হাঁ, যতই দাঁত ভেঙ্গে যাক না কেন...woda nie-gazowana...কথাটা মাথায় রাখবেন পোল্যান্ড-এ বেড়াতে গেলে। এটাই পোলিশ ভাষায় বিশুদ্ধ জল-এর তর্জমা। দোকান থেকে জলের বোতল কেনার আগে এই কথাটা লেখা আছে কিনা দেখে নিতে ভুলবেন না যেন। স্বচ্ছ প্লাস্টিক-এর নীল/সবুজ ছিপি দেওয়া জলের বোতল-এর মধ্যে যে এত জটিলতা আছে ইউরোপে-এ আসার আগে জানা ছিল না। আগেই বলেছি, আমরা ওয়ারশ পৌছই জুন মাসের মাঝামাঝি। কলকাতায় তখন স্বাভাবিক ভাবেই ফাটাফাটি গরম। কিন্তু ওয়ারশ-তে পৌছে দেখলাম বেশ ঠান্ডা। এয়ারপোর্ট-এই সেটা বেশ বুঝতে পারছিলাম। গেস্ট হাউস-এ পৌছনোর পর জিনিসপত্র গুছিয়ে আমরা একটু বাইরে বেরোবো ঠিক করলাম। চারপাশ-টা একটু ঘুরে দেখব আর কিছু দরকারী জিনিস কিনব। বাইরে বেরিয়ে পাঁচ মিনিটের মধ্যেই কাঁপতে কাঁপতে আমাদের ফিরে আসতে হলো। বাইরে তখন প্রচন্ড ঠান্ডা হওয়া দিচ্ছে। আরো বেশি করে গরম জামা চাপিয়ে আবার বেরোলাম। পরে জেনেছিলাম সেটাই ওদের গরম কাল-এর প্রথম দিন। সেই আনন্দে ওরা আবার এই দিনটা সেলিব্রেট করে ! হায়-রে ! সেদিনের তাপমান পরে দেখেছিলাম ১০-১২ ডিগ্রীর মধ্যে ছিল।
আমাদের গেস্ট হাউস সক্রেটিস ছিল ওয়ারশ শহরের দক্ষিন দিকে। চারিদিক একটু ফাঁকা ফাঁকা আর খুব পরিস্কার পরিছন্ন। জল, দুধ ইত্যাদি কিছু জিনিস কেনার জন্য আমরা একটা দোকানে ঢুকলাম। দোকানের একজন স্টাফ-কে জিজ্ঞেস করলাম যে খাবার জল কোন দিকে পাব। সাথে হাত নেড়ে ইশারা করতে অবশেষে সে আমাদের জল-এর সম্ভার-এর সন্ধান দিল। এই শহরে অনেকেই ভালো ইংরাজি বলতে বা বুঝতে পারে না। আমরা একসাথে ছ-টা বোতলের একটা প্যাক কিনে ফেললাম। এখনো মনে আছে যে কেনার সময়-ও জিজ্ঞেস করেছিলাম যে এগুলো পানীয় জল কিনা। নিশ্চিন্ত হয়ে গেস্ট হাউসে ফিরে এসে একটা বোতলের ঢাকা খুলতেই দেখি ফসস... করে আওয়াজ। একি, জলের বোতল-এ এমন-টা তো হয় না। একটু খেয়েই বুঝলাম যে এটা ঠিক সাধারণ জল নয়, সোডা ওয়াটার-এর মত কিছু। বলাই বাহুল্য যে বোতলের লেবেল-এ ইংরাজি ভাষা-তে একটা শব্দ-ও লেখা নেই। আমরা দুজনেই কেনা-জল একটু একটু করে খেয়ে দেখলাম, যে এতে আমাদের তেষ্টা মিটবে না। কি করব...ছ-বোতল কিনে ফেলেছি...আর এই জল মেয়েকে দিতেও ইচ্ছে করছে না। ঠিক করলাম যে আবার সেই দোকানে গিয়ে জলের খোঁজ করব। শুভদীপ সমাধান দিল যে এই বোতল গুলোর সবুজ ঢাকনা, আর তাই মনে হয় এইগুলো সব কার্বনেটেড ওয়াটার। ওখানে নীল ঢাকনা দেওয়া বোতল গুলো নিশ্চই সাধারণ জল। দোকানে গিয়ে প্রথমে আমরা আগের বোতল গুলো ফেরত দেবার চেষ্টা করলাম। কিন্তু আমরা কি বলতে চাইছি তা কিছুতেই বোঝাতে পারলাম না। কপাল ঠুকে এবার নীল ছিপি দেওয়া দুটো বোতল কিনে নিয়ে চলে এলাম। আবার সেই এক-ই ঘটনা ঘটল। বোতলের ছিপি খুলতেই ফস করে খানিকটা হাওয়া বেরিয়ে গেল। মনে হচ্ছে যেন কোল্ড ড্রিঙ্কস-এর বোতল খুলছি। মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। এক সাথে আটটা জলের বোতল কিনেও জলের সমস্যার সমাধান হলো না, আর দোকানে গিয়ে প্রয়োজন-টা বোঝাতেও পারছি না। গত্যান্তর না দেখে শুভদীপ এবার ক্লেমেন্টিনা-কে ফোন করলো। ক্লেমেন্টিনা এক বারেই আমাদের সমস্যার সমাধান করে দিল। বলল যে আমরা যে বোতল-গুলো কিনেছি সেগুলোর গায়ে লেখা থাকবে woda gazowana অর্থাৎ গ্যাস যুক্ত পানীয় জল। যা নাকি এখানে বেশ জনপ্রিয়! আর আমাদের কিনতে হবে woda nie-gazowana। পোলিশ ভাষায় woda মানে ওয়াটার বা জল, আর nie-gazowana মানে no gas। পরিস্কার কথায় গ্যাস-মুক্ত বা নন-কার্বনেটেড পানীয় জল। এতএব আবার আমাদের গন্তব্য সেই দোকান এবং আর কোনো ভুল না করে কিনে ফেললাম woda nie-gazowana লেখা আরো ছ-টা বোতল। আর আমি এবং শুভদীপ আট বোতল woda gazowana গলাঃধকরণ করলাম প্রায় দু-সপ্তাহ ধরে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
জালাল উদ্দিন মুহম্মদ
'ওডা নিয়ে-গাযোয়ানা' অর্থাৎ গ্যাস যুক্ত পানীয় জল ।------------- // চমৎকার ভ্রমন কাহিনী। মজার অভিজ্ঞতা সুন্দর করে উপস্থাপন করা হয়েছে। ধন্যবাদ ভাই কোয়েল।
আহমেদ সাবের
প্রথমে ভেবেছিলাম "ওডা নিয়ে-গাযোয়ানা" বোধ হয় "ওটা নিয়ে গবেষণা" 'র বাংলাদেশের কোন জেলার আঞ্চলিক রূপান্তর। গল্পে ঢুকে ভুল ভাঙ্গল। জল সমস্যা নিয়ে লেখাটা বেশ মজা করেই পড়লাম।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।