারটি থেকে পাঁচটি সুন্দর মেয়ে থাকে তাহলে তাকে কিছু করতে হবে না। বিয়ে দিলেই হবে। মেয়েরাই বাবাকে পালতে পারবে। সুন্দর মেয়ে হলে বিয়ে দিতে টাকা লাগে না, শিক্ষা দীক্ষাও তেমন একটা লাগে না। বাংলাদেশের অনেক এমপি, মন্ত্রীর স্ত্রী আছে যারা এইচ এস সি পাশের গণ্ডিও পেরুতে পারেনি। এভাবে গবেষণা করলে দেখা যাবে বাংলাদেশের বড় বড় টাকাওয়ালারা বিয়ে করেছেন রূপ দেখে। শিক্ষা দেখে নয়। বাবা আমি এখন যাই। আমার পড়তে হবে। জানালা দিয়ে মন খারাপ করে শিরিন তাকিয়ে আছে। সত্যিই কি আমি এত কাল। মা বাবার এত উৎকণ্ঠার কারণ কি। আমার বান্ধবী যারা আছে তারা কখনই এরকম কোনদিন বলে নি। মা বাবা বলে কেন। আমার মনে হয় আমি অনেক সুন্দর। ছোট থেকেই নিজের মনে মনে নিজে সন্তুষ্ট চিত্রে মনে করে আসছি আমি অনেক সুন্দর। আমার মত সুন্দর মেয়ে হতেই পারে না। বাবা যখন বলে তখন সত্যিই খারাপ লাগে। আমি কি আসলেই দেখতে এত খারাপ। আমার এতদিনের গর্ব তাহলে কোথায় যাবে। ঘরে ভাল লাগতে ছিল না। বাহিরে বের হলাম। মাঝে মাঝে মনে হয় পৃথিবী থেকে চলে যাই। আবার ভাবি চলে গেলে চলেই গেলাম। আর কখনো ফিরে আসব না। শিরিন অন্যমনস্কভাবে হাঁটছে আর ভাবছে। পাশে চোখ ফেরাতেই ছেলেটিকে দেখা গেল। ছেলেটি কিছুটা দূরে ছিল। একদৃষ্টিতেই তাকিয়ে আছে। তাকিয়ে থাকার ভঙ্গিটাও কেমন যেন। কিছু বলে আবার কিছু বলে ও না। শিরিন এবার ছেলেটির সামনে গিয়ে জোরেই বলল, আপনার সমস্যা কি। এভাবে তাকিয়ে থাকেন কেন। মেয়েদের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে হয় না। এই ভদ্রতাটুকুও শিখলেন না। কথা শেষ করার আগেই কয়েকজন ছেলে এগিয়ে এসে বলতে লাগল, আপু কি হয়েছে, কি হয়েছে। আমাদের বলুন। ছেলেগুলি এত খারাপ, মেয়ে দেখলেই জিহ্বায় পানি এসে যায়, টিটকারি করতে থাকে। আপনি একটু অপেক্ষা করুন দেখুন কি করি। শিরিন বারবার বুঝানোর চেষ্টা করতে লাগল কিছুই হয়নি। আপনারা চলে যান। আপনাদের কিছুই করতে হবে না। কিছু কিছু ছেলে থাকে যারা নিজেরাই খারাপ। তারা যখন দেখে তাদের মত অন্যরা কোন খারাপ কাজের মধ্যে লিপ্ত। তারা তখন সহ্য করতে পারে না। তারা চায় তাদের খারাপ কর্মগুলো যেন অন্য কেউ ছিনিয়ে নিতে না পারে। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই অনেক মানুষ জমে গেল। ছেলেটি আগের ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে আছে। এবার অবশ্য চোখগুলো অন্যদিকে ফিরানো। বয়স্ক কতগুলো মানুষ এসেও ভিড় করছে। ছেলেটিকে সবাই কিছু না কিছু বলছেই। শিরিনের হঠাৎ খারাপ লাগতে শুরু করল। কি করেছে ছেলেটি কিছুই করেনি। শুধু তাকিয়ে ছিল। এমন কোন অঙ্গ ভঙ্গিও করেনি যে, যা থেকে অনুমান করা যায় যে ছেলেটি হয়ত খারাপ কিছু ইঙ্গিত করছে। কয়েকজন বয়স্ক লোক এসে বিষয়টি মীমাংসা করে চলে গেল। ছেলেগুলো এসে বলছে, আপু আপনার আর কোন সমস্যা হলে আমাদের বলবেন। এমন প্যাঁদানি দেব না। সব ঠিক হয়ে যাবে। শিরিনের মনটা এমনিতে খারাপ ছিল। আরো বেশি খারাপ হয়ে গেল। যেই ছেলেগুলি এই গলির মধ্যে সবচেয়ে খারাপ এই ছেলেগুলিই এই কাণ্ডটা ঘটিয়ে কিছু মানুষদের নিকট ভীর বনে গেল। ঘটনাটি এখানেই শেষ হলে ভাল হত। এখানে ঘটনাটি শেষ হয়নি। রাতে বাসায় এসে বাবা বলতে লাগল তকে নাকি কোন ছেলে কি করতে যাচ্ছিল। কয়েকজন যুবক এসে তকে উদ্ধার করেছে। মান-সম্মান যা ছিল সব চলে গেছে। এখন যে তকে কিভাবে বিয়ে দেই। মাও বকে যাচ্ছে। ঘটনাটি এত দূর গড়াতে পারে কোনদিন কল্পনাই করিনি। বাবার মুখে এ ধরনের কথা শুনতে হবে আমি ভাবতেই পারছি না। মা যে কি বলবে তা না বলাই ভাল। কয়েকদিন ধরে জানালায় গিয়েও ছেলেটিকে পাওয়া গেল না। তার মানে ছেলেটি বিষণ কষ্ট পেয়েছে। ছেলেটির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। যে দুষ সে করেনি তার শান্তি সে পেয়েছে। তার কাছে অবশ্যই ক্ষমা চাওয়া উচিত। শিরিনের তন্নী নামে একজন বান্ধবী ছিল। একই ডিপার্টমেন্টে পড়ে। তার কাছেই শিরিন সবকিছু শেয়ার করত। হঠাৎ করে কয়েক মাস যাবৎ সে বিশ্ববিদ্যালয়ে যায় না। ওর একটি নাম্বার ছিল এটাও বন্ধ। আজ শিরিনের শরীর খারাপ তারপরও সে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবে। বাসাটাকে জেল খানা মনে হয়। ক্লাস রুমে ঢোকার আগেই তন্বীকে দেখা গেল। শিরিনের চোখে জল এসে গেল। আজ কত দিন তন্বীর সাথে দেখা নেই। তন্বীও মনে হল কেঁদে ফেলল। এতদিন পর দেখা সুতরাং আজ কোন ক্লাস করবে না। আজ তন্বীর কি হয়েছে তা জানতে হবে। তন্নী বিয়ে করে ফেলেছে। ছেলেটাকে নাকি খুব পছন্দ হয়েছে। মোবাইল নাম্বার ছিল না বলে শিরিনকে ফোন দিতে পারে নি। এই জন্য দুঃখের কোন শেষ নেই। শিরিন তার ঘটনাটি শেয়ার করল। তন্নী প্রায় চিৎকার করেই বলল, তুই আমাদের গলিতে থাকিস আর আমি জানি না। আজ প্রথমে আমার বাসায় যাবি তারপর নিজের বাসায় যাবা। কথামত তন্নী অনেকটা জোর করেই শিরিনকে নিয়ে বাসায় আসল। কি আশ্চর্য পাশাপাশি বাসা। ছেলেটি এই বাসা থেকেই প্রতিদিন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত। ছেলেটি তাহলে তন্বীর বড় ভাই। ছেলেটি দরজা খুলে দিয়ে অন্য রুমে চলে গেল। তন্নী শিরিনকে তার ভাইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। শিরিন ছেলেটিকে বলতে লাগল ঐ দিনের ঘটনার জন্য আমি সত্যিই দুঃখিত। আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থী। শিরিনের কপোল বেয়ে জল পড়ছে। তাকে নিয়ে তন্নী পাশের রুমে চলে গেল। এরকম একটা পরিস্থিতি হবে কেউ প্রস্তুত ছিল না। ঘটনার আক্রমিকতায় সবাই হকচকায়ে গেল। তন্নী শিরিনের সাথে সবকিছু শেয়ার করল। ছেলেটির নাম আবির। ছেলেটি হচ্ছে তন্বীর আপন বড় ভাই। ভাই, বোন এবং খালা ব্যতীত আপন বলতে কেউ নেই। ভাই লেখা লেখি করে এবং পত্রিকায় রিপোর্টার হিসেবে কাজ করে। এভাবেই তাদের সংসার চলে। ভাইয়ের একবার টাইফয়েড হয়েছিল তারপর থেকেই চোখের পাতা পরে না। আবির অনুমতি নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করল। শিরিনকে একটি কবিতা দিয়ে গেল। কবিতার নাম ছিল প্রিয়ার চাহনি। এই কবিতা লেখার কারণে আবির সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে। কবি মহলেও অনেক নাম হয়েছে। এই কবিতা লেখার একমাত্র উৎস হচ্ছে শিরিনের চোখ। মনের চোখের ভিতর থেকে যদি কোন কিছু আসে তাহলে তা ইতিহাসে স্থান হয়ে যায়। শিরিনের চোখের দৃষ্টি দেখেই এই কবিতাটি লেখা হয়েছে। এটাকে আরো বেশি কাব্যময় ভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য তাকিয়ে থাকা। আবিরের কাছে শিরিনের চোখগুলো প্রাচীন গ্রিসের দেবীদের মত মনে হয়েছে। মানুষের চোখ এত সুন্দর হতে পারে তা আবির কখনো ভাবতেই পারে না। এই জন্যই চোখের দিকে তাকিয়ে থাকা। এত সুন্দর চোখ আবির কখনো দেখে নি। সারাক্ষণ মনে হয় সারা জীবন এই চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে জীবন পার করে দিতে পারবে। মানুষের চোখের চাহনি এত সুন্দর হতে পারে তা কল্পনাই করা যায় না। এই চোখের চাহনিতে কোন কামনা-বাসনা ছিল না। শুধু সৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল। সৃষ্টির উদ্দেশ্যই না জানিয়ে তাকিয়ে থাকা। শিরিনের কান্না আসতে লাগল। তাকে কোন দিন কেউ এমন ভাবে কথা বলেনি। সবসময় সে কুৎসিত এই বিষয়টাই সে শুনে আসছে। শিরিন আমার একটা কথা রাখ। আমার ভাইটি তকে পাওয়ার জন্য যোগ্য না আমি জানি। তারপরও ভাইয়ের জন্য স্বার্থপরের মত একটা বিষয় আবদার করি। আমার ভাইটিকে বিয়ে করানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। সে কাউকেই পছন্দ করে না। তার কাছে মেয়েদের চাহনি নাকি সবচেয়ে বড়। যেই মেয়ের চাহনি সবচেয়ে সুন্দর সে নাকি মন থেকেও সুন্দর। এই জন্যই বলা হয়ে থাকে চোখের দিকে তাকালে বুঝা যায় সে সত্য বলছে নাকি মিথ্যা বলছে। এই সব কথা বলে বারবার বিয়ে ভেঙ্গে দেয়। আমি বাসায় আসার সাথে সাথেই ভাইয়া তর কথা বলে। তকে নাকি ভাইয়ার বিষণ পছন্দ। তর চোখের চাহনি নাকি অনেক দিন স্বপ্নে দেখেছে। যেদিন সরাসরি দেখেছে ঐ দিন ভাইয়া ভেবেছিল সে স্বপ্নের মধ্যেই দেখছে। তুই অপমান করার পর ভাইয়া তর চেখারাটাকেই কল্পনায় আনতে পারে না। তারপর থেকে উনি একটা শব্দও লিখতে পারে না। কোন কিছুই ভাবতে পারে না। অন্য কিছু চাওয়ার মত আমার ভাষা নেই। তুই যদি কিছু ভেবে থাকিস তাহলে চিন্তা করিস। তবে তুই অন্তত কয়েকদিনের জন্য তুর চোখের চাহনিকে দেখার জন্য সুযোগ দিস। তন্নী তকে আমি জানি। তর ভাইয়া সম্পর্কে আমি অনেক আগেই তর কাছে শুনেছি। হয়ত সরাসরি কোনদিন দেখি নাই। তর ভাইয়ার অনেক লেখা আমি পড়েছি। তর ভাইয়ার মত মানুষ আসলেই হয় না। তর ভাইয়াকে যদি আমি পাই তাহলে আমার মত কেউ খুশি হবে না। আমি চাই পারিবারিক ভাবেই বিষয়টা সমাধা হোক। আমার বাব-মা সম্পর্কে তুই জানিস। আমাদের বাসায় গিয়ে তরা বাবা-মার সাথে কথা বল। আমি অনেক খুশি হব যদি বাবা হ্যাঁ সূচক কিছু বলে। বাসায় এসে বারবার এই বিষয়টাই শিরিন ভাবছে। ছেলেটা সবদিন থেকে কত সুন্দর এবং কথাবার্তাও মার্জিত। ছেলেটার কথাগুলোও কোন মন ভুলানো উক্তি নয়। উনি যা বলেছেন তা সত্যিই হয়ত বলেছেন। মানুষের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলেই বুঝা যায় সে সত্য বলেছেন নাকি মিথ্যা বলেছেন। আবিরের চোখের দৃষ্টি গুলো দেখলেই বুঝা যায় উনার কথা গুলো কত খাঁটি। রাতের দিকে তন্বীর এবং তন্বির বড় ভাই আবির আসল। বাবা মার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পেশ করল। বাবা আবিরের টাকা পয়সা এবং পেশার কথা শুনে ক্ষেপে গেল। সাংবাদিক কোন পেশা হল। কয় টাকা বেতন পায়। নিজের খরচই চালাতে পারে না আবার পরিবার। আমি বেঁচে থাকতে এত গরীব ঘরে আমার মেয়েকে বিয়ে দিব না। আমার মেয়ে সুন্দর না হলেও এর চেয়ে অনেক ভাল বিয়ে আমি দিতে পারব। তারপরে আবার চোখে সমস্যা। আমার মেয়ের রুচি বলতে কিছু নাই। এমন একটা অপদার্থকে কিভাবে সে পছন্দ করে আমি বুঝি না। না আছে টাকা, না আছে ভাল চাকুরী। চেহারা সুন্দর দিয়েই বিয়ে করা যায় নাকি। মাল, ভাল চাকুরী থাকতে হয়। শিরিনের চোখ দিয়ে জল ঘরিয়ে পড়ছে। আবির তন্বী বেড়িয়ে যাচ্ছে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
afzal
গল্পটা অনেক সুন্দর হয়েছে। বাবা মা তার মেয়ের ভালই চায়। কিন্তু তারা এরকম করে কেন তা বলা মুশকিল। বাস্তবে সেইম এমন একটা ঘটনা দেখেছি। শুভ কামনা। অনেক অনেক অনেক ভাল লিখেছেন।
সত্যিই এরকম হয়। বাবা মায়ের মানষিকতা অাজকাল যে কি ওরাই ভাল জানে। প্রেম করলেই নাকি খারাপ। কি যে মছিবত। তাদের জ্বালায় একটু সুখে শান্তিতে প্রেম করবে এটাতে ও ওরা রাজি নায়। কি যে জ্বালা। মেয়ে নিয়ে সংসার করতে হবে ছেলেকে। বাবা মায়ের এত বাহাদুরির দরকার অাছে। ছেলে অথবা মেয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক হলে যাকে নিয়ে খুশি থাকতে চায় তাকে নিয়ে সংসার করা ভাল না। বাপ-মা যদি না বুঝে তা দুঃখ জনক। ধন্যবাদ।
মৃন্ময় মিজান
কখনো নিজেই গল্প বলছেন কখনো চরিত্র দিয়ে বলাচ্ছেন। কিন্তু এখানেও একটা নিয়ম আছে। চরিত্রগুলো যখন কথা বলে সেটা আলাদা করতে হয় আর গল্পকার যখন বলেন সেটাও আলাদা করে উপস্থাপন করতে হয়। লেখার প্রতি আরো যত্নবান হলে অনেক সুন্দর লেখা আপনার কাছ থেকে আমরা পাব এটা নি:সন্দেহে বলা যায়।
অাহমেদ সাবের ভাই। অাসলে অাপনি সত্যই বলেছেন। অামি যখন কোন গল্প লিখি তখন একটানে লিখে ফেলি। বানানের দিকে কখনো নজর দেই না এই কারণে যে, ভূল গুলো ধরলে ভালই লাগে। তাছাড়া সবচেয়ে বড় কথা হল ডিকশোনারি থেকে বানান দেখতে অামার কখনো ভাল লাগে না। এছাড়া অন্য একটি কারণ ও অাছে, কাউকে বলিনি, অাপনাকে বলি, অামাকে নিজে চলার জন্য অনেকগুলো টিউশনি করতে হয়। অাবার একাউন্টিংয়ে পড়ি বিধায় ফার্স্ট ক্লাস রাখেতে হয় বিধায় সময় পাই না। একটা গল্প সব্বোর্চ লিখেত সময় নেই চল্লিশ থেকে পয়ঁতাল্লিশ মিনিট। গল্প লেখা শেষ হলে ভাবি অাবার একটু দেখে নেই। পড়তে গেলে কয়েক লাইন পড়ার পর অার ভাল লাগে না। বিভিন্ন ধরণের সমস্যার কারণে এরকমটা হয়ে অাসছে। অাপতত বানানের প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে গল্পের মান বাড়ানোর প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছি। কারণ যে কোন বই ছাপাতে গেলে একজন ফ্রুপ রিডার দিয়ে বানানা গুলো ঠিক করিয়ে নেওয়া হয়। সুতরাং বানানা নিয়ে একজন লেখকের হয়ত এতটা চিন্তা থাকা উচিত না যতটা লেখার মানটা নিয়ে চিন্তা থাকা উচিত। তাছাড়া অারও একটা বিষয় অাছে। অামি নিয়মিত প্রিয়জন, ভিমরুল, পাঠকমেলা, থেরাপি, অবকাশ ইত্যাদিতে লিখি। পড়ালেখার চাপ, নিজের চাপ। অাবার লিখতে গেলে বিভিন্ন বই পড়তে হয়। অামার সংগ্রহে প্রায় তিনশ বই অাছে। অনলাইন থেকে নামিয়েছি প্রায় চারশ বই। সবচেয়ে বই বেশি নামিয়েছি হুমায়ুন অাহমেদের বই। পাঠককে ধরে রাখেতে উনি অনেক সুন্দর করে লিখতে পারেন। উনার বই সব শ্রেণীর পাঠক বোঝেন। হিমু এবং মিসির অালি সৃষ্টিগুলি জটিল ভাবে ফোটিয়ে তুলেছেন। লজিক এবং এট্টি লজিক নিয়ে লেখা। অনেক ভাল। গদ্য কাটুন অানিসুল হক অনেক ভাল লিখেন। রবিন্দ্রনাথের কয়েকটা গল্প ছাড়া বাকি গুলো তেমন ভাল লাগে না। সাধু সাধু ভাষা দিয়ে লেখা। কিন্তু কবিতাগুলো অসাধারণ লিখে, সোনার তরী, বলাকা সবচেয়ে বেশি ভাল লাগে। অনুবাদের মধ্য ভাল লাগে ড্যান বাউনের। উনা থ্রিলার যা লেখেন না। গোর্কির মা, তলস্তয়ের লেখা গুলো অামাকে দারুন ভাবে নাড়া দেয়। সমরেস মজুমদার, সোনিল গঙ্গোপাধ্যায় ইত্যাদি লেখা গুলো ও পড়তে অনেক ভাল লেগেছে। তসলিমা নাসরিন এবং হূমায়ুন অাজাদের নারীবাদি লেখাগুলো ও পড়া হয়েছে। অাপনি অাবার ভাবতে পারেন অামার জ্ঞানের পরীক্ষা দিচ্ছি নাকি। অাসলে অামি কখন কি লিখি তা নিজেই জানি না। কেউ ভাল বললে ভাল লাগে। খারাপ বললে খারাপ লাগে। অাসলে অামি নিজের প্রতি বেশি কনফিডেন। কে কি বলল তাতে অামি তেমন একটা কেয়ার করি না। এভাবেই চলছে। লেখাটা না পড়লেই খুশি হতাম। কি অাজে বাজে লিখছি। ভূল হলে মাফ করবেন। অামার মনে হয় অামাদের এখন ভূল করার বয়স। অাপনাদের উচিত অামাদের ভূল গুলো সংশোধন করে দেওয়া। জীবনে যদি ভূলই না করি তাহলে শিখব কেমন করে। এছাড়া অল্প কয়েকদিনেই যদি খ্যাতি পেয়ে যাই তাহলে সৈরাচারী হয়ে যাব। সুতরাং একটু সময় নেওয়াই ভাল। কেন জানি অাপনি মন্তব্য করলে কিছু লিখতে ইচ্ছে করে। হয়ত অাপনি অামার মনের ভিতরের কথাটাই বলেন। ফলে প্রতিবাদী হয়ে উঠতে ইচ্ছে করে। মাফ করবেন।
জালাল উদ্দিন মুহম্মদ
মনযোগ দিয়ে গল্পটি পড়লাম। একটা শ্যামলা মেয়ের মন ও পারিপার্শ্বিকতার মনোবৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ ভাল লেগেছে। সমাজের উঠকোরা সব সময়ই একটা উঠকো ঝামেলা পাকায়। এখানেও তাই হয়েছে। দৃষ্টি বিনিময় পর্বটিও বেশ সুন্দর। তবে চোখের ত্রুটি না হয়ে এটা চোখের মুগ্ধতা হলে আরও শৈল্পিক হতো।শিরীন ও আবীরের জন্য শুভকামনা। সুন্দর একটা গল্প উপহার দেয়ার জন্য লেখককে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।