চমক রিয়েল এস্টেট প্রাঃ লিঃ

পরিবার (এপ্রিল ২০১৩)

আরমান হায়দার
  • ১৭
রাত ১১টার দিকে কামাল তার রুমে এসে জানালা বরাবর পাতা টেবিলে বসলো। সরিয়ে দিল পর্দা , খুলে দিল জানালা। দক্ষিনের জানালা। ঢাকা নামক এই মেগাসিটিতে তার ৩ কক্ষবিশিষ্ট এই বাসাতেই যেন কিছুটা স্বস্তি পায়। বাসা থেকে বের হলেইতো দম আটকানো যানজট, হৈচৈ, অজানা আতংক, উর্দ্ধশ্বাসে ছুটে চলা। সব কাজ সেরে যখনই সে বাসায় ফেরে, যখনই সে একটু শান্তি খোঁজে তখনই দক্ষিনের জানালার পাশে এই টেবিল চেয়ারে এসে বসে। জানালাটা খুলে দেয়, একটা মিষ্টি বাতাস এসে ঘরকে কেমন যেন শীতল করে ফেলে। ভুলে যায় সে দৈনন্দিন জীবনের চাওয়া না চাওয়া, পাওয়া না পাওয়ার সুখ-দুঃখ-বেদনা। কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যে নিজেকে আবিস্কার করে সে ।

সামনের ফাঁকা জায়গায় একটি বহুতল বিল্ডিং হওয়ার কাজ কেবল শুরু হয়েছে। সে জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখলো একটি নতুন বিলবোর্ড লাগানো হয়েছে। চমক রিয়েল এস্টেট প্রাঃ লিঃ। বিলবোর্ডের পাশে তীব্র আলোর বাতি দেওয়া আছে। ঝকঝক করছে বিলবোর্ডটি। বিলবোর্ডের অন্যান্য লেখা তেমন চোখে পড়েনা। তারপরও কামালের কাছে মনে হলো এতে লেখা আছে, এক রুম বিশিষ্ট ফ্লাট তৈরীর কাজ চলছে। আজকে এখানে এই রাত ১১টার সময় বসে তার এ কথাটি মনে হওয়ার আর একটি কারন হল , সে কদিন আগে বিল্ডিং এর শ্রমিকদের সাথে কথা প্রসঙ্গে জেনেছিল এই বিল্ডিং এর সকল বাসাই নাকি ১ রুমের হবে। প্রথমে শুনে কিছুটা অবাক হয়েছিল সে। কিন্তু আজ এখন তেমন আশ্চর্য লাগছে না , এমনকি বিলবোর্ডে চমক রিয়েল এস্টেট নামটি পড়েও সে চমকিত হচ্ছে না। তার কাছে খুব স্বাভাবিক মনে হচ্ছে।

সামনের বিল্ডিং এর কনস্ট্রাকশন শুরুর আগে এই জায়গাটিতে একতলা টিনশেড বাসা ছিল। ছিল আম গাছ ,ছিল দুটো নাড়িকেল গাছও। জানালা দিয়ে স্যাঁতসেঁতে এই বাড়িটির দিকে তাকালেই হৃদয় স্পর্শ করতো কেমন যেন গ্রামীণ পরিবেশ । তার মনে পড়ে যেত তার নিজ গ্রাম দিঘুলিয়ার কথা। বড়ালের তীরে গাছপালায় ঘেরা কি সুন্দর গ্রাম। একেবারে যেন শান্তিপুরী। দাদারা চার ভাই । তাদের ঘরে এগার চাচা। এগার চাচার ঘরে তিপান্ন ভাই বোন। কি মজার যৌথ সংসার । কত হৈচৈ। কত ঘুরে বেড়ানো। কত মাছ ধরা, কত নৌকা চড়া, কত হাটে যাওয়া, বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাইবোনে কত গল্প শোনা। আরো অনেক কত ---- কত । কিন্তু মা অনেক বলেকয়ে বাবাকে রাজি করালেন শহরে যাওয়ার জন্য। এখানে থাকলে শুধু হৈচৈ ই হবে। ছেলে মেয়ে মানুষ হবে না। লেখা পড়া হবে না। একদিন বাবাও সেই মত বুঝলেন। ছেলেমেয়েকে মানুষ করার জন্য চলে এলেন মফস্বল শহরে। বনওয়ারী নগর ফরিদপুরে। সেখান থেকে লেখাপড়া শিখেই আজ ঢাকা শহরে এসেছে। এভাবে ভাবতে ভাবতে একদিন মনে হলো মাকে ঢাকায় বাসায় নিয়ে আসলে কেমন হয়।

মাকে নিয়ে আসার কথা কামাল তার স্ত্রী মিলিকে বলতেই মিলি রাজি হয়ে গেল। প্রথমে কামাল বিশ্বাস করতে পারেনি মিলি এটাকে স্বাভাবিকভাবে নিবে। অনেক খুশি হয়ে মাকে নিয়ে এলো। এতদিন বেশ ভালই কাটছিল । কিন্তু আজকাল মিলির কথাবার্তার সুরে কেমন যেন পরিবর্তন আসছে। বিভিন্ন সময় কথাবার্তায় সে বোঝাতে চেষ্টা করে। বাসায় এমনিতেই রুম কম। দাদি থাকাতে পড়া বাদ দিয়ে ছেলেমেয়েরা শুধু টিভি দেখছে। বাসায় টিচার আসলেও পড়ার জায়গা হচ্ছে না। পাশের বাসার ভাবী কয়েকজন মেহমান নিয়ে এসেছিলেন বসতে দিতে পারা যায়নি এমন কথাও শুনিয়েছে কদিন আগে। এতসব সমস্যা নিয়ে আজকে স্ত্রী মিলির সাথে ছোটখাট একটা কথা কাটাকাটি হয়ে গেল। মা বাসায় আছেন তাই বেশী কথা বাড়ায়নি কামাল। শুধু বলেছে এর মধ্যেই থাকলে থাকো না হয় কাল সকালে বাপের বাড়ি যাও, তবু সিন ক্রিয়েট করোনা। এতটুকু বলে সে রাত ১১ টার সময় এখানে এসে দখিনের জানালায় বসেছে।

এখন রাত ২টা বাজে। মা উঠে এলেন কামালের ঘরে। বললেন,
Ñ‘ কামাল ! আমাকে কাল বাড়িতে রেখে আয়।
কামাল অনেকটা চমকে উঠলো। সে ভাবতে পারেনি মা এসে তার পাশে দাঁড়িয়েছেন। সে বললো ,
Ñ“কেন। আম্মা! আপনার এখানে থাকতে সমস্যা হচ্ছে?’
Ñ‘ না । সমস্যা কিছু না। বাড়ির কথা মনে পড়ছে। এখানে তো থাকলাম অনেকদিন হল। তুই কালকে আমাকে গাড়িতে তুলে দিস। আমি একাই চলে যেতে পারবো।’
Ñ“ কেন , আপনার বউমা কিছু বলেছে?’
সাথে সাথে পাশের রূম থেকে মিলি এসে দাড়াল। এই রাত দুই প্রহরে চেচিয়ে মহল্লার সব মানুষকে জানান দিল এ বাসায় কিছু একটা ঘটেছে।
Ñ“ আমি তো তোমার মাকে নিয়ে দিন রাত কথা বলি। তোমার মায়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করি। তোমরাই থাকো। আমি যাচ্ছি । কাল সকালে আমিই বাসা ছেড়ে চলে যাচ্ছি। আম্মা থাকেন । আপনি কেন যাবেন। আপনি এসেছেন আপনার ছেলের বাসায় । আপনি থাকেন। আমি পরের মেয়ে আমিই চলে যাচ্ছি। ’
কামালে মা হয়তো বুঝলেন অনেক কিছুই। কিন্তু তেমন কোন কথা তার মুখ দিয়ে বের হলো না। শুধু বললেন ,
Ñ‘তুমি কেন যাবে। ছেলেমেয়ে নিয়ে তোমরা সুখে থাকো। শান্তিতে থাকো।’ একটু থেমে কামালকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
Ñ‘ কামাল তুই সকালে আমাকে বাসে তুলে দিয়ে আয়। তোর বাসায় শান্তি ফিরে আসুক।’



কামাল আর কোন কথা বললো না। একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এলো অন্তরাত্মা হু হু করে । সেই দীর্ঘশ্বাসে যেন দখিনা বাতাস দোল খেয়ে খেয়ে ফিরে গেল সামনের একরুম ওয়ালা ফ্লাটের দিকে। সে তাকালো সামনে নির্মাণাধীণ ফ্লাটের দিকে। যদি মাকে বাড়িতেই পাঠাতে হয়। তবে এর একটা বিহিত করে ছাড়াবে সে মিলির সাথে। প্রয়োজনে সে গিয়ে উঠবে চমক রিয়েল এস্টেটের এক রুমের ফ্লাটে। সে আর একবার জানালার কাছে এগিয়ে গেল। লোহালক্করের টুংটাং শব্দে স্পষ্ট বোঝা গেল নির্মাণকাজ এগিয়ে চলেছে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Lutful Bari Panna একেবারে সাদামাটা একটা কাহিনী শুধু আপনার লেখনির গুণেই ঝকঝকে হয়ে উঠেছে আরমান ভাই। স্যাল্যুট।
এস, এম, ইমদাদুল ইসলাম যদি মাকে বাড়িতেই পাঠাতে হয়। তবে এর একটা বিহিত করে ছাড়াবে সে মিলির সাথে। প্রয়োজনে সে গিয়ে উঠবে চমক রিয়েল এস্টেটের এক রুমের ফ্লাটে। সঠিক সিদ্দান্ত । আসুন, আমরাও মিলিদের উচিত শিক্ষা দেবার জন্য কামাল হই ।
sakil জীবন থেকে পালিয়ে বেড়ালেই কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে হয় না . জীবনের সকল সমস্যার সমাধান ঠান্ডা মাথায় করতে হয়।আমাদের সমাজের নিত্য গল্প কাহিনী সুন্দর ভাবে এগিয়েছে কিন্তু গল্পের গভীরতা খুঁজে পেলাম না
shundor montobbyar jonnyo Dhannybad.
সুমন বউ-শাশুড়ি এটা এমন একটা বিষয় যেখানে ছেলে মানে সন্তান অসহায় দর্শক হতে বাধ্য। আচ্ছা বউগুলো একসময় শাশুড়ি হবে এ কথা কি ওরা মনে রাখে? বাসায় মেহমান বসতে দেয়ার জন্য শাশুড়িকে তাড়াতে হবে কেন? অনেক প্রশ্ন..... যার কোন সদুত্তর কোন নারীই দিতে পারবে না। চলমান বাস্তবতা গল্পে সুন্দর করেই এনেছেন, বেশ ভাল লাগল।
তাপসকিরণ রায় সুন্দর লেখা--পরিষ্কার ধারাবহ ভাবনায় সাধারণ গল্পকে আকর্ষণীয় করে তোলা হয়েছে--লেখকের মুনশিয়ানা সহজেই নজরে পড়ে।অনেক ধন্যবাদ লেখককে।
মিলন বনিক আরমান ভাই...অনেক সুন্দর একটা গল্প....অধিকাংশ পরিবারের এক বাস্তব চিত্র....খুব সুন্দর ও সহজ ভাবে তুলে এনেছেন....অনেক শুভ কামনা....
shomoy Kore golpo ti porar jannyo Dhannyobad.
মোঃ আক্তারুজ্জামান সুন্দর লিখেছেন| আমাদের সবাইকে সংসারের প্রবীনদের প্রতি সবসময় যত্নশীল থাকতে হবে| সংসারের নবীনদের সাথে প্রবীনদের যোগসূত্র তৈরীতে উনাদেরকে রাখতে হবে অপরিত্যাজ্য হিসেবে| আমাদেরকে প্রমান দিতে হবে এই সমাজে প্রবীনরা ভালবাসা আর সম্মানের পাত্র| তবেই না এই জাতি মাথা তুলে ইতিহাসের পাতায় দাড়িয়ে থাকবে| প্রত্যেক পরিবারে শান্তির সুবাতাস বইবে অবিরত| ধন্যবাদ|
Aktar vai ! Apnake onek onek dhannybad.
রোদের ছায়া সহজ সরল ভাষার একটা পরিবারের সংকটময় দিক গল্পে পেলাম , এটা আসলে আমাদের সমাজের বাস্তব রূপ ....অনেক বাড়িতেই এই সমস্যা আছে হয়ত থাকবেও .....কামালের চরিত্র তা বেশ সাবলীল মনে হলো ..শুভেচ্ছা রইলো সাথে ভোট ..
অসংখ্য ধন্যবাদ গল্পটি পড়ার জন্য।গল্পে উল্লিখিত সমস্যাটি সমাজে আছে , তবে থাকতে দেওয়া হবে না।এই সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনে আইনের আশ্রয় নেয়া যেতে পারে।তবে সবার আগে দরকার কামালের চরিত্রটিকে আরো শক্তিশালী করা। অন্যদের সংশোধন তো বটেই। আর এ কাজটি করতে না পারলে হয়তো আমাদের সকলেরই ঠিকানা হবে চমক রিয়েল এস্টেট প্রাঃ লিঃ এর এককক্ষে।
খোন্দকার শাহিদুল হক বাহ সুন্দর গল্প। আমাদের সমাজের একখণ্ড চিত্র আপনি সুন্দরভাবে ভাব ও ভাষাতে সার্থকভাবে চিত্রায়ণ করেছেন। ভালো লাগল। ভালো থাকবেন প্রিয়। লিখতে থাকুন। সাহিত্য সম্ভারে আপনাদের মূল্যবান চেতনা যুক্ত হোক নিত্য। ভোট দিয়ে গেলাম।
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের চালচিত্র সুন্দর উপস্থাপনার মাধ্যমে ফুটে উঠেছে.....অনেক দিন পর আরমান ভাইকে পেয়ে ভাল লাগছে ..............ধন্যবাদ আরমান ভাই আপনাকে......
Joti Vai amar o valo lagche apnader jogote abar ashte pere.

২৩ জানুয়ারী - ২০১২ গল্প/কবিতা: ১৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪