ঈর্ষার মৃত্যু

ঈর্ষা (জানুয়ারী ২০১৩)

শাহ আকরাম রিয়াদ
  • ১৯
  • ১৬
অনবরত রিং বাজছে সেলফোনের। একটু বিরক্ত হয় সুদীপ। এই ভোররাতে কল করল কে আবার? চোখ না খুলে বিছানা হাতড়িয়ে সেলফোনটি হাতে নিলো সে। তারপর চোখ খুলে দেখলো মি. হোসেন কল করেছেন। তড়িগড়ি উঠে বসলো সুদীপ। সে জানে মি. হোসেন বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া অসময়ে কল করেন না। কলটা রিসিভ করল।
ওপাশ থেকে আওয়াজ ভেসে আসলো-
- হ্যালো... মি. সেন তাড়াতাড়ি বাসাবোর ৩২/২ নং বাড়িটায় যান, ওখানে একটা মার্ডার হয়েছে।
- ওকে স্যার। আমি এক্ষুনি বেরুচ্ছি।
পুলিশে চাকরির এই এক জ্বালা, রাত নেই দিন নেই, দৌড়ের উপর থাকা। মনে মনে মার্ডারর কে গালি দিতে দিতে সুদীপ মায়ের রুমের দিকে পা বাড়ালো। মাকে বলে যেতে হবে, না হলে সকালে উঠে চিৎকার চেঁচামেচি করে পুরো বাড়ি মাথায় তুলবে। এত বড় হয়েছে সে এখনো মাঝে মাঝে মায়ের হাতে পিটুনি খেতে হয় উল্টা পাল্টা কাজের জন্য। বাবার মৃত্যুর পর মা-ই এখন তার সব। তবে অন্য একজনও আছে। যার সাথে অল্প কিছুদিন পর বিয়ের কথা পাকা হয়ে আছে। সোমার সাথে সুদীপের সম্পর্ক প্রায় চার বছর হতে চলল। সপ্তাহে দু’দিন তার সাথে দেখা করা বাধ্যতামূলক সুদীপের। আর প্রতিদিন সময় অসময়ে ফোনতো আছেই। না হলে চলে অভিমান পর্ব।
মোটর সাইকেলটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ল সুদীপ। শীতে কুয়াশাচ্ছন্ন শহরের রাস্তাঘাট, তেমন কোন যানবাহন নেই বললেই চলে। দুয়েকটি সিএনজি, প্রাইভেট কার রাস্তায় চলাচল করছে। কিছু কিছু রাস্তায় বহুতল ভবনের ধারে শুয়ে আছে গৃহহীন মানুষজন। তারা শরীরটাকে এমন করে ঢেকে পড়ে আছে যেন মড়া পড়ে আছে। একটু পরে হয়তো তাড়াতাড়ি এখান থেকে সরে পড়তে হবে বলে একটু গভীর ভাবে ঘুমাচ্ছে। সরে না পড়লে মার্কেটের মোটাসোটা গার্ড-এর পিটুনি আর গালাগালি শুনতে হবে। তার উপর আর এখানে স্থান না পাওয়ার বিরাট আশঙ্কা। সুদীপের মনে হল, এই লোকগুলোই আছে মহা শান্তিতে, বাড়ি ভাড়া নেই, চিন্তা ভাবনা নেই বেঘোরে ঘুমানো ছাড়া। দিন হলে কিছু কামাই, রাত হলে অন্যের জামাই.. ভাবে তাদের জীবন কাটছে। পরক্ষণে সে হাসে আপন মনে। এই হাসি বিদ্রূপাত্মক হাসি। হায়রে জীবন, কি জীবন দিলো বিধি এদের।
এই পুলিশের চাকুরী সুদীপের মাঝে মাঝে অসহ্য লাগে, সারাদিন ক্রিমিনালদের সাথে বসসাস বিরক্তিকর। আর মি. হোসেনও সুদীপ ছাড়া বিকল্প চিন্তা করতে পারে না, যে কারণে সুদীপ মাঝে মাঝে বলে -স্যার পুলিশে চাকরি নিয়ে মনে হয় ভুলই করলাম! -কেন কি হয়েছে সুদীপ? -এই যে আপনি আমাকে ছাড়া আর কাউকে দায়িত্ব দিতে চান না। -সুদীপ আপনি নিশ্চয়ই জানেন আমি আপনাকে কেন দায়িত্ব দিই, কেন নির্ভর করি আপনার উপর। -তা আমি জানি। তবে ডিপার্টমেন্টের অন্যরা এটা নিয়ে পেছনে কানাঘুষা করে। -যারা পেছনে পেছনে ঘেউ ঘেউ করে, তাদের ঘেউ ঘেউ করতে দিন। তাতে বিশেষ কান দিবেন না।
এসে পড়ল মার্ডার হওয়া বাড়িটার সামনে সুদীপ। কিছু জটলা চোখে পড়ল। মানুষজনের ভিড় সরিয়ে ভিতরে প্রবেশ করল সে। ভিতরে একটি মহিলার দেহ পড়ে আছে। পরনে সাদা ধবধবে শাড়িতে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ। দেহটি পচন আরম্ভ হয়েছে। সে রুমাল দিয়ে নাক চেপে ধরল। বয়স আনুমানিক পঞ্চাশ এর কাছাকাছি একজন লোক তার কাছে এগিয়ে এলো। তারপর তাকে ইশারা দিয়ে বাহিরে বেরুতে বলল সুদীপ।
-পুলিশে খবর দিয়েছে কে?
-জ্বি স্যার আমি। লোকটি বলল।
-আপনার নাম কি?
-কামরান আজম।
-তিনি আপনার কি হন?
-আমার ছোট বোন।
-কি নাম?
-মনোয়ারা বেগম।
-বয়স কত?
-৪২
-তার পরিবারে আর কে কে আছে?
-জ্বি, তার দুটি ছেলে মেয়ে আছে। স্বামী মারা গেছে বছর তিনেক হয়েছে।
-কি হয়েছে বলুনতো।
-আমি গতকাল অনেক বার ফোন দিয়েছিলাম মনির মোবাইলে। মোবাইল রিসিভ হচ্ছে না দেখে আমি তার বাড়িতে গেলাম।
-কামরান সাহেব একটু থামুন। উনার বাড়ি গেলেন মানে? এটা কি তার বাড়ি নয়?
-এই বাড়িটি তার নয়। সে এটা দেখাশুনা করত। এ বাড়ির মূল মালিক সাজিদ চৌধুরী সপরিবারে ইণ্ডিয়ায় থাকেন। মনি মাঝে মাঝে এখানে আসত। দু একদিন থাকত। দেখাশুনা করে আবার বাসায় চলে যেতো। এর জন্য সে মাসিক পাঁচ হাজার টাকা পেতো।
কথাটা বলে চাদরের আঁচল দিয়ে চোখের পানি মুছলো কামরান আজম।
-ও আচ্ছা। তো উনার বাসাটা কোথায়?
-রেলওয়ে বস্তি এলাকায়। ওখানের হাসপাতালে সে নার্সের কাজ করত।
-আচ্ছা, তারপর বলুন।
-আমি তার বাড়িতে গিয়ে শুনলাম দুদিন ধরে সে বাড়ি যায় নি। তা শুনে আমার ভয় হল। এমনি তে মাঝে মাঝে মনি বলত কারা যেন তাকে পথে চলা ফেরার সময় শাসায়, এখানে যেনো আর না আসে। সাজিদ সাহেবের সাথে এই বাড়ি নিয়ে ঝামেলা চলছে কার কার সাথে।
-তো ওনার ছেলে মেয়ে তার কোন খোঁজ খবর নেয়নি এই দুদিনে?
-মাঝে মাঝে এমন হয় ভেবে ওরা খোঁজ খবর নেয়নি। জানে দুদিন পর ঠিক চলে আসে।
-তারপর বলুন।
-তারপর আমি তাদের বাড়ি থেকে এখানে এসে দেখি ঘরে তালা দেওয়া। কিছু একটা দুর্গন্ধ নাকে আসাতে আমার ভয়টা আরও বেড়ে গেলো। তারপর দরজা ভেঙে ভিতরে ডুকে দেখি মেঝেতে মনির লাশ পড়ে আছে।
কামরান আজম আর কথা বলতে পারলনা, কণ্ঠ রোধ হয়ে এলো তার।
-মি. আজম আপনাকে আবারও প্রয়োজন হতে পারে আমাদের। আপনি মি. সাজিদকে খবর দিয়ে থানায় আমার সাথে যোগায়োগ করতে বলুন। আর উনার ছেলে মেয়েকে নিয়ে একবার থানায় আসুন আপনি।




আজ এক সপ্তাহ শেষ হতে চলল। কোন কুল কিনারা হচ্ছে না মার্ডারটার। এর মধ্যে সাজিদ সাহেবের ইনফরমেশনের ভিত্তিতে তার সাথে যাদের ঝামেলা চলছিল তাদেরকে কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু তেমন কোন কিছু আভাস পাওয়া গেল না। সুদীপ তাদের গতিবিধিও নজরে রাখছে এবং তাদের জীবন বৃত্তান্ত খতিয়ে দেখল। সাজিদ সাহেবের বাড়িটা নিয়ে গন্ডগোল ছিল তাদের সাথে এটা সত্য, সেটা আদালতে বিচারাধীনও রয়েছে, এ নিয়ে তারা মনোয়ারা বেগমকে হুমকিও দিয়েছিল এ বাড়িতে না আসার জন্য সেটাও স্বীকার করেছে। কিন্তু একটি খবরের ভিত্তিতে অন্য একজনের উপর সুদীপের সন্দেহ হচ্ছে। এখন নিশ্চিত ক্লু পেতে হবে। আবার সে কামরান আজমকে ডাকল।
-আচ্ছা কামরান সাহেব, আপনার বোনের কোন শত্রুতা ছিল নাকি কারো সাথে?
-না স্যার, মনি এমনিতেই খুব সহজ সরল ছিল। বস্তি এলাকায় তার বেশ সুনাম ছিল। জীবন যাপনও ছিল খুব সাধারণ গোছের। সারা জীবন ঐ একজায়গায় কাজ করেছে। ওখানের লোকজনেরা তো এখনও বিশ্বাস করতে পারছেনা মনি খুন হয়েছে।
-আচ্ছা উনার অর্থ সম্পদ কেমন আছে, আপনি জানেন কিছু?
-তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু নেই, সহায় সম্পত্তি বলতে ঐ বাড়িটা।
-আমি যতটুকু খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পেরেছি মনোয়ারা বেগম আপনার বাবার দ্বিতীয় ঘরের সন্তান এবং আপনার সৎ বোন। আপনাদের পারিবারিক বৃত্তান্ত মোটামোটি আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে।
কামরান আজম ভড়কে গেলো। আমতা আমতা করে বলল
-হ্যাঁ... হ্যাঁ... সে আমার সৎ বোন। কিন্তু সৎ বোন হলেও আমি তাকে খুব ভালবাসতাম। সংসারে এটা বিরল পাবেন স্যার!
-আমি যতটুকু জানতে পেরেছি আপনার বাবা মরহুম আনোয়ার আজম আপনাকে নাকি খুব একটা দেখতে পারতেন না।
-ও স্যার আমার দোষেই... ছোট বেলা থেকে একটু বখাটে ছেলেদের সাথে পড়ে বাবার চোখে খারাপ হয়ে ছিলাম।
-এখনও তো আপনার বিরুদ্ধে নানা রকম অভিযোগ আছে শোনা যায়।
-সমাজে নানা মানুষের সাথে কাজ কারবার, শত্রুরতো আর অভাব নেই, তাই নানা জনে নানা কথা বলে!
-আচ্ছা আপনার বাবা তো মোটামোটি ভাল স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি রেখে গেছেন। তার কি ভাগ বাটোয়ারা করে গেলেন?
কামরান আজম আবারও ভড়কে ঢোক গিলল
-ভাগ বাটোয়ারা.... হ্যাঁ হ্যাঁ ভাগ বাটোয়ারা তো করেই গেছেন। তা স্যার এই সব ব্যাপার এখানে কেন তুলছেন?
সুদীপ একটু মৃদু হেসে বলল
-কারণ তো অবশ্যই আছে মি. কামরান আজম, কারণ ছাড়া কি আর কার্য্য হয়?
-তা ঠিক বলেছেন! কারণ ছাড়া কার্য্য হয় না। স্যার আমার একটু কার্য্য আছে। আমি তাহলে আজ আসি।
কামরান আজম চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াল।
-সে কি! এখনও তো কথা শেষ হয় নি। চলে যাবার জন্য অস্থির হয়ে উঠলেন যে! বসুন বসুন।
কামরান আজম আমতা আমতা করে আবার বসে পড়ল।
সুদীপ আবার শুরু করল
-আপনাদের পরিবারে আপনার পরিবার ছাড়া সবাই গত হয়েছেন, আই মিন মারা গেছেন তাই না?
-জ্বি স্যার।
-তা আপনার বাবা স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির অংশীদার তো আপনি আর আপনার সৎ বোন মনোয়ারা বেগম ছিলেন, তাই না কামরান সাহেব?
-হ্যাঁ আমরা দুজনেই ছিলাম... কিন্তু বাবাতো মনি নিতে চায়নি বলে মনিকে কিছু দিয়ে যাননি, সব আমার নামে উইল করে দিয়ে গেছেন!
-আমি তো শুনেছি অন্য কথা মি. কামরান!
-কি.. কি..শুনেছেন আপনি? তার কণ্ঠস্বর কেঁপে উঠল।
-যা শুনেছি তা এখনও পর্যন্ত অবিশ্বাসের কোন ব্যাপার ঘটেনি। সুতরাং বিশ্বাস করতে হচ্ছে। আপনাকে নাকি কানা-কড়িও দিয়ে যাননি আপনার বাবা!
উত্তেজিত হয়ে উঠল কামরান আজম। শরীরে লোমকূপের গোড়ায় ঘাম জমে পাঞ্জাবি ভিজে গেছে তার।
-আপনি যা শুনেছেন সব মিথ্যে, এটা ষড়যন্ত্র করছে কেউ আমার বিরুদ্ধে। শত্রুর তো আর অভাব নেই! আপনি ওসব কথায় কান দিবেন না স্যার!
-তা কি হয় কামরান সাহেব, আমরা আইনের লোক, সব কিছু আমলে নিতে হয়। তা না হলে বোআইনি হয়ে যায় না।
আবার উঠে দাঁড়াল কামরান আজম
-দেখুন আমার তাড়া আছে। আমাকে যেতে হবে এখনই।
-আচ্ছা আচ্ছা আজ তাহলে যান। তবে বলে রাখছি আপনার সাথে আবার দেখা হচ্ছে যথা সম্ভব তাড়াতাড়ি।
আর কিছু শোনার অপেক্ষা না করে কামরান আজম খুব দ্রুত পায়ে সুদীপের রুম থেকে বের হয়ে ফুটপাত ধরে হাটতে লাগল। তার শরীর থেকে বিশ্রি এক গন্ধ তার নাকে এসে লাগছে, যে গন্ধ সে সেদিন বোনের লাশটার কাছ থেকে পেয়েছিল। মুখ দিয়ে কি বিড় বিড় করে উঠছে ক্ষণে ক্ষণে। কেমন এক উম্মাদের মত হাটছে সে।




কামরান আজম চলে যাওয়ার পর সুদীপ তার সেলফোনটি হাতে নিয়ে সোমাকে কল করল। একবার কল করল, কিন্তু রিসিভ করছে না সোমা। সুদীপ বুঝলো তার খবর আছে। গত সারা সপ্তাহে এই কেসটা নিয়ে দৌড়াদৌড়িতে তার সাথে দেখা করতে পারেনি সুদীপ। আবার কল দিলো। এবারও রিসিভ করলো না সোমা। সুদীপ মনে মনে রাম নাম জপে তৃতীয় বার এবং আজকের মত শেষবার কল দিলো। কলার টিউন প্রায় শেষ পর্যায়ে.. সুদীপের বুক ধুক ধুক করছে.. এই বুঝি রিসিভ করে আচ্ছা করে বকা ঝকা আরম্ভ করবে! সুদীপের মনে হলে বাউন্ডারিতে গিয়ে কলটা রিসিভ হল...
-আমাকে তোমার আর কল করতে হবে না! বিয়েও করতে হবে না। তুমি তোমার প্রথম স্ত্রী নিয়ে সুখে থাকো!
সোমার কণ্ঠে অভিমানের চুড়ান্ত আগুন ঝরে পড়ল।
-স্যরি সোমা! আর কখনো এমন হবে না !
-এভাবে তোমার মুখে বহুবার শোনা হয়েছে সুদীপ, আর না।
-আমার কথা শোনো!
-তোমার তো একই অজুহাত, কেইস আর কেইস, আর কি শুনাবে এছাড়া।
-আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি..
-সে তো প্রথম থেকেই শুনে আসছি..
সোমার কণ্ঠে অভিমানের আগুন কিছুটা কমলো।
-দেখো বিয়ের পর তো তুমি চিরদিনের জন্য আমার হবে।
-আমি সতীনের সাথে ঘর করতে পারবো না!
-আচ্ছা ঠিক আছে বিয়ের পর চাকুরি টা ছেড়ে দেবো! হলো তো।
-তাহলে খাবে কি? আমাকে খাওয়াবে কি?
-আরে আমারতো হয়েছে উভয় সংকট, বউ সতীনের ঘরও করতে চায় না, আবার খেতেও চায়!
এই কথায় দুজনে শব্দ করে হেসে উঠল।
-আচ্ছা ঠিক আছে, আমি সতীনের সাথে ঘর করতে রাজি আছি!
-যাক বাবা বাঁচা গেলো, বিয়ের পর অন্তত না খেয়ে মরার হাত থেকে বাঁচা গেলো!
আবার দুজনে দু’পাশ থেকে হেসে উঠল।
-আচ্ছা এবার বল, কি কারণে এত ব্যস্ত?
-ওই একটাইতো কারণ কেইস আর কেইস। বাসাবো একটা মার্ডার হয়েছে গত সপ্তাহে, নিশ্চয়ই পত্রিকায় দেখেছো।
-হ্যাঁ... একজন মহিলা খুন হয়েছিল। এমন একটা নিউজ হেডলাইন হয়েছিল।
-ঠিক ধরেছ, ওটা নিয়েই ভীষন ব্যস্ত ছিলাম।
-কতদ্দুর কি হলো?
-মোটামোটি একজনকে সন্দেহ হচ্ছে, শুধু প্রমান পত্র হাতে এলে ওয়ারেন্ট ইস্যূ করবো।
-উইশ য্যু গুড লাক...
-থ্যাংক য্যু...
-আমাদের দেখা হচ্ছে কবে?
-দেখি আগামী রবিবার তোমাদের ওদিকটায় যাবার কথা আছে। গেলে দেখা করবো।
-তোমাকে একটা কথা বলব?
-হ্যাঁ বলো!
-আমি তোমাকে অনেক ভালবসি।
-তুমি আমাকে যতটা ভালবাসো ততটা মনে হয় আমি তোমাকে ভালবাসতে পারিনি। তাই তোমাকে ইর্ষা হয় মাঝে মাঝে।
-পুলিশের জাদরেল অফিসার মি. সুদীপ সেন হঠাৎ কবি বনে গেলেন যে!
-তাহলে অভিযোগ যখন উঠল শোন না হয় আরও ক’টি লাইন...
-আচ্ছা শোনাও ।
-আমি যে তোমার মত নয়, তাই তোমাকে ঈর্ষা হয়
তোমাকে ছাড়িয়ে যেতে চেয়েছি বহুবার ভালবাসায়
হারিয়ে দিতে চেয়েছি, সেও ভালোবাসায়
বারেবার পরাজয়ে রণতরী ডুবে শুধু আমার...
-থাক আমাকে আর খুশি করার গান গাইতে হবে না। কে কাকে বেশি ভালবাসে, সে সে-ই জানে।
-একটু প্রশংসা করলে না, এত সুন্দর কবিতা শোনালাম!
-আমি তো খুশিতে আটখানা... প্রশংসা জানানোর ভাষা হারিয়ে ফেলেছি! আচ্ছা এখন রাখছি।
-ঠিক আছে। আমারও একটু বের হতে হবে। ভাল থেকো।
-তুমিও ভাল থেকো।




কামরান আজমের মুখ থেকে সেদিনের সে বিড় বিড় করা শব্দটা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠল।
-বেশ করেছি! বেশ করেছি!
-এই কি হয়েছে তোমার! কি বেশ করেছ?
পাশ থেকে উঠে মৃদু ধাক্কা দিল কামরানের স্ত্রী গুলশান আরা। হকচকিয়ে উঠৈ বসল কামরান। এদিক সেদিক উদ্ভ্রান্তের মত চাইলো। চুপ করে মাথা নিচু করে বসে রইল।
আবার জিজ্ঞাসা করল গুলশান আরা।
-কি বেশ করেছ?
কামরান হকচকিয়ে বলল
-কি বেশ করেছি!
-ঘুমের ভেতর তুমি বেশ করেছি, বেশ করেছি বলে বকছো।
-কই না তো!
সে শুয়ে ঘরের ছাদের দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে রইল। সেখানে আবছা কার ছবি ভেসে উঠলো। সে চোখ বুঝে ফেলল।
সকাল সকাল চিৎকার চেচাঁমেচিতে ঘুম ভাঙ্গল কামরান আজমের। আজও আবার তার দুই ছেলে মেয়েতে ঝগড়া বেঁধেছে। এটা সেটা নিয়ে প্রায়ই এদের ঝগড়া দেখে আসছে সে ছোটবেলা থেকে। ভেবেছিলো বড় হলে সব ঠিক হয়ে যাবে, কিন্তু ঠিক তো হচ্ছে না উপরন্তু দিনকে দিন বাড়ছে। আজ এদের ঝগড়া দেখে এই প্রথম একটা অজানা আশঙ্কা কামরান আজমের অন্ত:স্থলে আঘাত হানলো। ছোটবেলা থেকে সন্তানদের ইচ্ছে অনুযায়ী সব দিয়েছে তবুও দুটিতে শুধু ঝগড়াঝাটি লেগেই থাকে। অথচ মনির দুটি ছেলে মেয়ের ভিতরে কত মিল। কোনদিন শুনেনি সে এরা ঝগড়াঝাটি করেছে বলে। সে কোথায় যেন পরাজয়ের আভাস পাচ্ছে।
কার পরাজয়? কিসের পরাজয়? সে হাতড়ে বেড়ায়, কিছুই খুঁজে পায়না।
কে যেন তাকে ক্ষণে ক্ষণে সামনে দাঁড়িয়ে উপহাস করছে।
কে উপহাস করছে? কিসের জন্য উপহাস করছে? সে আবারও হাতড়ে বেড়াই, কিছুই খুঁজে পায় না।



সুদীপ যে ইনফরমেশন হাতে পেয়েছে তাতে এখন মনোয়ারা বেগমের খুনীকে গ্রেপ্তার করা সময়ের ব্যাপার। সে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়ল। আজ একবার মি. আরিফ হোসেনের সাথে বসতে হবে। তারপর সব ঠিকঠাক করবে। এই কেসটার ভার নিয়ে সুদীপ চিন্তায় ছিল প্রথমদিকে। কোন কিছুর কুলকিনারা হচ্ছে না দেখে সে পুরোপুরি হতাশ হয়ে পড়ল। এক পর্যায়ে আশা ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু এক পর্যায়ে মনোয়ারা বেগমের ছেলে অনিক অনেক ইনফরমেশন দিলো। তার উপর ভিত্তি করে সে অন্ধকারে ঢিল ছুড়েছিল। এবং সেটা কাজও করেছে, লক্ষভ্রষ্ট হয়নি। অনিকের ভাষ্যমতে তার মামা চিরদিন তাদেরকে একটু অন্য চোখে দেখতো। যদিও বাবার সম্পত্তির ব্যাপারে তার মায়ের কোন প্রকার আগ্রহ ছিলো না। তাই নার্সিং পেশার বাইরেও ছেলে মেয়ের পড়ালেখার খরচ যোগাতে সে সাজিদ চৌধুরীর বাড়িটি দেখাশুনার ভার নিয়েছিলো। নানাভাই মারা যাওয়ার পর একদিন মা ও বাড়িতে গিয়েছিলো। সেদিনই ফিরেছিলো, কিন্তু মায়ের চোখ দুটো জবা ফুলের মত লাল টকটকে। বুঝলাম মা অনেক কেঁদেছে। কিন্তু কি জন্য কেঁদেছিল বুঝতে পারিনি আর আমাদেরকে কিছু বলতে চাইতেন না। জিজ্ঞেস করলে কিছু বলত না। শুধু বলত কখনো মনের ভিতর হিংসা লালন করিসনে, হিংসার মত বড় শত্রু মানুষের আর দ্বিতীয়টি নেই। আর কখনও মাকে নানাবাড়ি যেতে দেখেনি।
-এই যে মি. সেন, মনোয়ারা বেগমের কেসটার কি খবর?
আরিফ হোসেনের কথায় সম্বিৎফিরে পেলো সুদীপ।
-সে ব্যাপারে আপনার সাথে কথা ছিল স্যার।
-কি কথা বলুন।
-আমি তদন্ত করে যতটুকু জানতে পেয়েছি তাতে একবার মনোয়ারা বেগমের ভাই কামরান আজমকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা গেলে বোধহয় এই ঘটনার ব্যাপারে জানতে পারব।
-তা আপনি যা ভাল করেন করুন। তবে সাবধানে করবেন। কারণ কোন হেরফের হলে বুঝতেই তো পারছেন এখনকার মিডিয়াওলারা আস্ত রাখবেনা।
-ও নিয়ে আপনি চিন্তা করবেন না। তো আমি তাহলে ব্যাটাকে গ্রেপ্তার করি।
-ওকে।



দাদা আমি কিচ্ছু চাই না, কিচ্ছু না! কিচ্ছু না! কিচ্ছু না! সবই তোমার! সবই তোমার! সবই তোমার!
কামরান আজমের ঘুম ভেঙে যায়। হকচকিয়ে বিছানায় উঠে বসে হাঁপাতে লাগল।
-পানি! পানি!
তার কণ্ঠস্বর এতটা ক্ষীণ, কেউ তা শুনতে পাচ্ছে না। বহু কষ্টে খাট থেকে নেমে পানির জগ খুঁজতে লাগল। জগটি পেয়ে হাতে নিয়ে দেখল তাতে এক ফোঁটা পানিও নেই! অথচ পানির পিপাসায় তার বুক ফেটে যাচ্ছে। আবার সেই প্রতিধ্বনি সে শুনতে পেল।
দাদা আমি কিচ্ছু চাই না, কিচ্ছু না! কিচ্ছু না! কিচ্ছু না! সবই তোমার! সবই তোমার! সবই তোমার!
কামরান আজম দু’হাতে সজোরে কান চেপে বসে পড়ল, শরীরের সর্ব শক্তি দিয়ে চিৎকার করে উঠল
-না. না.. না...
তার চিৎকারে গুলশান আরা দৌড়ে এলো কিচেন রুম থেকে। রুমে একে একে কামরান আজমের সন্তান বাবলু ও অবন্তীও প্রবেশ করল। গুলশান আরা তার পাশে এসে তার মাথায় হাত দিয়ে বলল
-এই এমন করছো কেন? কি হয়েছে তোমার?
-আমাকে এক গ্লাস পানি দাও! বড্ড পিপাসা পেয়েছে!
-কতদিন বলেছি শীতের দিনে ঘুমাবেনা। এখন কি না কি খারাপ স্বপ্ন দেখে চিৎকার করছ!
বলতে বলতে গুলশান আরা কিচেন রুমে চলে গেলো পানির জন্য। স্ত্রীর কথায় কান দেয় না কামরান আজম। তার চোখ থেকে ফোটা ফোটা অশ্রুজল গড়াতে লাগল। স্ত্রী পানি নিয়ে এলে গ্লাস হাতে নিয়ে ডগ ডগ করে এক চুমুকে গ্লাসটি শেষ করে ফেলল।
-পাপ করেছি, অনেক বড় পাপ!
-কি সব আবোল তাবোল বকছ? কি পাপ করেছ?
-হ্যাঁ আমি পাপ করেছি, মহাপাপ! আমাকে এর প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে।
-কি করেছ তুমি?
-খুন করেছি!
-খুন!
গুলশান আরা শাড়ির আঁচলে মুখ ঢেকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকায় কামরান আজমের মুখের পানে।
-আমার হুকুমেই খুন হয়েছে আমার ছোট বোন! আমি সব তোমাদের বলব। যেন আর কোনদিন কেউ এই মহাপাপ না করে।
তার কথা শুনে গুলশান আরা ডুকরে কেঁদে উঠল।
এমন সময় কলিংবেলটা ককিয়ে উঠলো। কামরান আজমের ছেলে বাবলূ উঠে দরজা খোলার জন্য চলে গেলো। তার পেছন পেছন বোন অবন্তী্‌ও হেটে গেল। একটু পরে অবন্তী দৌড়ে বেডরুমে এলো।
-বাবা পুলিশ এসেছে! তুমি তাড়াতাড়ি পালাও!
কামরান আজম যেন কিছু হয়নি এমন ভঙ্গিতে মেয়ের মুখের পানে তাকাল। তারপর বলল
-পুলিশকে আসতে দে, আজ আমার আর পালানোর জায়গা নেই। সবখানে সেই মুখ, সেই কণ্ঠস্বর আমাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। এর চেয়ে মৃত্যু অনেক ভাল হবে।
-আমার পাপের প্রায়শ্চিত না করলে তার পরিণতি কি হবে তা আমি বুঝে গেছি! আমি সব বলব।
সুদীপ দুজন কনস্টেবল নিয়ে বেডরুমে প্রবেশ করল। তার দিকে তাকিয়ে কামরান আজম শান্ত ভাবে বলল
-আমি জানি আপনি কি জন্য এসেছেন তবে তার আগে আমি সব বলে যেতে চাই আমার পরিবার ছেলে মেয়ের সামনে।
সুদীপ একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেল। এতো মেঘ না চাইতে জল। সে নিজেকে সামলে নিল।
-ঠিক আছে মি. আজম আপনি যা যা বলতে চান বলুন। আমরা বাহিরে অপেক্ষায় থাকি
কামরান আজম বাধা দিয়ে বলল
-না, আপনারা এখানেই বসুন। আমার কথাগুলো শুনুন।
-ওকে। তো আপনি শুরু করুন।
-আমিই খুন করিয়েছি মণিকে ভাড়াটে খুনী দিয়ে। আমার মা মারা যায় আমাকে ৬ বছর বয়সে রেখে। তারপর বাবা দ্বিতীয়বার বিয়ে করে ঘরে সৎ মা নিয়ে আসে। তখন সৎ মা কি বুঝতাম না। কিছুদিন পরে বুঝলাম সৎ মা কি! আমার প্রতি তার কোন ধরণের আগ্রহ ছিল না প্রথম থেকেই। বাবাও সারাদিন ব্যবসা বানিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকত। আমার প্রতি বাবারও কোন খেয়াল ছিলনা। আর সৎ মা আমার নামে বাবার কাছে এত এত নালিশ করতো বাবা শুনে আমাকে ভীষণ মারত। কয়েক বছর পর আমার সৎ বোন মণি জন্মাল। এর পর থেকে আমার অবহেলা-অযত্নের কোন সীমা ছিল না। ছোট বেলা থেকে আমি মনিকে অনেক হিংসা করতাম। সবকিছুতে তার প্রতি আদর-যত্ন দেখে আমার ভিতরে ক্রমে ক্রমে একটা প্রতিশোধের আগুন জমা হতে থাকল। কতদিন ভেবেছিলাম যখন সে বাড়ির ছাদে খেলতে উঠবে মণিকে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দেবো। কিন্তু সাহস হয়নি কখনো। আর মণিটাও বোকা ছিল, কখনও বুঝত না তাকে আমি কি রকম হিংসা করতাম, মেরে ফেলতে চাইতাম। আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে ভাল ভাল খাবার গুলো দিতো, মাঝে মাঝে মায়ের হাতে ধরা বকুনিও খেতো, তবুও থামত না। এভাবে অবহেলা অনাদরে আমি বাউণ্ডুলে হয়ে উঠি। পাড়ার যত বখাটে ছেলে পেলে ছিল ওদের সাথে মিশে নানা অপকর্মে জড়িয়ে যাই। তাই প্রতিদিন বাবার কাছে নালিশ আসতে থাকে দু’তিন টা করে। বাবা আমাকে বাড়িতে দেখলে খুব মারত। তাই পালিয়ে পালিয়ে থাকতাম। তখনও এই মণিটা আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে খাওয়াতো। আমি একদিন কাউকে না জানিয়ে লুকিয়ে বিয়ে করে ফেলি নিজের পছন্দের মানুষকে। এটা শুনে বাবা আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এটার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে আমার সৎ মা। সে আমার বাবাকে উসকে দিয়েছে আমাকে বাড়ি থেকে বের করার ব্যাপারে। বাড়ি থেকে বের হয়ে বাসা ভাড়া করে বসবাস করতে লাগলাম। মাঝে মাঝে মণি এসে দেখা করে যেতো। একদিন খবর পেলাম মণির বিয়ে হয়ে গেছে। এরপর বছরে দুয়েকবার মণি আমার সাথে দেখা করত। সংসারের কথা বলত, ছেলে মেয়ের কথা বলত। তাদের নিয়ে বেড়াতে আসত। এছাড়া আর কোন যোগাযোগ ছিলনা বাড়ির সাথে। একদিন মণি এসে কাঁদতে খরব দিলো মা মারা গেছে। আমি খবরটি শুনে ভীষণ খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু মণিকে বুঝতে দিইনি। এর দু বছর পর খবর পেলাম বাবা মৃত্যু শয্যায়। ছুটে গেলাম। স্বভাবতই সম্পত্তির লোভে। কিন্তু বাবা আমাকে দেখে ভীষন রেগে গেলেন। উত্তেজিত হয়ে আমাকে বেরিয়ে যেতে বললেন। আমিও কিছু না বলে অভিমানে বেরিয়ে চলে এসেছি। এর কিছুদিন পর বাবা মারা গেলো। এরপর আমি আমার পরিবার ছেলে মেয়ে নিয়ে আমার পৈতৃক বাড়িতে উঠলাম। কিন্তু সেখানে এসে যা শুনলাম তাতে আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। আমার নামে একটা কানা কড়িও বাবা লিখে দিয়ে যায়নি। এর পেছনেও আমার সৎ মায়ের ইন্ধন ছিল। এটা শুনে আমার বহু দিনের পুরোনো প্রতিশোধের আগুন আবার দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল। আমি স্থির করে ফেললাম এবার সে প্রতিশোধ নেওয়ার সময় হয়েছে। আমি অপেক্ষায় থাকলাম। মাঝে মাঝে মণি বাড়িতে আসতো তাকে দেখে আমি সব হারানোর ভয় করতাম। এই বুঝি সব সে কেড়ে নিয়ে বলল এ সব আমার, তুমি বেরিয়ে যাও এ বাড়ি থেকে। তাই আমি তাকে অনেক অপমান করতাম। কথা বলতাম না ঠিক আগের মত। তারপর একদিন সুযোগ বুঝে ভাড়াটে খুনী দিয়ে আমি খুন করিয়েছি আমার মণিকে।
কথা গুলো এক নাগাড়ে বলে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো কামরান আজম। তার গাল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে অনর্গল।
সুদীপ এতক্ষণ নীরবে সব শুনল।
-তাহলে আপনি স্বীকার করছেন আপনি ইর্ষাপরায়ণ হয়ে সম্পত্তির লোভে ভাড়াটে খুনী দিয়ে আপনার সৎ বোনকে খুন করেছেন!
-আমি সব স্বীকার করছি । আমার ছেলেমেয়ের চোখে আমি আমার ঈর্ষার ছায়া দেখেছি। আজ সে ঈর্ষার মৃত্যুর জন্য আমি আমার পাপের ফল ভোগ করতে চাই।
কামরান আজমের কথা শুনে বাবলু আর অবন্তী একে অপরের চাওয়া চাওয়ি করল। তাদের চোখ জুড়ে অবিশ্রান্ত জল নামছে।
সুদীপ তার সেলফোন বের করে আরিফ হোসেনকে কল করল।
ওপাশ থেকে ভেসে এলো
-মি. সেন কি খবর?
-স্যার, কামরান আজম সব স্বীকার করেছে সে-ই তার সৎ বোনকে ভাড়াটে খুনী দিয়ে খুন করিয়েছে!
- অ্যা বলেন কি, এত সহজে খুনের কথা কেউ স্বীকার করে!
-আমারও তো বিশ্বাস হচ্ছে না! সব রের্কড করেছি, অফিসে এসে শোনাবো।
-যাক আপনার টার্গেটটি তাহলে ঠিক ছিল! কনগ্রেচুলেশন।
-থ্যাংক য়্যু স্যার.....
-তা ভাড়াটে খুনীদের ব্যাপারে কিছু বলেছে?
-না এখনো সে ব্যাপারে কিছু বলেনি, নিজে স্বীকার করেছে যেহেতু সেটাও বলবে।
-ঠিক আছে.. আপনি থানায় আসুন তারপর ডিটেইলস্‌ শুনবো
সুদীপ কামরান আজমের দিকে তাকিয়ে বলল
-আমাদের এবার যেতে হবে, চলুন থানায় বাকি কথা শুনবো।

কত বিচিত্র এই পৃথিবী, কত বিচিত্র তার ভিতরে বসবাস করা মানুষ আর তাদের চেয়েও বহুগুন বেশি বিচিত্র তাদের মন!
*****
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি বেশ ভাল গল্প...আমার খুব ভাল লেগেছে....তবে গল্পের ফিনিসিংটা আরো একটু ভাল হতে পারতো ....অসংখ্য ধন্যবাদ রিয়াদ আপনাকে.............
ভালো লাগেনি ৩১ জানুয়ারী, ২০১৩
জ্যোতি ভাই, চেষ্টা করবো আরো ভাল করার, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
ভালো লাগেনি ৩১ জানুয়ারী, ২০১৩
নাইম ইসলাম নি:সন্দেহে ভালো মানের একটা ডিটেকটিভ ধরনের পুলিশ অফিসারের খুনীকে আটকের বর্ণনা। গল্পের ধারাবাহিক এগিয়ে যাওয়ার মধ্য একটা উত্তেজনা কাজ করেছে ভেতরে ভেতরে । অনেক ভালো লাগলো।
ভালো লাগেনি ৩০ জানুয়ারী, ২০১৩
অনেক ধন্যবাদ রইল.. পাঠ অনুভুতি জানান দেওয়ার জন্য।
ভালো লাগেনি ৩১ জানুয়ারী, ২০১৩
পন্ডিত মাহী সন্দেহটা একজনকে না নিয়ে আরো কয়েকজনের উপর দিলে ভালো হতো। আরো জমতো। শেষ দিকে আর তেমন কিছু খুঁজে পাচ্ছিলাম না। মাঝেই কাহিনী খতম।
ভালো লাগেনি ২৬ জানুয়ারী, ২০১৩
অনেক ধন্যবাদ সুন্দর একটি কমেন্টের জন্য। চেষ্টা করবো আরো ভাল করার...
ভালো লাগেনি ২৭ জানুয়ারী, ২০১৩
Lutful Bari Panna গল্পটি নিয়ে মতামত তো আগেই দিয়েছি রিয়াদ। তোমার চর্চা অব্যাহত থাকুক।
ভালো লাগেনি ২৬ জানুয়ারী, ২০১৩
অনেক ধন্যবাদ পান্না ভাই।
ভালো লাগেনি ২৭ জানুয়ারী, ২০১৩
তাপসকিরণ রায় গল্পটি সুন্দর লেগেছে।লেখার ধারাটিও বেশ পরিষ্কার লেগেছে।ঈর্ষাকে আঙুল দিয়ে দেখানো হয়েছে।ভাষা প্রাঞ্জল।সব মিলে--গল্পের অতিরিক্ত পাওনা প্রেমের ছোঁয়াটিও রোয়ে গেছে। খুব ভালো লাগলো,ভাই!
ভালো লাগেনি ২৪ জানুয়ারী, ২০১৩
অনেক ধন্যবাদ তাপস দা।
ভালো লাগেনি ২৭ জানুয়ারী, ২০১৩
মামুন ম. আজিজ গল্পটা মোবাইলে পড়েছিলাম আরও দশ দিন আগেই। আজ কেমন্ট আর ভোট দিলাম। রহস্য আরও জমতে পারত। কিন্তু খাঃরাপ হয়নি।
ভালো লাগেনি ২২ জানুয়ারী, ২০১৩
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে...
ভালো লাগেনি ২৩ জানুয়ারী, ২০১৩
মিলন বনিক সুন্দর ধারাবাহিকতা, কিছুটা নাটকীয়তা সাবলীল বর্ননা গল্পটাকে মাধুর্যমান্ডত করেছে...খুব ভালো লাগল...শুভকামনা....
ভালো লাগেনি ১৯ জানুয়ারী, ২০১৩
সুন্দর একটি মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ ত্রিনয়ন দা।
ভালো লাগেনি ১৯ জানুয়ারী, ২০১৩
হাবিব রহমান ভাল লাগল গল্পটা। গল্পর কাহিনী এবং বিস্তার চমৎকার ভাবে প্রকাশিত হয়েছে, তার মধ্যে প্রেমের টুইস্ট। বাহ! তবে কি আমার কেন যেন মনে হয় আজম সাহেব তার সৎ মায়ের কারনে অনেক প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। প্রাপ্য জিনিষ না পেলে মানুষের মনের ভিতর যেটা জমে সেটা ঈর্ষা নয়, ক্ষোভ - আমার মনে হয় আজম সাহেবের ভেতরে জমেছিল ক্ষোভ।
ভালো লাগেনি ১৬ জানুয়ারী, ২০১৩
গল্পে ইর্ষা, ক্ষোভ দুটিই বর্তমান। হয়তো সংখ্যার বিষয়টি ইর্ষার কারণে সেটি হাইলাইট বেশি হয়ে গেছে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ বিষয়টি ধরিয়ে দেওয়ার জন্য। আপনার মত এমন গুনী পাঠকই কাম্য। যিনি লেখার দুর্বলতা তুলে ধরবেন লেখকের কাছে।
ভালো লাগেনি ১৯ জানুয়ারী, ২০১৩
আহমেদ সাবের খুব সুন্দর গল্প। কর্তব্যপরায়ণ এক পুলিশ অফিসারের হত্যাকারীকে ধরার গল্প। গল্পে তেমন ক্লাইম্যাক্স নয়া থাকলেও, সাবলীলতা এবং যুক্তিনির্ভরতার গুনে উৎরে গেছে। বেশ ভালো লাগলো গল্পটা।
ভালো লাগেনি ১৬ জানুয়ারী, ২০১৩
সাবের ভাই, এই অখাদ্য পাঠের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ।
ভালো লাগেনি ১৯ জানুয়ারী, ২০১৩
সালেহ মাহমুদ খুব ভালো হয়েছে গল্পটি। ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ১৫ জানুয়ারী, ২০১৩
ভাল লাগলো জেনে ভাল লাগল.. অনেক ধন্যবাদ সালেহ ভাই।
ভালো লাগেনি ১৯ জানুয়ারী, ২০১৩

২১ ফেব্রুয়ারী - ২০১২ গল্প/কবিতা: ১৯ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪