দ্বিতীয় পুরুষ

বাবা (জুন ২০১২)

পন্ডিত মাহী
  • ২৫
এক

পাবলিক লাইব্রেরীতে শফিকের যাবার কোন ইচ্ছাই ছিলো না। বন্ধু রাজনের চাপাচাপিতে রাজি হতেই হলো। তাই হল পেরিয়ে হাতের জ্বলন্ত সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে পথে এসে নামলো ওরা। পাবলিক লাইব্রেরীতে কি এক গানের অনুষ্ঠান হচ্ছে। সময় কাটাবার জন্যই যাওয়া। শফিক অবশ্য আশেপাশে খুব লক্ষ করে। সুন্দর কেউ পাশ দিয়ে হেটে গেলে হা করে থাকে। বুকের কোনায় টনটন করে। শফিক প্রায়ই ভাবে, যদি মনের মতো কাউকে পাওয়া যেতো। স্বপ্ন দেখে ও। প্রায়ই রাস্তায়, চৌরাস্তায়, টি.এস.সি’র মোড়ে কতজনকে দেখে। কাউকে কাউকে খুব ভালো লাগে। মনে হয় তার জন্য জীবনটাই বুঝি দিতে পারবে। কিন্তু নিমেষেই দেখা যায়, সে মেয়ের বাগদত্তা বা ছেলে বন্ধু এসে ছোঁ মেরে নিয়ে যায়।

শফিকের মোহভঙ্গ হয়। ইদানিং স্বপ্ন দেখা কমাতে চেষ্টা করছে সে। তবু বুকের ফাঁক গলে একটা পরিচিত দীর্ঘশ্বাস বুকের দরজায় কড়া নাড়ে স্বজোরে,
“আমরা দুজন বেগুনি আকাশে
সোনালী ডানার শংখচীল-“

-এই শালা, কি ভাবিস?
রাজনের কথা হুস ফেরে
-না কিছু না। তুই ভেতরে ঢুকবি নাকি?
-তো বসে বসে কি আঙ্গুল চুসবো
ওরা ভেতরে পা ফেলে।

রবীন্দ্র সন্ধ্যার আয়োজন। স্টেজের মাঝামাঝি হালকা পাতলা এক মেয়ে নার্ভাস ভঙ্গিতে একটা হারমোনিয়াম নিয়ে বসে আছে। কি গান গাইবে তাই বোধহয় ভাবছে।
রাজন, শফিক পিছনের দিকে বসে পড়ে। মৃদু তালে সুর বাজতে থাকে।

-শালার এ দেখি প্যানপানানি
রাজন ক্ষেপে ওঠে। শফিক কিছু বলে না। অনেক বারের মত ও এবারো প্রেমে পড়ে গেছে। অচেনা সুর গুলো মনের মাঝে লুকোচুরি খেলে বেড়ায় গহীনে।

“আজ যে কুসুম ফোটার বেলা,
আকাশে আজ রঙের মেলা,
সকল দিকেই আমায় টানে গানে গানে।।“

যা হবার হবে। আজ আর শুধু দূর থেকে দেখে যাওয়া নয়। শফিক মনে মনে ভাবে। অনেক আগেই অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে। পেছনের দরজা দিয়ে সে গান গাওয়া মেয়েটি বেরিয়ে আসছে। শফিক রাজনকে একা ছেড়ে লাইব্রেরীর রাস্তায় দাঁড়িয়ে।

-আপনি কি নিয়মিত রবীন্দ্র সংগীত গান। শুনতে কিন্তু বেশ লেগেছে

মেয়েটি শফিকের কথায় এক আধটু চমকে যায়। রপের কারিগর ইচ্ছের সবটুকু সরল সুন্দর রুপ মেয়েটির মুখে একেঁ দিয়েছে। মনের মাঝে নানা রকম কথা এদিক সেদিক ঘুরে গেলো মেয়েটির মনে। শোনা যায় এখানকার ছেলেগুলো নাকি নাককাটা হয়। মেয়েদের যখন তখন বিরক্ত করে মারে। মনে মনে তৈরী হয়ে নিলো। এদিকে শফিক সেই সরল মুখের ঠোঁটের কাঁপনের অপেক্ষায় চেয়ে থাকে।
আলতো করে ভুরুর নাচনে চোখ তুলে তাকায়,
-আপনি রবীন্দ্রের গান পছন্দ করেন?
-আমি! মোটেও না
শফিক কাঁধ ঝাকায়
-তবে?
মেয়েটির তীক্ষ্ণ প্রশ্ন।
-যে গান গায় তাকে পছন্দ হতে পারে
-বেহায়া মনে হচ্ছে। তা আরো তো অনেকে গান গেয়েছে। তাদের কাছে যান। ঐ যে দেখছেন সুন্দরী মহিলাটি হাত নেড়ে কথা বলছে।
মেয়েটি আঙ্গুল তুলে দেখায়।
যান না ওখানে।
-গান গাইতে গিয়ে আপনাকে নার্ভাস দেখে যতটা নরম ভেবেছি আপনি দেখি ততটা নন। ঐখানে যেতে বলছেন?
-হ্যা, যান না…
শফিক পিছনে ঘুরে তাকায়। একটু আলতো হাসি ঠোটে ঝুলিয়ে বলে,
-পিছনের সিট খালি পেয়ে মুগ্ধ হয়ে আপনার গান শুনেছি। কিন্তু মনে হচ্ছে ঐ সুন্দরীর বয়সের সাথে সাথে মনের সিট আগেই দখল হয়ে গেছে
-তাই!
মুচকি হেসে ওঠে মেয়েটি। কপট রাগের রুপটা নিমেষেই খসে পরে। ভালো লেগে যায় আলাপচারিতা
আপনি হাটতে পছন্দ করেন?
শফিকও হেসে ওঠে
-আগে করতাম না। এখন থেকে করি
-আর কি করবেন
-“মানুষ থাকুক সংসারে পড়ে
আমরা ঊড়িব পৃথিবী ছিঁড়ি”
-জীবনানন্দ!
-আর আপনি?
-অবন্তী
-শফিক

সেই পথ চলা। বেগুনি আকাশ ছেড়ে নীল আকাশের নীচে স্বপ্ন খোঁজা। মাটিতে পা রেখে আকাশে ডান মেলে ওরা উড়ে চলে নিরুদ্দেশে। এরপর প্রায় প্রতিটি দিন অবন্তী আর শফিক হেঁটে চলে যায় যতদূর যেতে ইচ্ছে করে। শফিকের পাগলামি সাথে অবন্তীর প্রশয়, মিলেমিশে একাকার হয়ে বসন্তের ফুল হয়ে ফোটে ওরা দু’জন।

দুই

শফিক গ্রাজুয়েশন শেষ করেই একটা ফার্মে ঢুকে গেলো। বেশ ভালো বেতন সেখানে। অবন্তী গান আর পড়াশোনা নিয়ে রইলেও দু’পক্ষের ইচ্ছায় কেউ আর দেরী করলো না। পা বাড়ালো স্বপনের সিড়ি ভাঙ্গা স্বপ্নের ঘরে। সোনালি ডানার শংখচীল শফিককে ভালোবাসে। অন্তিম গুন ভালোবাসা শফিক ফিরিয়ে দিতে চায়।

হঠাৎই একটা হতাশায় ডুবে যেতে থাকে শফিক। অবন্তী এদিক সেদিক শফিককে নিয়ে ছোটাছুটি করে। কোনকিছুতেই কিছু হয় না। কত দাক্তার, পরীক্ষা। ছ’মাসের মাথায় সব রিপোর্টেই দেখা গেলো- শফিক শারিরিকভাবে পুরোপুরি অক্ষম।

অবন্তী ভেঙ্গে পরে। সোনালি সংসারে এক লকলকে আগুন দানা বাঁধে। মা হওয়ার স্বপ্নটুকু উবে যায় কর্পূরের মত। শফিক পাথর হয়ে বসে থাকে। হলের জীবনটাকে বড় বেশী ঘেন্না হয়। নিজের ভেতরের রুপটাকে এই প্রথম গলা টিপে মারতে চায়। প্রতি নিয়ত নিজের যৈবনের অপব্যবহার করে এসেছে ঐ ছোট চার দেয়ালের মাঝে। যখন অপার এক সুখ চারিদিকে হাতছানি দিচ্ছে, তখনই বুঝলো সুখ গুলো ওর জন্য নয়- সব অলীক প্রয়ান।
শফিক অবন্তীকে কিছু বলতে পারে না। সে মুখ আর নেই। ওকে সুখী করার ক্ষমতা অর নেই। অবন্তীর মাঝে মা হবার তীব্র বাসনার কথা মনে করে ডুকরে কেঁদে ওঠে। মা হবার যে ওর সুতীব্র বাসনা, হয়তো ওর বাবা হবার বাসনা এত তীব্র না। সে সুখের স্বপ্ন সবটুকু হারিয়ে গেছে কামাছন্ন কালের কিনারায়। নত মুখে কি জবাব দেবে শফিক!
-অবন্তী…
-হু। বলো…
চোখের নিচে কষ্টের কালি গুলো জেকে বসেছে। বিষন্নতার যে ছাপ মুখে শফিক তা দেখে চমকায়। একি হাল!
-অবন্তী আমি দূঃখিত…
অবন্তী মুখ তুলে তাকায়। অবিশ্বাসের দৃষ্টি শফিকের ভেতর বহুদূর গিয়ে ছুরির মত বিধঁতে চায়।
-হাস্যকর শফিক। তুমি দূঃখিত! কেন? তোমার দূঃখ পাবার কি কিছু আছে?
-আমি…
শফিক বলতে গিয়ে আটকে যায়। মুখের ভেতর আঠালো লালার মত কথা গুলো জিভে আটকে যায়।
-তুমি কিছু বলো না আর।
অবন্তী অন্যদিকে মুখ করে বলে ওঠে…
জীবনের সুখটুকু তুকি আগেই ভোগ করে এসেছো। মা হবার তীব্র বাসনাটুকু কি তুমি বোঝ? এই যে চার দেয়াল দেখছো। বলতে পারো এর মাঝে আমি কি নিয়ে বাচঁবো। একটা নাড়ী ছেড়া কান্না পারবে দিতে? বুঝতে পারো সে কষ্টে কি সুখ আমি খুজেঁ পেতে চেয়েছিলাম।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অবন্তী। লুকোবার চেষ্টা করে না।
খুব স্বার্থপরতা দেখিয়ে গেলে। তবু তোমায় কোন দোষ দেবো না। তোমার আর কি…

-আমি তোমায় অনেক ভালোবাসি…
-জানি। তবু আরো কিছু দরকার হয়। তুমি একটা আবরন হয়ে না হয় থাকলে। কিন্তু যে আবেগটুকু আমি আমার সন্তানের জন্য রেখেছি, তার কি হবে বলতে পারো- বলতে পারো তুমি? আমি যে মা হতে চেয়েছিলাম…
অবন্তী চিৎকার করে ওঠে। চোখের কোণে নোনা জলের বান। আটকাবার চেষ্টা করে না।
তুমি আমি ভালো ছিলাম শফিক…
-ছিলাম?
শফিক চোখ তুলে অবাক হয়ে তাকায়। থমথমে মুখ।
-হ্যাঁ, এখন আর নই। ডিভোর্স বা অন্য কিছুর পথে আমি নেই। হয়তোবা, জানি না বদলে গেলে… কি হবে জানি না। তবে আমি তোমায় ভুলতে চাইবো শফিক। পুরোপুরি…


অবন্তী শেষ পর্যন্ত শফিককে ভুলতে পারে। পুরোপুরি ভুলতে পারে। শফিক আগের ফ্লাট ছেড়ে সব সম্পর্ক চুকিয়ে ঠিকানাবিহীন হয়ে এক ছোট রুম ভাড়া নিয়েছে। চাকরিটা আছে। সেখানে তার কোন অক্ষমতা এখনো প্রকাশ পায়নি।
তারপর এক একটি দিনের সূর্য ডুবতেই থাকে। বছর যায়, বছর।


তিন

কবির আহমেদ। ডিতেকটিভ ব্রাঞ্চে অনেকদিন ধরে মুখ সেঁদিয়ে আছে। সাড়ে চার বছরের চাকরি জীবনে সে ভালো কিছু খুঁজে পায়নি। চোর-ছাচোরদের সাথে থাকতে থাকতে নিজেকে ও ওদের সাথে কোথায় যেন মিল খুঁজে পায়। কোন কোন দিন ঠিক মত ঠিক সময়ে বাসায় যেতে পারে না। আর হঠাৎ হঠাৎ ঢাকা ছেড়ে বাইরে যাওয়াকে অসহ্য মনে হয়। চাকরিটাকে মাঝে মাঝেই ও বাপ-মা তুলে গালি দেয়।
-শালার চাকরি করে মানুষ

অবশ্য ব্যক্তিজীবনে সে খুব সুখী একটা মানুষ। চার বছরের সংসার জীবনে তিথি, কবিরের স্ত্রী, এখনো মা হতে পারেনি। বিয়ের পর পরই একটা অপারেশন হয়। তিথি ভালো থাকলেও, মা হবার পথটা বন্ধ হয়ে যায় চিরতরে। কবির খুব কষ্ট পায়। তবু তিখিকে বাচাঁতে পাশে থেকেছে, ভালোবেসেছে। নিষ্পাপ ভালোবাসা। শরীর থেকেও যেটি ওর কাছে মুখ্য। আলাদা কিছু সময় ব্যস্ততার ফাঁক গলিয়ে বের করে অদের খুনসুঁটি আলাদা একটা মাত্রা দেয় ভালোবাসার সাগরে।

কবির একটা নতুন এ্যাসাইনমেন্ট হাতে পেয়েছে। শাহাবাগ এলাকাটা তাই খুব নজরে রাখতে হচ্ছে টহলদার পুলিশ বাড়ানো হয়েছে। সাদা পোশাকের পুলিশ গুলোও ঘোরাফেরা করছে চারিদিকে। তবু কিছুদিন পর পরই সাহাবাগ এলাকা থেকে শানা যায় ছোট ছোট বাচ্চা কে বা কারা যেন নিয়ে যাচ্ছে। বাচ্চা গুলোর কোনটারই বাবা-মা, কেউ নেই। যাদের আছে তারা হারাচ্ছে না।ইদানিং প্রত্রিকায় বেশ লেখালেখি হচ্ছে। কেউ কেউ বলছে এই বাচ্চা গুলো ধরে নাকি পাচার করা হচ্ছে কিংবা যৌন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
কবিরের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। হারামির বাচ্চা গুলোকে শায়েস্তা করতেই হবে। তবে কোথাও কোন ক্লু মেলে না। স্রেফ যেনো উধাও হয়ে গেছে বাচ্চা গুলো।

সেদিন সন্ধ্যের দিকে কবির টি.এস.সির মোর ধরে গাড়ি নিয়ে ডানে বাঁক নিচ্ছে ঢিমে তালে। ব্যস্ততা নেই। হঠৎ চোখ পরে যায়, একজন লোক, সাদা শার্ট আর টাই পরা। একটা বাচ্চাকে কি যেন সাধছে। বাচ্চাটা নিতে চাইছে না। কবিরের চোখটা জ্বলে উঠলো। কি যেন দেখতে পেয়েছে এর মাঝে। গাড়ি ঘুরিয়ে কাছাকাছি এসে লক্ষ রাখে।
লোকটি খুব আদর করে অর্ধনগ্ন বাচ্চাটিকে রুটি আর কলা খাওয়াচ্ছে। অর্ধভুক বাচ্চাটি একটু একটু করে খাচ্ছে আর কৌতুহলী চোখ নিয়ে লোকটিকে দেখছে। লোকটি পরম মমতায় হাত বুলিয়ে দিছে বাচ্চাটির কপালে। খাওয়া শেষ হতেই লোকটি উঠে দাঁড়ায়। হাতে ধরা বাচ্চাটির হাত। একটা রিকশা ডাক দেয়…
-এই রিকশা
তারপর রিকশায় উঠে এগিয়ে যায়। কবির দ্রুত গ্যাস প্যাডোলে চাপ বাড়ায়। পাশের সিটে থাকা ওয়াকি-টকি হাতে তুলে নেই। দ্রুত ডেকে পাঠায় তৈরী রাখা ফোর্সকে।


চার

-আইজ আবার আরেকটা ধইরা আনছেন?
চিৎকার করে একটা কর্কশ নারীস্বর।
-ক্যান কি হইছে? তোর এত লাগে ক্যান…
খেঁকিয়ে ওঠে লোকটা।
রিকশা থেকে নেমে লোকটা বাচ্চাটাকে নিয়ে ধুকেছে দোতালা স্যাতসেতে এক বাড়িতে। বাড়ির নেইমপ্লেটে লেখা “শফিক আহমেদ”।
-আমার তো মরার জ্বালা।
কর্কশ স্বরের কন্ঠটা শুনে কবিরের কপাল কুঁচকে যায়। গাড়ি থেকে নেমে খুব সাবধানে দেয়াল পেড়িয়ে চলে এসেছে। দরজা খোলার শব্দ হয়।
-রহিমা, বাচ্চাটাকে খেতে দে। আমি দোকান থেকে আসছি।
রহিমা যে কাজের লোক বুঝে নেয় কবির। লোকটা বেরিয়ে যেতেই সাবধানে বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়ে। রহিমা রান্নাঘরে চুলায় কাজ করছে, সদ্য আনা বাচ্চাটি হঠাৎ কবিরকে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকায়। রহিমা কিছু একটা টের পেয়ে পেছন ফিরে চমকে ওঠে।
-কে? কে আপনি?
কবির হাত নেড়ে ধমক লাগায়।
-চুপ, পুলিশ।
-পুলিশ!
রহিমা আতঁকে ওঠে। মরা বাপ-মায়ের নাম নিতে নিতে মুখে ফেনা তুলে ফেলে। ওদিকে বাড়ির বাইরে টায়ার ঘসার শব্দ। ফোর্স এসে গেছে। রহিমা কাকুতি মিনতি শুরু করে দেয়। সে কিছু করে নাই। মরা বাপ-মায়ের কসম। কবির এই প্যানপানানি শুনে অভ্যস্ত। রহিমাকে জিজ্ঞাসাবাদের ভার ফোর্সের হাতে দিয়ে সে প্রতিটি রুম পরীক্ষা করে দেখে। একটু অবাক হয় সে। খুব গোছানো একটা বাড়ি। বাইরে থেকে দেখে যতটা সন্দেহ হয় ভেতরে তার কিছুই নেই। প্রতিটি রুমেই সারি সারি বেড পাতা। দোতালা ঊঠে হল রুমের মত ঘরে অনেক গুলো বাআর শব্দ। কবির পা বাড়ায়।

হঠাৎ একটা গমগমে কন্ঠস্বর…
-আমার বাড়িতে পুলিশ বিনা অনুমতিতে কেন জানতে পারি?
কবির চমকে যায়। সামলে নেয় মুহুর্তেই।
-আসার মত কারন আছে তাই। কবির আহমেদ, ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ।
কবির আইডি কার্ড বের করে দেখায়।
-সে তো বুঝলাম। কেন এসেছেন?
-এখানের বাচ্চা গুলোর সাথে আপনার সম্পর্ক?
-কোন সম্পর্ক নেই
-এদের কি আপনিই রাস্তা থেকে তুলে এনেছেন?
-হ্যা। এনেছি।
-আপনার বিরুদ্ধে সরাসরি গ্রেফতারের পরোয়ানা রয়েছে। শিশু পাচার ও অপহরণের অভিযোগে
-আপনি ভুল করছেন মিস্টার
-হোয়াট?
কবির ক্ষেপে যায়। হঠাৎ তার কথা থামিয়ে দেওয়াতে সে বিরক্ত।
-আপনি কোথাও ভুল করছেন
শান্ত, গম্ভীর স্বরে শফিক বলে।

সেই শফিক। অবন্তী চলে যাবার পর অনেক ভেবেছে জীবনটা নিয়ে কি করবে ও। মাস-বছর ধরে চাকরি করে যায়। তবু মাঝে মাঝেই সেই পুরোনো ঘেন্না কুড়ে কুড়ে খায় ওকে। নিজের অক্ষমতা এমন ভাবে গ্রাস করে, শফিক নিজেকে শেষ করে ফেলতে চায়। হয়তো তাই করতো। সব হারানোর পর নিভু নিভু জীবনে সে চলতে চলতে ক্লান্ত তখন। কিন্তু এক সকালে শফিক জাদুঘরের সামনে ফুটপাত ধরে হাঁটছিলো আপন মনে। হঠাৎ একটু দূরে চোখ চলে যায়। ও পাশে রাস্তায় এক রুগ্ন মহিলা আধমরা হয়ে শুয়ে আছে, পাশের বাচ্চাটা গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছে। আগে কখনো এমন করে ও এসব খেয়াল করেনি। কিন্তু ভেতরে কি যেনো হয়ে গেলো। কোলে করে এনে নিজের বাসায় জায়গা দিলো বাচ্চাটিকে, সাথে সে মা-ও পেলো ঠাঁই।

শফিক শুরু থেকে খুলে বলে কবির আহমেদকে। কবির অবাক হয়ে শুনে যায়, বিশ্বাস হতে চায় না। দু’জনেই বাচ্চাভর্তি হলরুমে প্রবেশ করে। নানা বয়সী বাচ্চা গুলো খেলা ফেলে ঘুরে তাকায়। একযোগে চিৎকার করে ওঠে খুশিতে…
-বাবা!
কবির নিজেকে ধরে রাখতে পারে না। নিজের ভেতরের অতৃপ্ত পিতৃত্ব গুমড়ে কেঁদে ওঠে। এত সুমধুর ডাক ও শোনে নাই। এমন করেই কি সন্তান বাবা বলে ডাকে! এত মধুর করে!

শফিক ফিসফিসিয়ে বলে,
-দেখেছেন। কি নিষ্পাপ হাসিমুখ ওদের। আচ্ছা বলুন তো, এখন কি আমি বাবা হতে পেরেছি! জন্মদাতা বাবার মতন…

উত্তরটা জানা। কবির ছোট এক বাচ্চাকে কোলে তুলে বুকে লেপ্টে ধরে। শক্ত করে, যেভাবে একজন বাবা তার সন্তানকে আগলে রাখে।

বাতাসে বাতাসে, দেয়ালে দেয়ালে আধো স্বর গুলো লিখে যায়, আমার প্রিয় বাবা, আমাদের বাবা।
শফিকের, হয়তো কবিরেরও চোখে জল এসে বুকের ভেতর জন্ম দেয় অজানা কিছু প্রতিধ্বনি…
ওরা কান পেতে শোনে। চিৎকার করে বলতে চায়… জানাতে চায়...

“আধো আধো বোল গুলো
হয়তো বুঝিনি ঠিকমত
বুঝিনি কারা চেয়েছিলো
খেতে ইশারায়- অনেক আগে।
তাই চারপাশে ভেঙ্গে
ছবির মলাট, রাখি বুকে
যাদের নাম, রঙ, গন্ধ
এই পৃথিবী করেছে ঘৃণা।
যাদের আস্তানা ছিলো বা
যাদের ছিলো না পথে
ওদের হয়ে কেঁদেছি একবার
একদিন হেসেছি বিহ্বলতা ছেড়ে।

তাই, আজ পৃথিবী জেনো
ওরা সব ভালোবেসেছিলো
আমায় বলেছিলো চিৎকারে-
বাবা!”
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এফ, আই , জুয়েল # লেখার গতি ও ঝরঝড়ানি ভাব বেশ চমঃকার । আবেগের সাথে এর সাবলীল প্রকাশ ভঙ্গি অনেক সুন্দর । ---- ৫ দিলাম ।
আরমান হায়দার খুব ভাল লাগল গল্পটি। শুভকামনা লেখকের প্রতি।
মোঃ আক্তারুজ্জামান খুব সুন্দর লিখেছ ভাই.......
নাহ ভাই, আপনারে নিয়ে আর পারলাম না! এই দারুণ গল্পটায় এতো "ছোট্ট" কমেন্ট! :(
না মানে- কবির গল্পকার হয়ে উঠা দেখে একটু হা করেছিলাম তো তাই ঢোক গিলে কোনো মতে আসল কথাটাই বলে দিলাম আর কি! (তুমি আবার আমার উপর নজরদারি কর কেন ভাই! আমার বুঝি ডর লাগে না?) @ ইফতি|
ভাই, এটা তো নজরদারি না! ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ! :p
ওহ! বয়স হলো তো তাই ওটা ভুলেই গিয়েছিলাম.......ভালোবাসাটা আর কি!
মাহবুব খান ভিসন ভালো মাহী / অনবদ্য
মিলন বনিক তাই, আজ পৃথিবী জেনো, ওরা সব ভালোবেসেছিলো, আমায় বলেছিলো চিৎকারে-, বাবা!” ভিন্ন ধারার অনন্য অসাধারণ একটা গল্প..অনেক অনেক ভালো লাগলো..শুভ কামনা সবসময়....
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি খুব আবেগ দিয়ে পড়ে শেষ করলাম 'মাহি' আপনার গল্পটা.......খুব ভালো লাগলো ....আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ ও শুভ কামনা.........
স্বাধীন বেশ সুন্দর গল্প আর শেষের কবিতাটাও
sakil besh boichitr moy plot niye aponi golpoti likhechen. Besh akorshon chilo pathok dhore rakhar jonno ja jothestho. Mahir kolpo shoktike sadhubadh janai. Emon kore jodi amader desher manush vabote paroto tahole sorgo prithibir majhe neme asto. Onek shuvo kamona roilo
জাকিয়া জেসমিন যূথী এখনো ‘বাবা’ সংখ্যার সমস্ত লেখা পড়ে শেষ করিনি। তবুও যতগুলো লেখা পড়েছি তাঁর পরিসংখ্যানে আমি মনে করি, ‘বাবা’ সংখ্যায় পন্ডিত মাহী’র লেখা এই গল্পটি অসাধারণ! জাস্ট হ্যাটস অফ! এইরকম বাবা আমাদের বাস্তব জগতে আসুক, সার্বিক সুবিধা পাক আমাদের পথশিশুরা!
মামুন ম. আজিজ মাঝে টান টান উত্তেজনা , শেষে আদর্শ করুন ধারা..শুরুতে প্রেম ভালোভাসা শারীরিক সম্পর্কের গুনগত বিভেদ.....পরিপূর্ণ এক গল্প....সকলের ভাল লাগারই কথা। ..এ সংখ্যার সেরা হয়ে উঠেলও অবাক হওয়ার কিছু নাই।

০১ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৬৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪